গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে:
উদ্দেশ্য এবং অভিপ্রায়:
গণহত্যা প্রমাণের জন্য একটি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার জন্য নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায়ের প্রয়োজন হয়।
কিন্তু যুদ্ধাপরাধ প্রমাণের জন্য উদ্দেশ্য নির্বিশেষে সশস্ত্র সংঘাতের সময় আইন লঙ্ঘনের উপর ফোকাস করে।
তাই গণহত্যা প্রমাণ করা কঠিন। কিন্তু যুদ্ধাপরাধ প্রমাণ করা তুলনামূলক ভাবে সহজ। উদ্দেশ্য যাই থাকুক যুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে এইটুকু প্রমাণ করলেই হয়।
এখন প্রশ্ন হল গাজার সংঘাতের বিষয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা কেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরিবর্তে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বেছে নিয়েছে?
তার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে:
প্রথমত: মামলার ধরন:
১. আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলাগুলি রাষ্ট্র বনাম রাষ্ট্র। এই আদালত রাষ্ট্রের বিচার করতে পারে কিন্তু কোনো ব্যক্তি বিচার করতে পারে না।
২. পক্ষান্তরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সহ আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার করতে পারে।
দ্বিতীয়ত: দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশ্য:
১. দক্ষিণ আফ্রিকা গাজায় ক্রিয়াকলাপের জন্য একটি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলকে জবাবদিহি করতে চাচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) এর এখতিয়ারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
২. দক্ষিণ আফ্রিকা রাষ্ট্র হিসাবে ইসরাইলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। ইসরাইলের কোন ব্যক্তিকে দক্ষিণ আফ্রিকা টার্গেট করে নাই।
তৃতীয়ত: আইসিসির সমস্যা:
১. ইসরায়েল আইসিসির সদস্য নয়। তাই এই কোর্টের পক্ষে ইসরাইলের কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত বা বিচার করা কঠিন বা অসম্ভব ।
২. আইসিসির ফান্ডের অভাব আছে। তাই সম্পদের সীমাবদ্ধতা কারণে এবং বিচারাধীন অনেক মামলা থাকার কারণে এই আদালতে বিচার বিলম্বিত হয়।
চতুর্থত: আইসিজির সুবিধা:
১. আইসিজি যেহেতু কোন ব্যক্তির বিচার করে না, তাই ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব কম হয়। এতে আন্তর্জাতিক ভাবে সুবিধা হয়।
২. আইসিজের রায়গুলি মূলত একটা বিবৃতির মত বা মতামতের মত। যেমন কোন দেশে নির্বাচনের পর কোন রাষ্ট্র বলে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে আবার কোন দেশ বলে সুষ্ঠু হয় নাই। এই বিবৃতি দিয়ে কোন কিছু বাধ্য করা হয় না। এই আদালতের রায়টি এমন ধরণের। অর্থাৎ রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক ভাবে এই রায় একটা দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে।
৩. যদিও ইসরায়েল গণহত্যা কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী নয়, তবে দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্তি হচ্ছে যে গণহত্যা প্রতিরোধে একটি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসাবে কনভেনশনের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পঞ্চমত: অতিরিক্ত বিবেচনা:
১. দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ত আইসিজিকে আইসিসি অপেক্ষা একটি দ্রুত এবং আরও সহজলভ্য ফোরাম হিসেবে বিবেচনা করেছে।
২. রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক কারণগুলি সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকার সিদ্ধান্তে ভূমিকা পালন করেছে।
সবশেষে কথা:
আইসিজি বেছে নেওয়ার দক্ষিণ আফ্রিকার সিদ্ধান্ত তার নির্দিষ্ট আইনি লক্ষ্য এবং গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের সমস্যা মোকাবেলার সবচেয়ে কার্যকর উপায় সম্পর্কিত কৌশলগত প্রতিফলন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৪:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



