সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়। বিশ্বের কোন দেশ এই ধরণের আত্মঘাতী, অবাস্তব এবং কৌশলগত ভুল নীতি অনুসরণ করে না। কারণ রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক আর ব্যক্তিগত সম্পর্ক এক নয়। রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বাস্তব স্বার্থ দ্বারা নির্ধারিত হয় কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্ক আবেগ নির্ভর হতে পারে। তাই এক দেশের সাথে অন্য দেশের কোন স্থায়ী বন্ধুত্ব বা শত্রুতার সম্পর্ক থাকে না। এক দেশের সাথে আরেক দেশের সম্পর্ক স্থাপিত হয় স্বার্থের মাধ্যমে। প্রতিটা দেশের কাছে নিজ দেশের স্বার্থই বড়। প্রতিটা দেশ নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য অপর দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে।
সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয় এই নীতি অনুসরণ করলে একটি দেশ নিম্নলিখিত ক্ষতি এবং অসুবিধার সম্মুখীন হয়:
১. বাস্তববাদী কূটনীতির অভাব
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বাস্তবতা হলো, সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা সবসময় সম্ভব নয়। একটি দেশ আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক স্বার্থের কারণে অপর দেশের সাথে বিরোধপূর্ণ অবস্থানে থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের সঙ্গে নদীর পানি বণ্টন বা সীমান্ত বিরোধ নিয়ে চলমান সমস্যাগুলি রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ বা বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থী।
২. কৌশলগত অংশীদারিত্বের অভাব
বিশ্ব রাজনীতিতে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। আবার চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কোন দেশ যদি অন্য সব দেশের সঙ্গে সমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে, তাহলে কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং সামরিক সহায়তার সুযোগ কমে যায়।
৩. নিরাপত্তা ঝুঁকি
যখন কোনো দেশ নির্দিষ্ট কোনো মিত্র বা কৌশলগত অংশীদার ছাড়া সবার সঙ্গে সমান সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করে, তখন তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ সংকটে পড়েছে। যদি বাংলাদেশর শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মিত্র থাকত, তাহলে এই সমস্যা মোকাবিলা সহজ হতে পারত।
৪. অর্থনৈতিক বিকাশের সীমাবদ্ধতা
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর সহ ইন্দো-চীন এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের অধিকাংশ দেশ আমেরিকা এবং ইউরোপের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে। কোন দেশ যদি নির্দিষ্ট দেশের সঙ্গে কৌশলগত অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে, তাহলে তার অর্থনৈতিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হতে পারে।
৫. আঞ্চলিক নেতৃত্বের অভাব
কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কৌশলগত পদক্ষেপ না নিলে আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় না। কোন দেশ যদি শুধুমাত্র নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করে, তাহলে আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিষ্ঠা করা সেই দেশটির জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
সারসংক্ষেপ:
সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয় - এই পররাষ্ট্র নীতি শুনতে ভাল শুনালেও বাস্তব পরিস্থিতিতে কার্যকর নয়। বাস্তববাদী ও কৌশলগত পররাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে একটি দেশ তার উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে একটি কার্যকর পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ৮:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




