somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আহমদ হাসান
জন্ম: ১০ ই শ্রাবন (২৭ জুলাই), ১৯৮৩ । B. A. & M. A ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কাজের মধ্যে একটাই ভাল পারি- পড়া। যেকোনো সূখপাঠ্য বই। জীবন দর্শন: সত্য সন্ধান। I AM A TRUTH-SEEKER. খুঁজতেছি। পেলে জানাবো।

ভাববাদ খন্ডন (পাঠানুভুতি)

১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত এক সপ্তাহ যাবত যে বইটা পড়ছি তার নাম-
“ভাববাদ খন্ডন”
লেখক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

মনে হতে পারে খুব বড় বই। আসলে তা নয়।
মাত্র ১৬০ পৃষ্ঠা।
বঙ্কিমের উপন্যাস সমগ্র (১৪ টা) পড়তে লেগেছিল ৮ দিন।
গল্পগুচ্ছ পড়তেও এক সপ্তাহ লেগেছিল।
পার্থিব, কড়ি দিয়ে কিনলাম এই জাতীয় বই ৫ দিনে পড়েছি।

কিন্তু এই পিচ্চি বইটা আমার মাথাটাই খারাপ করে দিচ্ছে।
বঙ্কিম যারা পড়েছেন তারা জানেন কি রকম কনসেনট্রেশন লাগে ওর শব্দ বুঝতে।
তাও আমার এতটা টায়ার্ড লাগেনি তার ১৪ টা উপন্যাস পড়ার পরে।

একটা বিষয় পড়ছি কিন্তু বুঝতে পারছি না
এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না।
সুতরাং রিপিট করতে হচ্ছে।

এতক্ষণ যা করলাম এর নাম তবলার তুকতাক, Prelude ।
এবার শুরু করা যাক।

ভাববাদ জিনিসটা কি?

যা বস্তুবাদ নয় তাই ভাববাদ।
বস্তুবাদ কি?
উমমমম...
যা ধরা যায়, ছোঁয়া যায়, অনুুভব করা যায়
মানে যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তা’ই বস্তু তথা বস্তুবাদ।
সোজা উত্তর। খুবই সহজ ।

তাইলে ঝামেলাটা কোথায়?
ঝামেলা হচ্ছে একজন্ বলছেন- বস্তুর বাইরে কিছু নেই।
মানে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় বা অতিন্দ্রীয় বলতে কোনো জগৎ নেই।
অর্থাৎ ভাববাদ নেই।
ব্যাস। সাথে সাথে একজন প্রতিবাদ করে উঠলেনঃ
মানি না একথা । ভাববাদ আছে। আছে আছে এবং আছে।
তিনি তার পক্ষে যুক্তি দিলেন ।
তিনি এও বুঝালেন বস্তু নয় ভাবই সব।
ভাববাদী এবার দাড়ালেন, না এ হয়না, মানি না।

অতএব উত্তর, প্রতিউত্তর চলতে থাকল।
এই আরকি। ঠোকাঠুকি।
সাধারণ মনুষ করলে হয় ঝগড়া।
আর অসাধারণরা করলে হয় সংলাপ, ডায়ালগ।

সাধারণ মানুষ নিত্য নতুন বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে।
আর এদের বিষয় সেই একটাঃ দর্শন; ভাববাদ না বস্তুবাদ ?
তিন হাজার বছর (আরো আগেরও হতে পারে) আগের এই ঝগড়ার
মিমাংসা আজও হয়নি।
জানি না কবে হবে।
সক্রেটিসেরও (৪৬৯ খ্রী. পূ.) আগে এর শুরু।
থ্যালিস (৬৪০ খ্রী. পূ. ) এর সময় । অথবা আরও আগে।
আমি জানিনা। জানতে চাই না ।
ধ্যাৎ, ছাতার দর্শণ ।

আমিই একা বিরক্ত তা না।
অনেকেই।
Jonathon Swift না কে যেন বলেছিলঃ
“দর্শন হচ্ছে এক অন্ধের পক্ষে এক অন্ধকার ঘরে
একটা কালো বেড়ালের সন্ধান,
ঘরটায় অবশ্য কোনো বেড়ালেরই চিহ্ন নেই।”

বইয়ের আলোচনায় আসি।
“ভাববাদ খন্ডন” বইয়ে দেবীপ্রসাদ
নতুন কোনো ঝগড়া করেণনি।
সেই পুরণো ঝগড়া। ভাববাদ বলে কিছু নেই।
তবে দেবীপ্রসাদ যেটা করেছেন সেটা অভিনব।
তিনি দেখিয়েছেন যে গোড়া থেকে অর্থাৎ
থেলিস থেকে এযাবত যারাই ভাববাদকে খন্ডন করতে চেয়েছেন
তাদের সবাইই একটা কমন ভুল করে যাচ্ছেন।

