তখন ক্লাস সিক্স/সেভেন এ পড়ি। নদীতে গোসলে গেলে বিভিন্নভাবে পানিতে লাফিয়ে পরতাম। লাফ দেয়ার কমন বৈশিষ্ট ছিল যে যতটা দুরে গিয়ে পরা সম্ভব সেভাবে পরা। সাধারনত লাফানোর জন্য নদীর পাড়ের সেই অংশটি বেছে নেয়া হত যে অংশের কিনরা বেশ উচু।
বেশ কিছু অদভুত নামও ছিল লাফের। (ওরকম নামের কারন আসলে জানা নেই, অন্যরা বলতো, আমরাও বলতাম।)
১. ডুলাঃ দৌড়ে এসে লাফ দিয়ে দুই হাটু জরো করে দুহাত দিয়ে বেধে ফেলা। ওই লাফের ভেতরই পেছনে ঘুরার চেষ্টা থাকতো। এটা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ লাফ ছিল। জড়ো হয়ে পা এবং পশ্চাদেশে নিচে অসমান থকাতে পানির সারফেস টেনসন ভেদ করতে কোনরুপ ব্যাথা পেতে হতো না।
২. ডিগবাজি/পল্টিঃ এটা অনেকটা মাটিতে ডিগবাজি খাওয়ার মতো, যেখানে শুন্যেই ঘুরতে হতো। এটা করতে গিয়ে অনেক সময়ই পানিতে বুক বা পিঠ সমান্তরালে পরতো, এত বেশি এরিয়ার পানির সারফেস টেনশন ভাঙতে গিয়ে প্রচন্ড ব্যথা পাওয়ার ঘটনা ঘটতো, পেট/বুক/পিঠ কখনো কখনো লাল হয়ে যেত। কখনো কখনো দম আটকে যেত।
(যারা লাফাতে চান তাদের জন্য টিপসঃ নিরাপদ লাফের জন্য এমনভাবে লাফ দিন, যেন পানির সংস্পর্শে যাওয়ার মুহুর্তে আপনার শরীরের সবচাইতে কম অংশ সংযুক্ত হয় এবং পর্যায়কৃমে বৃদ্ধি পায়। হঠাৎ করে বেশি পরিমান পানির সারফেস টেনশন ভাঙার জন্য বেশি বাধার সম্মুখিন হবেন, এতে প্রচন্ড ব্যথা লাগতে পারে, যেমন রক্ত জমাট বাঁধা, এমনকি কখনো কখনো স্কিন ফেটেও যেতে পারে)
৩. শাফাল (Shovel যা মাটি খুরতে ব্যাবহার হয়)-ঃ এতে দৌড়ে গিয়ে একদম সটান হয়ে পানিতে পরতে হয়। এ ধরনের লাফে মাধ্যমে পানির বেশ গভিরে পৌছে যেতাম। কখনো কখনো উপরে উঠতে কষ্ট হয়ে যেতো নিশ্বাস শেষ হয়ে আসার কারনে।
৪. সুইঃ সুইমিং পুলে সাতারুরা হাত দুটো সামনে রেখে যেভাবে সুচালো ভঙ্গিতে পানিতে পরে। মাঝে মাঝে হাত ছড়িয়ে কিংবা শরীরের সাথে সমানভাবে মিলিয়ে রেখেও লাফ দেয়া হত। তবে সাতারুদের চেয়ে আমাদের গতিটা আরও বেশি থাকতো কারন আমরা সব লাফই দূর থেকে দৌড়ে এসে দিতাম। আপাত দৃষ্টিতে এই লাফে ভয়ের তেমন কিছু নেই, তবে বিপত্তিটা তখন বাধতো যদি পানির গভীরতা থাকতো কম। জীবনে অন্তত ২বার এমন বিপত্তিতে পরেছিলাম।
এই ৪নং এর লাফই দুইবার আমার মরন লাফ হয়ে উঠছিল!
দুবারই ছিল বর্ষা। বড় খাল যেখানে নদীতে মিশেছে, লাফালাফি সেখানেই চলত। আমরা খেলতাম নদীর পাশেই থাকা একটা উচু খোলা জমিতে। খেলার ফাঁকে ফাঁকেই গিয়ে লাফিয়ে পরতাম খালের মুখ নদীতে। যখন জোয়াড় থাকতো, খালের মুখে অনেক অনেক পানি থাকতো, তাই সমস্যা হত না। তবে ঐ ২বারই চলছিল ভাটা। আর তাতে পানি ছিল কম। আর যেহেতু আমাদেরও বয়স কম ছিল, কোন কাজই যুক্তি দিয়ে ভেবে করা হতো না।
চলছিল ভাটা, কে রাখতো তার খবর! খেলার মধ্য থেকেই কজন দৌড়ে গিয়ে লাফিয়ে পরলো, আমিও দৌড়ে গিয়ে দিলাম 'সুই লাফ'! ওভাবে লাফিয়ে পরে মাথা সরাসরি মাটিতে আঘাত হানে। মাথার আঘাত শেষে কপাল-নাক হয়ে দাঁতেরও ঘর্ষণ হয় পানির নিচের বালির তলায়, এতে দাঁত মুখ ভরে গিয়েছিল বালিতে। তার উপর মাথায় ওভাবে আঘাতের ফলে দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সোজা হয়ে দাড়িয়ে প্রায় ৬-৭সেকেন্ড শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ ছিল।
(একবার একজন বুঝতে পেরে পিঠে ঘসছিল। অন্যবার কেউ বুঝতে পারেনি, নিজে নিজেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল।)
২য় বার ঘটার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, পানির গভীরতা পরিমাপ না করে এই লাফ আর দিবো না।
নেড়া বেলতলায় একবারই যায়, তবে আমি দুইবার গিয়েছিলাম!