somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আহমেদ রুহুল আমিন
“ কাউকে জ্ঞান বিতরণের আগে জেনে নিও যে তার মধ্যে সেই জ্ঞানের পিপাসা আছে কি-না। অন্যথায় এ ধরণের জ্ঞান বিতরণ করা হবে এক ধরণের জবরদস্তি। জন্তুর সাথে জবরদস্তি করা যায়, মানুষের সাথে নয়। হিউম্যান উইল রিভল্ট। ” -আহমদ ছফা ।

।। মেঘের কোলে রোদ ।। ( একটি পুরো বড় গল্প ) ।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( কিছু কথা : এ এক অদ্ভুত অত্যাশ্যর্য ঘটনা সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশের জন্য । তা হচ্ছে মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব সাগর-রুণি হত্যাকান্ড । দীর্ঘদিন আমরা অসহায় এ হত্যা রহস্য সম্পর্কে কোন কুল কিনারা করতে পারিনি । শুধুই আশার বাণিতে চোখ ভিজিয়ে চলেছে সাগর-রুণির অসহায় মা । আর মেঘ…….. ? কেমন আছে মেঘ… ? মেঘের নানুবাড়ি এই বারো আউলিয়ার জনপদ ? আমরা দোয়া করি , মেঘ ভাল থাকুক । সবচেয়ে খারাপ লাগে তখন , যখন সাগর-রুণির একমাত্র শিশুসন্তান ‘মেঘ’ যে চোখের সামনে খুনিদের রঞ্জিত হাত-মূখ চর্মচোখে প্রত্যক্ষ করেছে , তার মানসিক অবস্থা আমরা কল্পনাও করতে পারবনা ! মেঘ এখন কিছুটা বড় হয়েছে বা কিছুটা বুঝতে শিখেছে । দোয়া করি, মহান রাব্বুল আলামিন যেন তাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখেন !একদিন এই জনপদ ছিল পরতে পরতে কুসংস্কার , ধমান্ধত্য,সামাজিক কলুষতার বিচরণ ক্ষেত্র । বেগম রোকেয়ার সেই অবরোধবাসিনীর চিরচেনা এই জনপদে জেগে উঠেছিল অধুনা এক নারী মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব রুণি আপু । তার জন্মভুমির উপাখ্যান নিয়ে পৌরানিক কল্পকাহিনীর এই অবতারনা “ মেঘের কোলে রোদ” । পাঠকদের মনে করিয়ে দেই “ মেঘের কোলে রোদ ” বড় গল্পটি “ মেঘের ” নামে উৎসর্গ করা । ‘গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক ‘।
কৈফিয়ত : বড় গল্পটির তিনটি পর্ব ইতিমধ্যে সামহোয়ারইন ব্লগের সম্মানীত পাঠকদের একানে পোস্ট করেছিলাম । চিন্তা করলাম- খন্ডাকারে গল্পটি সম্মানীত পাঠকদের ভাল নাও লাগতে পারে । তাই শেষ পর্বটির সাথে সম্পূর্ণ গল্পটি পোস্ট দিলাম ) ।

মৈমনসিং জেলার ব্রহ্মপুত্র নদীর ধারে পুর্বধলাপুর গ্রামে একমাত্র হাটটির অর্ধেক নদীর ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীণ হয়ে গেছে অনেক আগেই । যে টুকু হাটের অংশ বাকী আছে – তা যে কোনসময় ভাঙ্গনের কবলে পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই । এই হাটের পার্শ্বেই বাড়ী ছিল ফকির কালাচানের । বাড়িতো নয় অর্ধেক বাড়ি অর্ধেক দোকান । মুদিখানা থেকে শুরু করে সাংসারিক ব্যবহার্য্য সব ধরনের সামগ্রী দোকানে রাখা । দোকানে বেচা বিক্রি হতো বেশুমার । ফকির কালাচানের বাবা সাকেদ আলী ফকির জোয়ান বয়সে জিদ করে কাকে যেন খুন করে ফেরারী হয়ে ব্রিটিশ আমলে আসাম রাজ্যের ধুবগুড়ি এলাকার বাপদাদার পৈত্রিক ভিটেমাটি ছেড়ে এক দিন এক রাত মহাজনি নৌকায় করে ভাটি অঞ্চলের এই হাটে এসে আশ্রয় নেয় । তখন ওই এলাকা থেকে অনেক পাটের মহাজনি নৌকা মৈমনসিং শহরে আসতো । ভাটি অঞ্চলে আসতো পাটের চালান বিনিময়ে মহাজনরা নিয়ে যেতো ইলিশ মাছের চালান । সাকেদ আলী ফকির একমাত্র ছেলেকে বলতো – হুন বাপজান , হেইসুম ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি হগল সময় থাকত টইটম্বুর । সেই যেই বছর