somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘তুই না আমার মেয়ে’ প্রথম ছুরি চালালে ঐশীকে এ কথা বলেন তার মা

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বয়ফ্রেন্ডরা ইয়াবার নেশায় বুঁদ করে দুবাই বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার রঙ্গিন স্বপ্ন দেখিয়েছিল ঐশীকে। ইয়াবার আসরে ছিল তার সাত বয়ফ্রেন্ড। সর্বনাশা ইয়াবার নেশায় বুঁদ হয়ে বয়ফ্রেন্ডদের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা করায় বাধা পেয়েই ক্ষিপ্ত হয়ে ক্ষোভের আগুনে জ্বলে ওঠে ঐশী। বয়ফ্রেন্ডদের ঘটনার রাতে বাসার ভেতরে লুকিয়ে রেখে তাদের সহায়তায় নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে। ঐশীর বয়ফ্রেন্ডদের সহায়তায় খুন করা হয় নিজের জন্মদাতা মা-বাবাকে। হত্যাকা-ের বর্ণনা করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে এই ধরনের জবানবন্দী দিয়েছে গ্রেফতারকৃত ঐশী, তার বয়ফ্রেন্ডরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে এই ধরনের জবানবন্দীর তথ্য পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানান, ঐশীর তার মা-বাবার প্রতি এতই ক্ষোভ জন্মেছিল যে, যেই মা-বাবার ঔরসে জন্ম নিয়েছে সে সেই পিতা-মাতাকে নিজ হাতে হত্যার পর টুকরা টুকরা করার পরিকল্পনা করেছিল সে। তারপর বস্তায় ভরে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে। ঘটনার সময়ে ধারাল অস্ত্র না পাওয়ায় সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন সোমবার নিজের সম্পৃক্ততার পাশাপাশি আরও দুই বয়ফ্রেন্ড জড়িত বলে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ঐশী খুবই ধুরন্ধর। নিজে বাঁচার জন্য বিভিন্ন রকমের গল্প বানানোর চেষ্টা করছে। একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তবে হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে কাজের মেয়ে সুমি ও নিহত দম্পতির ছোট ছেলে ঐহীর বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ দম্পতি হত্যাকা-ের একটি ছুরি ছাড়া আর কোন অস্ত্র ব্যবহার হয়নি। এ থেকে পুলিশের ধারণা খুনীর সংখ্যা চিহ্নিত করা সহজ হচ্ছে। মোবাইল ফোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোয়েন্দারা ঘটনাস্থলে ঐশীর কোন ঘনিষ্ঠজনের তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। খুনের পর ঐশী যাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে তাদের সবাইকে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ছুরি ও বঁটিতে একই ব্যক্তির ছাপ ॥ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি জানিয়েছে, হত্যাকা-ে ব্যবহৃত ছুরি ও বঁটিতে একই ব্যক্তির হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। ওই ছাপ শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপর খুনীর পরিচয় জানা যাবে। খুনে ব্যবহৃত একই ব্যক্তির ছাপ হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে খুনীর সংখ্যা কত?
তুই না আমার মেয়ে ॥ ঐশী জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, তাদের প্রথম পরিকল্পনা ছিল স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট করে বাসা থেকে পালিয়ে যাবে। কিন্তু তার মাতা ঘুম থেকে জেগে ওঠে। জেগে ওঠায় তাকে হত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। ছুরি দিয়ে একটি আঘাত করার পর পরই মা বলেছিল, ‘তুই না আমার মেয়ে!’ এ কথা দু’বার বলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এরপর মেয়ের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতের পর নিস্তেজ হয়ে পড়েন মা স্বপ্না। মাকে খুন করার পর তারা একই কায়দায় হত্যা করে তার পিতাকেও।
