somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময়

২২ শে নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি যখন 'ভবিষ্যৎ' শব্দটি উচ্চারণ করি,
প্রথম অক্ষরটি ইতিমধ্যে অতীত হয়ে যায়।
- ভিসওয়াভা সিম্বোর্স্কা



খেলাটি বেশ পুরোনো...
একদিন। কোন একদিন। যে দিনটি ঠিক থাকবেনা।
সময়। কোন এক সময়। যে সময়টি অজানা।
স্থান, কোন এক স্থান, যে স্থানে স্থির সময়। ফুলের উপর মৌমাছির স্তব্ধ পাখা, কাঁপছে, থিরথির। লাঙল থেমে আছে, কৃষকের ঘাম মাটিতে পড়ছেনা, কিষাণীর মুখে ফুটে থাকা হাসি। কোন এক মেঠোপথের পাশে রাতের আঁধারে অন্ধকার ক্ষেতের মাঝে হেঁটে যাওয়া অশ্রুতপূর্ব কোন বাঁশীর সুর। থেমে আছে বাতাস, কম্পিত হচ্ছেনা, অথচ শোনা যাচ্ছে মায়াবী সেই সুর। ভোরের আলোয় কৃষ্ণচূড়ার নুয়ে পড়া পাতা থেকে শিশিরফোঁটার শূন্যপতন, আর গাছের পাতার নিস্পৃহতা। এক অজানা নিষাদ, বিষাদের সুর যার কানে বাজে না।

এমনই কিছু মুহূর্ত যখন নিশির ডাকের মত, বাজে কর্ণকুহরে, শিহরণ তোলে, তখন পলকা পদক্ষেপে আনমনে পথে হাঁটা। কানে রেলের ঝম্‌ঝম্‌, মানুষের গুঞ্জন।
ধীর পায়ে উঠলে তুমি, চুপ করে বসে, তোমার কানে অজানা বাঁশীর রাগ, চোখে মহাকালিক মায়াজাল, স্পর্শে ঐশ্বরিক পেলবতা। ট্রেন চলতে শুরু করবে আর তুমি দেখবে স্থান পেরুলে কীভাবে অতিক্রান্ত হয় সময়। দেখবে, শিশুকালের তুমি দাঁড়িয়ে আছো প্ল্যাটফর্মে, হাত নাড়ছো, জানালা ধরে এগুচ্ছো।

কিসে ডুবে আছো তুমি? এ কোন ইন্দ্রজাল? এ কোন সময়?
তোমার স্মৃতি, সেটা তো আদৌ অসীম নয়, হতে পারে খুব বড় একটা সংখ্যা মাত্র, কিন্তু অসীম তো নয়। এই কি করছিস্‌ রে খোকা! মুখে মাটি পুরে দৌড়, মা পিছু পিছু। পিঁপড়ে খাচ্চিস কেনো রে! হ্যাঁ, লাল লাল সেই পিঁপড়ে, মা’র আদুরে হাসি, আদিবাসী কোন নারীর অগোছালো চুল, দূর পাহাড়ের চূড়ার ঐ মন্দির যেখানে একা গান গায় কোন এক পুরোহিত, এসব, আর আরও অনেক কিছু যা তুমি এখানে কখনই বলবেনা, এগুলোই তোমার জীবন, ঘুরে ফিরে এগুলোই তোমায় পরশ বুলায়, হাতছানি দেয়, কখনও হয়তোবা বৃষ্টির ফোঁটায় মিশে যায় লোনাজল। শুধু এগুলোই, অসীম তো নয়; কখনোই।

তুমি তাই ভাবছো, আর তোমার যখন নামার কথা কোন এক স্টপেজে, তুমি নেমে যাবে তার আগেই। তারপর অন্ধকার স্টেশনে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরে দেখবে শূন্য রেলকামরায় তখনও বসে আছো তুমি যার নামার কথা পরের স্টপেজে। ট্রেন ছাড়ছে আবার, আর তুমি দাঁড়িয়ে আছো প্ল্যাটফর্মে, হাত নাড়ছো, আর জানালা ধরে এগুচ্ছো। ফিরে তাকালে এবার। অন্ধকার যাত্রী ছাউনি। স্টেশনমাষ্টারের ঘরে তালা।

