somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আহমেদ রুহুল আমিন
“ কাউকে জ্ঞান বিতরণের আগে জেনে নিও যে তার মধ্যে সেই জ্ঞানের পিপাসা আছে কি-না। অন্যথায় এ ধরণের জ্ঞান বিতরণ করা হবে এক ধরণের জবরদস্তি। জন্তুর সাথে জবরদস্তি করা যায়, মানুষের সাথে নয়। হিউম্যান উইল রিভল্ট। ” -আহমদ ছফা ।

৷৷ শেষ প্রহরের স্বপ্ন ৷৷ -আহমেদ রুহুল আমিন

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নদীর ঐ পারের পাড়টা বেশ উচু ৷ এদিক থেকে একটা হাক মারলে তার প্রতিধ্বনি সোজা চলে এসে কানে বাজে ৷ ছোট্ট নদীর কোল ঘেসা খস্‌ খস্‌ বালুর চর এপারের খানিকটা ৷ দুপুরের রৌদ্রে মনে হয় এইমাত্র ছিপজালে আটকাপড়া অনেকগুলো রুপোলী মোয়া- চান্দা- চপড়া মাছের ছড়াছড়ি এখানে লাফাচ্ছে ৷ উঁচু হয়ে উঠা পাড়ের বিস্তৃত কিছুটা অংশ পলি ও বালুতে মেশা শস্য ক্ষেত ৷ তার উপরেরটা হলো কবরস্থান ৷ দীর্ঘরোগে ভোগা মরা মানূষের পেটের মতো খাল হয়ে যাওয়া কবরগুলোর কয়েকটা অনেক পুরোনো ৷ মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল ৷ কয়েকটা দেশী প্রজাতীর কুল গাছও বড় হয়ে উঠেছে ৷ তার মাঝখান দিয়ে গাঁও গেরামের মানূষগুলো নদীতে যাওয়া-আসা করে বলেই একটা লোকপথ পড়ে গেছে ৷
আবাদ না হলেও দু-’দুটো ফসল তুলতে হয় আসমত আলীতে ৷ ক্ষেতের ধারে গরু দু’টোকে বেঁধে দিয়ে সে ছুটলো নদীর দিকে ৷ গোছল করবে হয়তো ৷ এই শূণ্য প্রহরের দুপুরে কোথাও কোন লোকজনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা ৷ ধপাস করে বসে পড়ে সে চরের উপর ৷ কি যেন চিন্তা করতে থাকে ৷ হঠাত্ নদীর উত্তরের উজানে একটি মানূষের ছায়া দেখে সে ৷ ঠিক মতো চিনতে পারছেনা আজ ৷ চোখ দুটো এক সময় ঝিল মিল করতে থাকে তার ৷ বয়স’তো আর কম হলোনা ৷ তার উপর যা মরা খাটুনি , স্বাস্থ্যই বা কতটুকু ভাল থাকে ৷ রহিমুদ্দীই হবে মানূষটা ! তার চিন্তায় ছেদ পড়ে ৷
‘ কায় বাহে রহিমুদ্দী না কী ?’ - এক সময় জোয়ান মরদের মতো হাক ছাড়ে সে ৷ গলার আওয়াজ উচু পাড়ের সাথে কয়েকবার প্রতিধ্বনিত হয় ৷ রহিমুদ্দী কাছে আসলে জিজ্ঞেস করে- ‘ হুজুর বাবা আজি মনে হয় অসেছে না ? ’ রহিমুদ্দী শুধু মাথা নাড়ায় ৷ রাত্রির মাহফিলে অনেক নছিয়ত করবে পীর সাহেব ৷ লম্বা পাগরিতে হাত রেখে সবাইকে আজকে মুরিদ করাবে আখেরাতে পুলছেরাত পার হওয়ার জন্য ৷ তা-ছাড়া এই পীর বাবা যা কামিল মানূষ, যে যেই নিয়তে মুরিদ হয় - সেই নিয়ত পুরো হতেতো সময় লাগেনা ৷ তার কেরামতির অনেক নজির তারা চর্মচোখে দেখেছে ৷