জার্মানীর হিটলাররা জাপানে এটম বোমা ফালায় আমি সবে মাত্র ডাংগর হইছি । বাজান আমারে কইলো , ঘাটে নৌকা বাধা মহজনী নাও , রাইতভর পাহারা দেওন লাগবো , তোর লগে আইজদ্দী বেপারীর বড়পোলা আইনুল্লা থাকবো , দুইজনে রাইত ভর পাহারা দেইছ, কাইলকা হক্কালবেলা নাও লিয়া যামু মৈমনসিং। আমরা দুইজন করলামকি পূর্বপাড়ার রইস মন্ডলের মাইয়া অমিচা বেগমরে রাইতে নায়ে আইতে কইলাম । চান্নি পসর রাইতে অমিচা বেগমরে দেহা যায় পরির লাহান । আমরা ছিলাম দুইজনই অমিচা বেগমের লাইগা পাগল । আইনুল্লা আমারে কইল, অমিচা বেগমের দিকে চোখ তুইলা তাকাইছ তো তোমারে জ্যান্ত হাত-পা বাইধা নাও থেইকা নদীতে ফালাইয়া দিমু । আমি করলাম কি, আমার মাথায় ততক্ষনে রক্ত উইঠা গেছে । দিলাম বৈঠা দিয়া তার মাথায় বাড়ি । বান্দির পুত এক বাড়িতে নাও থেইকা পানিতে পড়বো এইটা তখন চিন্তা করিনাই । মনে করলাম ভালই হইছে পথের কাটা দুর হইছে । কিন্তু বুঝবার পারলাম যখন তখন লাশ ভাইসা গেছে অনেকদুর । বাপজানরে সত্য কথা কইলাম । হেসে কইল , হক্কাল বেলা মহাজনী নৌকায় পলাইয়া যাওগা মৈমনসিং । তো ভয় ছিল শহরেতো হরহামেশা হগ্গলে আসে । কখন কার লগে দেহা হয় , তাই হেসে এই নদীর পারের পুর্ব ধলাপুর হাটে নাইমা যাই । এইহানে মাইনষের দোকান- বাড়িতে ফাইফরমাস খাইটা কয়েক বছরের মধ্যে হাটের পার্শ্বে জমি নিয়া বাড়ি করলাম । অর্ধেক বাড়ি অর্ধেক দোকান । মাইনসে বলে সাকেদ ফকিরের দোকান । দোকান করলে হবে কি বাপদাদার পৈত্রিক শখ ছিল দোতারা বাজাইয়া মারফতি গান গাবার । দোকানে বেচাকেনা শেষে রাতে সাকেদ ফকির রাতে দোতারায় গান ধরে – আমার মন বালানাগো .. আমার প্রাণ বালানা … ।দিনতো ভালই যাচ্ছিল সাকেদ আলী ফকিরের । আয়-রুজি দেইখাই এই গ্রামেই সফদর আলী বেপারীর কণ্যা পরিবানুর লগে সাকেদ ফকিরের বিবাহ হয় । প্রথম সন্তান ছিল মাইয়া । কিন্তু বউএর বয়স কম বইলা মরা বাচ্চা প্রসব করে পরিবানু । এর পর আরেকটি মাইয়ার জন্ম হয় । সাকেদ ফকিরের মন চায় একটা পোলা হইব । দোকান, বিষয়-সম্পত্তি রক্ষা করবো । পরি বানুরে লইয়া একবার গেলো খাজে দেওয়ান বাবার পিরের আস্তানায় । ব্রহ্মপুত্রের তিন ক্রোশ উজানে নদীর ধারেই পিরের আস্তানা । বাবার দাওয়া ও দোয়ার বরকতে এক বছরের মধ্যেই কালাচান আসে পরিবানুর পেটে । কি জব্বর পোলা । খাসা মাংস পিটানো কালো শরীর । মুখটা ছিল পুর্ণিমার চান্দের লাহান । তাই তার নাম রাখছিলো কালাচান । আর ফকির বংশের শেষে উপাধি লাগিয়ে কালাচান ফকির । মা বাবার মন ভরলো ঠিকই । কিন্তু সুখ বেশীদিন সইলনা কপালে তাদের । তিন/চার বছরের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র গ্রাস করলো তাদের বাড়ি, দোকান- বিষয় সম্পত্তি । দুই/তিন বছর নৌকায় থেকে ব্যবসা করলো কিন্তু ভাগ্যের ফের ব্যবসা পাতি লাটে উঠল ।এই দুঃখে বাপজান হঠাৎ মরলো । এক বছরের মধ্যে পরিবানুও ইহলিলা সাঙ্গ করে । কি আর করা মৈমনসিং শহরে কিছুদিন ঘোরাঘুরি করে কালাচান ফকির খুব একটা সুবিধা করতে না পেরে রেলস্টেশনে একটি ছোট ভাতের হোটেল দেয় । তখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগার বছর যাকে বলে রায়টের বছর । কালাচান ফকির দেখেছে চোখের সামনে হিন্দু বাড়িতে হামলা ও লুটপাট । কতো হিন্দু মানুষকে যে জবাই করা হয়েছে তার ইয়ত্তা নাই । ইলিশ মাছে ভর্তি রেলের মাল বগিতে টিকিঅলা কাটা মুন্ড দিয়ে বোঝাই করে পশ্চিম বঙ্গে চালান করা হয়েছে । তার পর ইন্ডিয়া