somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ ও তার কল্প কাহিনী

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের লেখার লিঙ্কঃ

Click This Link
মুগীরাহ্ ইবনে শু‘বাহর কাহিনী
সাইফের রেওয়াইয়াতে মুগ¦ীরাহ্র ব্যভিচার
ত্বাবারী১ হিজরী ১৭ সালের ঘটনাবলী বর্ণনা প্রসঙ্গে সাইফের সূত্রে মুগ¦ীরাহ্ ইবনে শু‘বাহ্র ব্যভিচার সংক্রান্ত একটি কাহিনী উল্লেখ করেছেন। কাহিনীটি সংক্ষেপে এই ঃ
মুগ¦ীরাহ্ ইবনে শু‘বাহ্ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিলেন বলে যে কিছু লোক সাক্ষ্য দিয়েছিলো তার কারণ এই যে, মুগ¦ীরাহ্ ও অন্যতম সাক্ষ্যদাতা আবু বাক্রাহ্র২ মাঝে শত্র“তা ছিলো। প্রদত্ত সাক্ষ্য অনুযায়ী, বছরায় আবু বাক্রাহ্ ও মুগ¦ীরাহ্র কক্ষ ছিলো মুখোমুখী এবং উভয় কক্ষের জানালাও ছিলো মুখোমুখী। একদিন আবু বাক্রাহ্র কক্ষে কয়েক জন কথাবার্তায় মশগুল থাকা কালে হঠাত বাতাসে জানালা খুলে যায়। তখন আবু বাক্রাহ্ জানালা বন্ধ করার জন্যে উঠে দাঁড়ান। এ সময় ঘটনাক্রমে বাতাসে মুগ¦ীরাহ্র কক্ষের জানালাও খুলে গেলো। তখন মুগ¦ীরাহ্র ওপর আবু বাক্রাহ্র দৃষ্টি পড়লো; এ সময় মুগ¦ীরাহ্ একজন নারীর দুই পায়ের মাঝখানে অবস্থান করছিলেন। আবু বাক্রাহ্ তাঁর কক্ষে অবস্থানরত লোকদেরকে বললেন ঃ “তোমরা ওঠো ও দেখো।” তারপর বললেন ঃ “তোমরা সাক্ষী থাকো।” সবাই বললো ঃ “এই নারী কে?” আবু বাক্রাহ্ বললেন ঃ “উম্মে জামীল।”৩ তারা বললো ঃ “আমরা শুধু তার শরীরের নীচের অংশ দেখেছি, কিন্তু তার চেহারা দেখি নি।” অতঃপর উক্ত নারী উঠে দাঁড়ালে তারা ব্যভিচারকারী পুরুষটিকে শনাক্ত করার সিদ্ধান্ত নিলো।
এরপর সাক্ষ্যের ধরন সম্পর্কে বলা হয় যে, মুগ¦ীরাহ্ ওমরকে বলেন ঃ “এই গোলামদেরকে জিজ্ঞেস করুন যে, তারা আমাকে কী অবস্থায় দেখেছে? আমি কি তাদের দিকে মুখ করে ছিলাম, নাকি পিঠ দিয়ে ছিলাম? আর তারা ঐ নারীকে কী অবস্থায় দেখেছে ও শনাক্ত করেছে? তারা যদি আমার সামনের দিক দেখে থাকে তাহলে ঐ অসংরক্ষিত গৃহে কীভাবে আমি নিজেকে তাদের দৃষ্টি থেকে আড়াল করতে পারি? আর যদি পিছন দিক থেকে দেখে থাকে তাহলে আমি যখন আমার স্ত্রী সহ আমার গৃহে ছিলাম তখন শরীয়তের কোন বিধান বলে তারা আমার গৃহের ভিতরে দৃষ্টিপাত করেছিলো? আল্লাহ্র শপথ, আমি কেবল আমার স্ত্রীর সাথে শয্যাশায়ী ছিলাম। আর আমার স্ত্রী ও উম্মে জামীলের মধ্যে অ-সাদৃশ্য নেই৪।”
এরপর বলা হয়েছে, আবু বাক্রাহ্ ও নাফে‘৫ বলেন, “আমরা দু’জন মুগ¦ীরাহ্ ও উক্ত নারীকে পিছন দিক থেকে দেখেছি।” শেব্ল্৬ বলেন যে, তাঁদেরকে সামনের দিক থেকে দেখেছেন। কিন্তু যিয়াদ তাঁদের মতো সাক্ষ্য প্রদান করেন নি। তাই ওমর ঐ তিনজন সাক্ষীকে শরয়ী বিধান অনুযায়ী বেত্রাঘাত করার জন্যে আদেশ দেন এবং মুগ¦ীরাহ্কে বলেন ঃ “আল্লাহ্র শপথ, তোমার ব্যাপারে যদি পরিপূর্ণ সাক্ষ্য পাওয়া যেতো তাহলে আমি তোমাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করতাম।”
এই হলো সাইফের রেওয়াইয়াত অনুযায়ী মুগ¦ীরাহ্ ইবনে শু‘বাহ্ সংক্রান্ত কাহিনী।
সাইফ ব্যতীত অন্যান্যের বর্ণনা
বালাযুরী৭, মাওর্য়াদী৮, ইয়াকূবী৯, ত্বাবারী, ইবনে আছীর ও অন্যান্য ঐতিহাসিক হিজরী ১৭ সালের ঘটনাবলী বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন ঃ