‘ঝগড়া’ কথাটা ভালো শুনাচ্ছে না, ‘খন্ডন’ ব্যাবহার করি।
ভুল টা হচ্ছে সবাই ভাববাদকে খন্ডন করছেন ভাববাদের অাশ্রয় নিয়ে।
অর্থাৎ পরোক্ষভাবে এরা ভাববাদকেই স্বীকৃতি দিচ্ছেন।
এই ভুলটা করেছেন ইমানুয়েল কান্টসহ মোটামুটি সবাই।
কান্টতো বলেছেনইঃ
“ভাববাদীর মারণ-মন্ত্র ভাববাদের বিরুদ্ধেই চেলে দেয়া হল।”

দেবীপ্রসাদের আপত্তি এখানেই ।
তার মতে “এভাবে ভাববাদ খন্ডন পরিনতি পেল চুড়ান্ত ভাববাদে।”

তাহলে লেখকের বক্তব্যটা কি?
তার কথা হচ্ছে- ভাববাদকে খন্ডন করতে হবে বস্তুবাদ দিয়ে।
সেজন্য যেতে হবে Marks Engels Lenin এর কাছে।

তাহলে কিভাবে কি?

মার্কসবাদ বিশ্বাষ করে প্রয়োগে। বাস্তবতায়।
ভাববাদ বিষয়ে লেনিন বলেনঃ “ এ-যেন এক মাথাহীন দর্শন।”
অর্থাৎ এরা ভাববাদিরা মানেন যে বুদ্ধি আছে,
কিন্তু মাথা আছে এটা মানেন না।

মার্কস বলেছেনঃ “দার্শনিকেরা এতদিন দুনিয়ার শুধু ব্যাখাই খুঁজেছে,
কিন্তু আসল কথা হল দুনিয়াকে বদল করবার কথা।”

দেবীপ্রসাদ মনে করেণ ভাববাদের জন্ম শ্রেনীবিভক্ত সমাজের গর্ভে।
এবং তাই সমাজ থেকে শ্রেনীবিভাগকে উচ্ছেদ না করলে
ভাববাদের হাত থেকে মুক্তি মিলবে না।

বুঝতেছি লেখার ধাঁচ কঠিনতর লাইনে চলে যাচ্ছে।
সুতরাং লাগাম টানা দরকার।

লেখক যা বলতে চেয়েছেন তার সারমর্ম হচ্ছে যে- দর্শন
আর ভাববাদ মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।
আজ যাকে দর্শন বলে আমরা মানছি তার জন্ম
শ্রেনীবিভক্ত সমাজের গর্ভে, সে লালিত-পালিত হয়েছে
শ্রেণীবিভক্ত সমাজের ক্রোড়ে।
এবং এটা শ্রেনী বৈষম্যকে টিকিয়ে রাখার
একটা কৌশলমাত্র।

সুতরাং শ্রেনীবিভক্ত সমাজ উচ্ছেদের মাধ্যমে ভাববাদের
শেষকৃত্য এবং বস্তুবাদের প্রতিষ্ঠা রচনা করতে হবে।

এই কথা বলার জন্য তিনি আনুষাঙ্গিক অনেক কথাই বলেছেন-
ধর্ম, ইন্দ্রজাল, ভাব, বস্তু বিবিধ বিষয়।

গালাগাল করতে ছাড়েননি কাউকে -
সক্রেটিস, রাসেল, কান্ট, বার্কলী, হেগেল প্রমুখ।

প্রশংষাস্তুতি গেয়েছেন মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিনের।
আর কিছুটা থ্যালিসের।

বইটা ৬০ বছর আগে লেখা।
ইন্ডিয়ান প্রিন্ট।
যিনি আমাকে পড়তে দিয়েছিলেন
তাকে ধন্যবাদ। অশেষ ধন্যবাদ।
অনেক কষ্ট হয়েছে পড়তে।
বার বার মনে হয়েছে ফরহাদের পাহাড় কাটায় কি
এতো কষ্ট হয়েছিল?

এখন বেশ ঝড়ঝড়ে লাগছে।
ফরহাদের মত ।
মনে হচ্ছে পাহাড় না এখন আমি
মহাসাগর খুড়ে ফেলতে পারব।।
.............
........
.....

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×