ঐশীর বয়স বিতর্ক ॥ এরপরই বিভিন্ন মহলে তার বয়স নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ঐশীর চাচা রুবেল বলেন, ১৯৯৫ সালে খুলনায় ঐশীর জন্ম হয়েছে। তাতে অপরাধ সংঘটনকালে ঐশীর বয়স ১৮ পার হয়েছে। ঐশীর বিদ্যালয় অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ভর্তি ফর্মে জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১৭ আগস্ট, ১৯৯৬।
বয়ফ্রেন্ডদের তালিকা ॥ ঐশীর বয়ফ্রেন্ডের তালিকায় বখাটেরাই বেশি। ঐশী অক্সফোর্ডের মতো ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রী হলেও বয়ফ্রেন্ড হিসেবে ডিজে ও ড্যান্স পার্টির ছেলেদের বেছে নিয়েছিল। এদের মধ্যে পুরান ঢাকার বখে যাওয়া অল্প শিক্ষিত যুবকরাই বেশি। যাদের সঙ্গদোষে অনিয়ন্ত্রিত প্রেম ও মাদকের নেশায় ডুব দিয়েছিল সে। তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে ঐশী স্বীকার করেছে, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বৃত্তান্ত না জেনেই ঐশী অসংখ্য যুবকের ঘনিষ্ঠতায় জড়িয়ে পড়েছে। সূত্রমতে, ঐশীর বয়ফ্রেন্ড পারভেজ রাজধানীর একটি স্কুলের পিয়ন। যদিও পারভেজ নিজের কেনা গাড়িতে ঘুরে বেড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিল ঐশীকে। আরেক বয়ফ্রেন্ড মিজানুর রহমান রনি বস্তির পরিবেশে বেড়ে উঠেছে। লেখাপড়া বাদ দিয়ে বিভিন্ন পার্টিতে ড্যান্স করে বেড়াত। এ ছাড়াও ঐশীর আরও ৭ যুবকের সঙ্গে ঐশীর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। যারা সবাই ঐশীর বয়সের তুলনায় অনেক বড় ছিল। ডিবি পুলিশ তাদের ধরতে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান পরিচালনা করছে।
ঐশী এখন যা বলছে ॥ বাবা-মাকে খুন করিনি আমি। আমি এটা করতে পারি না। আমার বন্ধু জনি ও জনির এক পরিচিত খুন করেছে মা-বাবাকে। আমি শুধু কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ছিলাম। ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খুনের ঘটনার ব্যাপারে এই ধরনের তথ্য দিয়েছে। ডিবি পুলিশ বলেছে, ঐশী একেক বার একেক ধরনের তথ্য দিয়ে তদন্তে বিভ্রান্ত করছে। গত রবিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, এ হত্যার সঙ্গে ঐশীর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর সঙ্গে জড়িত আরও দুজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
দেড় বছর আগের ঘটনা ॥ প্রায় দেড় বছর আগের ঘটনা। একটি নাচের অনুষ্ঠানেই ঐশীর সঙ্গে পরিচয় হয় দুই তরুণের। দুই তরুণই ইয়াবা বিক্রেতা। তারা আবার একটি নাচের দলের সদস্য। ঐশী পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করেছিল। এ কারণে তাকে একটি ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করা হয়। চলতি বছর সে ওই স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেলের দুই পার্টের পরীক্ষা শেষ করেছে। কিন্তু এরপর সে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে ওঠে। এ নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে তার রাগারাগী হয়। মা-বাবার প্রতি রাগে, ক্ষোভে দুই তরুণ ইয়াবা বিক্রেতার প্রতি ঝুঁকে পড়ে। ইয়াবা নেশায় আসক্ত হয়। ইয়াবা বিক্রেতা এক তরুণের সঙ্গে অবৈধ মেলামেশায় জড়িয়ে যায়। উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে ঐশী।