মুগ¦ীরাহ্ বানী হেলালের আফ্ক্বাম্ বিন্ মেহজান্ বিন্ আবি ‘আম্র্ ইবনে শু‘বাহ্র কন্যা উম্মে জামীলের সাথে ওঠাবসা করতেন। উম্মে জামীলের স্বামীর নাম ছিলো হাজ্জাজ ইবনে ‘আতীক। সে ছিলো ছাক্বীফ গোত্রের লোক। (এ পর্যন্ত বালাযুরীর বর্ণনা) এরপর আবূল ফারাজের “আল-আগ¦ানী” গ্রন্থে১০ বর্ণিত কাহিনী ঃ
বছরার আমীর (প্রশাসক/ গভর্নর) মুগ¦ীরাহ্ ইবনে শু‘বাহ্ ছাক্বীফ গোত্রের রাক্বত্বা নাম্নী এক নারীর সাথে দেখাসাক্ষাৎ করতেন এবং গোপনে তার গৃহে যাতায়াত করতেন। উক্ত নারীর স্বামী ছিলো ছাক্বীফ গোত্রের হাজ্জাজ বিন্ ‘অতীক্। একদিন আবু বাক্রাহ্ মুগ¦ীরাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করেন ও জিজ্ঞেস করেন ঃ “কোথায় যাচ্ছো?” তিনি বললেন, “অমুক গোত্রের লোকদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করতে যাচ্ছি।” আবু বাক্রাহ্ মুগ¦ীরাহ্র জামার প্রান্ত ধরে বললেন ঃ “আমীরের জন্যে এটাই শোভনীয় যে, অন্যরা তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্যে আসবে, এটা নয় যে, তিনি অন্যদের সাথে সাক্ষাতের জন্যে যাবেন। ...”
বস্তুতঃ মুগ¦ীরাহ্র অভ্যাস ছিলো এই যে, তিনি দিনের মধ্যভাগে প্রশাসনিক ভবনের বাইরে আসতেন। আবু বাক্রাহ্ তাঁকে দেখলেই বলতেন ঃ “আমীর কোথায় যাবার চিন্তা করছেন?” তিনি জবাবে বলতেন ঃ “একটা কাজ আছে।” আবু বাক্রাহ্ বলতেন ঃ “কী কাজ? অন্যদেরই উচিৎ আমীরের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসা, এটা ঠিক নয় যে, আমীর তাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাবেন।”
ঐতিহাসিকগণ বলেন ঃ মুগ¦ীরাহ্ যে নারীর নিকট আসা-যাওয়া করতেন সে ছিলো আবু বাক্রাহ্র প্রতিবেশিনী। বলা হয় ঃ একদিন আবু বাক্রাহ্, তার দুই ভাই নাফে‘ ও যিয়াদ এবং শেব্ল্ বিন্ মু‘আব্বেদ নামে অপর এক ব্যক্তি আবু বাক্রাহ্র কক্ষে বসে ছিলেন। এ সময় বাতাসে আবু বাক্রাহ্র কক্ষের মুখোমুখী তাঁর ঐ প্রতিবেশিনীর কক্ষের জানালা খুলে যায়। তখন এই লোকদের দৃষ্টি সামনের বাড়ীর কক্ষের মধ্যে চলে যায় এবং তাঁরা দেখতে পান যে, মুগ¦ীরাহ্ একজন নারীর সাথে যৌন কর্মে রত আছেন। তখন আবু বাক্রাহ্ বলেন ঃ “তোমরা এক কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছো এবং তোমাদের ঘাড়ে একটি দায়িত্ব বর্তেছে। এখন সবাই ভালো করে লক্ষ্য করো।” সবাই ভালো করে লক্ষ্য করলেন।
এরপর আবু বাক্রাহ্ তাঁর বাড়ীর দোতলা থেকে নীচে নেমে এলেন ও বসে থাকলেন। এরপর মুগ¦ীরাহ্ ঐ বাড়ী থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন। আবু বাক্রাহ্ মুগ¦ীরাহ্কে ক্ষললেন ঃ “তোমার কাজের পর্দা উন্মোচিত হয়ে গেছে। অতএব, তোমাকে তোমার দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে।”
মুগ¦ীরাহ্ চলে গেলেন। তিনি যোহরের নামাযের সময় নামাযের ইমামতী করতে এলে আবু বাক্রাহ্ তাঁকে বাঁধা দেন এবং বলেন ঃ “তুমি যে কাজ করেছো তা তো করেছোই, এমতাবস্থায় তুমি আমাদের নামাযের ইমামতী করতে পারো না।” লোকেরা বললো ঃ “নামায আদায় করতে দাও, কারণ, সে তো আমীর। তবে তোমরা ঘটনা ওমরকে লিখে জানাও।”
তাঁরা ওমরকে লিখলেন। ওমরের নিকট থেকে জবাব এলো যে, “তোমরা সকলে একত্রে আমার কাছে চলে এসো।” মুগ¦ীরাহ্ রওয়ানা হবার জন্যে প্রস্তুত হলেন এবং এ সময় ‘আক্বীলাহ্ নাম্নী আরব বংশোদ্ভূত একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্রীতদাসীকে একজন খাদেম সহ আবু মূসার১১ নিকট পাঠালেন।