গা’টা ধুয়ে নিল আসমত ৷ রৌদ্রটা যা প্রখর আজ , গতর পুড়ে দিচ্ছে একেবারে ৷ ঐ পাড়ের পাকুরীর ডাঙ্গাটা এই ভরা চৈত্র মাসে মনে হলো যেন হাসরের ময়দান ৷ পিপাসায় কাতর কয়েকটা চিল ছানা বিকট শব্দে ডেকেই চলেছে অসীম আকাশে ৷ বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো সে ৷
অনেক দুর নদীর পার হতে তার বাড়ির কোনা দিকটা দেখা যায় ৷ নারকেল ও সুপারীর কয়েকটা গাছ উচু হয়ে উঠেছে বাড়ির চারদিকে ৷ গোছলের নিমিত্ত কুয়াটা বাড়ির বাইরে কয়েকটা পাটশোলার বেড়া দিয়ে ঘেরে দেয়া হয়েছে ৷ পাশের সব্জি ক্ষেতে কী যেন তুলতে গিয়ে ফুলজানের নজরে পড়ে তার ঐ একটানা আপন মানূষটাই আসছে ৷ একটা লাউ লতার মতো কোমল আনন্দে উঠোনে আসে ফুলজান ৷ চুলোর ধারে মাটির শানকীতে রাখা ঠান্ডা ভাতগুলো ও একখানা পিড়ে এগিয়ে দেয় আসমতকে ৷ লাউয়ের হলুদমাখা তরকারীতে ভাতগুলো মিশে নিয়ে গোগ্রাসে গিলতে থাকে সে ৷
‘ আজি পীরবাবা অসেছেতে- হামার বাড়িত কনেক আনার ব্যবস্থা করনা ...... সামনের পিড়েয় বসে বলে ফুলজান ৷ কোন উত্তর দেয়না আসমত ৷ নিবিষ্ট মনে খেয়েই চলেছে সে ৷ অনেক ক্ষিদে পেয়েছে আজ ৷ কখন সেই প্রধানবাড়ির মসজিদে ফজরের আযানের আগেই কোন কিছু না খেয়েই লাঙ্গল নিয়ে ক্ষেতে চলে গিয়েছিল আসমত ফুলজান টেরই পায়নি ৷ ওর ছোট বোন জমিলা পান্তা গুলো দিয়ে এসেছিল কখন সেই সকালেই ৷ আর এখন বিকেল হয়ে এসেছে প্রায় ৷ তাই কোন কিছু আর জিজ্ঞেস না করেই উঠে আসে ফুলজান ৷
সূর্য্যিটা কখন পশ্চিমাকাশ লাল আভায় রাঙ্গিয়ে তুলেছে - দেখে এক রকম চমকে উঠে ফুলজান ৷ লালদিঘির পলি জমা পানির মতো লালচে হয়ে আছে আকাশের রংটা ৷ বাড়ির পার্শ্বে কুশার ক্ষেতের শুকনো পাতাগুলোর একটা বোঝা মাথায় নিয়ে তড়ি ঘড়ি বাড়িতে চলে আসে সে ৷ প্রধান বাড়ির মসজিদের সামনেটা তখন গম্‌ গম্‌ করতে শুরু করেছে লোকজনের আগমনে ৷ পীর সাহেবের প্রশংসায় মুখরিত ঘন ঘন স্লোগান, গজল ও কেরাতপাঠে একরকম উত্সব মুখর হয়ে গেছে পুরো প্রধানপাড়া এলাকা ৷ মাইকের আওয়াজে বুকের ভেতরটা চিন চিন করে উঠে তার ৷