বয়ফ্রেন্ডদের ঐশী লুকিয়ে রাখে বাসায় ॥ বুধবার রাতে তার দুই বয়ফ্রেন্ড প্রাইভেটকার নিয়ে তাদের বাসায় প্রবেশ করে। মধ্যরাত পর্যন্ত দুই বয়ফ্রেন্ড ভবনের ছাদসংলগ্ন সিঁড়িতে লুকিয়ে থাকে। এদিকে সে বাসায় কফির সঙ্গে ১০টি ঘুমের ট্যাবলেট- নাইট্যাচ মিশিয়ে দুই কাপ কফি তৈরি করে। এর এক কাপ মাকে আরেক কাপ বাবাকে খাইয়ে অচেতন করে। পরে ছোট ভাই ঐহী ও কাজের মেয়ে সুমি ঘুমিয়ে পড়লে দুই বয়ফ্রেন্ডকে বাসার ভেতরে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। পরে রাত ২টার দিকে ঘুমন্ত পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে বাসায় রক্ষিত ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। জিজ্ঞাসাবাদে ঐশী বলেছে, আমি মা-বাবাকে কফির সঙ্গে অচেতন হওয়ার ওষুধ মিশিয়ে দেই। মা-বাবা অচেতন হয়ে পড়ে। জনিসহ বন্ধুরাই মা-বাবাকে অচেতন অবস্থায় হত্যা করেছে। হত্যাকা-ের পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে গৃহকর্মী ও ছোট ভাইকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। বিকেল পর্যন্ত অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করে। অটোরিকশাচালক জানতে চায়, কোথায় যাবে? ঐশী কোন উত্তর দিতে পারেনি। বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করার পর ঐশী অটোরিকশা চালককে বলেছে, সে খুবই বিপদে পড়েছে। অটোরিকশাচালক তাকে আশ্রয় দেয়। অটোরিকশাচালককে ভাড়া বাবদ দেড় হাজার টাকা দিয়েছে ঐশী। পরদিন সকালে চালকের বাসা থেকে বের হয়ে আসে সে। ছোট ভাই ওহীকে কাকরাইল থেকে একটি রিকশাযোগে পাঠিয়ে দেয়। সে চলে যায় বাড্ডার এক বন্ধুর বাসায়। বাসার নিচে হকারদের দিয়ে যাওয়া পত্রিকায় দেখে তার মা-বাবার খুনের ছবিসহ খবর ছাপা হয়েছে। এরপর সে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। শনিবার বেলা দুইটার দিকে পল্টন থানায় চলে আসে ঐশী।
নিহত মাহফুজের ভাই মামলার বাদী রুবেলের প্রশ্ন ॥ নিহত সস্ত্রীক মাহফুজুর রহমানের ভাই মামলার বাদী মশিউর রহমান রুবেলের প্রশ্ন তাঁর ধারণা, তাঁর ভাই ও ভাবি হত্যাকা-ের মধ্যে অন্য কোন ‘রহস্য’ রয়েছে। তিনি বলেছেন এত ছোট একটি বাচ্চা কিভাবে তার বাবা-মাকে এভাবে হত্যা করতে পারে। এর মধ্যে কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। চাচা রুবেল ঐশীর জন্ম সম্পর্কে বলেছেন, ঐশীর জন্ম খুলনায়। আমার যতদূর মনে পড়ে ১৯৯৫ সালে তার জন্ম হয়েছিল। ঐশীর বিদ্যালয় অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ভর্তিফরমে জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১৭ আগস্ট, ১৯৯৬। গণমাধ্যমকে তার চাচা রুবেল আরও বলেছেন, দেখুন ভাই, এত ছোট একটা বাচ্চা খারাপ হলে কতটুকুই বা খারাপ হবে?
ওহী স্বজনদের হেফাজতে ॥ ঐশী গ্রেফতার হওয়ার সময়ে তার ছোটভাই ওহীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা হেফাজতে নেয়া হয়। সাত বছর বয়সী ছোট ভাইকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ঐশী। পরদিন ভাইকে এক প্রতিবেশীর বাসায় পাঠালেও নিজে ফেরেনি। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, ঐশীর ছোট ভাইটি তার এক স্বজনের কাছে নিরাপদে রয়েছে। চাচা রুবেল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ছোট ভাতিজা ওহীর দায়িত্ব নিতে রাজি আছেন। শুধু ওহী কেন? ভাতিজি ঐশীর রক্তেও আমাদেরই রক্ত মিশে আছে।
গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বলেছেন ॥ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)ও যুগ্ম কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঐশীসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজ ও স্বপ্নাকে হত্যার আগে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। কফিতে তা মিশিয়ে খাইয়েছিল ঐশী। হত্যাকা-ের কারণ উদ্ঘাটন এবং এতে কারা কারা জড়িত ছিল, তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে জানান তিনি।
যা লেখা আছে ঐশীর সুইসাইডাল
নোটে ॥ মা-বাবাকে হত্যার আগে ঐশী সুইসাইডাল নোট লিখেছে ১২ পৃষ্ঠার। এই সুইসাইডাল নোটে প্রেম, ভালবাসাবঞ্চিত হয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হওয়ার পর আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল ঐশী। মা-বাবার ওপর মারাত্মক ক্ষোভের কারণে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনার কথা লেখা এই নোট উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। এখন গোয়েন্দার হাতে ঐশীর লেখা সুইসাইডাল নোটের খাতাটি। সেখানেই পাওয়া গেল তার আত্মহত্যার ইচ্ছা আর বাবা-মায়ের ওপর ক্ষোভের কারণ। তবে চিঠিটি সে নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ করে লেখেনি। ভেবে নিয়েছে নিশ্চয়ই কেউ পড়বে সেটা। যে পড়বে তাকেই উদ্দেশ করে লিখেছে সে।
প্রিয় ॥ আমি জানি না এই চিঠি আমি কাকে লিখছি। তারপরও কাউকে না কাউকে কিছু একটা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আরও কঠিন মনে হচ্ছে। বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে। আত্মহত্যার কারণ আমি কাউকে বলতে চাইছি না। একজনের দুঃখ সাধারণত আরেকজন কখনই মন থেকে বুঝতে পারে না। আমার আত্মহত্যার কারণ তোমার কাছে খুবই অপ্রয়োজনীয় ও হাস্যকর মনে হতে পারে। সুতরাং সেই ঝামেলায়ই গেলাম না। আমার এই চিঠিটাকে সুইসাইডাল নোট বলা যেতে পারে। তুমি নিশ্চয় অবাক হচ্ছো, জীবনের শেষ কথাগুলো আমার আত্মীয়স্বজন, বাবা-মাকে না জানিয়ে কোন অপরিচিত কাউকে কেন জানাচ্ছি! তারা কোনদিনও আমাকে বুঝতে পারেনি। আমার অনেক খারাপ দিক আছেÑ সেই খারাপ দিকগুলো চালাকি করে বুঝে ফেলা ছাড়া ভাল দিকগুলো কখনই তারা বোঝার চেষ্টা করেছে কি-না সন্দেহ! আমার এই চিঠিটি তাদের দেখাতে লজ্জা এবং ঘৃণা লাগে। কারও প্রতি আমার কোন রাগ নেই। মানুষকে দোষ দিয়ে কী লাভ বল! প্রত্যেকেরই তো নিজস্ব চিন্তাধারা, আশা থাকে। প্রত্যেকেই চায় তার ইচ্ছা পূরণ হোক। শুধু যেটা বুঝতে পারে না অন্য মানুষের যে আশা-আকাক্সক্ষা থাকতে পারে। আনন্দের একটি নির্দিষ্ট কারণও থাকতে পারে। আমি জানি তারা আমাকে অনেক ভালবাসে। তাদের ভালবাসা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বা দোষ ধরার ইচ্ছা, রাগ, শক্তি কোনটাই আমার এখন আর নেই। শুধু একটাই আফসোস থেকে গেলÑ জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল কোনটাই পূরণ করতে পারলাম না। এ পৃথিবীর মানুষ, সবাইকে বুকের মাঝে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম সবই কেমন যেন ধুয়ে-মুছে গেল, সব শেষ। আচ্ছা সব কিছু এমন হয়ে গেল কেন, বল তো?
ভাইয়া/আপু ॥ আমি তো মানুষকে ভালবাসতে চেয়েছিলাম! পৃথিবীকে ভালবাসতে চেয়েছিলাম! মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ ভাল লাগা, অনুভূতি, প্রেম, সবচেয়ে বড় কথা- মানুষকে ভালবাসা। পৃথিবীর নানা জায়গার সৃষ্টি এত সুন্দর যে, বেহেস্তকেও যেন হার মানায়। কেন শেষ পর্যন্ত এখানে বাস করে যেতে পারলাম না! কেন এসব উপভোগ করে যেতে পারলাম না শেষ সময় পর্যন্ত! আমি জানি, এর উত্তর একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কারও কাছে নেই। হয়ত বা ঈশ্বরের কাছেও নেই! আমি সবসময় শুনে আসছি, তুমি যদি মন দিয়ে কোন কিছু চেয়ে থাক তবে অবশ্যই তা পাবে। আমার স্বপ্ন আশা-আকাক্সক্ষাগুলো আমি কি মন দিয়ে চাইনি! শুধু মন দিয়ে চাওয়া এই স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্য কত কষ্টই না করলাম। মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে। শারীরিক কষ্টটা হয়ত অন্যের দৃষ্টিতে এত বেশি হবে না। আমার জন্য তা অনেক ছিল। আহ, ওহ, মানসিক কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আমার হাত কাঁপছে। একটা সময় ছিল, এমন কোনদিন যেত না যে আমি কাঁদতাম না। জীবনের