somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাবণ্য- এক বিজয়ী মেয়ের গল্প!

২২ শে জুন, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওকে চিনি আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে। পাপড়ির কাজিনভাবি। পাপড়ির সঙ্গে ল'ফুলি কোনও আত্মীয়তা না থাকলেও সম্পর্কটা অনেক দৃঢ়। আমি ওকে আম্মু বলে ডাকি। ও আমাকে ডাকে মা। লাবণ্যর অনেক গল্প আমি শুনেছি ওর কাছ থেকে। কী এক কারণে (কারণটা জানলেও বলতে পারছি না) পাপড়ি ওদের বাসায় যায় না। এমনকি কোনও বড় ফাংশান হলেও না। আর লাবণ্যও আসে না ওদের বাসায়।একসময় যে বাসাটি ছিল লাবণ্যর সবচে প্রিয়, এখন সেখানে আসা যেন অবৈধ ওর...যাই হোক....
লাবণ্যকে আমি মনে মনে আমি একটু সমীহ করে চলি। বরং বোধয় একটু ভয়ই পাই।ও নাকি খুব রাগী টাইপের! এবং শুনেছি তাইই। তবে ফোনে সাথে যত কথা বলেছি ও তাতে অনেক স্বাভাবিক। কণ্ঠটা অনেক পিচ্চি পিচ্চি। প্রথম ভেবেছিলাম ন্যাকামু করে এভাবে কথা বলে। পরে বুঝলাম না, আসলেই ওর বয়স অনেক অল্প। এমনকি বয়সটা যা তার সাথে স্বভাবের সামঞ্জস্য আরও কম।ও এখনও চুরিকরে জকলেট খায়। বাচ্চার জন্য প্যাকেটভর্তি চকলেট আনে আর বাচ্চার নামে ও খায়। পাপড়ির সাথে ওর বরের কথা হয় সেই জানায় এসব।....রেগে গেলে বেচারী যা হয় এবয যা বলে তাতে কোনও স্বাভাবিক মানুষ স্বাভাবিক ভাবতে পারে না। সেজন্যই ওকে সমীহ করি...ফোনে কথা বলি মেপে মেপে। ওর বেশিরভাগ কথায় ওকে উৎসাহ দেই। যাতে না আবার উল্টাপাল্টা কিছু বলে।
নেটে বিচরণের ক্ষেত্রে আমি ওকে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম কিন্তু ও অনেক ডেসপারেট! সারাদিন বই পড়ে, বইয়ের পাত্রপাত্রীর মতো বড়করে ভাবে নিজেকে।কথাও বলে সেভাবে। সাইনে ওকে যেভাবে একসময় ব্লগাররা যাচ্ছেতাইরকম ব্যাডকমেন্ট করেছে তা যদি আমার ক্ষেত্রে হতো আমি অনেক আগেই ব্লগদুনিয়া ছেড়ে ঘরের ভিতর লুকিয়ে যেতাম। ও পারে বটে! হয়ত ওর বরই ওকে এভাবে সৃষ্টিকরেছে।(ওদের দাম্পত্যকলহের কথা বলতে ও সঙ্কোচ করেনি কখনও তাই বললাম)
সা.ইনে একটা বিতর্কিত এবং সেনসিটিভ লেখা লিখার ফলে ব্যান খায় সে। তারপর একদমই দমে যায়। আমি নেটে এসে ওকে না পেলে খুব একাকীবোধ করতাম। একজন নিয়মিত ব্লগার নেই! ওকে ফোনে বলতাম ব্যস্ত নাকি?
তারপর কিছুদিন আমি ওর কিছু লেখা কপি করে আমার ঠিকানা দিয়ে চালালাম। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হলো না। সেই ফ্লুয়েন্টনেস আর আগ্রহটা পাওয়া যায় না।...বলে থেমে গেলো।
আমাকে অনেকদিন থেকেই বলছিল একটা সামহোয়ার ইন কীভাবে তৈরী করা যায়? আমি হাসতে চেয়েও হাসতাম না। বলতাম চেষ্টা করলে নিশ্চই পারা যাবে। পাপড়ি এবং ওর কাজিন এক বড়ভাই (নামটা এখানে বলছি না ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে) ছিল যে এসব কাজে ওদের সাহায্য করতো। বরং ওদের এপথে সেই মিনিংফুলি এনেছে বলাযায়। সেই কাজিনকে দিয়ে কিছু সাবডোমেইনও তৈরি করে ফেলল। ইন্টারনেটের প্রতি ওর আগ্রহ দেখে আমি খুব বিচলিত হই! না জানি মেয়েটা কখন ভেঙে পড়ে। নেটসার্চিং ব্যাপারটা অনেক ভয়বহ! অপরিপক্ক হাতে মোবাইল দিলে যেমন হয়....ফোনে আজে বাজে কল আসতেই থাকে....হয়ত কাউকে মিসকল দিয়েছিল..হয়ত কলের লোভে যার তার সাথেই কথা বলে...ঠিক একইভাবে কার সাথে না কার সাথে অন্যধরণের সম্পর্ক জড়িয়ে যায় কে জানে। আর এটা যদি ওর বরের কানে যায় ও কি আর রক্ষাপাবে?
ওর কথা ভেবে আমি যতোটা চিন্তিত হই ও কিন্তু তা ভাবেই না। উপকূলে মানুষরা সাহসী হয় কারণ তারা প্রতিনিয়ত লড়াইকরে বাঁচে।ও হয়ত তেমনি লড়াই করে করতে সাহসী হয়ে উঠেছে।
হঠাৎ একদিন দেখি লিংক পাঠিয়েছে নিজ ডোমেইন!
আমি দেখে যতোটা অবাক সেটা লুকিয়ে রেখে বললাম নিজের নামে করলে? অন্যকিছু নাম দিলে হতো না?
আরে নিজের নামে না দিলে ক্যামনে বুঝাবো এটা আমার ডোমেইন?
বেশ চালিযে যাও।
এরপর বেশকিছু ঝামেলা যায়। প্লাগইন করতে পারছে না। বাঙলা আসছে না। ইত্যাদি।বাঙলা সফট এর অধিকর্তার সাথে যোগাযোগ করে নাকি সে সমস্যার সমাধান করে। নামটা আমার মনে নেই, তবে এটা ভাবতেই পারি না ও একজন সফটওয়্যার নির্মাতাকে কমিউনিকেট করে ফেলল? আজ যদি ওর পিসিতে কোনও সমস্যা হয় ওকি চার্লস ব্যাবেজের সাথেও যোগাযোগ করে ফেলবে? অথবা মাইক্রোসফট এর সমস্যা নিয়ে বিলগেটস এর সাথেই যোগাযোগ করলো!
ওর ক্যলিবার দেখে অবাক হতাম কিন্তু সত্যিই ও পারবে সেটা ভাবতে পারতাম না। কারণ ছিল ওর কনজার্ভেটিভ স্বামী। যে ওকে যখন খুশি গায়ে হাত তোলে। ওকে অনেক কিছুই করতে দেয় না। চারিদিকে বিধি নিষেধ!
কিন্তু আজ ওর সাইট ওপেন করে অবাক হলাম! বাঙলায় গল্প লিখছে। লিংক যোগ করেছে। সেই লিংক এ চাকরির সন্ধান আছে, প্রতিবন্ধীদের সংবাদ আছে। হোমারের ইলিয়াড আছে, আর আছে ও যে যে সাইটে কাজ করে তার লিংক। ওর প্রিয় পাঁচটি দৈনিক পত্রিকাও আছে।.....

