আমাদের দেশের মানুষ অত্যন্ত সহজ সরল, এই মানুষ গুলো একবার যাকে বিশ্বাস করে তার কোনো দোষ ত্রুটি লাইভ ভিডিও তে ধরা পড়লেও স্বীকার করতে চায় না। উলটো তাকে রক্ষা করার জন্য একটার পরে একটা মিথ্যা তথ্য দিয়ে যুক্তি খন্ডানো মানুষ গুলোকে হেয় প্রতিপন্ন করে। তার একটা উতকৃষ্ট উদাহরণ জনাব মামুনুল হক। ভদ্রলোক ধরা খেয়েছেন তার কথিত ২য় স্ত্রীর সাথে সোনার গাঁয়ের একটি রিসোর্টে। তিনি তার স্ত্রীর নাম লিখেছেন রিসোর্টের রেজিস্টারে “আমেনা তৈয়বা” কিন্তু সেই কথিত ২য় স্ত্রীর নাম “জান্নাত আরা ঝর্ণা”। এই একটি পয়েন্ট ই প্রমাণ করে ভদ্রলোক দৃষ্যত জেনা করে বেড়াচ্ছেন।
নিচে সংযুক্ত ভিডিও টিতে অডিও এবং অন্যান্য প্রমাণ একসাথে করা হয়েছে ।
এরপরে আর কোনো প্রমাণ লাগেনা । কিন্তু তিনি দাবী করলেন তিনি বিয়ে করেছেন কালেমা পড়ে, রেজিঃ করেন নি । একজন এতোবড় ইসলামিক স্কলার যিনি কিনা লাখো মানুষের আইডল তিনিও যদি দেশের প্রচলিত আইন না মানেন তাহলে দৃষ্যত এই ব্যক্তি আর আইডল হিসেবে যোগ্য থাকেন না।
কিন্তু তার ভক্তদের তো আর থামানো যায় না । সোসাল সাইট গুলো সাংবাদিকদের গালাগাল, হত্যার হুমকী। কেউ মামুনুলের বিপক্ষে বললেই তার জন্মের ঠিক নাই, তাদের জানাজা পড়ানো হারাম সম্বলিত ফতোয়া ছড়াচ্ছে মুখবইয়ের পাতায় পাতায়। একটার পর একটা করে ফোন রেকর্ড বের হলো আর তার ভক্ত রা আওয়ামী লীগ সহ এর অন্যান্য সংগঠনের ওপর দায় চাপালো । এমনকি জান্নাত আরা ঝর্ণার ভিডিও ক্লিপ টাকে ছাত্রলীগের কোনো এক নেতার স্ত্রী বলে প্রচার করতে লাগলো তারা । তারা এমন ভাবে মিথ্যে প্রচার করলো লাখ লাখ মানুষ একই মিথ্যা ছবি পোস্ট করতে লাগলো । মিথ্যাকে যে এভাবে প্রচার করতে করতে সত্য বানানো যায় তা আমরা ৩ তারিখ থেকে দেখলাম।
কিন্তু বিধি বাম, আল্লাহ যাকে সম্মান দেন তার সম্মান যেমন কেউ কেড়ে নিতে পারেন না তেমনি আল্লাহ যাকে বেইজ্জত করেন তাকেও কেউ রক্ষা করতে পারেন না । মামুনুল নিজে লাইভে এসে বললেন, “ এই সব কল রেকর্ড তার একান্ত ব্যক্তিগত, এসব যারা প্রচার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। একেতো তিনি দেশের আইন মানেন না তার ওপরে উনি দেশের প্রচলিত আইনেই বিচার চাচ্ছেন , ব্যপার টা হাস্যকর । তিনি যদি দেশের আইন মানতেন তবে কনের বাবা মাকে জানিয়ে, নিজের প্রথম স্ত্রী কে জানিয়ে তারপর রেজিস্টার করে বিয়েটা করতেন । কিন্তু গোপন রক্ষিতা কে কি কেউ বিয়ে করে? এটা যে মামুনুলের মতন ধর্ম ব্যবসায়ীদের যুগ যুগের খেলা । ৭১ এ এ দেশের মেয়েরা ছিলেন গণিমতের মাল। তার বাবা নিরপেক্ষ ভাবে পাকিস্তানের সাপোর্টার ছিলেন ৭১ এ, তার বাবারা প্রচার করতো আওয়ামী লীগ নাস্তিক, যুক্তফ্রন্ট কে ভোট দিলে বিবি অটো তালাক হয়ে যাবে, আওয়ামী লীগের কারো জানাজা পড়া হারাম। ৭১ চলে গিয়েছে আজ ৫০ বছর কিন্তু আজো সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন মামুনুলের মতন পাকিস্তান পন্থি আলেমারা।
ইসলামে পরবর্তী বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগেনা কিন্তু অনশ্যই জানাতে হয় বিয়ের আগে। কনের বাবা মাকে অবশ্যই জানাতে হয় । সমাজ কে জানাতে হয় । কিন্তু এ দুনিয়ার কেউ জানতো না ঝর্ণার ছেলে ঝর্ণা আর মামুনুল ছাড়া । ঝর্ণার ছেলে তো লাইভে এসে সব বলে দিয়েছে। কিভাবে মামুনুল তাদের সংসারে আগুন লাগিয়ে ঝর্ণার সাথে শহিদুলের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ঝর্ণাকে নিজের রক্ষিতা হিসেবে রেখে দিয়েছে।
