somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আহমদ হাসান
জন্ম: ১০ ই শ্রাবন (২৭ জুলাই), ১৯৮৩ । B. A. & M. A ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কাজের মধ্যে একটাই ভাল পারি- পড়া। যেকোনো সূখপাঠ্য বই। জীবন দর্শন: সত্য সন্ধান। I AM A TRUTH-SEEKER. খুঁজতেছি। পেলে জানাবো।

আমি বীরাঙ্গনা বলছি। _______নীলিমা ইব্রাহিম।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“....আমার পরিচয় ?
আমি এই বাংলার একজন গর্বিত নারী যাকে অরক্ষিত ফেলে রেখে
আপনারা প্রাণ ভয়ে পদ্মা পার হয়েছিলেন।
ফিরে এসে গায়ে লেবাস চিড়িয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধার। ” পৃ ৬৩

এই উক্তি সাধারণভাবে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ করে নয়।
বরং সামগ্রীক পুরুষ সমাজকে উদ্দেশ্য করে উচ্চারণ করেছেন একজন বীরাঙ্গনা।
তিনিই ব্যাখ্যা করেছেন পরের বাক্যে:

“....কিন্তু সুযোগ সন্ধানী পুরুষ, অন্তরে ছিলেন রাজাকার মুখে বলেছেন ‘জয়বাংলা’
মনে মনে উচ্চারণ করেছেন ‘তওবা’ ’তওবা’ !
নইলে এইযে রক্তবীজের ঝাড় রাজাকার, আলবদর
এরা কি পাকিস্তান বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসেছে ?
না এরাই আপনারা, আপনাদের ভাই বন্ধুরা....” পৃ ৬৩

একই কথা আর একটু নরম করে বলেছেন অন্য আর একজন বীরাঙ্গনা এভাবে:
ওরা আমাদের একা ফেলে রেখে দেশের কাজে গিয়েছিল এ কথা সত্যি;
কিন্তু আমাদের রক্ষা করার দায়িত্ব দিয়েছিল কার ওপর?
একবারও কি আমাদের পরিনামের কথা ভাবেনি?
আমরা কেমন করে নিজেদের বাঁচাবো,
যুদ্ধের উন্মাদনায় আমাদের কথা তো কেউ মনে রাখেনি।
পেছনে পড়েছিল গর্ভবতী স্ত্রী, বিধবা মা, যুবতী ভগ্নি কারও কথাই সেদিন মনে হয়নি।
অথচ তাদের আত্বরক্ষার কোনও ব্যাবস্থাই ছিল না।

বৃদ্ধ পিতা-মাতা মরে বেঁচেছেন, গর্ভবতী পত্নির সন্তান গর্ভেই নিহত হয়েছে।
যুবতী স্ত্রী, তরুনী ভগ্নি পাক দস্যুদের শয্যাশায়িনী হয়েছে।
অথচ আজ যখন বিজয়ের লগ্ন এসেছে,
মুক্তির মূহুর্ত উপস্থিত হয়েছে তখনো একবুক ঘৃণা নিয়ে
তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করছে সামাজিক জীবেরা ।

একটা পথই এসব মেয়েদের জন্য খোলা ছিল- তা হল মৃত্যু ।
নিজেকে যখন রক্ষা করতে পারেণি তখন মরেনি কেন?
সে পথ তো কেউ আটকে রাখেনি। কিন্তু কেন মরবো?
সে প্রশ্ন তো আমার আজও।

মরিনি বলে আজও আর পাঁচজনের মতো আছি,
ভালই আছি জাগতিক কোনো সূখেরই অভাব নেই।
নেই শুধু বীরাঙ্গনার সম্মান। উপরন্তু গোপনে পাই ঘৃণা,
অবজ্ঞা আর ভ্রকুঞ্চিত অবমাননা।” পৃ: ৪৮
উপরের কথাগুলি যে বীরাঙ্গনার তার নাম রীনা।
মেহেরজান (এই নামে সম্তাবত তাঁর গল্প নিয়েই একটা বাংলা সিনেমা হয়েছে।
৪/৫ বছর ধরে সেন্সর বোর্ডে আটকা আছে সেটা)
নামে আর এক বীরাঙ্গনার কথায় রীনার কথার উত্তর মিলে। তিনি বলেছেন:

“....শুধু পাকিস্তানী দস্যু নয়, নিজেদের দুবৃত্তদেরও চিনেছি এ দুর্দিনে ।
যারা আমাদের যায়গা দেবে তাদের অবস্থা কি দাঁড়াবে ?
নিজেরা তো মরেছি, ওরা তো এমনি মরে আছে, ওদের আর মেরে লাভ কি? ” পৃ:৩৩

বীরাঙ্গনা কারা কি তাদের পরিচয় এ বিষয়ে বলার ইচ্ছা নেই।
বইটা দুই খন্ডে রচিত । তৃত্বীয় খন্ড প্রকাশে লেখক অক্ষমতা জানিয়েছেন। তাঁর কারণ ?
কারণ আমাদের কৌতুহল। অতি কৌতুহল ।
অনেকেই লেখককে পীড়াপীড়ি করেছেন বইয়ে উল্লেখীত বীরাঙ্গনাদের বর্তমান নাম ঠিকানার জন্য।
তাদের একনজর দেখে তারা কোনো বিলুপ্তপ্রায় প্রানী দর্শণ (ধ ও হতে পারে) করতে কৌতুহলী।

লেখকের বক্তব্য এরকম:
“...উপরন্তু অনেক সহৃদয় উৎসুক ব্যাক্তি
এঁদের নাম ঠিকানা জানবার জন্য আমাকে যথেষ্ট পরিমান বিব্রত করেছেন।
আমার ধারণা একদিন যাদের অবহেলাভরে সমাজচ্যুত করেছি,
আজ আবার নতুন করে তাদের কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে ,
নতুন করে তাঁদের বেদনার্ত ও অপমানিত করা ঠিক হবেনা।
এ কারণে তৃত্বীয় খন্ড প্রকাশে আমি অক্ষম।
আমি আপনাদের মার্জণা ভিক্ষা করছি। ”
----অখন্ড সংস্করণের ভূমিকা। জাগৃতি প্রকাশনী।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×