অনেক রাত করে বাড়ি ফিরল আসমত মজলিশ থেকে ৷ দেখে ফুলজান শুয়ে পড়েছে ৷ কুয়োরপারে হাতমুখ ধুয়ে বথুয়াশাকের ঝোল ও পিয়াজকুচি দিয়ে আলুভর্তাসহ ঠান্ডা ভাত খেয়ে পাশে এসে শোয় ৷ অনেক রাত অবধি ঘুম হয়না তার ৷ ‘ এই শুনছিস কি ? .....বাম হাতের কনুই দিয়ে একটা আলতো গুতো মারে ফুলজানকে ৷ গভীর ঘুমের মধ্যে একরকম হকচকিয়ে উঠে ফুলজান ৷ ‘ মুই না পীর বাবার দেখা করিছু .. কাইল আইতের বেলা হামার বাড়িত আইসবার চাহিল ৷ তে- আইসলে পরে ঐ ব্যাপারটা নিয়া আলাপ করিমো ৷’ ফুলজান ঘুমের ঘোরে শুধু কথার সায় দেয় ৷ মুখে তার কোন রা- নেই ৷


-২-

সত্যিকারে তাদের দশ বছরের বিবাহিত জীবনে একটি সন্তানের কামনায় কতোখানে কতো কি মেনেছিল ৷ এইতো গেল বৈশাখ মাসেই বার আউলিয়ার মাজারে গিয়ে মুরগি-পাঠা আগাম খয়রাত দিয়ে এসেছিল তা কোন কামেই আসেনি ৷ শেষমেষ দেখা যাক, পীর বাবার কাছে তদবীর বা দোয়া তাবিজ করে কোন ফল হয় কিনা ...৷ ওপার বাংলার জলপাইগুড়ি এলাকায় একসময় আসমতদের বসতবাড়ি ছিল ৷ সেই পালাপালির বছর 'রায়টের' সময় কতই বা বয়স হবে তার খুব জোর পাচঁ কি ছয় হবে ৷ তার মনে আছে - সেই সময় শুনেছে - দক্ষিণবঙ্গ থেকে রেলের মালবগিতে করে যে ইলিশ মাছের চালান আসত জলপাইগুড়িতে । সেই মালবগি হলদিবাড়ি স্টেশনে পৌছাতেই মানূষ দেখতে পেলো - শত শত ধরছাড়া টিকি অলা কাটা মুন্ডু ৷ এতেই দাঙ্গা লাগে পুরো এলাকাজুড়ে ৷ সেই সময় চৌদ্দ জোতের জোতদার তার বাপ-চাচারা সবকিছু ফেলে এসে এককাপড়ে এই পাথরবালির খামার এলাকায় হিন্দুঅধিবাসীর সাথে বসত-সম্পত্তি বিনিময় করে ৷ সেই সময় স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ’ রিফুজী’ নামে অভিহিত করে ৷ আসমতের খুব খারাপ লাগত এই নামটি ৷ শুধুমাত্র সীমান্ত পেরিয়ে পুর্বপাকিস্তানে আসার কারণে আজকে তারা 'রিফুজী' ! জোতদার থেকে প্রান্তিক চাষী ! সম্ভবত: এই দুঃখ নিয়ে কয়েক বছরের মধ্যে তাদের বাপ মারা যায় ৷ নাবালক আসমত ও তার ভাইয়েরা সম্পত্তি আর বেশীদিন ধরে রাখতে পারেনি ৷ সেই জলপাইগুড়ি এলাকারই এই পীরবাবার দাদা হুজুরের ছিল অনেক মোজেজা যা তার বাবার কাছে অনেক শুনেছে ৷ হাজার হোক তারই বংশধরতো !
অনেকটা ভোর বেলায় বিছানা ছেড়ে উঠে ফুলজান ৷ অনেক রাত করে ঘুমোনোর কারণেই হোক আসমতের সকালে ঘুম ভাঙ্গতে দেরী হয় ৷ গরু গুলোকে বাড়ির পেছনের পোয়ালধাবিতে খড় খেতে দিয়ে ফুলজান যায় খারির (ছোট বিল) বুনোকচু আর ঢেকীশাক তুলতে ৷ সাথে যায় তার সবসময়ের সঙ্গী লালু ৷ অনেকটা এলসেসিয়ান গোত্রের এই নেড়ি কুত্তাকে লোকে বলে ভুটানী বেড়াল, খুব প্রভুভক্ত আর আদুরে, লম্বাকানসহ চোখ-মুখ ঢাকা থাকে লোমে এবং যে সবসময় পরিচ্ছন্ন থাকে কিংবা অন্যভাবে বলা যায় পরিচ্ছন্ন