somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উচ্চশিক্ষার দর্শন ও অর্থায়ন; প্রেক্ষিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

১৯ শে জুলাই, ২০১১ সকাল ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বিক্ষোভের বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে এ আন্দোলনের যৌক্তিকতা, অনিবার্যতা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অদ্ভুতুড়ে দর্শনগত দিককে আবারো চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ার জন্য আজকের এই আলোচনা। গত বছরের এ সময়ে হাজার হাজার ছাত্রের উত্তাল আন্দোলনের সংখ্যাগুলো আবারো স্মরণ করি, ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারের বাজেট প্রস্তাবনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রদেয় টিউশন ফি’র উপর ৪.৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের ঘোষণা দেয়া হয়। মধ্যবিত্ত এবং অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদেরকে এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অযৌক্তিক টিউশন ফি’র পাহাড় ডিঙাতে হয়, তারপর এ অমানবিক ভ্যাট যখন তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়, তখন তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়। ২৬ জুলাই, ২০১০ সনে ছাত্রদের এ আন্দোলনে দাবি উথ্থাপন করা হয়, ৪.৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করতে হবে, আন্দোলনে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে আহতদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, আন্দোলনকারীদের উপর কোনো ধরণের নিবর্তনমূলক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া যাবে না। বলাই বাহুল্য আন্দোলনের জোয়ারে দৃশ্যমান কিছু দাবি মেনে নেয়া হলেও শিক্ষা ব্যবসায়ীরা কোনো অবস্থাতেই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। ‌‌‌‌‌‌‌‌‌বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো বড় বড় চেইন শপের মত বাণিজ্য করে লক্ষ কোটি টাকা মুনাফা করে বেড়াচ্ছে।
জ্ঞান সৃজন, পরিচালন এবং ব্যবহারের আধুনিক ধারণা নিয়ে উচ্চশিক্ষার আবির্ভাব। বর্তমান Specialization এবং Specification এর যুগে উচ্চশিক্ষার কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে জ্ঞানের পরিধি। তাই প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন তথ্য ও জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা। সেজন্য উচ্চশিক্ষার আগেকার সাধারণ ধারণার সাথে এখন বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। তবে মৌলিক দর্শনগত জায়গাটি বদলায় নি খুব একটা। নালন্দা বা মহাস্থানগড় বিহারগুলোতে জ্ঞানের নানাবিধ শাখা-প্রশাখার চর্চা হতো। সেসময় মনেই করা হতো জ্ঞানের সৃষ্টি কোনো নির্দিষ্ট একক বিন্দু থেকে। তারপর সময়ের সাথে সাথে তা নানা পত্র-পল্লব যেমন বিস্তার করছে তেমনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তথ্য তখনই জ্ঞান হয়ে ওঠে যখন তা মূল শেকড়ের সাথে পুনরায় তার সংযুক্তি তৈরি করে। ধরা যাক, কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, নৃ-বিজ্ঞান এবং ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চর্চার ভেতর দিয়ে যেমন এ বিষয়গুলোর ভেতর থেকে নতুন তথ্য-ধারণা সিঞ্চন করতে হবে ঠিক একইভাবে তথ্যগুলো সামষ্টিকভাবে জ্ঞান হয়ে উঠবে যখন আলাদা আলাদ বিষয়গুলোর তথ্য একসাথে যুক্ত হয়ে নতুন কোনো দর্শন, নতুন কোনো পরিকাঠামো তৈরি করবে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চর্চাই হতো দর্শনের, তারপর নানা সামাজিক-রাষ্ট্রিক এবং আর্ন্তজাতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে যেতে থাকে নানাবিধ বিষয়াদির প্রয়োজনীয়তা; আবার এ ধরণের পরিবর্তনগুলোর পেছনে নিয়ামক শক্তির ভূমিকাতেও কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই ছিল।
বিচ্ছিন্ন চর্চাগুলোকে একত্রিত করতে সামন্ত যুগে সারা দুনিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার জন্ম এবং প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যাত্রা শুরু। দর্শন চর্চা, রাষ্ট্র পরিকাঠামো নিয়ন্ত্রন চর্চার পাশাপাশি যুদ্ধবিদ্যা অধ্যয়ন এবং যুদ্ধাস্ত্র বিকাশের ধারাবাহিকতাও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিস্থাপন এবং বিকাশের অন্যতম কারণ। সামন্ত যুগের শেষ দিকে রাষ্ট্র যখন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানাদির হাতে নিয়ন্ত্রিত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তখন পরিচালিত হতো চার্চ কিংবা বিহারের অধীনে। মজার ব্যাপার হলো, ধর্ম মানেই অনুশাসন কিন্তু জ্ঞান হচ্ছে অনুশাসনকে পেছনে ফেলার মন্ত্র ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে ধর্মীয় বিধিবিধানের নিয়ত দ্বন্ধ ছিল বিরাজমান। রেঁনেসা পরবর্তী যুগে যে দ্বন্ধে অবশ্যম্ভাবীভাবে বিজয়ী হয়ে ওঠে জ্ঞান-বিজ্ঞান। তাই পুঁজিবাদে এসে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর হাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাষ্ট্রের অধীনে চলে আসে। উৎপাদন কাঠামো এবং বাজার ব্যবস্থার সাথে সমন্বয় সাধনের দায়িত্বও চলে আসে বিম্ববিদ্যালয়ের হাতে। জ্ঞান হয়ে ওঠে এ সময়ের সর্বোচ্চ ক্ষমতা। আগেকার দিনের রাজা-জমিদারদের অর্থায়নে পরিচালিত বিহার-বিদ্যালয়গুলো রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়া শুরু করে। পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ বিকাশের পথে এ কল্যাণ ধারণাকেও ধুমড়ে মুচড়ে ছুড়ে ফেলা হয়। যেহেতু এ পর্যায়ে রাষ্ট্র’র চেয়ে ব্যক্তি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ বড় হয়ে ওঠে তাই অবধারিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের হাতে পতিত হয়। এ ক্ষনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার বিকাশ লাভ করে, পাশাপাশি পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ যেহেতু পণ্যায়নে সিদ্ধহস্ত তাই যুগ যুগ ধরে জ্ঞান সৃজন এবং পরিচালন যদিও বৃহদাকার বিনিয়োগে পরিচালিত হতো, সেটি এ সময়ে ব্যবসায়ের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হওয়া শুরু করলো। শিক্ষা পরিণত হলো কমোডিটি’তে। আর তাই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নতুন ধরনের দর্শন নিয়ে হাজির হলো ব্যবসায়ীরা, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’ তত্ত্ব। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনোভাবেই উন্নত বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন নয়, কিন্তু ব্যবসা জায়েজ করার জন্য এখানকার অসাধু ব্যবসায়ীরা এ সমস্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তুলনা করেন হাভার্ড-অক্সফোর্ডের সাথে।
রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় ধারণায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অবশ্যই অবশ্যই মৌলিক বিষয়াদি পড়াতে হবে, ব্যবহার উপযোগী বিষয়গুলো থাকবে সেখানে। মৌলিক বিষয়াদির নতুন ধারণা প্রয়োগ হবে তারই ব্যবহারিক শাখায় আবার ব্যবহারিক ত্রুটি-বিচ্যুতি মৌলিক তত্ত্বকে শানিত করবে। বাজার চলতি ‘নেটিভ-সার্ভেন্ট’ তৈরি করার জন্য এখনকার উন্নত বিশ্বের পুঁজিবাদী সমাজের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় না, এমনকী মধ্যযুগে চার্চ শাসিত বিশ্ববিদ্যালয়েও জ্ঞান চর্চাই মূল প্রাধান্য পেত। তাই ব্রুনো-কোপার্নিকাস কিংবা গ্যালিলিও চার্চে বসেই প্রথাগত গোঁড়ামির পাঁজর ভেঙ্গেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় হলো ক্ষমতা কাঠামোর সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ ক্ষেত্র। এজন্য রাষ্ট্র কিংবা প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অর্থ ব্যয় করে, বিনিময়ে নবতর জ্ঞান প্রত্যাশা করে। ব্যপারটা সবসময় সু-উদ্দেশ্যে নাও হতে পারে তবে রাষ্ট্র পরিচালনা, জীবনযাত্রাকে সহজ করা, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো সহ সারা দুনিয়ায় কর্তৃত্ব বজায় রাখাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অর্থনীতি সারা দুনিয়ায় প্রধানত ২ ধরণের। আধুনিক রাষ্ট্রসমূহে রাষ্ট্রই যেহেতু সেই ভৌগোলিক কাঠামোর সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান তাই রাষ্ট্রই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনায় অর্থ বিনিয়োগ করে। এ বিনিয়োগ যত বেশি থাকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার মূল উদ্দেশ্য তত বেশি কার্যকর হয়। এজন্য বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শির্ক্ষার্থি কর্তৃক শিক্ষা ব্যয় থাকেনা। রাষ্ট্রই শিক্ষার্থির (বর্তমান ভাবনায় গবেষণা সহকারী) সকল ব্যয় বহন করে। নিরবিচ্ছিন্নভাবে যেন শিক্ষক, গবেষক এবং গবেষণা সহকারীরা তাদের কার্যে মনোনিবেশ করতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থাকে পরিপূর্ণ আবাসন সুবিধা। পুরো প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করা হয়, যেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সফল হয়। যদিও এ প্রক্রিয়ায় গবেষণা সহকারী বাছাই করা হয় অত্যন্ত কড়াকড়িভাবে।
