সুস্বাদু খাবারের জন্য বড় জায়গার দরকার হয় না। দুনিয়ায় এমন রেস্তোরাঁও আছে, যেখানে দুজন বসার মতো টেবিলও নেই, খেতে হবে একা একা। তবে সংখ্যায় গুটিকয়েক হলেও এমন কিছু রেস্তোরাঁ আছে, যারা বড় আকারের খাবারঘর এড়িয়ে ছোট্ট কিন্তু খুবই আন্তরিক পরিসরে রেস্তোরাঁ গড়ে প্রমাণ করেছে যে আকার বা বিশাল আয়োজন নয়, কীভাবে কী খাওয়ানো হবে, সেটাই রেস্তোরাঁর বিশেষত্ব। আমেরিকার লাস ভেগাস থেকে ইউরোপের আমস্টারডামে এমন পাঁচটি ছোট্ট পরিসরের আজব রেস্তোরাঁর কথা বলছি
১. এন মাল, আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ডস
অভিসারের রাতে ভুলেও কখনো এখানে খাওয়ার চিন্তা করবেন না। কেননা এ রেস্তোরাঁ খোলাই থাকে বছরে মাত্র কয়েক দিন। আর এ রেস্তোরাঁয় এমনকি দুজনে বসে খাওয়ার মতো কোনো টেবিলও নেই। যে কটা টেবিল আছে, সবগুলোই একজনের খাওয়ার জন্য যুত্সই। ২০১৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হওয়া এ রেস্তোরাঁর ভাবনা জুগিয়েছেন ডিজাইনার মারিনা ফ্যান গুর। ‘বাইরে খেতে যেতে সঙ্গ প্রয়োজন’ এ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতেই যেন চালু হয়েছে ‘এন মাল’ বা ‘একবার’ নামের এই রেস্তোরাঁ। মৌসুম অনুযায়ী এখানকার খাবারের মেনু পরিবর্তন হয়। তালিকায় আছে আচার দেওয়া শূকরের উদর ও বাঁধাকপি এবং ঘরে বানানো সরিষা-বাটা দিয়ে হাঁসের বুক আর কিছু সসেজ।
২. ডাইনার ইন দ্য স্কাই, লাস ভেগাস, যুক্তরাষ্ট্রডাইনার ইন দ্য স্কাই, লাস ভেগাস, যুক্তরাষ্ট্র।
আসনসংখ্যা ২২টা বলে এই রেস্তোরাঁর নাম হয়তো এই তালিকায় থাকার কথা ছিল না। কিন্তু একবার যখন ভোজে বসা সবাইকে নিয়ে চেয়ারসহ আস্ত টেবিলটাই শূন্যে উঠে যাবে ১৮০ ফুট উঁচুতে, তখন অবশ্যই এটা আজব রেস্তোরাঁর দাবিদার হতে পারে। একজন পাচক বিশাল ওই টেবিলের মাঝের ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে খাবার পরিবেশন করবেন চেয়ারের সঙ্গে সিটবেল্ট বেঁধে বসে থাকা অতিথিদের পাতে
৩. হলত্সনেখটহয়েটে, কারিনথিয়া, অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়ার কারিনথিয়া অঞ্চলের বনে কাঠুরিয়ারা কাঠ কাঠতে গিয়ে কখনো কখনো এক সপ্তাহও টানা থেকে যেতেন। তাই বনের ধারেই রাতে ঘুমানো আর রান্নার জন্য ছোট্ট একটা কুটির মতো বানিয়ে নিতেন ওই কাঠুরিয়ারা। এমন একটা কুটিরকেই এখন রেস্তোরাঁ বানিয়েছে কারিনথিয়ার আলমডর্ফ জাইনারসাইট রিসোর্ট। এই রেস্তোরাঁর সাজসজ্জা আর খাবারদাবার সবকিছুতেই আছে ওই বনাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার প্রয়াস। হলত্সনেখটহয়েটে নামের এই রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে মাত্র চারজনকে খেতে দেওয়া হয়। খাবারের তালিকায় আছে স্থানীয় রীতিতে রান্না করা ডিমের তরকারি, স্টেক এবং প্যান কেক। খাবার রান্না হয় কুটিরেই, খোলা আগুনে, আর ভোজ শেষ হয় ঘরে বানানো জিন-জাতীয় বিশেষ স্থানীয় মদে।
৪. সোলো পার দ্যু, ভ্যাসোনি, ইতালিসোলো পার দ্যু, ভ্যাসোনি, ইতালি।
এক রুমের এই ইতালীয় রেস্তোরাঁটি শুধু দুনিয়ার ছোট্ট রেস্তোরাঁর তালিকাতেই নয়, থাকতে পারে খুব রোমান্টিক রেস্তোরাঁর তালিকাতেও। উনিশ শতকে নির্মিত একটা ভবনে বানানো এই রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে মাত্র দুজন অতিথিকেই গ্রহণ করা হয়। তবে তাঁদের সেবায় প্রস্তুত থাকেন পাচক থেকে শুরু করে পুরো কর্মী বাহিনীই। আর হবেই না বা কেন, রেস্তোরাঁর নাম যে ‘সোলা পার দ্যু’ অর্থাত্ ‘শুধু দুজনের জন্য’। অতিথিরা মাছ বা মাংস দিয়ে বানানো নৈশভোজের অর্ডার করতে পারবেন। দাম একই, জনপ্রতি ২৫০ ইউরো। আর হ্যাঁ, ওয়াইন, শ্যাম্পেন বা অন্য পানীয়ের দাম আলাদাভাবেই দিতে হবে।
৫. কুয়াপপি, ইসালমি, ফিনল্যান্ড
মাত্র আট বর্গমিটারের এই রেস্তোরাঁতেও একত্রে দুজন অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা। তবে, আবহাওয়া ভালো থাকলে সামনের খোলা বারান্দায় আরও দুজন অতিথি আপ্যায়ন করার সুযোগ আছে। আর জায়গা না থাকার কারণেই হয়তো এদের খাবার রান্না হয় ‘ওলুতমেস্তারি’ নামে এদের একটা সহযোগী রেস্তোরাঁয়। তালিকায় আছে তাজা আর ভাজা সামুদ্রিক মাছের নানা পদ। গ্রিল করা স্যামন মাছ ও টোস্ট করা বাদামি রুটি, ময়দা দিয়ে মাখানো ভেন্দাস মাছ। কুয়াপপির নিজস্ব বার আছে, তবে ওদের পানীয়ের বোতলগুলোও ছোট ছোট। আর খোলামেলা কাঠামোর এই রেস্তোরাঁটা শুধু গ্রীষ্মকালে জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত খোলা থাকে।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো পত্রিকা...