somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আহমদ হাসান
জন্ম: ১০ ই শ্রাবন (২৭ জুলাই), ১৯৮৩ । B. A. & M. A ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কাজের মধ্যে একটাই ভাল পারি- পড়া। যেকোনো সূখপাঠ্য বই। জীবন দর্শন: সত্য সন্ধান। I AM A TRUTH-SEEKER. খুঁজতেছি। পেলে জানাবো।

ENGLISH VINGLISH (সিনেমা) ______Gauri Shinde

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন্ জরিপ সংস্থা না কারা নাকি এই সিনেমাটা
‘Must Watch 25 Indian Films' এর লিস্টে রেখেছে।
সিনেমা দেখার পরে আমি হতাশ সেই সংস্থার প্রতি।
এটা সম্ভবত ৪র্থ কি ৫ম হিন্দি সিনেমা যার পুরোটা দেখেছি।
তার মানে আমি বুঝাতে চাচ্ছিনা যে- আমি বড় কেউ
বা কিছু হয়ে গেছি যেকারণে হিন্দি সিনেমা দেখিনা।বিষয় হচ্ছে- দেখতে পারিণা।
নাটক যদি নাটকীয় হয়ে যায় সেটা দর্শককে টাচ্ করতে পারেণা।
উদাহরণ দেই।

একবার এক থিয়েটারে এক অভিনেতার দিকে দর্শকরা জুতা মারা শুরু করল।
কারণ সে অভিনয় করছিল ঘৃনিত একটা পার্টে । ভিলেন চরিত্রে।
নাটক শেষে সেই অভিনেতা জুতা মাথায় নিয়ে দর্শককে সালাম করে বলল-
আজ তার অভিনয়-জীবন সার্থক।
কারণ সে মানুষকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে তারা নাটক দেখছেনা।
তারা জীবনকে দেখছে।

হিন্দি সিনেমা দেখতে বসলে মনে হয় সিনেমা দেখছি।
শুধু অভিনয়ের জন্য না, সার্বিকভাবে।
এই সিনেমাটার কথাই বলি।
এটা অনেকেই দেখেছেন বলে আমার ধারণা।
এটায় আর একটু সংযম থাকা দরকার ছিল,
যেমনটা আমাদের জীবনে থাকে।
আবেগ বুঝানোর জন্য একটু পরপর গান...
বাস্তবে আমরা যখন কোনো কারণে আবেগে আপ্লুত হই, তখন কি ধেই ধেই করে নাচানাচি শুরু করে দেই ? দেইনা ।
আর করলেও সেটার একটা ধরণ আছেতো !
মনের সে বিশেষ আবেগটা সিনেমায় প্রকাশ করা চাই খুবই সাবধানতার সাথে।
কারণ এটা সিনেমা, এটা ক্যামেরা, ক্যামেরার সামনে বাড়াবাড়ি করা যায়না। একটু বাড়ালে অনেকগুন বেড়ে যায়।
আর একটা দৃষ্টান্ত দেয়া যাক।

‘পথের পাঁচালিতে’ দূর্গার বাবা হরিহর অনেকদিন পড়ে বাড়ি ফেরে ।
সে শহরে গিয়েছিল টাকা রোজগার করার জন্য।
ফেরার সময় ঘড়ের সবার জন্যই কিছুনা কিছু এনেছে সে।
বড় মেয়ে দূর্গার জন্য এনেছে শাড়ি।
দূর্গার মা সর্বজয়ার বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টে।
কারণ দূর্গা মারা গেছে অনেকদিন হল সেকথা তো আর দূর্গার বাবা জানেন না।
অনেক দিন পরে যে লোকটা বাড়ি ফিরেছে,
আনন্দে ব্যাগ থেকে শাড়ি বের করে স্ত্রীকে বলছে- এই দেখো এটা দূর্গার জন্য এনেছি...
ভাল হয়েছেনা ?
পৃথিবীতে এমন কোনো স্ত্রী’ই নেই, যে সেই মূহুর্তে
স্বামীকে মেয়ের মৃত্য সংবাদ দিতে পারে ।
অথচ না পেরেও উপায় নেই।
এটা আমাদের জীবন। বাস্তবতা।

এই যে আবেগের টানাপোড়েন এটা গুরুত্বপূর্ন, অতিব গুরুত্বপূর্ন।
শিল্পে, সিনেমায় জীবনের এইসব স্পর্শকাতর অংশ দেখাতে হয় অতি সাবধানে, সংযমের সাথে ।
মাধ্যম ভিন্ন হতে পারে কিন্তু
কে কতটা সফলভাবে এটা উপস্থাপন করতে পারলো সেটাই বিষয়।
বিভূতিভূষন কিভাবে উপস্থাপন করেছেন সেটা দেখা যাক:

