মুসলমান ফকীহ (আইনজ্ঞ)--আমেরিকার ক্রীতদাস
১৭৭০ সালে বিলালী মুহাম্মদ ইসলামিক কনফেডারেশনস ফুটা জালোন (বর্তমান গিনি) এর রাজধানী ট্যাম্বোতে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি হাদিস শাস্ত্র, শরীয়া আইন এবং কোরআন তফছীরের উপর উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি কি ভাবে কোথায় দাস হিসাবে বন্দি হন তা জানা যায় নাই।
১৮০২ সালে ব্রিটিশরা আমেরিকার জর্জিয়া স্টেটের উপকূলীয় দ্বীপ স্যাপেলো আইল্যান্ডের থমাস স্পেলডিং এর কাছে বিলালী মুহাম্মদকে বিক্রি করে।
বিলালী মুহাম্মদ এক দিক থেকে অন্যান্য দাসদের থেকে ভাগ্যবান ছিলেন। তার মালিক ছিলেন একজন ব্যতিক্রম ধর্মী মানুষ। অন্যান্য দাস মালিকরা যেখানে তাদের দাসদেরকে দিয়ে সারাদিন কাজ করতো, সেখানে থমাস স্পেলডিং তার দাসদেরকে দিয়ে দিনে ৬ ঘণ্টার বেশি কাজ করাতেন না। দাসদের নিজ নিজ ধর্ম পালনে স্বাধীনতা ছিল। দাসদের পরিচালনা করার জন্য সাদা সুপারভাইজার ছিল না। তিনি দাসদেরকে ভাল খাবার, কাপড় এবং থাকার জায়গা দিতেন। থমাস স্পেলডিং এর ৫০০ দাস ছিল তারমধ্যে ৮০ জন মুসলমান। মুসলমান দাসরা প্রকাশ্যে নামাজ পড়তে পারতো।
বিলালী মুহাম্মদ তার মালিকের কৃষি খামারের মধ্যেই ছোট একটা মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদটা উত্তর আমেরিকাতে প্রথম মসজিদ হিসাবে স্বীকৃত।
উচ্চ শিক্ষার কারণে থমাস স্পেলডিং বিলালী মুহাম্মদকে উচ্চ মর্যাদা দিতেন। তাঁকে ঐ খামারের প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করেন। আরেকটা ব্যতিক্রম ছিল, দাস মালিকরা কখনো দাসদের হাতে অস্ত্র দিতেন না। কিন্তু থমাস স্পেলডিং খামারের নিরাপত্তার জন্য বিলালী মুহাম্মদের হাতে অস্ত্র তুলে দেন। বিলালী মুহাম্মদের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা এবং পরিচালনা করার দক্ষতা ছিল।
১৮১২ সালে ব্রিটিশরা যখন যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ করে হোয়াইট হাউজ দখল করে নেয় তখন থমাস স্পেলডিং বিলালী মুহাম্মদের কাছে খামার রক্ষার দায়িত্ব দিয়ে পালিয়ে যান। বিলালী মুহাম্মদ ৮০ টা মাস্কেট (একধরণের লম্বা নলঅলা বন্দুক) দিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলেন। যুদ্ধ শেষে থমাস স্পেলডিং তার খামারে ফিরে দেখেন বিলালী মুহাম্মদ সুন্দর ভাবে তার খামার রক্ষণাবেক্ষণ করেছে। বিলালী মুহাম্মদের সততা, ও চারিত্রিক দৃঢ়টা দেখে তিনি তার খামার দেখা শুনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাঁকে দেন।
বিলালী মুহাম্মদ দাস হিসাবে বন্দি অবস্থায় শরীয়া আইনের উপর আরবিতে একটা বই লিখেন।
১৮৫৭ সালে মৃত্যুর আগে বিলালী মুহাম্মদ তার লেখা বইটা ফ্রান্সিস রবার্ট গৌল্ডিং নামের একজন আমেরিকান লেখককে উপহার হিসাবে দিয়ে যান। তখন আমেরিকাতে কেউ আরবি পড়তে পারতো না। তাই তারা আরবিতে লেখা বইটাকে মনে করতো বিলালী মুহাম্মদের ডাইরি। অনেক বছর পরে যখন এই বইটার মর্ম উদ্ধার করতে পারে তখন তারা বুঝতে পারে এটা একটা মূল্যবান বই।
১৯৩১ সালে জর্জিয়া স্টেট লাইব্রেরি বিলালী মুহাম্মদের বইটি সংরক্ষণ করেছে।
ছবি: ইন্টারনেট
তথ্য সূত্র:
১. Servants of Allah: African Muslims Enslaved in the Americas by Sylviane A. Diouf
২. Muslims in American History: A Forgotten Legacy by Jerald Dirks
৩. Lost Islamic History: Reclaiming Muslim Civilisation from the Past 1st Edition
by Firas Alkhateeb
৪. Bilali Muhammad’s Legacy of Islamic Scholarship in America
৫. Bilali Muhammad: Muslim Jurisprudist in Antebellum Georgia by Muhammed Abdullah Al-Ahari
৬. Muslim history in U.S. full of surprises by Gregory Kane The Baltimore Sun
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১:০৯