মুগ¦ীরাহ্ ওমরের নিকট এলে তিনি বিচারের মজলিস বসালেন। তিনি মুগ¦ীরাহ্কে সাক্ষীদের সহ আহ্বান জানালেন। আবু বাক্রাহ্ এগিয়ে এলেন। ওমর আবু বাক্রাহ্কে জিজ্ঞেস করলেন ঃ “তুমি মুগ¦ীরাহ্কে ঐ নারীর দুই উরুর মাঝে দেখেছো?” তিনি বললেন ঃ“ জ্বী, আল্লাহ্র শপথ, যেনো এখনো ... দেখতে পাচ্ছি।” মুগ¦ীরাহ্ বললেন ঃ “আশ্চর্য! খুব ভালোভাবে দেখেছো!” আবু বাক্রাহ্ বললেন ঃ “আল্লাহ্ যে কাজের দ্বারা তোমাকে লাঞ্ছিত করেছেন আমি তা ভালোভাবে দেখে কোনো দোষ করি নি।” ওমর আরো সুনির্দিষ্টভাবে প্রশ্ন করলেন যে, আবু বাক্রাহ্ মুগ¦ীরাহ্কে যৌনকর্ম অব্যাহত রাখা অবস্থায় দেখেছেন কিনা? আবু বাক্রাহ্ এবারও ইতিবাচক সাক্ষ্য দিলেন। তখন ওমর বললেন ঃ “মুগ¦ীরাহ্! তোমার এক চতুর্থাংশ শেষ হয়ে গেলো।”১২
আবূল ফারাজ লিখেছেন ঃ এই শেষোক্ত কথাটি আলীর উক্তি।
এরপর ওমর নাফে‘কে ডাকলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন ঃ “তুমি কী সাক্ষ্য দিচ্ছো?” নাফে‘ বললেন ঃ “আবু বাক্রাহ্ যে সাক্ষ্য দিয়েছেন আমিও সে সাক্ষ্যই দিচ্ছি।” কিন্তু ওমর আরো সুনির্দিষ্টভাবে প্রশ্ন করলেন যে, নাফে‘ মুগ¦ীরাহ্কে যৌনকর্ম অব্যাহত রাখা অবস্থায় দেখেছেন কিনা? নাফে‘ এবারও ইতিবাচক সাক্ষ্য দিলেন। তখন ওমর বললেন ঃ “মুগ¦ীরাহ্! তোমার অর্ধেক শেষ হয়ে গেলো।”
এরপর তৃতীয় সাক্ষী শেব্ল্ বিন্ মু‘আব্বেদ্কে আহ্বান করা হলো। তিনিও একই সাক্ষ্য দিলেন। তখন ওমর বললেন ঃ “মুগ¦ীরাহ্! তোমার তিন চতুর্থাংশ শেষ হয়ে গেলো।”
বর্ণনাকারী বলেন ঃ বিচারের ঘটনা এ পর্যায়ে উপনীত হলে মুগ¦ীরাহ্ মুহাজিরদের নিকট গেলেন এবং তিনি এতই ক্রন্দন করলেন যে, এর ফলে তাঁরাও তাঁর সাথে ক্রন্দন করলেন। এরপর তিনি উম্মাহাতুল মু’মিনীনের কাছে গিয়ে ক্রন্দন করলেন এবং তাঁরাও ক্রন্দন করলেন।
বর্ণনাকারী বলেন ঃ যিয়াদ ঐ মজলিসে উপস্থিত ছিলেন না। ওমর নির্দেশ দিলেন যে, এ তিন জন সাক্ষীকে আলাদা রাখা হোক এবং মদীনার কোনো লোকই যেন তাদের সাথে ওঠাবসা না করে। তিনি যিয়াদের এসে পৌঁছার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলেন।
যিয়াদ এসে পৌঁছলে এবং মসজিদে বসলে মুহাজির ও আনছারদের মধ্যকার বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ তাঁকে ঘিরে ধরলেন।
মুগ¦ীরাহ্ বলেন ঃ এ সময় আমি একটা কথা বলার জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু যিয়াদকে আসতে দেখে ওমর বললেন ঃ “আমি এমন এক ব্যক্তিকে দেখতে পাচ্ছি আল্লাহ্ যার মুখ দিয়ে কখনোই একজন মুহাজির পুরুষকে লাঞ্ছিত করবেন না।”১৩
আগ¦ানীতে আবু ওসমান নাহ্দী১৪ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রথম সাক্ষী যখন সাক্ষ্য দিলেন তখন ওমরের চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেলো। এরপর দ্বিতীয় সাক্ষী সাক্ষ্য দিলে ওমরের চেহারায় ভাঙ্গা অবস্থা প্রকাশ পেলো। আর তৃতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্যের পর ওমরের চেহারা ছাই রঙের হয়ে গেলো।
