somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রতিপালক আরশে সমাসীন-এ কথার সত্যতা

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহ মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য ( সুরা যারিয়াত ৫৬)। আর ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম দু’টি শর্ত হ’ল- (১) যাবতীয় ইবাদত শুধুমাত্র তাঁর জন্যই নিবেদিত হ’তে হবে। যেমন- সালাত, সিয়াম, হজ্জ-যাকাত, যবেহ, কুরবানী, ভয়-ভীতি, সাহায্য, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি। (২) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুকরণ, অনুসরণ করতে হবে এবং তিনি যেভাবে ইবাদত করতে বলেছেন সেভাবেই তা সম্পাদন করতে হবে। উপরোক্ত শর্ত দু’টির সাথে আক্বীদা-বিশ্বাস বিশুদ্ধ হওয়া অতীব জরূরী। অত্র প্রবন্ধে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কিত একটি ভ্রান্ত আক্বীদা হ’ল-অনেকের বিশ্বাস আছে যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান

অথচ মহান আল্লাহ বলছেন, তিনি আরশের উপর সমাসীন। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে ৭টি আয়াত বর্ণিত হয়েছে। (ইমাম ইবনু তায়মিয়া, মাজমূউ ফাতাওয়া ৩/১৩৫)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও বলেছেন যে, আল্লাহ আসমানে আছেন। সাহাবী (রাঃ) এবং তাবেঈগণ সকলেই বলেছেন আল্লাহ আসমানে আছেন। তাছাড়া সকল ইমামই বলেছেন, আল্লাহ আসমানে আছেন।

এরপরেও যদি বলা হয়,আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাহ’লে কি ঈমান থাকবে এবং আমল কবুল হবে?

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান- একথা ঠিক নয়, বরং পবিত্র কুরআন বলছে, আল্লাহ আরশে সমাসীন।
এ মর্মে বর্ণিত দলীলগুলো নিম্নরূপ-

(১) আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন’ ( সুরা আ‘রাফ ৭/৫৪)।

(২) ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন’ ( সুরা ইউনুস ১০/৩)।

(৩) ‘আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমণ্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত- তোমরা এটা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হ’লেন’ ( সুরা রা‘দ ১৩/২)।

(৪) ‘দয়াময় (আল্লাহ) আরশে সমাসীন’ ( সুরা ত্ব-হা ২০/৫)।

(৫) ‘তিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন। তিনিই রহমান, তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ’ ( সুরা ফুরক্বান ২৫/৫৯)।

(৬) ‘আল্লাহ তিনি, যিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন’ ( সুরা সাজদাহ ৩২/৪)।

(৭) ‘তিনিই ছয় দিনে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন’ ( সুরা হাদীদ ৫৭/৪)।

উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা আরশে সমাসীন আছেন। কিভাবে সমাসীন আছেন, একথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা আসমানের উপর আছেন। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি (এ বিষয়ে) নিরাপদ হয়ে গেছ যে, যিনি আকাশের উপর রয়েছেন তিনি তোমাদের সহ ভূমিকে ধসিয়ে দিবেন না? আর তখন ওটা আকস্মিকভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকবে। অথবা তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছ যে, আকাশের উপর যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদের উপর পাথর বর্ষণকারী বঞ্ঝাবায়ু প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে কিরূপ ছিল আমার সতর্কবাণী’? ( সুরা মুলক ৬৭/ ১৬-১৭)।

ইমামদের মত:

ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বলেন,‘যে বলবে যে, আল্লাহ আসমানে আছেন, না যমীনে তা আমি জানি না, সে কুফরী করবে। কেননা আল্লাহ বলেন, রহমান আরশে সমাসীন। আর তার আরশ সপ্ত আকাশের উপর। (ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ, পৃঃ ৯৯)

ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন,‘আল্লাহ আকাশের উপর এবং তাঁর জ্ঞানের পরিধি সর্বব্যাপী বিস্তৃত। কোন স্থানই তাঁর জ্ঞানের আওতার বহির্ভূত নয়’। (ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ,পৃঃ ১০১)

ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেন, ‘সুন্নাহ সম্পর্কে আমার ও আমি যেসকল হাদীসের বিদ্বানকে দেখেছি এবং তাদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছি যেমন সুফিয়ান, মালেক ও অন্যান্যরা, তাদের মত হল এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোন (হক্ব) উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। আর আল্লাহ আকাশের উপর তাঁর আরশে সমাসীন। তিনি যেমন ইচ্ছা তাঁর সৃষ্টির নিকটবর্তী হন এবং যেমন ইচ্ছা তেমন নীচের আকাশে অবতরণ করেন’। (ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ,, পৃঃ ১২২)

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর পুত্র আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি থেকে দূরে সপ্তম আকাশের উপরে তাঁর আরশে সমাসীন। তাঁর ক্ষমতা ও জ্ঞানের পরিধি সর্বত্র বিস্তৃত । এর উত্তরে তিনি (ইমাম আহমাদ) বলেন, হ্যাঁ! তিনি (আল্লাহ) আরশের উপর সমাসীন এবং তাঁর জ্ঞানের বহির্ভূত কিছুই নেই। (ইজতিমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়্যাহ,পৃঃ ১৫২-১৫৩)



লেখকঃ হাফেয আব্দুল মতীন,
মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,সঊদী আরব।

মূল লেখা: Click This Link

আরো জানতে এই বইটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন:
প্রশ্নোত্তরে সহজ তাওহীদ শিক্ষা চার ইমামের আক্বীদা অবলম্বনে
১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×