পাকিস্তান হয়েছে । কিন্তু কালাচান ফকিরের ভাগ্য বদল হয়নি । ভাতের হোটেলে মানূষ খেয়ে যায় ঠিকই কিন্তু বাকীর কাস্টমার বেশী থাকায় এই ব্যবসা গুটিয়ে কালাচান ফকির চলে যায় জামালপুর শহরে । তখনকার দিনে মহকুমা শহর হলে হবে কি মৈমনসিং শহরের থেকে লোকজন এখানকার অনেক ভালো । বাপে যাইতো প্রায় পীরের আস্তানায় । কেন জানি কালাচানকে এই কারণেই পীর ফকিরের আস্তানা খুব টানে । প্রথম দিনেই রেল স্টেশনে পরিচয় হয় শাহ সুলতান আজমেরী পাগলা বাবার সঙ্গে । ইয়া মস্তবড় গোঁফদাড়ি লম্বা বাবরী চুল আর গেরুয়া পোষাক । গাজার সুখটানের চিহ্ন স্পষ্ট মুখের দাড়িগোঁফে হাতে বিচিত্র লাঠি । ছয়মাস কি এক বছরও শরীরে গোছলের ছাপ বোঝা মুশকিল । কালচানরে বলে বাপ, এই লাইনে আসবিতো মহাসাধক হবি । তবে সংসার বিরাগী হতে হবে তবেই সন্ধ্যান মিলবে মনের মাইনসের লগে । এই জন্য লোভ, লালসা, কাম, ক্রোধ সবই ত্যাগ করতে হবে । কিছুদিন আজমেরী বাবার সঙ্গে ঘোরাঘুরির পর তারে আর এই সব ভালো লাগেনা । তবে, এই বাবার তরফে তার যে পরিবর্তন ঘটে , তাহলো- আজমেরী বাবার অবিকল বাহ্যিক সুরত ধারন । ঠিক তার মতোই গোঁফ দাড়িতে গাজার সুখটানের স্পষ্ট চিহ্ন , গেরুয়া পোষাক হাতে বিচিত্র লাঠি । গ্রাম গঞ্জের মানূষও যথেষ্ট সমিহ বা আদর আপ্যায়ন করে । কিন্তুু মানুষের মন বড়ো বিচিত্র । এই আদর আপ্যায়নের ধারাটা বেশীদিন থাকেনা । এক রকম বাধ্য হয়ে পাড়ি জমায় বাহাদুরাবাদ হয়ে যমুনা পাড়ি দিয়ে ফুলছড়ি হয়ে ট্রেনে চেপে উত্তর বঙ্গে । ট্রেনের বগিতে পরিচয় হয় সরিষাবাড়ি থেকে যমুনার ভাঙ্গনের শিকার একটি পরিবারের কর্তা আক্কেল আলী মুন্সির সাথে । একই কামরায় তার সাথে যাচ্ছে তার স্ত্রী, তিন ছেলে , দুই মেয়ে, এতিম ভাজতি কলসুমসহ বাড়ির কাজের লোক মইজুদ্দী । তারা যাচ্ছে সুদুর দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁওয়ের রাণিগঞ্জ এলাকায় । সেখানে বসতবাড়ি ও জমি কেনা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে । এলাকাটি খুবই ভাল আবাদ ফসলের দিক থেকে । জমি খুবই সস্তা । আর সব থেকে ভাল হচ্ছে সেখানকার মানুষজন খুবই সহজ সরল । তবে, আবাদের জমির ফাকে ফাকে রয়েছে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে জঙ্গল । যেখানে বুণো শুয়োরের পাল আর বাঘের ছড়াছড়ি । সাবধানে থাকতে হবে বসবাসযোগ্য ঐ এলাকায় ।


-২-

পুর্ব পাকিস্তানের যমুনার পশ্চিম পারের রেলওয়ের যে পশ্চিমাঞ্চল যার মিটার গেজ লাইনটি গাইবান্ধ্যা মহকুমার ফুলছড়ি ঘাট থেকে বোনারপাড়া হয়ে রংপুরের কাউনিয়া জংশন হয়ে পশ্চিমে পার্বতীপুর -দিনাজপুর হয়ে ঠাকুরগাও মহকুমার রুহিয়া পর্যন্ত ঠেকেছে । এর পরে উত্তরাংশে আর কোন রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই । ফকির কালাচান যে ট্রেনে চেপেছিল তার লাস্ট স্টপেজ ছিল পার্বতীপুর জংশন । এখানে এসে ভোরবেলা ট্রেন চেঞ্জ করে বিকেল বেলা রুহিয়া স্টেশনে এসে নামল । রুহিয়া বাজারটি ছোটখাট হলেও এখানে ব্যবসা -বানিজ্যের একটা বড় ছাপ পাওয়া যায় । কিছু কিছু মাড়োয়ারীর গোডাউন/আড়ৎ জানান দিচ্ছে এর অস্তিত্ব । একসময় এখান থেকে উত্তরে বিহারের পুর্ণিয়া জেলার ইসলামপুর ও দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি এবং উত্তর-পুর্বাঞ্চলে জলপাইগুড়ি -কুচবিহার জেলার বিভিন্ন বন্দরে ভোগ্যপণ্য আনানেয়া হতো গরু মহিষের গাড়িতে করে । তবে, মাড়োয়ারীরা এখন নেই , যে যার মতো শিলিগুড়ি বা কোলকাতা চলে গেছে অনেক আগেই । তবে, কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে রেখেছে বিত্তশালী কিছু মুসলমান ব্যবসায়ী । রুহিয়া রেলস্টেশনে নেমে মুন্সি আক্কেল আলীর পরিবারের সদস্য হয়েই কালাচান ফকিরের গন্তব্য রানিগঞ্জ গ্রামে । স্টেশনে পাওয়া যায় একটি মহিষের গাড়ি । এতো বিশাল আকারের মহিষ সে বাপ জন্মেও দেখেনি । গাড়িঅলা জয়নালকে জিজ্ঞেস করতেই প্রথমেই সংকটে পড়ে ভাষাগত সমস্যায় । তবে, হাববাবে যা বুঝতে পারে তা হচ্ছে – এই মহিষ জোড়া এখানে বিখ্যাত মেলা যার নাম আলোয়াখোয়া সেখানে গেল বছর অগ্রাহায়ন মাসে বদলে কিনেছে । বদলে কেনা হলো পুরোনো মহিষ বিক্রি করে নুতন মহিষ কেনা । ইন্ডিয়া – পাকিস্তান বোর্ডারের বর্তমানে ইন্ডিয়ার অংশে পড়েছে এই বিখ্যাত মেলা আলোয়াখোয়া । বিহার রাজ্যের পুর্ণিয়া জেলা থেকে এইসব মহিষের চালান আসে মেলায় । শুধু মহিষ নয়, হাতি, ঘোড়া এমনকি উট পর্যন্ত উঠে এই মেলায় । যদিও ইন্ডিয়া – পাকিস্তান পৃথক হয়েছে তথাপি মেলার সময় দুই ধারের মানূষ অবাধে কেনা বেচা করে এই মেলায় । জয়নাল বলে – “ বুঝিচেন ভাইজান , সেই ব্রিটিশ আমল থেকে হামরা এই মেলায় গরু মহিষ কেনা -বেচা করি । সেই কাত্তিক মাসের সম রাসপুর্ণিমা থেকে মেলা শুরু হয়ে পাক্কা তিনমাস ধরে চলে । মেলাত তখন কত্ত রকম রঙ্গ- তামাশা ছে… । একপাশ্বতে সার্কাস ,পুতুল নাচ, যাদুরখেল আর সারা রাইরোত যাত্রা গান , রাজস্থানী আর নেপালী বাঈজীর নাচন দেখে সারা রাইত কোনদে পার হয়ে যায় তা টের পাওয়া যায়না । কি কহিম আর ভাইজান কানে কানে তোমাক কহচু- সেলা মোর ঢেনাকাল । তো .. গেইচু মেলাত মুই আর হামার গেরামের কালুয়া… মোর দোস্ত । সারাদিন সার্কাস আর রাইতত যাত্রা দেখে শরীর খুব কাহিল অবস্থা । দুপুর রাইতত কালুয়া শালা মোক নিয়ে গেল মাঘিবাড়িত । মেলার পার্শ্বত মাঘিবাড়ি । কি সুন্দর সুন্দর এক একটা মাঘি । খেপ একবার মাত্র দুই সিকি বা আধুলি । বিহান বেলা নাগাত এক টাকা । একবার যায়য়া তো মোক নেশা ধরে গেল । এক একদিন একএকটা । কি নেপালী , কি বিহারী , সাতালনীও পাওয়া যায় । একবার হোইল্ কি । মেলার ঠিক কাছাকাছি ‘বাচ্চাবাবু’ জমিদারের বাড়ি । বেটা জমিদার হলে হবে কি ? ওয় ছিল এলাকার জাদরাইল মাঘি খোর । তিন কুড়ি বয়সের পরেও প্রতিদিন মাঘি ছাড়া বেটার নিন্ (ঘুম) হয়না । তে হইছে কি । এক সাতালনী মাঘি তার গাওয়ের রং তেলচা কাল আর পেটাইল শরীল । বিশ-বাইশ বছর হবে বয়স । হের উপর নজর লাগিল হামার জমিদার বাবুর । মেলার পুরাটা সময় তাক্ রাখিল ওর বাড়িত্ । সেলা (তখন) থেকে সাতালনী মাঘি আর অর বাড়িত থেকে বাইর না হয় । জমিদার বাবু করিল্ কি .. এক রাইতত্ নদীর পাড়ত নিয়া যায়া গুলি করে মারে টাঙ্গন নদীত ভাসায় দিল্ । খুব কঠোর ছিল এই বাচ্চা জমিদার বাবু । মাইনষে কহে – ‘বাচ্চা বাবু’ জমিদার বাািড়র ইট-সুড়কী গুলা এলাও রাইতোত কান্দে । আশ পাশের লোক এলাও বাড়িত থেকে ওই কান্দন শোনে । জমিদার বাড়ি যেলা বানায় প্রায় চারকুড়ি মিস্ত্রি-যোগালীঘরক আস্ত কচিপাঠার রোস্ট খাওয়ায়য়া রাইতোতে অন্দরমহলে মারে পুতে রাখিছিল্ । মেলা থেকে শুরু করে বাড়ির এলাকার প্রায় দশহাজার ধুল জমিন অর একেলায় । বাড়ির চৌহদ্দিতে অর এলাকায় পাচ-ছয়টা পথ ছে … । নুতন বিহাবাড়ির নুতন কৈনা নিয়া ওই পথ দিয়া গেলেই অর বাড়িত তিন দিন তিন রাইত মেহমান খাবা হবে জোরবরাতে বর কৈনাক । নুতন কৈনার ‘বহিনী’ কইরবে জমিদার বাবু । তারপর বর-কৈনার অনেক উপহার দিবে জমিদার বাবুর তরফ থেকে । এই গুলা ছিল্ আগিলা যুগের কাথা । এলা ওই বাচ্চা জমিদার বাবুর ভিটাত্ ঘুঘু নাচেছে ।” বাস্তবে পঞ্চাশ দশকের ওই সময়ে জমিদারী প্রথা বিলীণ হওয়ার পর কিংবা বলা চলে দেশ ভাগের পর ‘ বাচ্চা বাবু’ জমিদার তৎকালীণ পুর্ব পাকিস্তান ছেড়ে কোলকাতায় পাড়ি জমায় । তবে, তার প্রভাব প্রতিপত্তির জন্মস্থান পিতৃভুমিতে রেখে যায় অত্যাচারী ভুস্বামীর সব কলংকময় অধ্যায়ের অনেক অজানা তথ্য উপাত্ত যা এলাকার সহজ সরল গ্রাম্য মানূষের মুখে জোরাতালি হয়ে রটে গিয়ে সত্যমিথ্যের মিশেল ঘানি অতিউৎসাহের খোরাক যোগায় ।
রাস্তার দুধারে ঝোপ-ঝাড় জংগল , মাঝে মাঝে শুধু জোনাকী পোকার মিট মিট আলোয় ক্যাঁ ক্যাঁ শব্দে এক অদ্ভুদ আওয়াজ তুলে সামনে এগিয়ে চলে জয়নালের মহিষের গাড়ি । এক অজানা আতংক বিরাজ করে কালাচান ফকিরের মনে ।

-৩-

রাণিগঞ্জ গ্রামটি এমন জায়গায় হবে তা কল্পনাও করতে পারেনি কালাচান ফকির । টাংগন নদীর ধারে ছোট্ট একটি বাজার , বাজারের পার্শ্বে জঙ্গল ঘেসে গ্রামের একমাত্র একটি স্কুল দিনের কোলাহল বাড়িয়ে দেয় স্বল্প সময়ের জন্য । প্রতি সপ্তাহে বুধ ও শনিবার হাটবার হওয়ায় ওই দুই দিন অনেকরাত পর্যন্ত এলাকাটা সরগরম থাকে । তবে, মাঝে মধ্যে জঙ্গল থেকে গেছোবাঘ ও বুনো শুয়োর লোকালয়ে এসে এলাকার মানুষের ক্ষেত খামার ও গরু-ছাগলের ক্ষতিসাধন করে । মাঝে মধ্যে মানুষের উপরও হামলা করে । মানুষের তখন একমাত্র ভরসা খড়ে আগুণ জ্বালিয়ে টিন বা ড্রাম বাজানো । এতোবড়ো গ্রামে একজনেরই গাদা বন্দুক রয়েছে হাজি শাহার আলী সরকারের । তবে, লোকটি খুব কঞ্জুস টাইপের । গুলি খরচ করতে চায়না । এই যখন অবস্থা তখন আর বেশিরভাগ গ্রামের মানুষের কোন উপায় থাকেনা । আহত রোগীদের এখানে কোন চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা নেই । এখান থেকে গরুর গাড়িতে করে রুহিয়া রেলস্টেশন তারপর ঠাকুরগাও কিংবা দিনাজপুরের চেরিটেবল ডিসপেনসারি । যাতায়াতে সময়ের কারণে বেশীর ভাগ রোগী রক্তক্ষরণে মারা যায় । রাণিগঞ্জ ছাড়াও দুই/ পাঁচ ক্রোশের মধ্যে পুর্বদিকে বোদা ,সাকোয়া ও পশ্চিমে ফকিরগঞ্জ ,রুহিয়া বাজার রয়েছে । সে লোকমুখে শুনেছে যে, চার/পাঁচ ক্রোশ উত্তরে রয়েছে বারো আউলিয়া নামে একটি জায়গা যার বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে শুধুই জঙ্গল বা বনাঞ্চল । এই বারো আউলিয়ায় একটি মাজার আছে । যার অন্ধ ভক্ত এলাকার হিন্দু, মুসলমান নির্বিশেষে সবরকম মানুষ । প্রথম প্রথম কালাচান ফকির বেশীরভাগ সময়েই বাজার গুলোতেই কাটায় । যে বাজারেই যায় এলাকার লোকজন অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে । বিশেষ করে, তার জটবাধা চুল , দাড়িগোঁফে মুখ ঢাকা , মোষের মতো কালো সুঠাম দেহ তার সাথে গেরুয়া শতচ্ছিন্নতালি দেয়া পোষাক , হাতে বিচিত্র লাঠি । নুতন এলাকা বলে লোকজনের আগ্রহ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ভঙ্গ ধরে সে। যেমন , সে কখনো কোন কথা বলেনা , লোকে ধরে নেয় সে জন্ম থেকেই বোবা । তার বামকাঁধে ঝোলানো পটলায় থাকে সবসময়ের জন্য কালো কুচকুচে রঙ্গের একটি বিড়ালের বাচ্চা আর কিছু কন্ডুলি পাকানো কেন্না পোকা । একটি পিতলের তৈরী লোটাও রাখে সবসময় পানির জন্য । আর একটি ব্যাপারে সে খুবই সচেতন তা হলো তার খাবার দাবার । সে কখন