আগের পর্ব এখানে
Click This Link
‘যাবা না কেন?এখন ঘুরছে একটু পরেই দেখবা আর ঘুরছে না। এক কাজ করো।ওইখানে রিকশা থামাও, চোঁখে মুখে পানি দাও ঠিক হয়ে যাবে।'
‘স্যার আর যামু না।আর গ্যালে দিশা হারায় ফেলপো,বাসাত যামু‘ ।' রিকশাওয়ালা নির্বিকার।
রক্ত মাথায় ওঠে যেতে চাইছে।মতিন সাহেবের আরও দুই ইঞ্চি ওপরে উঠে গেল।থাপড়িয়ে ব্যাটার মাড়ির দাঁত ফেলে দিলে রক্ত নামতে পারে।সম্ভাবনা আছে।এমনভাবে বদটা তাকায় আছে যেন তার ঢাকা দেখা শেষ, দিন-দুনিয়ার পাঠ চুকিয়ে ফেলছে,এখন বাড়ি যাবে।ব্যাটা তোর বাড়ি আছে, আমার বাড়ি নাই। আমি নৌকায় করে তোর রিকশায় উঠছি।আমি বজরাবাসী আর তুই গৃহী বসুধা । ‘দিশা হারাবা না, আর অল্প একটু।এসে গেছি।'
ভরসায় কাজ হল না।বাঙ্গালীর মন থেকে ভরসা উঠে গেছে।রিকশাওয়ালা চোখমুখ কঠিন করে ফেলেছে।এর অর্থ আপনি নামেন,নাইলে বাজার সুদ্ধা ফালায় দিবো।এ অবস্থায় কথা চালিয়ে যাওয়া বৃথা।মতিন সাহেব নেমে গেলেন। এটুকু পথ আর কোনো রিকশাও যাবে না।এই রোদের মধ্যে বাজার ঠেলে যেতে ইচ্ছা করছে না। রিকশাওয়ালার সাথে স্থুল মান-অভিমান চালানো যেতে পারে, কিন্তু বদটা মত পাল্টাবে বলে মনে হচ্ছে না।
‘চাচা, আপনে এ বাড়ীর সামনে দাঁড়ায় কি করেন? উনার সাথে কোন চিন-পরিচয় আছেনি?’ কিসলু পান খাওয়া দাঁতগুলো বের করে আছে। সে এ বাড়ীটা দখলের কাজ পেয়েছে কিছুদিন হলো। এখনো বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে।খোঁজখবর যা আছে, এদের টোকা দিলেই উঠে যাবার কথা।বড় টোকা না, ছোট টোকা।বড় টোকাতে আওয়াজ বেশি।আজকাল বেশি আওয়াজে কাজ করা ঠিক না। পত্রিকায় নিউজ চলে আসে। পাবলিক দখল,গুলি,খুন খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ে।
‘জোরপূর্বক শহীদ বুদ্ধিজীবির বাড়ি দখলের চেষ্টা,৩ রাউন্ড গুলি… কোথায় আছি আমরা’
“ গতকাল গভীর রাতে কতিপয় সন্ত্রাসী কলাবাগানের …/এ নম্বর বাড়িতে জোরপূর্বক ঢুকে পড়ে। তারা গৃহকত্রী মিসেস হাসনা বানুকে প্রহার ও ব্যাপক ভাংচুর চালায়।তারা ৩ রাউন্ড গুলিও ছোড়ে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রমতে জানা যায়, গত একমাস ধরে স্থানীয় সন্ত্রাসী ন্যাংটা কিসলু বাড়িটি দখলের জন্য হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। গত ১২ তারিখেও সে মিসেস হাসনা বানুকে শাসিয়ে যায় এবং ওনার ভাতিজিকে তুলে নেবার ভয়ভীতি দেখায়। এই কুখ্যাত সন্ত্রাসীর নামে এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ থাকলেও সে পুলিশের নাকে ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় পালিত এই ন্যাংটা কিসলুর ভয়ে এলাকার কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলছে না।থানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, সে জামিনে আছে। তাছাড়া তাদের কাছে কোন মামলাও নাই।এই সাংবাদিকের কাছে ঘটনা বিস্তারিত জানার পর থানার ওসি জানান মিসেস হাসনা বানুর কাছ থেকে অভিযোগ পেলে পুলিশ অবশ্যই অ্যাকশন নিবে।কেউই আইনের ঊর্দ্ধে নয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাড়িটি শহীদ বুদ্ধিজীবি …… ”
‘না, আমি কাউকে চিনি না? আমার চিন-পরিচয় কম।রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।এই রিকশা আর যাবে না’। ' বাকীটা মতিন সাহেব বলতে পারলেন না। তার আগেই কিসলু রিকশাওয়ালার গালে চড় বসিয়ে দিলো।
বেচারা এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।ফুটপাথের ওপর পড়ে গিয়ে ঠোট কেটে ফেললো।
শু… বাচ্চা, … পোলা… তোর… । পেট বরাবর তিনটা লাত্থি দিয়েও কিসলুর আরাম হলো না। হাতের চাইতে বড় সুখ কিছুতে নাই। পা হইলো বোনাস। আসল না দিয়া বোনাস দিয়ে আরাম নাই। মতিন সাহেব না ঠেকালে কিসলুর আরও কিছু বোনাস দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো।আপসোস।
‘তোর... , শু… বাচ্চা, লুঙ্গি খোল, তোরে নিয়া আমি আজ সারা ঢাকা শহর ঘুরুম।আজ তুই লুঙ্গি খুইল্যা রিকশা চালাবি। গরম বেশি হইছে? গরম তোর .....।’ কিসলু জিহবায় আরাম পাচ্ছে, মতিন সাহেবকে দেখেও ভালো লাগছে।রিকশাওয়ালার চাইতে বেশি ভয় খেয়েছে এই লোক।হাত দিয়ে দেখতে পারলে ভালো হতো পিসু করে দিয়েছে কিনা।
মতিন সাহেব কোনমতে রিকশাওয়ালাকে টেনে উঠালেন।ঠোঁট দিয়ে এখনো রক্ত পড়ছে।বেচারা হয়ত সারাদিন কিছু খায়নি।ছুটির দিন তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাত খাবে।হয়তো সিনেমাও দেখতে যেতো।এখন ব্যথায় কুকড়ে আছে। মতিন সাহেবরে মনটা খারাপ হয়ে গেল।পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করলেন।দশ-বিশ টাকা বেশী দিতে হবে।বরফ-টরফ দিলে রক্ত বন্ধ হয়ে যাবার কথা।
“আপনে রিকশায় ওঠেন। একটা চিক্কুর দিলে তোরে আমি খাইছি।রিকশাসহ মাটিতে পুইত্যা রাখুম।” কিসলু দ্বিতীয় বারের মতো হাতের আরাম নিলো।
বাকীটা পথ কেউ কোনো কথা বললো না।শুধু ভাড়া দেওয়ার সময় রিকশাওয়ালা ভাড়া নিলো না।বাজারের ব্যাগটা নামিয়ে রেখেই চলে গেলো।মতিন সাহেব একা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলেন গেটের বাইরে। আজ রোদ খুব বেশী। মাথাটা ভারী লাগছে। পানি খাওয়া দরকার। কাউকে ডাকতে ইচ্ছা করছে না।
চলবে…..