যিয়াদ এলে ওমর তাঁর দিকে মাথা তুলে তাকালেন এবং গর্জন করে উঠলেন ঃ “কী সংবাদ আছে তোমার কাছে, ওহে ঈগলের বিষ্ঠা?” (আবু ওসমান নাহ্দী এ বাক্য উচ্চারণের সময় ওমরের চেহারার অবস্থা ও কথার ধরন প্রদর্শনের জন্যে এমন ভয়ঙ্কর গর্জন করে ওঠেন যে, বর্ণনাকারী আবদুল কারীম ইবনে রাশীদ বলেন, আবু ওসমানের চীৎকারে ও গর্জনে আমার বেহুশ হবার বেশী বাকী ছিলো না।)
তখন মুগ¦ীরাহ্ বললেন ঃ “হে যিয়াদ! তোমাকে আল্লাহ্র কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি এবং কিয়ামত দিবসের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি; আল্লাহ্, আল্লাহ্র কিতাব, আল্লাহ্র রাসূল ও আমীরুল মু’মিনীন আমার খুনকে রক্ষা করেছেন যদি না তুমি সীমালঙ্ঘন করো এবং যা দেখো নি তা বলো।” তখন যিয়াদ (ওমরকে লক্ষ্য করে) বললেন ঃ “হে আমীরুল মু’মিনীন! প্রকৃত অবস্থা অন্যদের নিকট যেরূপ আমার নিকট তদ্রƒপ নয়। তবে আমি একটি অশ্লীল অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি এবং দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের শব্দ শুনেছি এবং মুগ¦ীরাহ্কে দেখেছি যে, ঐ নারীকে তার নীচে ধরে রেখেছিলো।” তখন ওমর যিয়াদকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তিনি মুগ¦ীরাহ্কে সুরমাদানীতে সুরমাকাঠি প্রবেশ করানো ও বের করার অনুরূপ অবস্থায় ১৫ দেখেছেন কিনা? ১৬ আবূল ফারাজ বলেন ঃ বিপুল সংখ্যক বর্ণনাকারী বলেছেন, যিয়াদ বলেন যে, তিনি মুগ¦ীরাহ্র অণ্ডকোষ ওঠানামা করতে দেখেছেন। তখন ওমর পূর্বেকার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলেন। জবাবে যিয়াদ বললেন যে, তিনি তা দেখেন নি।১৭ তখন ওমর বলে উঠলেন ঃ “আল্লাহু আকবার! মুগ¦ীরাহ্, ওঠো, ঐ তিন জনকে চাবুক মারো।” মুগ¦ীরাহ্ এগিয়ে এলেন এবং আবু বাক্রাহ্কে আশি চাবুক মারলেন। অতঃপর তিনি অন্য দু’জনকেও একই সংখ্যক চাবুক মারলেন। অনেকে বলেছেন যে, স্বয়ং মুগ¦ীরাহ্ চাবুক মারেন নি।
হাকেম নিশাপুরীর মুস্তাদরাকে এবং যাহাবীর “তাল্খীছ্”১৮-এ বলা হয়েছে, মুগ¦ীরাহ্ মুক্তি পেয়ে গেলে ওমর তাকবীর বলে উঠলেন ও আনন্দ প্রকাশ করলেন এবং যিয়াদ ব্যতীত সকল সাক্ষীকে চাবুক মারলেন।
ফুতূহুল্ বুল্দানে বলা হয়েছে, শেব্ল্ Ÿলেন ঃ “সত্য সাক্ষ্যকে চাবুক মারছো এবং আল্লাহ্র নাযিলকৃত শাস্তিবিধিকে নস্যাত করছো?” আর আবু বাক্রাহ্ চাবুক খাওয়ার পর বলেন ঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুগ¦ীরাহ্ যেনা করেছে।” ওমর বললেন ঃ “ওকে আবারো চাবুক মারো।” আলী বললেন ঃ “আবু বাক্রাহ্র এ কথাকে যদি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করলে আমিও আপনার বন্ধুকে সঙ্গে সার করবো।”১৯
কানযুল্ ‘উম্মাল্, মুন্তাখাবে কানযুল্ ‘উম্মাল, ও তারীখে ইয়াকূবীতে কাছাকাছি শব্দাবলী ব্যবহার করে আলীর এ বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। আগ¦ানী ও র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦ায় কিছুটা ভিন্নভাবে বলা হয়েছে যে, আলী বলেন ঃ “আপনি যদি তাকে পুনরায় চাবুক মারেন তাহলে আপনার বন্ধুকে সঙ্গে সার করতে হবে।” ফলে ওমর তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরে যান।
এ প্রসঙ্গে আবূল্ ফারাজ বলেন ঃ “আলীর এ কথা বলার অর্থ এই যে, ওমর যদি আবু বাক্রাহ্র ওপরে পুনরায় শরয়ী শাস্তি কার্যকর করতেন তাহলে তাঁর সাক্ষ্য দুই সাক্ষ্যের সমতুল্য হতো। ফলে মুগ¦ীরাহ্কে সঙ্গে সার করতে হতো।
