৫০০ বছর আগে উত্তর-পূর্ব সাইবেরিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে একটি নদীর তীরে মারা যাওয়া তিন ব্যক্তির দেহাবশেষ একটি অপ্রত্যাশিত রহস্য প্রকাশ করেছে। তাদের ডিএনএ উত্তর আমেরিকার মানুষের সাথে মিল আছে। অন্যান্য প্রাচীন এবং আধুনিক জিনোমের সাথে তুলনা করলে দেখায় যে আজকের নেটিভ আমেরিকানদের পূর্বপুরুষরা এশিয়া থেকে আসলেও তাদের যাত্রা একমুখী ছিল না। অর্থাৎ এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকার মধ্যে যাতায়াত ছিল। হাজার হাজার বছর ধরে, বেরিং সাগর অঞ্চলটি একটি আন্তঃমহাদেশীয় সংযোগ হিসাবে কাজ করেছিল। উভয় পরের মানুষরা নৌকায় করে যাতায়াত করেছে।
তবে এশিয়া থেকে মানুষ উত্তর আমেরিকাতে অভিবাসন করলে আবার কেন তারা উত্তর আমেরিকা থেকে এশিয়াতে ফিরে এসেছিল? এটা একটা জটিল প্রশ্ন। আবার বাস্তববাদী চিন্তা করলে এটা ভাবা যায় যে মানুষ ইচ্ছামত এবং সুবিধামত দুই মহাদেশের মধ্যে যাতায়াত করেছে।
প্রায় ২০ হাজার বছর আগে, সাইবেরিয়ায় বসবাসকারী লোকেরা বেরিং স্ট্রেইট পেরিয়ে আলাস্কায় যাত্রা করেছিল এবং আমেরিকার মধ্য দিয়ে দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সময়ে সমুদ্রে পানির উচ্চতা অনেক কম ছিল। ফলে শিকারি-সংগ্রহকারী মানুষরা বরফজমা সমুদ্র পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেছিল বা এর উপকূল বরাবর নৌকায় করে নতুন মহাদেশে পারি দিয়েছিল।
সাড়ে ১১ হাজার বছর আগে যখন বরফ যুগ শেষ হয়েছিল তখন হিমবাহ গলে গিয়েছিল। এতে বেরিং সাগরের পানি বেড়ে গিয়েছিল। সাগরের পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে এশিয়া এবং আমেরিকা এই দুটি মহাদেশের সহজ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু অভিবাসীদের আগমন অব্যাহত ছিল। ফলে আদিবাসী আমেরিকানদের সাথে পরে আসা এশিয়ানদের মিশ্রণের ফলে নতুন জেনেটিক ধারার সৃষ্টি হয়। ৫ হাজার বছর আগে মানুষ আলাস্কা এবং উত্তর কানাডা জুড়ে বসতি স্থাপন করেছিল।
গবেষকরা জেনেটিক এবং ভাষা গত প্রমাণের উপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে ২২০০ থেকে ৫০০ বছর আগে, উত্তর-পশ্চিম আলাস্কায় বসবাসকারী মানুষরা বেরিং সাগর পারি দিয়ে সাইবেরিয়ায় ফিরে এসেছিল। অর্থাৎ ৫ হাজার বছর আগে সাইবেরিয়া থেকে মানুষ বেরিং সাগর পারি দিয়ে উত্তর আমেরিকার আলাস্কায় বসতি স্থাপন করলেও ৫০০ বছর আগে আবার আলাস্কা থেকে সাইবেরিয়াতে ফিরে গিয়েছিল।
রাশিয়ান প্রত্নতাত্ত্বিকরা কামচাটকা নদীর তীরে একটি স্থান খনন করে তিনজনের দেহাবশেষ খুঁজে পান। ডিএনএ বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখতে পান যে এই লোকেরা আধুনিক সময়ের কামচাটকান জনসংখ্যার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। তবে তাদের জিনে উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী গোষ্ঠীগুলির সাথে মিল আছে।
এই গবেষণায় আবার উল্টো ঘটনা দেখা যায়। অর্থাৎ মানুষ আলাস্কা থেকে সাইবেরিয়ায় ৫ হাজার বছর আগে ফিরে এসেছিল। আবার দেড় হাজার বছর আগে সাইবেরিয়া থেকে আলাস্কা দিয়ে উত্তর আমেরিকায় বসতি স্থাপন করেছে।
তবে গত ৫ হাজার বছরের মধ্যে কতবার সাইবেরিয়া থেকে আলাস্কা আবার আলাস্কা থেকে সাইবেরিয়াতে মানুষ বসতি স্থাপন করে তা সঠিক ভাবে বলা সম্ভব না। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় একাধিক বার মানুষ এই দুই অঞ্চলের মধ্যে অভিবাসন করেছে।
সাইবেরিয়াতে পাওয়া ছয়টি জিনোম পর্যালোচনা করে গবেষণায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে সাইবেরিয়া একটা ক্রসরোড হিসাবে কাজ করেছে। অর্থাৎ মানুষ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাইবেরিয়াতে এসে বসতি স্থাপন করেছে। আবার কিছু কাল পরে সাইবেরিয়া থেকে অন্য কোথাও চলে গেছে। সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে সাত হাজার বছর আগে এই ছয় জন, যাদের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে, মঙ্গোলিয়ার নিকটবর্তী পার্বত্য আলতাই অঞ্চল থেকে সাইবেরিয়াতে এসেছে। আবার এই ছয় জন আলতাই শিকারি-সংগ্রাহকদের মধ্যে পাঁচজন এমন একটি জনসংখ্যার অন্তর্গত ছিল যা স্পষ্টতই পরবর্তীকালে বেশ কিছু বংশধারার জন্ম দিয়েছে যারা ব্রোঞ্জ যুগে মধ্য এশিয়ার ছড়িয়ে পড়েছিল। ছয়টি দেহাবশেষের মধ্যে একজনকে আচার-অনুষ্ঠান সহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল। ধারণা করা হয় তিনি একজন কবিরাজ বা ওঝা হতে পারেন। সে উত্তর-পূর্ব এশীয় বংশ থেকে এসেছে। আবার এশিয়ার পশ্চিম অংশেও এই বংশের জিনোম পাওয়া গেছে। চীনের সাথে রাশিয়ার সুদূর পূর্ব সীমান্তের কাছে ৭ হাজার বছর পুরানো একটি দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। তাদের পূর্বপুরুষের জাপানি দ্বীপপুঞ্জে বাস করত যারা জোমন পিপুল নামে পরিচিত। জোমন প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে এই দ্বীপগুলি বসতি স্থাপন করেছিল, কিন্তু জিনোমটি থেকে জানা যায় যে দ্বীপবাসীরা মূল ভূখণ্ডের জনসংখ্যার সাথে অন্তত কিছু যোগাযোগ বজায় রেখেছিল।
সূত্র: https://www.science.org/
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