“ ..তাহার গলার স্বর শুনিয়া সর্বজয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিল।
হরিহর (দূর্গার বাবা) হাসিয়া বলিল- বাড়ির সব ভালো? এরা সব কোথায় গেলো?
বাড়ি নেই বুঝি?
সর্বজয়া শান্তভাবে আসিয়া স্বামীর হাত হইতে ভারি পূঁটলিটা নামাইয়া লইয়া বলিল, এসা ঘরে এসো। স্ত্রীর অদৃষ্টপূর্ব শান্তভাব হরিহর লক্ষ্য করিলেও তাঁহার মনে কোনো খটকা হইলনা- তাহার কল্পনার স্রোত তখন উদ্দামবেগে অন্যদিকে ছুটিয়াছে- এখনই ছেলেমেয়ে ছুটিয়া আসিবে-
দূর্গা আসিয়া হাসিমুখে বলিবে- কি বাবা এর মধ্যে ? অমনি তাড়াতাড়ি হরিহর পূঁটলী খুলিয়া মেয়ের কাপর ও আলতার পাতা এবং ছেলের ‘সচিত্র চন্ডী মাহাত্ব বা কালকেতুর উপাখ্যান’ ও টিনের রেলগাড়িটা দেখঅইয়া তাহাদের তাক লাগাইয়া দিবে। সে ঘরে ঢুকিতে ঢুকিতে বলিল, বেশ কাঠালের চাকি বেলুন এনেছি এবার। পরে কিছু নিরাশামিশ্রিত সতৃষ্ণ নয়নে চারিদিক চাহিয়া বলিল, কৈ-অপু দুগগা এরা বুঝি সব বেরিয়েচে-
সর্বজয়া আর কোনো মতেই চাপিতে পারিল না। উচ্ছসিত কন্ঠে ফুকারিয়া কাঁদিয়া উঠিল- ওগো দুগগা কি আর আছেগো- মা যে আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গিয়েছে গো- এতোদিন কোথায় ছিলে ! ”
_____পথের পাঁচালী / ২৬তম পরিচ্ছেদ।

ব্যাস, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় দুই লাইনে সর্বজয়ার মনের ছবিটা এঁকে দিলেন।
এতদিন কোথায় ছিলে ! এই একটা লাইন অনেক কথা বলে দেয়।
ঠিক এই অংশটা সত্যজিৎ রায় সিনেমা করার সময় কি করলেন-
পুরো বিষয়টা দর্শকের কল্পনায় উপর ছেড়ে দিলেন।
সর্বজয়ার মুখে কোনো কথা নেই। শুধু যখন হরিহর দূর্গার জন্য আনা শাড়িটা বের করল- সর্বজয়া তখন সেটা আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠল ।
তাঁর ফোঁপানো কান্নাকে ছাপিয়ে বেজে উঠল রবিশংকরের সরোদ ।
গান ফান কিচ্ছু দরকার হয়নি।
দর্শক নিজের অজান্তেই এই দম্পত্তিটির প্রতি সহানুভূতি অনুভব করেছে।

আমি মনে করি এটাই বেস্ট ওয়ে।
দর্শককে স্বাধীনতা দেয়া।
আমি আমার মতো করে ইমেজ আঁকছি।
কেউ আমাকে ফোর্স করছে না- কাঁদতে বা হাসতে ।
English Vinglish এ ফেন্চ চরিত্রে যিনি অভিনয় করেণ তার আচরণে বেশ সংযম ছিল। ভাড়ামি মনে হয়নি।
ভাড়ামি লেগেছে শ্রীদেবীর চরিত্রে, বিশেষত শেষের দিকে সে যখন ইংরেজিতে দীর্ঘ
বক্তৃতা করল । পরিচালক তার ইংরেজীর Competence স্টাবলিশ করতে পারেণনি।
সমস্যাটা ছিল স্ক্রিপ্টে ।

এগুলো সিনেমার টেকনিক্যাল ব্যাপার।
এ নিয়ে আর প্যাচাল পাড়তে ভাল লাগছে না।
সিনেমার থিম নিয়ে একটু বলে শেষ করি।
সিনেমায় বুঝানো হয় যে ইংরেজী না জানাটা কারো অপরাধ না।
আবার সিনেমার শেষে দেখানো হয় ইংরেজী জানা মানে সফল হওয়া। জয় করা।
এটা হচ্ছে উপনিবেশিক কনসেপ্ট । পজেটিভলী নেগেটিভ।
দেশপ্রেম আছে, মাতৃভাষার প্রতি দরদ আছে এরকম যে কেউ এটা দেখে ধাক্কা খাবে।
আনকনশাসলি হোক অথবা ইনটেনশনালি হোক পরিচালক এই কাজটা করেছেন।
যাইহোক।

হিন্দি সিনেমা নিয়ে কথা বলছি বলে হিন্দি সিনেমা-প্রেমীরা
আমার উপরে ঝাপ দিয়েননা যেন।
এইসব এনালিসিস একান্তই আমার নিজের বোঝার জন্য করেছি।
আমি জানি পৃথিবীব্যাপী হিন্দি ফিল্মের দর্শকের সংখ্যা বিশাল ।
এবং সেই কারণেই ঠিক করেছি এখন থেকে হিন্দি সিনেমা দেখব ।
শুধু বোঝার জন্য মানুষ কেন হিন্দি সিনেমা দেখে।
আমি কেন দেখিনা।
বিষয়টা কি ?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×