somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বানিশান্তার গল্প!

০৬ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কি নাতিরা! নানীর ঘাটে নাও না ভিড়ায়াই চইলা যাইবা? ঘাট হতে আটপৌরে রমনীর এমন আহবানে সাড়া দেবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা শুভ্র'র না থাকলেও নৌকায় থাকা বাকী দুজন যে ভীষন রকম কৌতুহলী এবং একই সাথে কামোদ্দীপিত হয়ে উঠেছিল তা তাদের মুখ চাওয়া-চাওয়ি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, প্রতীক্ষাটা ছিল শুধু শুভ্র'র সম্মতির। ইশারা পাওয়া মাত্র নৌকা ভীরে গেল নানীর ঘাটে।

ঘাটে নৌকা ভেরা মাত্র সহযাত্রীরা যে যার মত হারিয়ে গেল লোকালয়ে। লোকালয় বললে লোকালয় শব্দটার অপমান হয়, ভদ্রলোকের ভাষায় এটিকে মাগীপাড়া বলাই শ্রেয়। আর এই মাগী পাড়াতেই পূরন হয় কারো জৈবিক চাহিদা আর কারো বা মৌলিক। নানী ঘাটের নিয়ত ভেংগে চলা পাড় হতে প্রমত্ত্বা পশুরের একটার পরে আরেকটা ঢেউয়ের আছড়ে পড়া দেখে চলছিল শুভ্র। পেছন হতে খিল খিল করে হেসে ওঠে অপরুপা ষোড়শীনি। শুভ্র'র এমন ঢেউ গোনা দেখে চপল চাহনি নিয়ে বলে বসে, বানিশান্তায় আইয়া কেউ এরাম কইরা খাড়ায়া খাড়ায়া পানি দেহে? হি হি, কেমন পুরুষ! ধোন নাইক্কা!

মেয়েটির নাম রুপালি! এত সুন্দরী একটা মেয়েকে বানিশান্তায় আবিস্কার করাটা সত্যি দুঃখ জনক। হয়তোবা তার এখানে আসবার পেছনে রয়েছে একটা মর্মান্তিক গল্প। শুধু রুপালি নয় এই পাড়ার প্রত্যেকটা রুপালির এমনকি খোদ বানিশান্তারই রয়েছে একটা দুঃখ ভরা অতীত।

পুরুষের যে সব সময় সেই বস্তুটা থাকতে হবে এটা জরুরী নয়, রুপালিকে ছোট্ট করে প্রতি উত্তর করে শুভ্র!
হা হা হা! এই নানীর ঘাটে ধোন ছাড়া কোন পুরুষ ঢুকেনা সাহেব। অবশ্য ঐ বস্তু নিয়ে আপনারা না ঢুকলে আমাদের পেট চলবে কি করে?
বানিশান্তার আর সেই দিন নেই সাহেব। অথচ এখানে নাকি একসময় দেশ বিদেশের খদ্দের গিজ গিজ করত। নাবিক, ব্যাবসায়ী, সারেং তাদের যাত্রা পথে বন্দরে যখন নোংগর তুলত তখন নাকি তাদের বিশ্রামের জায়গাই ছিল এই বানিশান্তা। এখন বানিশান্তায় কেউ মুততেও আসে না সাহেব।
অভিশাপ সাহেব, অভিশাপ! সমুদ্র দেবতা সহ্য করে ঠিক আছে কিন্তু আর কত পাপ সে সহ্য করবে সাহেব! তিন তিন বার বানিশান্তার ঠিকানা বদল হইছে কিন্তু সমুদ্র দেবতা কোথাও তারে থাকতে দেয় নাই, ভাইংগা নিয়া গেছে। ঝড় দিয়া পুরা গ্রাম লন্ড ভন্ড কইরা দিছে। খাবার পানির তো কোন জায়গা রাখে নাই। এরপরও আমরা কিছু মানুষ এখানে আছি, বানিশান্তা বড়ই মায়া সাহেব।
অনেক কথাই বললাম গো সাহেব! এখন কও পকেটে একশো টাকা আছে কিনা, থাকলে আমার ঘরে চলো দেখি। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত বহনি করি নাই। দাদা-মাসী আজ হয়তো আমার পিঠের চামড়া রাখবেনা।

আমার ঘরে যাওয়া লাগবেনা রুপালি! এই নাও তোমার একশ টাকা।

রুপালির ঠোটে তখন ছিল বিদ্রুপের হাসি। ভিক্ষা চাইনি গো সাহেব। কাজ করে মজুরী চেয়েছিলাম। আপনারা যেমন অপিসে যান, কাজ করেন আর মাস শেষে মাইনে নেন। আমাদের এটাও তো তেমনই! আমরাও কাজ করে মজুরী নেই! ফারাকটা শুধু সামাজিক স্বীকৃতির!

রুপালি একশো টাকা নেয় নাই। সংগীরা সকলেই চলে এসেছে। নৌকাও ছেড়ে দিয়েছে। বানিশান্তা ছাড়িয়ে নৌকা এগিয়ে চলছে সভ্য নগরীর দিকে।

সহস্র নির্ঘুম রাত্রী তাড়িয়ে,
শ্রান্ত নাবিক! ফিরতি পথে,
এক জোড়া শোন্য পৌরুষ দৃষ্টি!
জানে শুধু, মমতাময়ী বানিশান্তা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:২৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×