“গতকাল শনিবার সকালে তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক লতা সমাদ্দার ফার্মগেট মোড় পার হয়ে তেজগাঁও কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের পোশাক পরা মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলে বসে টিপ ‘পরছস কেন’ বলে তাঁকে বাজে কথা বলেন। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি তাঁর পায়ের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যান।“ -প্রথম আলো
দেশের অবস্থা কি এতটাই খারাপ অবস্থায় পৌছে গেছে যে একেবারেই বিনা করনে একজন পুলিশ সদস্য পথচারি নারীকে…
“তুই” বলে সম্বোধন করবেন?
“নারীর” ড্রেস/অলংকার নিয়ে বাজে মন্তব্য করবেন?
যেখানে আমি দেখেছি আমার দেশের মানুষের সাধারন অভ্যাসে পুরুষরা বিনা কারনে অপরিচিত নারীর সাথে হাই/হ্যালো/এমনকি সালাম দেয়াকেও অর্থাৎ কোন রকমের কথা বলাটাকেও ট্যাবু মনে করে'!
যদি সত্যিই এমনটা ঘটে থাকে, তবে ওই পুলিশ সদস্য নি:সন্দেহে একজন সন্ত্রাসী, ইভটিজার গোছের কেউ যে পাড়া মহল্লায় মেয়েদের রাস্তাঘাটে উত্যাক্ত করতো, এমন একজন মানুষ পুলিশ হলো কি করে তা দেখা উচিৎ। কে বা কোন ডিপার্টমেন্ট সেই পুলিশ সদস্য পুলিশ হয়ে ওঠার আগে তার ব্যকগ্রাউন্ড চেক করেছে, কে সুপারিশ করেছিলো তাদের সকলের দোষের পরিমান বিচার হওয়া উচিৎ যাতে ভবিষ্যতে এমন একজন ব্যাক্তি আর পুলিশ হয়ে না উঠতে পারে।
কিন্তু যদি ওই পুলিশ সদস্য সত্যিই ওরকম কেউ না হয়ে থাকে?
সত্যিই কি বিনা করনেই ওইসব কথা হয়েছে?
একেবারে বিনা কারনেই কথপোকথন “তুই/তুকারি” পর্যায়ে চলে গেছে???
কথা বার্তার কোন পর্যায়ে গেলে একজন অপরিচিত নারীকে একজন ব্যাক্তি “তুই” বলে সম্বোধন করতে পারেন?
“টিপ পরছস কেন” এর আগের কথাটা ওই নারীর পক্ষ থেকে ঠিক কি ছিলো?
“একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি তাঁর পায়ের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যান”, ওই “পর্যায়'টা" ঠিক কি ছিলো?
একেবারেই বিনা কারনে পায়ের উপর দিয়ে মোটরসাকেল চালিয়ে নেয়ার মতো ক্ষিপ্ত আচরন ওই পুলিশ সদস্য কেন করবেন?
সেই পুলিশ সদস্য কি সুস্থ?
নাকি এখানে কেউ ভিকটিম সেজে অন্যকে সাজা দেবার চেষ্টা চালাচ্ছেন?
কেউ “নারী নির্যাতন” টার্মের বেনিফিট নিয়ে নিচ্ছেন নাতো?
কাউকে শায়েস্তা করতে টিপের মতো স্পর্শকাতর (যেহেতু টিপ বিরোধী কিছু মানুষ দেশে রয়েছে) বিষয় সামনে এনে কিছু সমর্থন যোগার করা হ্চ্ছেনা তো?
বিচার চাইবার আগে, কপালে টিপ পরে প্রতিবাদের ঝড় তোলার আগে “ন্যায় বিচারের” সার্থে অপর পক্ষের মতামত শোনা কি উচিৎ ছিলো না?
চারিদেকে প্রতিবাদের ঝড়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই ওই পুলিশ সদস্য নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন, আর আমাদের মাঝে কিছু সু!পুরুষ কপালে টিপ লাগিয়ে তার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
প্রতিবাদের আরও সুন্দর গঠনমূলক কোন স্টেপ আপনাদের মাথায় আসেনি?!
হয়তো আপনারা ওই পুলিশ সদস্যকে পাকরাও করে ফেলবেন, হয়তো তাকে চাকুরিচ্যুত করা হবে, জেল-জরীমানাও হতে পারে, তবে সেই শাস্তি/বেকসুর খালাস যেন ন্যায়বিচারের মাধ্যমে হয়।
ওই নারীর সাথে অন্যায় হয়ে থাকলে তার অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি হোক, আর তেমনটা না হয়ে থাকলে “নারী” নির্যাতন আইনের সুযোগ কাজে লাগানোর অপচেষ্টার কারনে ওই নারীরও শাস্তি হোক।
আর আমরা যারা "উত্তেজিত জনতা" আছি, তারা যেন গরম গরম কথা বলে পরিবেশকে গরম করে সত্যিকারের দোষিকে না চিনে একজনের শাস্তির ব্যবস্থা না করে দেই।
ব্যপারটা যেন: আমার শত্রুর গ্রামের লোক পেলেই পিটিয়ে দেবার মতো না হয়ে যায়।
কোন অন্যায় দিয়ে আপনি যদি অন্য কোন অন্যায়েরও বিচার করেন, তবে তা আরও নতুন অন্যায়ের জন্ম দিবে।
কিন্তু যদি অন্যায় দিয়ে কোন নিরপরাধীর শাস্তির বন্দোবস্ত করে ফেলেন, তবে তা জাতির ধ্বংস ডেকে আনবে।
আমার অবস্থান:
১। আমার মা একজন স্কুল শিক্ষিকা, তার মানে এই না যে আমি অন্ধের মতো অন্য কোন শিক্ষিকার পক্ষ নিয়ে নিবো।
২। ব্যাংকে জবে জয়েন করার এবং পাসপোর্ট তৈরীর সময় পুলিশ ভেরিফিকেশনে পুলিশি অভিজ্ঞতা আমার ভালো নয়, অর্থাৎ ঘুষ ছাড়া আমার কাজ এগোইনি, তাই বলে আমি অন্ধের মতো যে কোন একজন পুলিশ সদস্যকে দোষি বলে দিতে পারি না যতক্ষন না পর্যন্ত পুরো ঘটনা জানতে পারছি। তাছাড়া আমার পরিচিতজনদের মাঝেও কেউ পুলিশ নেই, মানে আমার কোন পুলিশ প্রিতি নেই।
৩। কেউ হয়তো আমাকে জামাত/শিবির ট্যাগ দিতে চাইবেন, কারন কেউ কেউ এটা বোঝাতে চাইবেন আমি "টিপ" এর পক্ষে নই।
বিষয়টা "টিপ" নয়, বিষয়টা ন্যায়বিচারের। তাছাড়া আমি জামাত/শিবিরের ওরকম কেউ নই, আমার পরিবার বা আত্নীয়-স্বজন কেউই তাদের সাথে এমনকি কোন রাজনিতীর সাথে জড়িত নয়, কখনো ছিলো বলে শুনিনি।
আর জামাত/শিবির হয়ে থাকলেও আমি তা নিয়ে বিন্দুমাত্রও বিব্রত নই।