somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফায়লাসুফ, ইসলামের যুক্তিবাদীরা... ।

২০ শে মে, ২০১১ রাত ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নবম শতকে আরবে একদল অনুবাদক যার বেশীর ভাগই নেস্ট্রীয় খৃস্টান আরবী ভাষায় গ্রীক টেক্সট গুলির অনুবাদ করা শুরু করে..। যার ফলশ্রুতিতে আরবদের পক্ষে প্রথমবারের মত গ্রীক বিজ্ঞান ও দর্শনের সংস্পর্শে আসার ব্যপক সুযোগ সৃস্টি হয়।এতে আরব মুসলিমরা অ্যালকেমী,চিকিৎসা বিজ্ঞান,গনিত,অ্যাস্ট্রনমীর মত বিষয়ে প্রভুত সাফল্য অর্জন করে। সে সময় বিশেষ করে আব্বাসীয় শাসনামলে এতো বেশী বৈজ্ঞানীক আবিসস্কার হয় যা পুর্বে কখনো হয় নি।

ঐ সময়ে নতুন এক আদর্শের প্রতি অনুগত এক মুসলিম সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে যারা ইতিহাসে "ফায়লাসুফ" নামে পরিচিত হয়ে উঠবে আর তাদের আদর্শের নাম হবে "ফালসাফাহ"। সাধারন আরবীতে এর অর্থ "দর্শন"। যদিও এটা ছিলো দর্শনের চাইতে কিছু বেশী। এই ফায়লাসুফগন মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রনকারী আইন অনুযায়ী যৌক্তিক ভাবে জীবনধারন করতে চেয়েছে। তারা গ্রীক অধিবিদ্যার নীতিমালাকে ইসলামে প্রযোগ করতে বদ্ধপরিকর হয়ে উঠে। তাদের বিশ্বাস ছিলো গ্রিক দার্শনিকদের ঈশ্বর আর মুসলিমদের আল্লাহ একই।

তাদের বিশ্বাসের মুলে ছিলো যুক্তিবাদ ধর্মের চেয়ে অগ্রসর একটি ধারনা এবং তারা যুক্তিবাদের দ্বারা ঐশীগ্রন্থে প্রকাশিত ঈশ্বরের চেয়ে একটি উচ্চতর ঈশ্বরের ধারনার বিকাশ ঘটীয়েছে।যদিও ফায়লাসুফ রা ব্যক্তি জীবনে সাধারন ভাবে সৎ আর ধার্মিক মানুষ ছিলেন এবং নিজেদের ইসলামের নবীর অনুগত ভাবতে পছন্দ করতেন তার পরেও তারা আপন যুক্তির নির্দেশ মত নিজ সমাজকে সংস্কার করতে চেয়েছেন। তাদের বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক গবেষনা গ্রিক চিন্তাধারায় প্রভাবিত ছিলো বিধায় তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে অধিক্তর যুক্তিবাদি ,বস্তুবাদি দৃস্টিভঙ্গীর ভেতরে একটা সংযোগ আবিস্কার করার তারনা ছিলো।

গ্রিক দার্শনিকদের ঈশ্বর প্রত্যাদেশের ঈশ্বরের চাইতে একেবারেই ভিন্ন ছিলো..অ্যারিস্টটাল আর প্লাটিনাসের পরম উপাস্য কালহীন এবং নিরসক্ত,যিনি জাগতিক বিষয়ের দিকে লক্ষ করেন নি,ইতিহাসে নিজেকে প্রকাশ করেন নি,বিশ্ব জগতের সৃস্টি করেন নি এবং সময়ের শেষে বিচার করবেন না।যাকে অ্যারিস্টাটল "প্রাইম মুভার" আর প্লাটিনাস দ্যা ওয়ান হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন । গ্রিকদের দর্শন অনুযায়ী বিশ্বজগৎ অনন্তকাল ধরে ঈশ্বরের নিকট থেকে উৎসারিত হচ্ছে,এর সূচনা,মধ্যস্থল বা শেষ নেই।

গ্রিক অধিবিদ্য দ্বারা প্রভাবিত ফায়লাসুফদের ঈশ্বর স্ব প্রকাশিত।ফায়লাসুফদের ঈশ্বর আকস্মিক সিদ্ধান্ত গ্রহন বা পরিবর্তন সূচিত করতে সক্ষম নন।আল্লাহকে তাদের যুক্তিবাদি আদর্শের সাথে মানানসই দেখাতে যুক্তি প্রমানের গুরুত্ব অনুভব করেছিলো। ফালসাফায় একধরনের একধরনের আভিজাত্য,বস্তুনিস্টতার সন্ধান ও কালহীন দৃস্টিভঙ্গী ছিলো। সম্ভবত এক বিশ্বজনীন ধর্ম চেয়েছিলো তারা যা ঈশ্বরের কোন বিশেষ প্রকাশ দিয়ে সীমাবদ্ধ নয় কিংবা নিদৃস্ট কোন স্থানকালে প্রোথিত নয়। ঈশ্বরকে রহস্য হিসাবে না দেখে ফায়লাসুফরা বিশ্বাস করতো তিনিই সয়ং যুক্তি।