খায় , খায় কি খায়না তা মানুষজনতো দুরে থাক কাকপক্ষিও টের পায়না । লোকজন টাকা- পয়সা , খাবার দিতে গেলে সে এমন অঙ্গভঙ্গী করে ভয়েই তারা আর কাছে ভীড়েনা । আগ্রহভরে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে সে কী খায় তখন পটলা থেকে কেন্নাপোকা বের করে গপ করে খেয়ে চোখবুজে পানি খায় । সবকিছু মিলিয়ে সে একজন রহস্যভরা ভিন্ন মানুষ । অল্পদিনের মধ্যে অনেক ভক্তও জুটে যায় তার। ফকিরগঞ্জ বাজারে ঘোরাফেরা করার সময় এক যুবক তার পিছু ছাড়েনা । ওর নাম বাহারাম আলী ওরফে নুচাই । বাড়ি মির্জাপুরের পানবাড়া গ্রামে । এখনো ঠিকমতো দাড়িমোচ উঠেনি । মায়ের বাউন্ডেলে ছেলে । ছোটবেলায় বাপ মারা যায় । মা অনেক চেষ্টা করেছিল ছেলেকে মানুষ করার । ছেলে মানুষ না হয়ে বাউন্ডেলে হয়েছে । তাই গ্রামে কারো কাছে স্থান না পেয়ে শেষে এসে জোটে কালাচান ফকিরের কাছে । কালাচান ফকিরও সঙ্গী পেয়ে মনে মনে বেজায় খুশি । এরকমই চেয়েছিল সে ।

-৪-

ফকির কালাচানের আচার আচরন দেখে এলাকার মানূষ অল্প দিনের মধ্যেই তার ভক্ত হয়ে পড়ে । বিশেষ করে , ধর্মপ্রাণ মহিলা ও উঠতি বয়সের শিশু-কিশোররা তার প্র্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয় । উপরোন্তু এলাকাটির নাম বারআউলিয়া হওয়ার কারণে এধরনের ফকিরদের সবাই আলাদাচোখে দেখেন । যেমন , আগে এখানে মূল মাজার ছিল একটি । যেখানে প্রতিবছর বৈশাখ মাসে শেষ বৃহস্পতিবার ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয় । এলাকারই শুধু নয়- অনেক দুর দুরান্ত থেকে লোকজন বিভিন্ন ভাবে মানত করে তা এখানে এসে মানত কবুল করে যায় । শুধু মুসলমানরাই নন , অনেক হিন্দু পরিবারের মেয়ে- বধুরাও বিভিন্নভাবে মানত করে এখানে এসে তা পুরণ করে যায়।
এই বিষয়টিই ফকির কালাচানকে এখানে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ এনেদেয় । আর তার একমাত্র এলাকার সাগরীদ বাহরাম ওরফে নুচাই ফকির সহ এখানে একটি স্থায়ী ডেরা ( থাকার ঘর) গড়ে তোলে । নুচাইয়ের সাাথে তার সম্পর্ক অনেকটা স্বামী-স্ত্রীর মতো হয়ে যায় । রান্নাবান্না থেকে শুরু করে সব কাজ নুচাই সম্পন্ন করে থাকে । এলাকার ভক্তরা অনেকে অনেক ধরনের উপঢৌকন দিয়ে যায় । খাবার দাবার তো থাকেই । তবে ,কোন কিছুর অভাব না থাকলেও একটির অভাব কালাচান ফকিরকে কাতর করে ফেলত । আর তা হচ্ছে গাজার সুখটানের অভাব । এ কারণে মাঝে মাঝে সে কোন কোন দিন এলাকা থেকে হাওয়া হয়ে যায় । এই বিষয়টিও মানুষের মনে এক ধরনের রহস্য সৃষ্টি করতো । এইভাবেই চলছিল ফকির কালাচানের দিনলিপি । স্বপ্নযোগে পাওয়ার ইশারা দিয়ে কোন এক সকাল বেলায় হাজারো ভক্ত ও নুচাই ফকিরকে নিয়ে বারো আউলিয়ার জঙ্গলে তার বিচীত্র লাঠি দিয়ে এগারটি পৃথক জায়গায় কবরের চিহ্ন এঁকে বারো আউলিয়া নামটির সার্থকতা পুর্ণ করে সে । ভক্তরা সবাই মিলে আস্তে আস্তে সেগুলোতে কবর বানানোর কাজ সম্পন্ন করে ।