এতোকিছু করার পরও ওকি পেরেছে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে? পেরেছে কি নিজের একাডেমিক যোগ্যতা বাড়াতে? হয়ত অনেক জ্ঞানীগুণীদের চেও ভালো কথা বলতে ও পারে, কারণ ও বই পড়ে কিন্তু তবুও....
আজ সকালে ফোন দিয়ে বলে একটা মজার ঘটনা আছে।
কী সেটা?
ও বলে গতরাতে ও নাকি আত্মহত্যার প্ল্যান করে। ওর স্বামী বেশ কিছুদিন ওর গায়ে হাত তোলে না, কিন্তু সেদিন ওর মা ফোন করায় নাকি মেজাজটা বিগড়ে যায় তারপর থেকে ইস্যু খুঁজতে থাকে মারার। পেয়েও যায় আর সাথে সাথেই এমন একটা আঘাত করে....আমার উল্লেখ করতে কষ্ট হচ্ছে।
তারচে বড়কথা সে নাকি ওর মৃত্যু কামনা করে....
মৃত্যুর কথা ভেবে খুব কষ্ট হয় নিজের জন্য। খুবকরে মনে পড়ে ব্লগের বন্ধুদের! প্রায় ঘণ্টা দুয়েক নিজের বিদায়ের কথা ভেবে নিজেই কাঁদে(মেয়েটা নিজে কী করে এসব বলে?) আর ভাবে আত্মহত্যাটা কীভাবে করবে। বাথরুমের ফিনিস খেয়ে মরবে নাকি গলায় ফাঁস দেবে?....
এদিকে বাবুটা ওর কোলে ঘুময়ে আছে। বাবুকে দুধখা্ওয়াতে খা্ওয়াতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে আর মনে থাকে না আত্মহত্যার কথা। সকালে স্বামীর ধমকে ঘুম ভাঙে। বাবুর খাবার বাবুর বাবার খাবার রেডি করে, নিজে খায়....
আবার শুরু হয় ওর জীবন।
আমার খুব হাসি পায়। কেন পায় জানি না। মেয়েটা ....
নিজের উপর নিজেই বিজয় অর্জন করে লাবণ্য। ওর একটা ডোমেইন প্রয়োজন ছিল, চেয়েছিল সা.ইনকে দেখিয়ে দেবে কীভাবে ওর কণ্ঠরুদ্ধ করে, সেই জন্যেই ডোমেইন কেনা। সেক্ষেত্রে ও জয়ী। এখন ওর নিজস্ব ওয়েব অ্যাড্রেস আছে। আবার নিজের মৃত্যুকে নিজেই দূরে সরিয়ে দিয়ে আরেকবার বিজয় ছিনিয়ে নিল।
স্বামীর প্রবল বাধা স্বত্ত্বেও আজ ইন্টারনেটের অনেককিছুই ওর দখলে, আমাদের দেশে কটা মেয়েরইবা এমন দক্ষ যোগ্যতা আছে? যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাই অতি নগণ্য সেখানে লাবণ্য লাকি কি একটি নয়? আমি ব্লগের বন্ধুদের কাছে দাবি করবো তারা যেন লাবণ্যলাকির এই 'ইন্টারনেট ইউজার' হ্যাবিটটাকে স্বীকৃতি দেয় উপমার সাথে।
আমি অবশ্য জানি না বাংলাদেশের কোন মেয়ে এভাবে ইন্টারনেটের সাথে নিজেকে খাপখাইয়ে নিয়েছে কেবল নিজের প্রচেষ্টায়। কোনও প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ছাড়াই এবং নির্বিঘ্ন সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও!......

http://www.labonnolucky.com/?p=90
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×