ঈশ্বর যে সয়ং সরল,দার্শনিক ও কোরআন এ বিষয়ে একমতঃ তিনি একক সুতরাং তাকে বিভিন্ন অংশে বা গুনাবলিতে ভাগ করা সম্ভব নয়।আর যেহেতু এই সত্তা চুরান্ত রুপে সরল সেহেতু এর কোন কারন নেই,গুনাবলী নেই,কোন সময়গত মাত্রা নেই এবং তার সম্পর্কে বলার মত আমাদের কিছুই নেই। ঈশ্বর বাস্তব চিন্তা ভাবনার বিষয় হতে পারেন না। যদিও ফায়লাসুফদের মধ্যে ঈশ্বরের অস্ত্বিত নিয়ে নিয়ে বিন্দু মাত্র সন্দেহ ছিল না।

প্রায় সমসাময়িক মুতাজিলি আর আশারিবাদীরা উভয়ই প্রত্যাদেশে ও স্বাভাবিক যুক্তির মাধ্যে সেতুবন্ধ গড়ে তুলতে চাইলেও প্রত্যাদেশের ঈশ্বরের অবস্থান তাদের কাছে ছিলো সবার আগে অপর দিকে বৈজ্ঞানীক চেতনার বিরোধী কোন কিছু ফায়লাসুফদের সন্তুস্ট করতে পারে নি। ফায়লাসুফদের ভাষ্য ছিলো যৌক্তিক বিতর্কের মাধ্যমে ঈশ্বরকে আবিস্কার করতে হবে যা কোন নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের কাছে নিদৃস্ট ঐশী প্রত্যাদেশের মাধ্যমে নয়।

ঈশ্বরের প্রকৃতি জানার জন্য যুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগের উপর জোর দিয়েছেন। যদিও তারা ইসলাম সম্পর্কে তাদের অধিক্তর দঃসাহসী ও ঊদ্ভাবনী সাদাহ্রন মানুষের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝির সৃস্টি করত্যে পারতো।অভিজাত ও গোপন চর্চা। ফালসাফার আগমন ছিলো শুন্য হতে সৃস্টির মতবাদ প্রত্যাখানের জন্য।

ফায়লাসুফদের মধ্যে আল-ফারাবি যাকে ফালফসাফার প্রতিস্টাতা হিসানে গন্য করা হয় তিনি অ্যারিস্টাটলের কাছাকাছি থেকে গেলেও আবু বকর মুহাম্মদ ইবন যাকারিয়া আর-রাযি যাকে মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নন কনফারমিস্ট হিসাবে ধরা হয় তিনি কিন্তু অ্যারিস্টটলের ধারনা নাকচ করে নস্টিকদের মত সৃস্টিকে স্রস্টার কর্মকান্ড হিসাবে দেখেছেন। এবং তার মতে কোন সম্পুর্ন কোন আধ্যতিক কোন উৎস হতে বস্তু উৎসারিত হতে পারে না। তিনি "প্রাইম মুভার" সম্পর্কিত অ্যারিস্টাটলের সমাধান প্রত্যাখ্যান করেন প্রত্যাদেশ ও পয়গম্বরত্বের কোরানিক মতবাদসমুহও প্রত্যাখ্যান করে বলেন কেবল যুক্তি ও দর্শনই আমাদের রক্ষা করতে পারবে। আর-রাযি প্রকৃতপক্ষে একেশ্বরবাদী ছিলেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আর সম্ভবত তিনিই প্রথম মুক্ত চিন্তাবিদ যিনি ঈশ্বরের ধারনা কে বৈজ্ঞানিক দৃস্টি ভঙ্গীর সাথে বেমানান বলে জানতে পেরেছিলেন। তার মত আর কোন ফায়লাসুফই তাদের যুক্তিবাদকে এতটা চরম পর্যায়ে নিয়ে যায় নি।

ইসলামের ইতিহাসে ফালসাফার সংখ্যালঘু গোত্র হিসাবে থেকে যাবার অন্যতম কারন এর আভিজাত্যবাদ। এ মতবাদ নিদৃস্ট বুদ্ধিমত্তার অধিকারীদের ভেতরেই আবেদন জাগাতে পেরেছিলো, এবং যা কিনা যা কিনা অগ্রসরমান মুসলিম সমাজের বৈশিস্টে পরিনত হতে চলা সাম্যবাদী চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপুর্ন ছিলো না।

তথ্যসূত্রঃ এ হিস্টোরী অভ গড- ক্যারেন আর্মেস্ট্রং।


৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×