তৃতীয় সংশোধনী: ২৩ নভেম্বর, ১৯৭৪
সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী বিল পাস হয় ১৯৭৪ সালের ২৩ নভেম্বর এবং ঐ দিনেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়।
তৃতীয় সংশোধনী মূলত ভারত ও বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণী একটি চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর এ সংশোধনী আনা হয়।
ভারত ও বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণী একটি চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য এ সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন এবং চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময় বিধান প্রণয়ন করা হয়।
আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর উত্থাপিত বিলটি উত্তাপন করেন। ২৬১-৭ ভোটে সংবিধান (তৃতীয় সংশোধন) আইন, ১৯৭৪ (১৯৭৪ সনের ৭৪ নং আইন) পাস হয়।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে ২অনুচ্ছেদের (ক)দফার প্রথম বাক্যের পর [এবং সংবিধান (তৃতীয় সংশোধন) আইন, ১৯৭৪-এ অন্তর্ভুক্ত এলাকা বলিয়া উল্লিখিত এলাকা, কিন্তু উক্ত আইনে বহির্ভূত এলাকা বলিয়া উল্লিখিত এলাকা তদ্বহির্ভূত; এবং] এই কথাগুলি যোগ করা হয়।
চতুর্থ সংশোধনী: ২৫ জানুয়ারি, ১৯৭৫
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এ সংশোধনীর মাধ্যমেই বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো হয়। সংসদীয় শাসন পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন পদ্ধতি চালু এবং বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তন এই সংশোধনীর মূল কথা।
আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর সংশোধনীর বিলটি উত্থাপন করেন। বিলটি ২৯৪-০ ভোটে পাস হয়। বিলটি পাসের সময় সরকারি দলের সদস্য এমএজি ওসমানী ও ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন সংসদ বর্জন করেন। বিলটি পাস হওয়ার দিন ২৫ জানুয়ারিই তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়।
চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করা; একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা; রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রপতি অপসারণ পদ্ধতি জটিল করা; সংসদকে একটি ক্ষমতাহীন বিভাগে পরিণত করা; মৌলিক অধিকার বলবৎ করার অধিকার বাতিল করা; বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করা ও উপ-রাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি করা হয়।
সংবিধান (চতুর্থ সংশোধন) আইন, ১৯৭৫ (১৯৭৫ সনের ২নং আইন) এর বিভিন্ন ধারাবলে অনুচ্ছেদ ১১, ৬৬, ৬৭, ৭২, ৭৪, ৭৬, ৮০, ৮৮, ৯৫, ৯৮, ১০৯, ১১৬, ১১৭, ১১৯, ১২২, ১২৩, ১৪১ক, ১৪৭, এবং ১৪৮ আমূল সংশোধন করা হয়।
নতুন ৪৪, ৭০, ১০২, ১১৫ এবং ১২৪ অনুচ্ছেদসমূহ প্রতিস্থাপিত করা হয়।
সংবিধানের তৃতীয় ভাগ মৌলিক অধিকার এমন ভাবে এবং ভাষায় সংশোধন করা হয়েছে যা অস্তিত্বের বাইরে।
তৃতীয় ও চতুর্থ তফসিল পরিবর্তন করা হয়েছে।
প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ নির্বাচন ছাড়াই বাড়ান হয়েছে।
সংবিধানে ষষ্ঠ ক ভাগ-জাতীয়দল নামে নতুন একটি ভাগ যোগ করা হয়। সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ (২০১১ সনের ১৪ নং আইন)-এর ৪১ ধারাবলে ষষ্ঠ ক ভাগ-জাতীয়দল বিলুপ্ত করা হয়।
সংবিধান (চতুর্থ সংশোধন) আইন, ১৯৭৫ (১৯৭৫ সনের ২ নং আইন)-এর ৮ ধারাবলে অনুচ্ছেদ ৭৩ক সংযোজন করা হয়।
(১৯৭৫ সনের ২ নং আইন)-এর ২০ ধারাবলে অনুচ্ছেদ ১১৬ক সংযোজন করা হয়।
সংবিধানের এই পরিবর্তন ছিল এত ব্যাপক ও ভূতপূর্ব যা কল্পনার অতীত।
চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে:
(১) সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়;
(২) বহুদলীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে এক দলীয় ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল;
(৩) সমস্ত রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ নামে একটি জাতীয় দল সৃষ্টি করা হয়।
(৪) জাতীয় সংসদের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছিল;
(৫) নির্বাচন ছাড়াই প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল;
(৬) নির্বাচন ছাড়াই শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন;
(৭) বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সম্পূর্ণ ভাবে হরণ করা হয়েছিল;
(৮) মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্টের এখতিয়ার সম্পূর্ণ ভাবে কেড়ে নেয়া হয়েছিল।
১৯৭৯ সালে সংবিধানের পঞ্চম ও ১৯৯১ সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে চতুর্থ সংশোধনীর অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাতিল ও সংশোধন করা হয়। যেমন:
(১) রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় পুনরায় প্রত্যাবর্তন;
(২) এক দলীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে বহুদলীয় ব্যবস্থায় পুনরায় প্রত্যাবর্তন;
(৩) সংবিধানে ষষ্ঠ ক ভাগ-জাতীয়দল বিলুপ্ত;
(৪) জাতীয় সংসদের ক্ষমতা পুনরায় বহাল করা;
(৫) বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আংশিক পুনর্বহাল করা;
(৬) মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্টের এখতিয়ার ফিরিয়ে দেয়া, ইত্যাদি।
বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধনীসমূহ: (দ্বিতীয় পর্ব)