বার আউলিয়া এলাকা থেকে মাইল পাঁচেক দক্ষিণ পশ্চিমে গেলে ফকিরগঞ্জ হাট । এর থেকে আরো পাঁচ মাইল দক্ষিণে হলো রামনাথের মেলা ।ব্রিটিশ পরবর্তী পাকিস্তান আমলে বিলীণ হওয়া আলোয়াখোয়া মেলা ভারতের ভাগে পড়ায় এইমেলার সৃষ্টি । প্রতি বছরে দুইমাস ব্যাপী বসে রুহিয়ার রামনাথের মেলা । বছরের প্রতি কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া এই মেলায় প্রথম পনের দিন চলে একমাত্র গরু-মহিষের বেচা-কেনা । অবশ্য পাশাপাশি কিছু ত্যাজী ঘোড়াও এখানে কেনা বেচা হয় । এখানেই ঘোড়া কিনতে আসা হাতেম আলী তালুকদারের সাথে পরিচয় হয় কালাচান ফকিরের । অনেকটা রতনে রতন চেনে টাইপের কিছু ঘটে যাওয়া তাদের বন্ধুত্বও হয়ে যায় কল্কির বন্ধনে । প্রথম দেখায় সে ধরে নেয় এইলোকতো তারই লাইনের বই কিছু নয় ।কেননা, কাঁচাপাকা জট ছাড়া লম্বা দীর্ঘ চুলের গুচ্ছ পিঠের উপর ছড়ানো , অযতœ আর অবহেলার দাড়ি-গোফে মুখঢাকা যাতে গাজার টানের স্পষ্ট চিহ্ন তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েদেয় । বলা চলে একরকম আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় । প্রথমেই কুশল বিনিময়েই বলে –
: কাহা , বালা আছুননী । আপনারে যেন কই দেখছি ? হাতেমআলী তালুকদার প্রথমে ধকচক খেয়ে যায় । নিজেকে সামলে নিয়ে বলে -
: তোমারেতো চিনলামনা বাইজতা ! আবার চেনা চেনাও লাগতাছে । বাড়ি কই ?
: ফকির মানুষের আবার বাড়ি ঘড় ? সঙ্গে বাড়ি সঙ্গে ঘড় । কহন ডাক দিবো আমার দয়ালে ,সেই আশায় বসে আছি ।
: এইবার মনে পড়ছে ….সেই জামালপুরের যমুনার পাড়ের আমিন ব্যাপারীর বাড়িতে ।
ফকির কালাচান এক সময় আমিন ব্যাপারীর বাড়িতে যাওয়া আসা করতো অনেকটা বলা চলে কলকীর টানে । হাতেম আলী তালুকদারও সেখানে যেতো একই টানে। গঞ্জিকা নেশায় মাতাল অর্ধ উলঙ্গ নারী পুরুষের অবাধ সান্নিধ্যে সারারাত চলতো সেখানে জিকির আযগার আর ফকিরী নাচ-গান । হাতেম আলী তালুকদারেরাও যমুনার ভাঙ্গনের শিকার । তাই , যমুনার করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পেতে বোদা থানার কালিয়াগঞ্জে এসে বাড়ি ঘড় তুলেছে । এখানে এসে ভােেগ্যর অনেক পরিবর্তন করেছে । তালুক না থাকলেও একবারে সয়সম্পত্তি কম করেনি । প্রথমে কিছু জায়গা সম্পত্তি নগদে খরিদ করে পরে ওয়ারিশ বিহীন হিন্দু সম্প্রদায়ের পতিত জঙ্গল ঝাড় কেটে আবাদ যোগ্য করে তুলেছে এবং প্রায় ষাট বিঘা জমির মালিক হয়েছেন । জমির ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সন্তান উৎপাদনে একই হারে স্বাক্ষ্য রেখেছেন । ফলে, ১০/১২ জন ছেলে-মেয়ে নিয়ে তিনি ভালই আছেন । তবে, কল্কিবাবার বদৌলতে তার এই সম্পত্তির মালিক তিনি হয়েছেন বলে অগাধ বিশ্বাস রয়েছে তাঁর । দুইজনে একটা ভাতের হোটেলে খেয়ে নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে রওয়ানা দেয় কালিয়াগঞ্জের ওকরাবাড়ির উদ্দেশ্যে । আজকে কল্কির আসরটা জমবে ভালই ।
৮/১০ দিন হাতেম তালুকদারের বাড়িতে থেকে বেশ ভালই কেটেছে তার । নুতন নুতন কল্কি দোস্তের সাথে পরিচয় হতে পেরে তার অনেক ভাল লাগে । বিশেষ করে, রাতের বেলায় আসর যখন জমজমাট , হাতেম তালুকদারের বাড়ির অর্ধেক উঠানে শীতল জোৎস্নায় পাটিতে বসা গঞ্জিকা সেবক তথা অর্ধউলঙ্গ নারী পুরুষের সান্নিধ্য তাকে আলাদা আমেজ এনে দেয় । গঞ্জিকা সেবন এবং যৌনতা এই যুগল সান্নিধ্য কালাচান ফকিরকে নিয়ে যায় অচিনের টানে এক ভীন্ন জগতে যা একমাত্র অলৌকিকতার আড়ালে তার দেহমন শুধুই নিরবে ভোগবাদি নশ্বর পৃথিবীকে অর্থহীন করে তোলে ।
