চট্টগ্রাম ১
বন্ধুর গ্রামের বাড়ি সন্দ্বিপ। তার বাবা ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যায় যখন, সংসারে তখন চার বোন, দুই ভাই আর মা ছিলেন। অনেক দু:খ কষ্ট সয়ে সে বড় হয়। আত্মীয় স্বজন কাছে বিভিন্ন কথা শুনতে হয়। নানাবিধ সমস্যার মাঝেও তার আমেরিকা প্রবাসী মামা সব সময় বটগাছের ছায়া হয়ে ছিলেন। কারো অসুখ হলে, কারো বিয়ে হলে সেই মামা সব সময় পাশে ছিলেন। যার ফলস্রুতিতে বন্ধুটিকে অন্য সব আত্মীয়ের কাছ থেকে কথা শুনে বড় হয়েছে। এ কারণেই তার স্বপ্ন সে আমেরিকা যাবে। যেভাবে পারা যায়, বৈধ্য, অবৈধ্য যত উপায় আছে সে যাবেই। এই লক্ষ্যে তার ঢাকা আগমন। আমাকে ফোনে জানায় সে চট্টগ্রাম থেকে বিমানে করে ঢাকা আসবে, আমি যেন তাকে রিসেভ করি। তখন আমি গার্মেন্টস এ জব করি (২০১২ সাল)। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করি সন্ধ্যা ৭-৭.৩০ টার দিকে। বাসায় নিয়ে আসলাম। খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম নেওয়ার সময় আমাকে তার পাসপোর্ট দেখালো। আমিতো অবাক সার্ক ভুক্ত সব দেশ, সিংগাপুর, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই, চিন, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড,আমিরাত আরো অনেক দেশের ভিসা লাগানো। সর্বশেষ ভিসা লাগানো গায়ানা। সব বিজনেস ভিসা।যত ভিসা তত তার ওয়েট। এবার পালা আমেরিকার।
"তুই আমেরিকার ভিসা কেমনে লাগাবি?"
"আমি চট্টগ্রামের ফ্ল্যাট ডেভলপার কোম্পানির জিএম হিসাবে সেখানের একটা মেলায় পার্টিসিপেট করবো।"
'তোরে জিএম বানাইছে কে?"
"ওগুলা সব ঠিক করা আছে"
"কাহিনী খুইলা ক"
'কাহিনী হচ্ছে গিয়ে এখানে কিছু লোক আছে যারা সব কাগজ ঠিক করে দেয়। ভিসা যদি পাওয়া যায় তখন ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে তাদের, না পাইলে খরচ নাই।"
"দাড়াবি কবে"
"ডেট পরে জানাবে"
"ভালো।"
পরদিন সে ঐ লোকের কাছে চলে যায়। দুইদিন পর ফোন দিয়ে বলে সে চট্টগ্রাম চলে যাচ্ছে। ভিসার কথা জানতে চাইলে বলে সে দাড়ায় নাই কারণ তার পূর্বে যারা ছিল সকলে রিজেক্ট হইছে। তাই সে না দাড়িয়ে চট্টগ্রাম ফেরত যাচ্ছে।
২০১৩ সালে শুনলাম তার সেই ওজনদার মহামূল্যবান পাসপোর্ট সে হারিয়েছে কিভাবে যেন।
দীর্ঘদিন পর ২০১৪ সালে তার ফোন।
"দোস্ত আমি ব্রাজিলে"
'কেমনে?"
"সে অনেক কাহিনী পরে তোকে বলবো"
ব্রাজিলে তখন ফুটবল বিশ্বকাপ চলছিলো।
ঢাকা: ১
সাম্প্রতিক বিষয়। অফিসে একজন সরকারী চাকুরী থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়। হাসি খুশি। অল্পে সন্তুস্ট। আলাপে জানালো তার দুই মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে সুখের সংসার।বড় মেয়ে সিএসই আর ছোট মেয়ে প্রাইভেট মেডিকালে পরে। অফিসে নিয়মিত আসা যাওয়া আরো একটু ঘনিষ্ট হই। নতুন পার্টটাইম জবে জয়েন করেছেন। ব্যক্তিগত আলাপ এর পর্যায় নতুন একটি বিষয় জানার পর খুব কষ্ট লাগলো।
"তার একটি ছেলে আছে, ছোট থাকতে তার বড় ভাই, তার ছেলেকে ইউকেতে নিয়ে যান। সেখানে বড় হয় ছেলেটি। অক্সফোর্ড অথবা কেম্ব্রিইজ (আমার মনে নাই দু:খিত) এ ট্রিপল ইতে পড়ে নাসায় বর্তমানে কাজ করছে। ১-২বছর পর পর মাঝে মাঝে আধ একটু হায়, হ্যালো হয়। এর বেশি কিছু না।"
এই বয়সে কোথায় একটু অবসর জীবন উপভোগ করবেন তা না এখনো তিনি জব করে যাচ্ছেন। সংসার নামক নৌকার গুন টেনে যাচ্ছেন। মনের দু:খটা তার মুখমন্ডলে ভেসে উঠে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩০