somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনাকালের দিনগুলি-২

২২ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে করোনা ছুঁয়েই দিলো।
সম্ভবত ধিরে ধিরে সবাইকেই ছুঁয়েছে কিংবা ছুঁবে।
কেউ বুঝেছে, কেউবা বুঝেনি।
কেউ মরেছে, কেউ ধুকেছে, কেউ কেউ বুঝতেও পারছে না!
এক এক জনের এক এক রকম।
একই ঘরে আমরা দুজনও ছিলাম দুরকম।

বউয়ের পেশাগত (ডাক্তারি) দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জ্বর বা হাঁচি কাশি এলেই সন্দেহ বাড়তো।

১৫ই সেপ্টেম্বর বউয়ের হালকা জ্বর দেখা দেয়।
ডাক্তার হলেও তিনি যথেষ্ট ভীতু।
যদিও এটাকে উনি ভীতি মানেন না, তিনি বলেন সতর্কতা।
তবে পঁচানোর সুযোগ আমি হাতছাড়া করি না, আমি ওনাকে ভীতুর ডিমই বলি।

তিনি যথারীতি পরীক্ষা করাতে চাইলেন।
পরীক্ষা না করিয়ে তিনি ডিউটিতে জয়েন করবেন না।
আমিও ভাবলাম কথা যথেষ্ট যৌক্তিক, পরীক্ষা করা উচি‌ৎ।

১৮ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে মিটফোর্ডে পরীক্ষা করানোর সিন্ধান্ত নেই।
মনে ভয় ছিলো কত লম্বা লাইন যেন হয়!
পিজিতে স্যাম্পল দিতে ৪ঘন্টা লেগেছিলো, এখানেতো তার চেয়ে কম লাগার কারন নাই!

সাধরানত সকালে নাস্তা বাদ দিয়ে ঘুমানোকেই বেশি প্রিফার করা বদ অভ্যাসে বউয়ের ঝাড়ি খাওয়া আমি নাস্তা আছে কি না জানতে চাইলাম।
বউ যথেষ্টই অবাক! আমি নাস্তা চাইছি?!: সূর্য আজ কোনদিকে উঠলোগো!???
-না মানে, কয় ঘন্টা দাড়িয়ে থাকা লাগে! শরীরে একটু শক্তি করে নিতাম আর কি! :|

১০টার দিকে মিটফোর্ড হাজির হই।
১০টাকার টিকিট কাটি কোন ভীড় ছাড়াই।
কাউন্টারের বাইরে কেবল আমি আর আমার বউই ছিলাম।

অবাক হলাম এতো সহজে টিকিট পেয়ে যাওয়ায়!
তবে সূর্য দেখে খুব বেশি খুশি হলাম না, আড়ালে হয়তো আধার হাঁসছে!
লাইন হয়তো পরের কাউন্টারে আছে!

কিন্তু সেখানেও আশানুরুপ লাইন হলোনা।
২ খানা ফর্ম নিয়ে একটু দূরে খালি টেবিলে বসে বউ ফর্ম পূরণ করতে বসলো।
দুইটা ফর্মই বউ পূরন করলো।

প্রাথমিকের পর জীবনে প্রথমবার কেউ আমার ফর্ম পূরণ করে দিচ্ছে দেখে আবেগে চোখ ভিজে আসছিলো!
বিয়ে করার কিছু উপকারিতার মধ্যে অন্যতম একটা উপকার প্রত্যক্ষ্য করছিলাম।

একইভাবে পরের কাউনন্টারে দু-তিন জনের ভিড় ঠেলে দুজনের ২০০ টাকা জমা দিলাম।
তারপর পরের কাউন্টারে স্যাম্পল দিতে গেলাম যেখানে আগে থেকে ১০-১৫ জন স্যাম্পল দিতে অপেক্ষমান ছিলো।