বারো আউলিয়ার ডেরায় ফিরে আবার সে ভং ধরে । অর্থাৎ বোবার অভিনয় করে । হাতেম তালুকদারকে এখানে আসার দাওয়াত দিয়ে এসেিেছল । এই এলাকায় একটি বড় বাড়ি রয়েছে । বাড়ির মালিকের নাম জমির সরদার । সে লক্ষ্য করে এলাকার মানুষ জন প্রতিপত্তি কিংবা ক্ষমতাকে খুব সমিহ করে । স্বভাবতই ফকির কালাচান এই লোকটিকেই একমাত্র হাতেগোনার মধ্যে ধরে ।কেননা , এই বিদেশ বিভুইএ বিপদ আপদে একজন ক্ষমতাশীল মানুষের বড়ই প্রয়োজন । তাই , অনেক সময় স্বয়ং সে হুটহাট করে জমির সরদারের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় এবং শুধুমাত্র অল্পসল্প খানাপিনা তারই বাড়িতে করে । নচেত নয় । জমির সরদারও কালাচান ফকিরকে কিছুটা সম্মান দেয় । ফকির মানুষতো তাই । তবে, তাকে বিশ্বাস করে অর্ধেকটা । যার অর্ধেক ভন্ডামী বা ধান্দাবাজি আর অর্ধেকটা পীর ফকিরের কেরামতি ।
অনেকদিন ধরে কালাচান ফকির চিন্তা করতে থাকে এই ডেরায় একটি জমজমাট আসর বসানোর । যেখানে থাকবে তারই লাইনের মানুষজন । এইজন্য হাতেম তালুকদারকে দাওয়াত দিয়ে এনেছিল । তার ডেরায় নারী পুরুষ মিলে অসংখ্য ভক্তদের আনাগোনার মাঝে কয়েকজনকে সে সবসময় টার্গেট করে রেখেছে । ইতিপুর্বে পানবারা গ্রামের উঠতি বয়সের কয়েক যুবক যারা তার অন্ধ ভক্ত তার মধ্যে নাদুস নদুস চেহারার যবেদালী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রবির অন্যতম । ডেরায় এ’ দুজনের আগমন ঘটলে ফকির কালাচানের মনে অন্যরকম ঢেউ খেলে যায় । এদের দেখামাত্র কালাচন ফকির তাদের ডেরায় নিয়ে গিয়ে ভালমন্দ খাইয়ে আদর আপ্যায়ন করে । পোটলা থেকে মেশকাম্বর আতর তথা উগ্র সুগন্ধি তাদের মাখিয়ে দিয়ে আকৃষ্ট করে ্। এক ফাঁকে তাদের আরো কাছে ডেকে নিয়ে লুঙ্গি বা ধুতির আড়ালে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে মখমলের মতো কোমল কচি সোনা (গোপনাঙ্গ) মৈথুন করতে থাকে । এই জিনিষটি তার জন্য অমোঘ সুখ বয়ে আনে । রাত গভীর হলে ফকির কালাচানসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা এক আদিম উম্মত্ততায় মেতে উঠে । এই কাজটি নিযমিত হওয়ায় কিংবা একারণে যবেদালী ও প্রবিরের মনে একসময় পাপবোধ থেকে অপরাধ বোধের জন্ম দেয় ।

******************

কিছু দিন পরের ঘটনা । টাঙ্গন নদীর পাশ ঘেষে কিছু নিচু এলাকা যা ঠিক বিল বলা চলেনা , স্থানীয় ভাষায় যাকে খাড়ি হিসাবে অভিহিত করা হয় । বর্ষা মৌশুমে কৃষকেরা যাতে পাট জাগ দেয় । এমনি একটি পাটের জাকের ভিতরে জটদাঁড়ি পরিবেষ্টিত কালো কুঁচ কুঁচে মানুষের গলিত লাশ দেখে এলাকার মানুষ ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে উঠে । এমনিতে এই এলাকায় খুন খারাবির ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে । তাই দলে দলে মানুষ লাশ দেখতে ভীড় করে পাট জাকের পার্শ্বে । ইতি মধ্যে থানা পুলিশের কাছে খবরপৌছে যাওয়ায় পুলিশের লোকজনকে লাশের পার্শ্বে ভীড়তেদেখা যায় । কিন্তু একটি রহস্যের কেউ কুল কিনারা করতে পারেনি আজো । ্ আর তা হলো – কালাচান ফকিরের ডেরায় মধ্যরাতে নুচাই ফকিরের বিবাহযোগ্যা বোন ফরিদাকে পাওযা যায় বিবস্ত্র অবস্থায় । একারণে নুচাই ফকির কালাচানকে পাটকাটা দা দিয়ে কুপিয়ে খুন করতে উদ্যত হলে তার বেশুরো এক ধমকে নুচাই অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায় । স্থানীয় লোকজন কালাচান ফকিরকে গণপিটুনী দিলে জমির সরদার তাকে উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেয় এবং গোরুরগাড়িতে করে চুপিসারে কিসমত স্টেশনে নিয়ে গিয়ে ভোর বেলার পার্বতীপুরগামী ট্রেনে তুলে দেয় ।সে রহস্য এখনও অজানাই রয়েগেল ওই এলাকার সহজ সরল মানুষ গুলোর কাছে ।
=========

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৪০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×