বর্ণিত আছে যে, আবু বাক্রাহ্ যে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সে ব্যাপারে ওমর তাঁকে তাওবাহ্ করার প্রস্তাব দেন। আবু বাক্রাহ্ বলেন ঃ “তুমি কি এ উদ্দেশ্যে এ প্রস্তাব দিচ্ছো যে, এর পরে যদি আমি কোনো ব্যাপারে সাক্ষী হই তো আমার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে?” ওমর বললেন ঃ “হ্যা।” আবু বাক্রাহ্ বললেন ঃ “অতঃপর আমি যদ্দিন দুনিয়ার বুকে আছি আর কখনো দুই ব্যক্তির মধ্যকার কোনো ব্যাপারে সাক্ষ্য হবো না।”২০
সাক্ষীদের বিরুদ্ধে শরয়ী শাস্তি কার্যকর করা হলে মুগ¦ীরাহ্ বলেন ঃ “আল্লাহু আকবার! সেই আল্লাহ্র প্রশংসা যিনি তোমাদেরকে লাঞ্ছিত করেছেন।” তখন ওমর তাঁকে ধমক দিয়ে বলেন ঃ “চুপ করো। আল্লাহ্ সেই জায়গাটিকে লাঞ্ছিত করুন এরা তোমাকে যে জায়গায় দেখেছে।”
বর্ণিত হয়েছে যে, আবু বাক্রাহ্ যে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তার ওপরে অটল ছিলেন এবং তিনি বহু বার আল্লাহ্র নামে শপথ করে বলেন যে, সে দৃশ্য তাঁর চোখের সামনে ভাসছে।
অপর দুই জন সাক্ষী প্রকাশ্যে তাওবাহÍ ঘোষণা দিলে পরবর্তী কালে তাঁদেরকে সাক্ষ্য প্রদানোপযোগী বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু আবু বাক্রাহ্কে সাক্ষ্যের জন্যে ডাকা হলে তিনি বলতেন ঃ “অন্যদেরকে ডাকো; যিয়াদ আমার সাক্ষ্যদানের অধিকারকে ধ্বংস করে দিয়েছে।”
ইবনে আবদুল র্বা বলেন যে, আবু বাক্রাহ্ তাঁর মতে অটল থাকেন , কিন্তু অপর দু’জন তাওবাহ্ করেন। আর আগ¦ানী ও র্শাহে নাহ্জুল্ বালাগ¦ায় বলা হয়েছে যে, রাক্বত্বা নামে যে নারীর সাথে মুগ¦ীরাহ্ অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলো বলে অভিযোগ করা হয় মুগ¦ীরাহ্ কুফার প্রশাসক থাকাকালে তার নিকট যাতায়াত করতেন এবং সে তাঁর প্রয়োজন পূরণ করতো।
আবূল ফারাজ বলেন ঃ এ ঘটনার পর একবার ওমর হজ্বে গেলে ঘটনাক্রমে তিনি সেখানে রাক্বত্বা-কে দেখতে পান এবং মুগ¦ীরাহ্ও তখন সেখানে ছিলেন। ওমর রাক্বত্বা-কে দেখিয়ে মুগ¦ীরাহ্কে জিজ্ঞেস করেন ঃ “তুমি কি এই নারীকে চেনো?” মুগ¦ীরাহ্ বলেন ঃ “হ্যা, এ হচ্ছে আলীর কন্যা উম্মে কুলসুম।”২১ তখন ওমর বলেন ঃ “আফসোস তোমার জন্যে! তুমি আমার নিকটও অপরিচিতের ভান করছো? আল্লাহ্র শপথ, আমি মনে করি না যে, আবু বাক্রাহ্ তোমার ব্যাপারে মিথ্যা বলেছিলো। তাই আমি যখনই তোমাকে দেখি তখনই আমার ভয় হয় যে, হয়তো আসমান থেকে আমার ওপর প্রস্তর বর্ষিত হবে।”
হাস্সান বিন্ ছাবেত্ মুগ¦ীরাহ্র নিন্দা করে নিম্নোক্ত কবিতাটি রচনা করেছেন ঃ
“যদি নিন্দনীয়তাকে যুক্ত করতে হয় কোনো বান্দাহ্র সাথে, করবে
বানূ ছাক্বীফের সেই কুৎসিত চেহারার একচোখওয়ালার সাথে
তুমি ত্যাগ করলে দ্বীনকে ও ইসলামকে, যবে
দিনের প্রথম ভাগে প্রকাশ হলো তোমার তরে অর্ধাবৃতা নারী
ফিরে এলো তোমার যৌবন আর চরিতার্থ করলে কামপ্রবৃত্তি
মধুর বয়সী ক্রীতদাসীদের সাথে।”
বালাযুরী বলেন২২ ঃ খলীফাহ্ ওমর বিন্ খাত্তাব পুনরায় যখন মুগ¦ীরাহ্কে কূফার আমীর নিয়োগ করতে চাইলেন তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন ঃ “তোমার নামে যদি পুনরায় প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে ফরমান জারী করি তো তোমার প্রতি যা আরোপ করা হয় আবারো তাতে প্রত্যাবর্তন করবে?” মুগ¦ীরাহ্ বলেন ঃ “না।”