স্যাম্পল কালেক্টরের মুখে নিজের নামখানি শুনতে পেয়ে চেয়ারে গিয়ে বসলাম।
আগের স্যাম্পলগুলি নিতে উনি কি রকম পজিশন আশা করেন তা পর্যবেক্ষন করে চেয়ারে গিয়ে ঠিক ওভাবেই বসে পরলাম।

উনি এলেন, এবং বিনা বাক্যে আমার স্যাম্পল নিলেন।
আমি ভাললাম-উনি হয়তো ভাবছেন: এমনই যদি সবাই হতো! ;)
নিজেকে নিয়ে মনে মনে গর্ব করতে করতে বাসায় চলে এলাম।

পরদিন সকালে ম্যাসেজ এলো- আমি ন্যাগেটিভ, কিন্তু আমার বউ পজেটিভ।
মনের ভেতরে পাশে থাকা বউকে দেকে টম এন্ড জ্যারি’র মতো আতকে উঠলেও আমি তার হাত ধরলাম।

ওনার চোখ ছলছল করছে।
আমি কাছে টানতেই বললেন: দূরে সরো।
আমি আরও কাছে টেনে বললাম: পজেটিভতো তুমি এখনই হওনি, আমার কিছু হবার হলে গত কয়েকদিনে হয়ে গেছে, সুতরাং এমনটা করার দরকার নাই।

বউ বললেন: অবশ্যই আছে, ভলিউম এক থাকে না, দূরেই থাকো।
আমি জানি দুজন পজেটিভ হলেও দূরে থাকা উচি‌ৎ, আমার পজেটিভ এবং বউয়ের নেগেটিভ হলে আমি অবশ্যই যে কোন মূল্যে তাকে দূরে সরিয়ে দিতাম।
কিন্তু এই অবস্থায় আমি তার কাছ থেকে দূরে সরতে পারছি না।
নিজের পুরুষালি বৈশিষ্টের পরিপন্থি মনে হচ্ছিলো, মনে হালকা ভয় থাকলেও আমি তাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না।

২দিন পর অর্থা‌ৎ সোমবার সকাল থেকে হলকা জ্বর অনুভব করলাম।

শুনেছিলাম সাধারনত মাসল এব জয়েন্ট পেইন হয়, কিন্তু আমার করছিলো চামড়ার উপরিভাগে ব্যাথা।
অনেকটা জ্বর জ্বর ভাব হলে যা হয়।

পরের শুক্রবার আবার স্যাম্পল দিয়ে এসে দুপুরে খেতে বসলাম।
বউ মাছ রান্না করেছে (বুয়াকে বউয়ের জ্বর অনুভুত হওয়া থেকেই ছুটি দেয়া হয়েছিলো)।
শশুরবাড়ি থেকে পাঠানো মাছ।
দেশী মাছ হিসেবে যতটা স্বাধ গন্ধ আশা করেছিলাম, তার কিছুই নেই।

কিন্তু এ কথাতো বলা যায়না!
একেতো বউয়ের রান্না, তার উপর শশুরবাড়ি থেকে পাঠানো মাছ!
মিথ্যা প্রশংসা করতে না পারা আমি চুপচাপই সবটা খেয়ে নিলাম।

রাতে আবারও খেতে বসে সেই মাছ!
বউয়ের কাছে বায়না ধরলাম: ডিম ভাজা খেতে ইচ্ছে করছে!
বউ থাকার আরেকটা উপকার হিসেবে চুলোর কাছে না গিয়েও ডিম ভাজা টেবিলে পেলাম।

যাই হোক, ডিম ভাজাটাও মজা হয়নি।
জ্বরে বুঝি বউটা রান্না ভুলে গেছে।
চুপচাপ খেয়ে চলেছি।

বাজারে ভেজাল নিয়ে গল্প করতে করতে একটা চান্স চলে এলো।
বললাম: এই যে দেখো মাছ, কদিন আগেও শুনেইছি মানুষ দেশী মাছ, দেশী মুরগী এসবের কথা বলতো। কি দিনকাল এলো এখন দেশী মাছেও আগের মতো গন্ধ নাই।

নিজের মুখে গন্ধ নাই কথাটা বের হতেই মনে অন্য কিছু এলো!
পাশে থাকা টোস্ট বিস্কুটের জার খুলে নাক পুরোটা ঢুকিয়ে দিলাম!
একি! কোন গন্ধই নাই!
পাশে আচাড়ের জার, তাতেও নাই!
সামনে থাকাল লেবুটাতেও নাই! কচলায়ে দিলাম তাও কিচ্ছু না!

নাক আমর পুরো পরিষ্কার, কিন্তু প্রতিদিন কাপড়ে স্প্রে করা পারফিউমটাও একদমই গন্ধবিহীন!!!
আর বুঝতে বাকি রইলোনা সমস্যাটা দেশী মাছা বা বউয়ের রান্নায় ছিলোনা, ছিলো আমার ভেতরে।

বিকেলে বউ বললো: কতদিন ময়লা ওয়ালাকে ময়লা দেয়া হয়না, ময়লার পাত্রটাতে পোকা হয়ে গেছে, রান্নাঘরে গন্ধে ঢোকা যায়না।

আমি গিয়ে ময়লার ঢাকনা খুললাম, কাছে বসে পোকা পর্যবেক্ষন করলাম, কিন্তু কোন গন্ধ নাই।
ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিলাম এই আশায় যাতে অন্তত পোকাগুলো বাইরে না চলে আসে।
এমনকি টয়লেটে গিয়ে মাঝে মাঝে গন্ধে অজ্ঞান হবার যোগার হলেও এখন আর সেরকম কোন বালাই নাই!
দুনিয়াটা বড়ই ফ্রেশ মনে হচ্ছিলো। চরমতম দুর্গন্ধময় যায়গাতেও বুক ভরে নি:শ্বাস নিতে পারছিলাম।

পরদিন ম্যাসেজ এলো: দুজনই পজেটিভ।

[সবাই সতর্ক ও নিরাপদ দূরত্ব নিয়ে থাকবেন। অন্যের কিছু হয়নি বলে আমারও হবে না, এমনটা ভাবার কারন নাই। তাছাড়া গতকাল হয়নি তাই আগমীকালও হবে না, এমনটাও ভাবতে যাবেন না।]


----------------------
সন্মানিত পাঠকের কিছু প্রশ্ন জাগতে পারে মনে, তার আগাম কিছু উত্তর দিয়ে দিচ্ছি।

এখন ঠিক আছেনতো?
: জ্বি, আমি পুরোপুরি ঠিক আছি। মোট ৫বার টেস্ট করিয়েছিলাম, কেবলমাত্র ২য় টেস্ট ছাড়া বাকি সবগুলি নেগেটিভ এসেছে। আর আমার ওয়াফের মোট ৪বার পজেটিভ এসেছিলেন, তবে ওনার প্রথম কয়েকদিন হালকা জ্বর এর পর আর কোন উপসর্গ ছিলো না।

কোন সমস্যা হয়েছিলো?
: না, হালকা জ্বর আর হালকা স্কিন ব্যাথা ছাড়া আর কোন সমস্যা ফিল করিনি। আর জ্বর ছিলো ৪-৫দিন, স্কিন ব্যাথা ছিলো ৪-৫দিন।

গন্ধ পাচ্ছিলেন না, নাক বন্ধ ছিলো?
না, একদমই না। নাক পুরোপুরি পরিষ্কার ছিলো। এর আগেও ঠান্ডা হলে নাক বন্ধ থাকলে গন্ধ না পাবার ঘটনা ঘটেছিলো, তবে এটা একদমই ভিন্ন অনুভুতি।

কোন ঔষধ খেয়েছিলেন?
: যখন জ্বর ছিলো, তখন মোট ৪টা প্যারাসিটামল খেয়েছিলাম। আর বউয়ের পরামর্শে Zimax এর ৩টা (মিনিমাম কোর্স) খেয়েছিলাম, আর Rivarox ১০/১৫টা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:১৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×