somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলার পথের কিছু কথা ৮

১৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০১ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আসা হয় চট্টগ্রাম থেকে। আমি তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি চট্টগ্রাম থেকে। বড় খালুর ভবনে আমরা ভাড়া উঠি। যদিও ছোটবেলা থেকে ঢাকায় নিয়মিত আসা যাওয়া করা হত তার পরও স্থায়ীভাবে বসবাস সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। ঢাকার সবকিছু নতুন, তার উপর বন্ধু বান্ধবহীন, একা একা সব কিছুর সাথে খাপ খাওয়ানো, তার উপর নিয়মিত পেটর অসুখ ছিল গোদের উপর বিষ ফোরা। আব্বার পোস্টিং ছিল বরিশাল, তিনি সেখানেই থাকেন, মাঝেমাঝে ঢাকায় আসেন। বলা যায় অবিভাবকহীন অবস্থায়।

যেই দিনের ঘটনা বর্ণনা দিচ্ছি সেই দিন সিটি কলেজের ফর্ম জমা দেই বহু কস্টে। সারাটা দিন বাসার বাহিরে, অভুক্ত, প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে বাসায় আসি। গেইট খোলার জন্য ছোট বোনকে বললে, সে চাবি ছুড়ে দিয়ে চলে যায়। বাসায় ঢুকেই তাকে এর জন্য বকাবকি করি। সে তখন আব্বার কাছে নালিশ করলে, আব্বা আবার আমাকে বকাবকি করেন। আমি রাগের মাথা বাসার থেকে বেড়িয়ে পরি। হন হন করে হেটে তালতলা বাস স্ট্যান্ডে যাই। ভাঙ্গা দেয়াল টপকে পুরাতন এয়ারপোর্ট ঢুকে পরি।তখনও এয়ারপোর্ট এর বাউন্ডরি পুরাতন স্টাইলের, অল্প উচ্চতার খোপ খোপ বিশিষ্ট। যে দিক দিয়ে ঢুকি সেখান থেকে অন্ধকারের মধ্যে হোচট খেতে খেতে রানওয়েকে পৌছাই। মাথা তখন শুণ্য, কোন কাজ করছিল না, কি করবো কিছুই আসছিল না মাথায়। রানওয়ের মাঝে সাদা মার্কিং করা দাগের উপর শুয়ে থাকলাম অনেকক্ষুন। কিছুক্ষন চিত হয়ে শুয়ে আকাশ দেখলাম। তখন ফিলসফিকাল চিন্তার খেললো মাথায়, আমি কত ক্ষুদ্র, তারাগুলো কত দূরে, দূরের রাস্তার মানুষগুলো কত ব্যস্ত ভাবে গাড়ি হাকিয়ে চলে, জীবনে কি আছে, উপুর হয়ে শুয়ে সেই একই চিন্তা। এই সময় মনে হল কি যেন আমার সামনে আছে, চমকে তাকিয়ে দেখি শিয়াল এর মত কোন একটা প্রানী আমার ঘ্রান শুকছে। লাফ দিয়ে উঠেই দৌড়, কোন মতে রানওয়ের পাশে যেখানে মার্চপাস্টের সময় ব্যান্ড বাজানো হয় সেই ভবনের এক পাশের মিনারে উঠি বসে থাকি। মাঝে মাঝে উপর থেকে নিচে দেখার চেষ্ঠা করি কিছু আছে কি না।

অনেকক্ষুন বসে থাকার পর সেখান থেকে নেমে সেকেন্ড গেইট বাস স্টপেজ বরাবর যে মেইন গেইট আছে সেখান দিয়ে বেরিয়ে হাঁটতে থাকি বিজয় স্মরনী বরাবর। র্যাংগস ভবন তখনও বিদ্যামান ছিল। মহাখালী যাওয়ার দিকে বিজয় স্মরনীর শেষ মাথায় "বিজয় স্মরনী" নামে একটি ফলক ছিল, সেটার বেদিতে বসে থাকি আর রাতে চলমান গাড়ির মানুষগুলো দেখি। সাই সাই করে গাড়ি গুলো যাচ্ছে সাথে বিকট শব্দে মিউজিক,কি এক অজানা ফুুর্তি তাদের মাঝে বিরাজ করে তারাই জানে।

রাস্তা পার হয়ে নভো থিয়েটারএর সামনে দিয়ে হাঁটতে থাকি। ধীরে ধীরে হেটে সামরিক জাদুঘর ক্রস করার সময় দেখি এক সৈনিক রাইফেল হাতে দাড়িয়ে আছে চুপচাপ। এর পরিবার কই, বাসায় হয়তো বউ আছে, পোলা মাইয়া আছে, আর সে একা একা দাড়িয়ে আছে, কি আছে জীবনে, আহা। এই অসময়ে আবার সেই ফিলসফিকাল চিন্তা মাথায়।

সামরিক জাদুঘরের সীমানার শেষে কোনায় এসে দেখি এক ভ্যান চালক, ফুটপাথে শুয়ে থাকা রমনীর সাথে আদিম ক্রিয়ায় মত্য, সেই সময় রাস্তা দিয়ে যাওয়া একটি প্রাইভেট গাড়ি থেকে যাত্রী মাথা বের করে চিৎকার করে বলল "মজা?"," মজা?" আর সেই সাথে তার চটুল বিদঘুটে হাসি। ভ্যান চালক লাফ দিয়ে উঠে দৌড়ে তার ভ্যানের কাছে। ভ্যান নিয়ে জোরে চালাতে লাগলো। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি পুলিশ তার কলার ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে এক ভীতকর অবস্থা। একদল আদিম তারনা মেটাতে ব্যস্ত, আরেক দল সেটির যোগান দিয়ে দুপয়সা রোজগার করে পেটের ক্ষুদা নিবারনের জন্য আপ্রাণ চেষ্ঠা আর এর মাঝে পুলিশ তার পকেট ভরায় ব্যস্ত। অদ্ভুত দৃশ্য! অদ্ভুত জীবন। অদ্ভুত সময়।

কোন মতে রাস্তা পার হয়ে উত্তর দিকে আসি। দেখি একটি মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লাল সালওয়ার কামিজ, হালকা সস্তার প্রসাধনি, ঠোটে করা করে লাল লিপস্টিক দেয়া, মাথায় আচঁল টেনে রাখা। আমি প্রচন্ড ভয় পাই। রাস্তা পার হয়ে তালতলার দিকে হাটতে থাকি, মেয়েটিও আমার পিছে পিছে আসতে থাকে। সেই সময় একটি খালি রিক্সা পাই, তাতেই দ্রুত উঠে বাসায় চলে আসি। বাসায় যখন পৌছাই তখন ঘড়িতে ২.৩০ টা বাজে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০৮
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×