রাখা হয় ৷ সেই কবে তার বাবার বাড়ি শিলিগুড়ির মাটিগাড়া এলাকা থেকে নিয়ে এসেছিল সে ৷ যা তার বিবাহিত জীবনে আট-নয় বছরের সন্তান তুল্য ৷ খাড়ির পার থেকে উত্তর আসমান বরাবর তাকাতেই দেখা যায়- ভোর বেলার সূর্য্যের আভা গায়ে লাগা হিমশীতল স্বর্ণালী বর্ণের কাঞ্চনজংঘা ৷ ছোটবেলায় আরো কাছ থেকে দেখা স্বর্ণকেশী দৈত্ত যার অবস্থান বলা যায় একরকম বাবাবাড়ি এলাকায় ৷ আজ তার মা-বাবা নেই ৷ তাই এই স্বর্ণ কেশী দৈত্তকে এত দুর থেকে তার খুব আপন মনে হয় ৷ শাক তুলে তাড়াতাড়ি লালুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে সে ৷ আজই পীরবাবা আসবে বলে অনেক যত্ন করে মাজলো থালা-বাসনগুলো ৷তড়িঘড়ি করে খানাপিনার ব্যবস্থা করতে থাকে সে ৷ টোকায় (মেচ্যুরড লাউয়ের শুকনো খোলস ) যত্নে রাখা সরু নেনিয়া চাল গুলো বের করে রৌদ্রে দেয় সে ৷ আরেকটু বেলা বাড়লে আসমতকে জগদল বাজারে পাঠাবে তবল বুচরের খাসির মাংস আনতে ৷ শিকোয় তোলা মাটির পোশুনে রাখা দুধের সর ভেজে তৈরী ঘি দিয়ে পোলাও পাক করতে হবে ৷ মনেই ছিলনা তার মুরগীর খোপড়ার দরজা খুলে দিতে ৷ যাক ভালই হয়েছে , কানে বালি পরানো বড় টটুয়া মোরগটি কয়েকদিন থেকে বাড়িতে আসেনা ৷ সেটি খেয়ে ফেলতে মনে মনে পর্ব খুজছিল সে ৷ আজ মোওকা পেয়ে সেটিকে ধরতেই কক্‌-কক্‌ শব্দে আসমতের ঘুম ভাঙ্গে ৷ সে বাজারের রওয়ানা হওয়ার পর ফুলজানের কেমন যেন মনে হতে থাকে ৷ অনেক সময় অনেক খেটেছে সে কিন্তু এমনতো কখনো মনে হয়নি ! বমি ভাবের সাথে মাথাটা ধরেছে প্রচন্ড ৷ আসমত বাজার থেকে ফিরলেই তাকে বলবে ৷ সে যা ভাবছে তাই ঠিক ৷ নীরবে শুধু কুয়োরপারে পাটশোলার বেড়ায় হাত রেখে নদীর পারের পাকুরীর ডাংগার দিকে চেয়ে উদাস হয়ে যায় ফুলজান ৷ এতদিন পর আল্লাহ বুঝি তার দিকে ফিরে তাকিয়েছে !
কয়েক মাস পর .........
আগে আগে দু’দুটো শবদেহ নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন ৷ তার পেছনে আসমতই হবে মনে হয় মানূষটা ৷ আরো পেছনে টুপি জামা পড়া আরো অনেক মানূষ ৷ প্রধান বাড়ির কুশার ক্ষেতের কুশারের ডোগার শুকণো পাতাগুলো দা দিয়ে ঝুড়তে ঝুড়তে লক্ষ্য করে রহিমুদ্দী ৷ কামলা খাটতে এসেছে সে প্রধান বাড়িতে ৷ দুর থেকে লক্ষ্য করে চিন্তায় মগ্ন হয় সে ৷
‘লোকটা বড় সুখত আছিল’ - বলে মহিষের গাড়িওলা নছু ৷
‘কাক কোন বেলা যাবার নাগে তা কি আর কহা যায় ’- খতের বাবার মন্তব্য !!
আরো কয়েক মাস পর ......