দুইটা বছর নষ্ট হয়ে গেল। দুইটা বছর একা একা কাটালাম। এ দুইটা বছর যে কিসের ভেতর দিয়ে গিয়েছি, আমি আর ঈশ্বর ছাড়া কেউ জানে না। হাজার কষ্টের মধ্যেও একটা জিনিস চিন্তা করে স্বস্তি পেতাম। অন্তত আর কেউ না থাকুক ঈশ্বর আমার পাশে থাকবে। আর কেউ না বুঝুক অন্তত উনি আমার কষ্টটা বুঝবেন। আমি এখনও জানি তিনি আমার পাশে আছেন। যা হোক এসব কথাবার্তা বলা এখন অর্থহীন। মনের ভেতর এক অজানা উল্লাস হচ্ছে। কেন জানি ভাল লাগে। পৃথিবীতে এসে অনেক কষ্ট পেয়েছি ঠিকই, সবচেয়ে বড় কষ্টটা হলো আশা শেষ হয়ে যাওয়ার কষ্ট। তীব্র হতাশা মাথার ওপর ভেঙ্গে পড়ার কষ্ট। মানুষ কি আশা ছাড়া বাঁচতে পারে বল, এই একটা জিনিসই তো আছে! যা কি-না বহুদিন পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে রাখা যায়। কিন্তু আমি যদি বলি পৃথিবীতে আমার জীবনের সময়গুলোতে কোন সুখ-স্মৃতি নেইÑ তাহলে তো মিথ্যা বলা হবে। কত ভাল, কত আনন্দ, কত কি-ই না আছে! কত সুন্দর মানুষের হাসি, সেই সুখগুলো, কোন ছেলেকে প্রথম ভাল লাগাÑ সেই অনুভূতিগুলো। পছন্দের আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেয়ার সেই সময়গুলো, পৃথিবীর ইতিহাস পড়ে, সুন্দর জায়গার দৃশ্য দেখে অভিভূত হওয়ার সময়গুলো... কত কি-ই না আবিষ্কার করলাম! পৃথিবীর ব্যাপারে, মানুষের জীবনের ব্যাপারে। মানুষের জীবন সম্বন্ধে কত সুন্দর সুন্দর তথ্যই না জানলাম। এর থেকে সুন্দর জিনিস আর কি-ই বা হতে পারে! মানুষের তৈরি কত অদ্ভুত-চমৎকার জিনিসই না দেখার সৌভাগ্য হলো। ঈশ্বরের বিশাল ও তুলনাহীন সৃষ্টি দেখতে পারলাম। এই জায়গাটায় না এলে এসব কিভাবে জানতাম! কিভাবে দেখতাম! মরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এখন সবকিছুই সহজ মনে হচ্ছে। এক ধরনের স্বস্তি বোধ করছি। সবচেয়ে বেশি স্বস্তি বোধ করছি জীবনযুদ্ধ আর আমাকে করতে হবে না। জীবনযুদ্ধে হেরে গেলাম এই কথাটা আগে শুধু বইতে পড়তাম। তখন অনুভব করতে পারিনি, এখন বুঝতে পারছি জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া আসলে কী জিনিস। আমি সব সময় শুনে এসেছি, যারা আত্মহত্যা করে তারা নাকি দোজখে যায়। জিনিসটা কেন জানি বিশ্বাস করতে পারি না। কারণ যে মানুষটা এখন স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে, তার ভেতরে কী পরিমাণ হতাশা, কষ্ট, দুঃখ থাকলেই না জানি সে এমন একটা কিছু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! এই জায়গাটাকে আমরা কতই না ভালবাসি। হাজার কষ্টের মধ্যেও লড়াই করে যাই শুধু এই জায়গাটাতে টিকে থাকার জন্য, একটু সুখে থাকার জন্য। একটা মানুষের বুক কতটা ভেঙ্গে গেলে এই ধরনের, এই সাধের জীবন, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! তার বুক ভাঙ্গা কষ্টের কি কোন দাম নেই? পৃথিবীর যেখানে আমরা এক টুকরো সুখের জন্য কত কিছুই না করি, এত কষ্ট পাওয়ার পরও। ঈশ্বর কি এতটাই পাষাণ! কি দোষ করেছিলাম আমি। জীবনের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমি এমন কী খারাপ কাজ করেছিলাম যে, কোন কিছুই সত্যি হতে দেখলাম না। মাঝখান দিয়ে জীবনে আরও যে যুদ্ধ করে যাব সেই উপায়টাও শেষ হয়ে গেল। ঈশ্বর বুঝি আসলেই পাষাণ।
লেখার মতো আরও অনেক কিছুই আছে। কিন্তু আর কিছুই লিখতে পারছি না। জ্বরের জন্য হাত কাঁপছে। শরীর জ্বলন্ত আগুনের মতো গরম। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। এখন যে কেউ একজন গায়ে হাত রাখবে এমন কেউ নাই। থেকেও যেন নাই। এই কথাটা সত্যি- মানুষ পৃথিবীতে আসে একা, চলেও যায় একা। হায়রে পৃথিবী! কত ভালবাসার, কত সাধের! আমি ভাবব একসময় পৃথিবী নামে আমার পরিচিত একটা ছেলে ছিল!
ইতি, ঐশী/ডালিয়া
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×