সর্বশেষ ঝর্ণার ৩ টি ডায়েরী ঝর্ণার ছেলে প্রকাশ করে সোসাল মিডিয়ায়। বরাবরের মতই হেফাজত আর তাদের ভক্ত রা সব উড়িয়ে দিচ্ছে । ডায়েরী তে লেখা ছিলো “মামুনুল তাকে বিয়ে না করে তার শরীর টা খাচ্ছে” সাদা কাপড় পড়লেই কেউ ভালো মানুষ হয় না ।
নিচের এই ভিডিও তে তিনি পরনারীর সাথে আলাপকালে "দুধের চিনি খেতে চেয়েছেন"
এখন ডায়রী ৩ টি পল্টন থানার জিম্মাতে রেখেছে তার ছেলে। তার মাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা তাই সে পল্টন থানায় জিডিও করেছে । কিন্তু ওই যে বললাম মামুনুলের ভক্তদের চোখে আগেই কালো কাপড় বেঁধে রাখা । হুজুর নিজে এসে স্বীকার করলেও তারা বলবে ওটা হুজুর না হুজুরের ক্লোন ছিলো।
আওয়ামী লীগ ক্লোন বানিয়েছে । আর নয়তো জ্বীনের ওপর ঘটনা চাপিয়ে দেবে তারা । এই মামুনুলেরা ছাত্রলীগ কোনো ধর্ষণ করলে বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বের করে অথচ গত ১৫ মাসে ৬৩ জন ছাত্র কে বলাৎকার করা হয়েছে আর এর মধ্যে ৩ জন মারা গিয়েছে। (এই কথা লিখতে গিয়ে আমার হাত কাপছে এই শিশু গুলোর কষ্ট আমি সইতে পারিনা)
কিন্তু মজার ব্যপার খেয়াল করুন, হুজুরেরা যতই বলাৎকার করুন না কেন মামুনুলেরা কোনোদিন একটা আওয়াজ ও করেন না । আজ পর্যন্ত কোনদিন দেখিনাই একটা মিছিল বের করতে । বলাৎকারী হুজুর দের বিরুদ্ধে কোনদিন ফতোয়া দিতে দেখিনাই । আমাদের দেশের টিনের চশমা পড়া অন্ধ ভক্তদের কথা না হয় আর কি বলবো তারা তো বিশ্বাস ই করেন না । যতক্ষণ না নিজের ঘরে আগুন লাগে ততক্ষণ আর কারো টনক নড়ে না । অন্যান্য কোনো সংগঠনে তো আর এমন শিশু নির্যাতনের খবর আসেনা কখনোই । আমরা কোথায় যাবো? রক্ষক ই যখন ভক্ষক আর তাদের যারা এসব বড় আলেমেরা শেল্টার দেয় আমাদের ই বা কি করার আছে । সামগ্রিক ভাবে এই বলতে পারি বাংলাদেশের এতিম দের জন্য সরকারের বিকল্প কিছু করতে হবে । পথভ্রষ্ট আলেম দের শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । ওয়াজ মাহফিলে অহেতুক হুংকার দেয়া, কথায় কথায় জিহাদ জিহাদ বলে চিল্লানো হুজুরদের থামাতে হবে ।
শহীদ হওয়ার বাসনা জাগানো ওয়াজ গুলো অনলাইন প্রচার ও অফলাইনে যেন আর জঙ্গী মনোভাবের ওয়াজ কারী হুজুরেরা আর অনুমতি না পান সেই ব্যবস্থা নিতে হবে । নয়তো দেশ আফগান, ইরাক, সিরিয়া পাকিস্তান হতে দেরী নেই। আজকে যেসব দেশেই কেউ ইসলাম কে রক্ষা করতে গিয়েছে মিলিয়নের ওপরে মানুষ মারা গিয়েছে আর দেশ গুলো ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে । আল্লাহ এই ইউনিভার্সের সৃষ্টিকর্তা । আমাদের মত ছোটো জীব একটা ধূলিকণার সমান ও না এই বিশ্বের তুলনায় । আমরা করবো রক্ষা পরম করুণাময় সর্বশক্তিমানের বেঁধে দেয়া জীবন ব্যবস্থা কে ? কতবড় স্পর্ধা আমাদের!
আল্লাহ যেখানে নিজে বলেছেন, আমিই এর হেফাজত কারী সেখানে “হেফাজতে ইসলামের” এই সাহস হয় কোথায়? যারাই তার ধর্ম কে রক্ষা করতে গিয়েছে সেখানেই ফিতনা সৃষ্টি হয়েছে আর ”ফিতনা হত্যার চেয়েও জঘন্য ।“ যখন এদের কে প্রশ্ন করা হয় “তোমরা বিশৃংখলা কেন করছো, তখন এরা উত্তর দেয় আমারা তো শুধু মিমাংসা করতে চাচ্ছি। আদতে এরা নিজেরাও বুঝতে পারেনা এরাই ফিতনা সৃষ্টিকারী”।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝা তৌফিক দিন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৫২