হামাভীও২৩ মুগ¦ীরাহ্র বিরুদ্ধে ব্যভিচারের ইঙ্গিত করেছেন।
উপসংহার
মুগ¦ীরাহ্র ব্যভিচার সংক্রান্ত ঘটনার বর্ণনায় সাইফের রেওয়াইয়াতের সূত্র হচ্ছে মুহাম্মাদ, ত্বাল্হাহ্ ও মুহাল্লাব। এদের ব্যাপারে আমরা যিয়াদের বংশধারা সংশোধন সংক্রান্ত তার রেওয়াইয়াত নিয়ে পর্যালোচনা কালে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এবার আমরা মুগ¦ীরাহ্ সংক্রান্ত তার রেওয়াইয়াতের মূল পাঠের প্রতি দৃষ্টি দেব।
সাইফ বলেছে যে, আবু বাক্রাহ্, তাঁর দুই ভাই ও শেব্ল্ মুগ¦ীরাহ্র গৃহের মুখোমুখী কক্ষে বসে ছিলেন, আর বাতাস উভয় কক্ষের জানালা খুলে ফেলেছিলো এবং তাঁরা মুগ¦ীরাহ্কে তাঁর ঘরে একজন নারীর সাথে শয্যাশায়ী অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন। আর সে নারী ছিলো উম্মে জামীল Ñ যে মুগ¦ীরাহ্র খেদমত করতো। আর তাঁরা কেবল দু’জন মানুষের নীচের অংশই দেখেছিলেন; চেহারা দেখেন নি। আর নারীটি উঠে দাঁড়ালে কেবল তখনই তাঁরা পুরুষটিকে শনাক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। সাইফ আরো বলে যে, তাঁরা তাঁকে সামনে থেকে দেখেছেন, নাকি পিছন থেকে তা জিজ্ঞেস করার জন্যে মুগ¦ীরাহ্ ওমরকে অনুরোধ জানান। শুধু তা-ই নয়, মুগ¦ীরাহ্ দাবী করেন যে, তিনি তাঁর স্ত্রীর সাথে শয্যাগ্রহণ করেছিলেন এবং প্রশ্ন করেন যে, এ অবস্থায় তাঁরা কোন্ অধিকারে তাঁর ঘরের মধ্যে তাকিয়ে দেখেছিলেন? এরপর সাইফ যিয়াদ বাদে বাকী তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের মধ্যেও মতপার্থক্য দেখিয়েছে। আর ওমর মুগ¦ীরাহ্কে বলেন ঃ “আল্লাহ্র শপথ, তোমার ব্যাপারে যদি পরিপূর্ণ সাক্ষ্য পাওয়া যেতো তাহলে আমি তোমাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করতাম।”
অথচ অন্য সকল রেওয়াইয়াত মতেই মুগ¦ীরাহ্ গোপনে উম্মে জামীলের গৃহে যাতায়াত করতেন; অন্য কোনো রেওয়াইয়াতেই বলা হয় নি যে, উম্মে জামীল মুগ¦ীরাহ্র গৃহে যাতায়াত করতো। অন্য সকল রেওয়াইয়াত মতেই সাক্ষীগণ মুগ¦ীরাহ্কে উম্মে জামীলের গৃহে তার সাথে যেনায় লিপ্ত অবস্থায় দেখেছেন। অন্য কেউই বলছেন না যে, উম্মে জামীল মুগ¦ীরাহ্র খেদমত করতো, বা মুগ¦ীরাহ্ সাক্ষীদেরকে ঐ ধরনের প্রশ্ন করেছিলেন বা ওমরকে প্রশ্ন করার জন্যে অনুরোধ করেছিলেন বা স্বীয় স্ত্রীর সাথে শয্যাগ্রহণের দাবী করেছিলেন অথবা তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের মধ্যে কোনোরূপ পার্থক্য ছিলো। কিন্তু যেহেতু সাইফের উদ্দেশ্য ছিলো মুগ¦ীরাহ্কে নির্দোষ প্রমাণ করা এ কারণেই সে এতগুলো মিথ্যা সম্বলিত তার রেওয়াইয়াত রচনা করেছে। আর দুর্ভাগ্য যে, ত্বাবারীও এ কাহিনী তাঁর ইতিহাসে স্থান দিয়েছেন । ফলে তা ব্যাপক প্রচলন লাভ করেছে।
পাদটীকা ঃ
১. ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৭০ ও ১৭১।
২. হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর অন্যতম ছাহাবী। তাঁর প্রকৃত নাম নাফী‘ বিন্ হারেছ্ বিন্ কাল্দাহ্। তিনি হিজরী ৫১ সালে ইন্তেকাল করেন।
৩. উম্মে জামীল মুগ¦ীরাহ্ এবং অন্যান্য আমীর ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ীতে কাজ করতো ও এ সুবাদে আসা-যাওয়া করতো।