-৩-
শুণ্য প্রহরের কোন এক দুপুর বেলা ৷ গরু দু’টো হাটছে ৷ হাটতে হাটতে হাফাচ্ছে ৷ প্রধান বাড়ির কান্দরে বড় মাপের বিঘা খানেক জমি চাষ করতে অনেক পরিশ্রম হয়েছে আজ ৷ তাদের থেকে আরো ক্লান্ত দেখাচ্ছে আসমতকে ৷ কখন দূপুর গড়িয়ে নদীর উচু পারের ছায়াটা অর্দ্ধটা পানিকে কালো করে ফেলেছে টেরই পায়নি সে কিংবা তা দেখে একরকম চমকে উঠলো সে ৷ হট হট করে নামালো নদীতে হাড় জিরজিরে প্রাণি দু’টো ৷ তাকে দেখে কয়েটা নদীয়া শালিক কাঁ কাঁ শব্দে চেঁচাতে চেঁচাতে বাঁকের চরে গিয়ে পড়ল ৷ গরু দু’টোর গা ধুয়ে সে নিজে পানিতে ডুব দিয়ে গোসল করলো ৷ আলতোভাবে কোচ মারলো শতচ্ছিন্ন অনেকদিনের অধোয়া লুংগিটা ৷ ফুলজান বেঁচে থাকতে আঠিয়া কলাগাছের মুড়ো শুকিয়ে চুলাতে জ্বেলে তা থেকে রাশা (সোডা) তৈরী করতো ৷ যা দিয়ে গরম পানিতে রাশা দিয়ে লুংগি-জামাকাপড় নিত্তরে ( পরিস্কার ) ঝকমক করতো ৷ এখন আর সেই জামাকাপড় তার নিত্তর করা হয়না কিংবা বলা যায় তার নিত্তর করার মনে থাকেনা ৷ লাঙ্গল ও জোয়ালের ভারিটা ঘাড়ে নিয়ে গরু দু’টো কবরস্থানের ধারে বেঁধে খুট গাড়ল ৷ দুর থেকে সে লক্ষ্য করে - ফুলজানের কবরটা কিছুটা খাল হয়ে গেছে ৷ আর ‘বাওর’ টা ( পৃথিবীর মুখ না দেখা ছেলে শিশুটি) অমনিই আছে৷ হয়তো বেহেস্Íরে খাবার সে খেয়েই এসেছিল ৷ আর ফুলজান ........! কতদিন কত উপোষ থেকেছিল ! তখন তার পেটের অংশটা ঐ খাল হয়ে যাওয়া কবরটার মতোই লাগত ! অপ্রত্যাশিত একটা চাপা বেদনায় সে তার বাড়ির দিকে তাকালো ৷ এইতো ক’দিন আগে কুয়ার পারে পাটশোলার বেড়ায় হাত রেখে সে কখন আসবে বলে চেয়ে থাকতো ফুলজান ! বেদনাটা চাপছে আরো ৷ লাঙ্গলের ভারটা বেশী করে ভারী লাগছে আজ ৷ একবার মনে হলো সে পড়ে যাবে ৷ আস্তে আস্তে সামনে এগুতে থাকে সে ৷৷
( পুনশ্চ : গল্পটি আশির দশকে লেখা উত্তর বঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনগ্রসর জনপদের সাদামাটা জীবনকাহিনীর একটি চিত্র ৷ সেই সময় শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার এখনকার তুলনায় ছিল বেশ উদ্বেগের ৷ আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে মানূষের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন এখন ঘটেছে আশাতীতভাবে ৷ গরু-মহিষের লাংগল-গাড়ি, পাটশোলার বেড়া, প্রান্তিক/বর্গা চাষীদের উপোষ থাকা, তাদের আশা-আনন্দ-বেদনার চিত্র অনেকাংশে বদলে গেছে ৷ সেইসাথে গ্রামীণ অন্ধবিশ্বাস, কুপমন্ডুকতা এখন নেই বললেই চলে ৷ তবে, সবচেয়ে বর্তমানে বড় সমস্যা হলো- আমাদের রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা বলা যায় অস্থিতিশীলতা , পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস/আস্থাহীনতা, ধর্মীয় মূল্যবোধে অবজ্ঞা, প্রতিহিংসা পরায়ন মনোভাব ইত্যাদি আমাদের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে এক চরম প্রতিবন্ধক ৷ এ অবস্থা থেকে উত্তরনের এখনই সময় !! গল্পটি নুতন প্রজন্মের পাঠকদের পুরোণো দিনের জীবনচিত্র সম্পর্কে একটু ধারণা দেয়ার জন্য পোস্ট করলাম ৷ )
__________________________________
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×