তক্ষক ডাকা সেই নিঝুম রাতে, একাকী তোমার কানে এবার নিশির ডাক, ফিস্‌ফিসিয়ে বলছে তোমায় – যে পথে তুমি হেঁটেছো একবার, হাঁটবে বারবার। যে পথে তুমি ফেলে গেছো তোমার পদচিহ্ন, সে পথ তোমায় ফিরিয়ে আনবে, ওর পথের ধুলো আবার তোমার পায়েপায়ে। যে পথে তোমার জন্ম, সে পথেই তোমার পুনরুত্থান, চক্রাকার এই মহাকালে তুমি করছো একই কর্মসাধন; বারবার, বারংবার।

মানুষটা তাই অসম্পূর্ণ। সে সম্পূর্ণ হয়নি। তার কামনাতাড়িত দেহের কোষে কোষে জন্ম নিয়েছে শতবর্ষীয় ঘুণেপোকা। তার ক্লিশেক্লান্ত মানসের একাংশে বসত গেড়েছে উন্মত্ততায় আচ্ছন্ন কিছু পিরানহা। মানুষটা অসম্পূর্ণ। সে সম্পূর্ণ নয়।

পূর্বজন্মের সেই মানুষ আজ পরিপূর্ণ কিঞ্চিত, ত্রুটিপূর্ণ এখনও। জানি মৃত্যুর পর আবার আসবে যে মানুষ, সেও হবে পরিপূর্ণ আরও, ত্রুটিপূর্ণ তখনও। এক অতল সময়ে ডুব দেবে সে, সময়জলের ঝাপটা গায়ে মেখে টুপ্‌টাপ্‌ ঝরাবে বিন্দুবিন্দু জল। মাঝে মাঝে শুধু একাকী নির্জন একলা সময়ে অনতিক্রম্য উত্তরকাল পাশে এসে বসবে তার, আর শিরশিরে পরশে সময়ের ফুটো দিয়ে দেখাবে অলঙ্ঘনীয় নিয়তি।

একটি প্রলেতারিয়েত দোয়েল তাই চুপিচুপি আমার কানে বলেছিলো একদিন – নাথিং স্যাটিসফাইস মি, শুনে রাখ্‌ তুই ঘুণেপোকা, নাথিং। বলেছিলো – অনেকদূরে, অথবা অনেক কাছে; দূর হতে দূরে, কিংবা হৃদয়ের অতলে; অলিন্দের নিভৃত কুঠুরিতে; নিলয়ের অজানা প্রকোষ্ঠে; টগ্‌বগে ধমনীতে, কিংবা ফিরে আসা ক্লান্ত শিরায়; রক্তের কাঁচা ঘ্রাণ, আর কালো গোলাপের না-বলা কথা; এগুলোর মাঝে অতৃপ্তি, পচে যাওয়া তৃপ্তিবোধ তোর। জানতে চেয়েছিলো – আমি যখন বিশ্বাসী ছিলাম রে, বিশ্বাস করতাম প্রত্যূষের প্রথম আলো, বৃক্ষের শাখায় রঙিন পাখিরা গাইতো অর্থবহ সব গান; আমি তো এখনও বিশ্বাসী আছি; অথচ বলতে পারিস্‌ কোথায় সেই আলো, পাখির গান?

দূরে আবার রেলের শব্দ। ফিরে আসছে সেই ট্রেন।
ঝম্‌ঝম্‌। ঝম্‌ঝম্‌।
উঠে দাঁড়ালে তুমি। অথবা তোমার কোন এক প্রতিরূপ। হাত বাড়ালে। উঠবে তুমি, ফিরে যাবে আদিতে।
চমকে গেলে হঠাৎ...
ছাদের উপর দাঁড়িয়ে এক দেবদূত।
সাদা। অথবা কালো।
দেবদূত হাত নাড়ছে...
আর মৃদু হাসছে...
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×