৪. অর্থাৎ চেহারা না দেখলে দু’জন নারীর শরীরের নীচের অংশের মধ্যে সাদৃশ্যহীনতা শনাক্ত করা দুঃসাধ্য।
৫. নাফে‘ বিন্ র্হাছ্ বিন্ কাল্দাহ্ ছাক্বাফী। তার মাতা সুমাইয়াহ্ ছিলো র্হাছের ক্রীতদাসী এবং র্হাছের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নাফে‘ তারই সন্তান। (আল্-ইস্তি‘আব, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৫১২ এবং আল্-ইছাবাহ্, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৫১৪)
৬. শেব্ল্ বিন্ মু‘আব্বেদ ‘উবাইদ্ বিন্ হারেছ। তিনি ছাহাবী, নাকি তাবে‘ঈ সে ব্যাপারে বিতর্ক আছে। (আল-ইছাবাহ্, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৫৯)
৭. ফুতূহুল্ ব্দুান্, পৃঃ ৩৫২।
৮. আল্-আহ্কাম্, পৃঃ ২৮০।
৯. তারীখে ইয়াকূবী, ২য় খণ্ড/ ১২৪।
১০. ১৪তম খণ্ড, পৃঃ ১৩৯-১৪২।
১১. খলীফাহ্ ওমর কর্তৃক মুগ¦ীরাহ্র স্থলে নিয়োজিত আমীর।
১২. সূরাহ্ আন্-নূর-এর ৪নং আয়াতে ব্যভিচার প্রমাণের জন্যে চার জন পুরুষ সাক্ষী হাযির করার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এ দিকে ইঙ্গিত করেই হযরত ওমর বলেছেন যে, মুগ¦ীরাহ্র বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপরাদ প্রমাণিত হবার জন্যে প্রয়োজনীয় চার জন সাক্ষীর একজন এরূপ সাক্ষ্য দিয়েছেন। Ñ অনুবাদক
১৩. ইবনে খাল্লেকানের “ওয়াফিয়াতুল্ আ‘ইয়ান্”(৮ম খণ্ড, পৃঃ ৪০৬), তারীখে ইয়াকূবী (২য় খণ্ড, পৃঃ ১২৪), কান্যুল্ ‘উম্মাল্ (৩য় খণ্ড, পৃঃ ৮৮, হাদীছ নং ১২৬৮২), আবূল ফিদা (১ম খণ্ড, পৃঃ ১৭৭)-এ শব্দের সামান্য পার্থক্য সহ খলীফাহ্ ওমরের এ বাক্যটি উদ্ধৃত হয়েছে।
১৪. আবু ওসমান নাহ্দী হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর যুগে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ক্বাদেসিয়াহ্ ও তদপরবর্তী বিভিন্ন যুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ১৩০ বছর জীবিত ছিলেন।
১৫. অনেক ফকীহ্ এ অবস্থাটিকে “দোয়াতের মধ্যে কলম” অবস্থার উপমা দিয়েছেন। বলা বাহুল্য যে, হযরত ওমরের দেয়া উপমা আরো এক ধাপ অগ্রসর। কারণ এত অব্যাহত অবস্থার কথা বলা হয়েছে। Ñঅনুবাদক
১৬. হযরত ওমর এ পর্যায়ে চার জন সাক্ষীকে অভিন্ন বাক্যে প্রশ্ন করেন? ব্যভিচারের অপরাধ গুরুতর এবং তার শাস্তিও গুরুতর, এ কারণে চরম পর্যায় সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে এ শাস্তি (বিবাহিত অপরাধীর ক্ষেত্রে প্রস্তরাঘাতে হত্যা ও অবিবাহিতের ক্ষেত্রে একশ’ বেত্রাঘাত) কার্যকর করা সঙ্গত নয় বিবেচনায় এরূপ প্রশ্ন করা হয়। বিচারের ক্ষেত্রে তা অপরিহার্য বিবেচনা করা হলেও এখানে যথা সম্ভব অশ্লীলতা এড়ানোর জন্যে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হলো। বর্তমান (চতুর্থ সাক্ষীর) ক্ষেত্রে প্রশ্ন ও সাক্ষীর জবাবের মধ্যকার পার্থক্যের মাত্রা নির্দেশের স্বার্থে এতটুকু উল্লেখ ছাড়া গত্যন্তর ছিলো না। Ñঅনুবাদক
১৭. এখানে শ্লীলতার স্বার্থে যিয়াদের জবাব সংক্ষেপ করা হলো, তবে মূল কথাটি উল্লেখ করা হলো। বস্তুতঃ যে বিষয়ে নিশ্চিত হবার জন্যে প্রশ্নটি করা হয় জবাব থেকে তা নিশ্চিতভাবেই প্রতিপন্ন হয়। নচেৎ প্রশ্নে যা দেখার কথা বলা হয়েছে ঐ অবস্থায় যেনাকারী ইচ্ছাকৃতভাবে দেখাতে না চাইলে কারো পক্ষেই তা দেখা সম্ভব নয়, কেবল যিয়াদ যা বলেছে তা-ই দেখা সম্ভব। (অন্য তিন সাক্ষী হয়তো এরূপ দেখার ভিত্তিতেই প্রশ্নের ইতিবাচক জবাব দিয়েছিলেন।) প্রশ্নে যা দেখা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে হুবহু তা দেখাকে শর্ত করা হলে কোনো যেনাকারীর জন্যেই শাস্তি কার্যকর করা যাবে বলে মনে হয় না। বলা বাহুল্য যে, কোরআন মজীদে এরূপ শর্ত নেই। অতএব, চাক্ষুষ দর্শন থেকে যেনা সম্পর্কে কারো মনে ইয়াকীন হাসিল হলেই তার সাক্ষ্য যেনার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হওয়া উচিৎ। Ñ অনুবাদক
১৮. ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪৪৮।
১৯. কারণ, তাহলে তা চতুর্থ দফা সাক্ষ্য বলে গণ্য হবে। যদিও একই সাক্ষীর দ্বিতীয় বার সাক্ষী দেয়ার অধিকার নেই, তথাপি আদালত যদি তাকে নতুন করে সাক্ষ্য প্রদানের সুযোগ দেয় তাহলে সে নতুন সাক্ষী হিসেবে পরিগণিত হবে। সে ক্ষেত্রে যেনা সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে চার জন সাক্ষীর সাক্ষ্যের শর্ত পূর্ণ হয়ে যাবে। অতএব, এ ধরনের সাক্ষ্য গ্রহণের সুযোগ নেই। অন্যদিকে ব্যক্তি যা সাক্ষ্য দিয়েছে তা আদালত কর্তৃক গৃহীত না হওয়া সত্ত্বেও সে তা সত্য বলেই দাবী করেছে, অতএব, সে তার দাবীর ওপরে অটল থাকতে পারে যদিও অন্যদের নিকট তা গ্রহণীয় হবে না।Ñ অনুবাদক
২০. এ থেকে সুস্পষ্ট যে, হযরত ওমরের দৃষ্টিতে আইনের দাবীতে তাঁর সাক্ষ্য সত্য বলে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত না হলেও আবু বাক্রাহ্ তাঁর প্রদত্ত সাক্ষ্যের সত্যতার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত ও নিশ্চিন্ত ছিলেন এবং এ কারণেই পরবর্তী কালে সাক্ষ্য দানের অধিকার পাবার লক্ষ্যে বাহ্যিক তাওবাহ্র মাধ্যমে সত্যকে মিথ্যা বলে স্বীকার করতে প্রস্তুত হন নি। (উল্লেখ্য, আবু বাক্রাহ্ একজন বিশিষ্ট ছাহাবী এবং তাঁর বর্ণিত বহু হাদীছ বিভিন্ন হাদীছ সংকলনে স্থানলাভ করেছে।) Ñ অনুবাদক
২১. উল্লেখ্য, উম্মে কুলসুম ছিলেন হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর ওফাতের পরে হযরত আলী (আঃ) যে বিবাহ করেন সে স্ত্রীর গর্ভজাত কন্যা। তৎকালে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাল্যবিবাহের প্রচলন ছিলো। (উল্লেখ্য, ইসলামে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ নয়, তবে পাত্র-পাত্রী উভয়ে বালেগ না হওয়া পর্যন্ত যৌন সম্পর্ক বাঞ্ছিত নয়।) হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর সাথে হযরত আয়েশাহ্র বিবাহও এ ধরনের বিবাহ ছিলো। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই হযরত আলী (আঃ) তাঁর শিশু কন্যাকে খলীফাহ্ ওমরের নিকট বিবাহ দিয়েছিলেন। অতএব, উক্ত ঘটনার সময় উম্মে কুলসুম ছিলেন নেহায়েতই বালিকা। এমতাবস্থায় মুগ¦ীরাহ্ যে রাক্বত্বা-কে উম্মে কুলসুম বলে উল্লেখ করেন তা যে, রাক্বত্বাকে চেনেন না বলে বুঝানোর জন্যে শুধু তা-ই নয়, বরং এ ধারণাকে অধিকতর মযবূত করার লক্ষ্যে। আর হযরত ওমরের তা বুঝতে বাকী ছিলো না। Ñ অনুবাদক
২২. ফুতূহুল্ বুল্দান, পৃঃ ২৮৮।
২৩. মু‘জামুল্ বুল্দান, ২য় খণ্ড/ ১৭৯।

চলবে.....................।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×