আবার বর্তমান ক্রমঅগ্রসরমান শিক্ষা চাহিদার যুগে যেহেতু অধিক শিক্ষার্থিকে গবেষণার সুযোগ করে দিতে হয়, সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা তত্ত্বে ৫০-৬০’র দশকের উপরের ধারণা থেকে রাষ্ট্রগুলো ধীরে ধীরে বের হয়ে আসতে থাকে। এসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিনিয়োগ আর এককভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করে না, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ, কমিউনিটি প্রতিষ্ঠানসমূহ, শিক্ষার্থিদের অভিভাবকদেরও তার আয়ের উদ্ধৃত অংশ (শিক্ষা কর) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিনিয়োগ করতে হয়। তবে এসকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রচুর পরিমানে এবং নানাধরণের ‘শিক্ষাবৃত্তি’ শিক্ষার্থিদের প্রদান করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থির সম্পর্ক এখানে অনেক বেশি মানবিক। কোনোভাবেই সেমিস্টার ফি না দিতে পারলে সে শিক্ষার্থির দায়ভারও রাষ্ট্র কিংবা ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান অথবা স্থানীয় কমিউনিটিকে নিতেই হবে। শিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জন এখানে পণ্য নয়, সম্পর্ক হিসেবে উপস্থিত। আনন্দের বিষয় হচ্ছে, এ দু’ধরণের পরিচালন রীতি পাশাপাশি অবস্থান করছে ইউরোপ-আমেরিকার শহরগুলোতে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচিত হয় তাদের গবেষণাপত্র, তাদের নিত্যনতুন আবিস্কার দ্বারা।
ব্রিটিশ’রা যখন ইউরোপীয় কাঠামোর শিক্ষা আমাদের দেশে হাজির করলো, তখন থেকেই শিক্ষার উল্টো দর্শন আমাদের উপর প্রযুক্ত। তখনো ছিল ডিগ্রি নিতে হবে ব্রিটিশের দরবারে কামলা খাটার জন্য, দূর্ভাগ্যজনকভাবে এখনো আমাদের এখানে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ‘চাকর’ বানানোর তরিকা ঠিক করা। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি এখন মানমর্যদা এবং চাকরি বাগানোর হাতিয়ার সুতরাং দরকার আরো আরো বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে বিদ্যার চেয়ে সার্টিফিকেটের দর অনেক বেশি। তাই এ সমস্ত ফাটকাবাজির সুযোগে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী যারা নিজেদের ইউনিভার্সিটিগুলোতে কার্যকরণ অক্ষুন্ন রাখার ব্যাপারে শতভাগ সচেষ্ট তারা তাদের করদ-রাজ্যগুলোর মেরুদণ্ড আরো বাঁকা করার প্রত্যয়ে হাজির করে (UGC সহযোগে) শিক্ষা ব্যবসা তত্ত্ব। তারা শিক্ষাকে অনুৎপাদনশীল খাত উল্লেখ করে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি’ কমাতে চাপ দিতে থাকে। ‘টাকা অনুপাতে শিক্ষা’র তত্ত্ব নিয়ে সামনে আসে। আমাদের অনুগত সরকারগুলো এ প্রস্তাবগুলো বাধ্যগতের গ্রহন করে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রমের শুরু থেকে উচ্চশিক্ষার স্তর পর্যন্ত শিক্ষা আমাদের কাছে অপূর্ণাঙ্গ পণ্য হিসেবে হাজির হয়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের যা কিছু অর্জন, তা সম্ভবপর হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হাত ধরে, অথচ সেসব প্রতিষ্ঠানসমূহের অবস্থা এখন তথৈবচ।
’৯০ পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষা যখন বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হলো, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যেক্তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কেন্দ্র করে নতুন এবং ব্যাপক মুনাফার কারখানা তৈরি করে ফেললেন। মৌলিক বিষয়াদিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বাজার চলতি বিবিএ-এমবিএ, ইন্জ্ঞিনিয়ারিং পড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করলেন, সেখানেও নতুনত্ব কিছু না করে ‘শর্টকার্ট’ পদ্ধতিতে হাতে ধরিয়ে দিতে লাগলেন সার্টফিকেট। পরিচালনা পরিষদ এমনকী সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা হতে থাকলেন ব্যবসায়ীরা, ফলশ্রুতিতে সার্টিফিকেট লাভের জন্য গুনতে হচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। শিক্ষার্থিদের টাকায় এসব শিক্ষা ব্যবসায়ীদের পকেট ভরতে থাকে। প্রথম দিকে উচ্চবিত্তের সন্তানরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের করুণ অবস্থার কারণে নিম্নমধ্যবিত্তের সন্তানরাও পার পেয়ে যাওয়ার টার্গেটে এখন এ ধরণের বিশ্ববিদ্যালয়মুখী। কোনো গবেষণা পত্রের বালাই নেই, নেই উন্নত সমাজ গঠনে এসব ডিগ্রিধারীদের অংশ নেয়ার কোনো অংশীদারিত্ব প্রক্রিয়া, অথচ গালভরা নামে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্বের ১ম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম ব্যবহার করে এ প্রক্রিয়ায় আজ বাংলাদেশে ৬০টির মতো ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’। আপনি এ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন না, কেননা তাদেরকে রক্ষা করার জন্য তাদের তাঁবেদার গোষ্ঠীর সরকার এবং ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ আছে। হাস্যকরভাবে যেখানে রিরাজনীতিকরণকে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেহেতু উচ্চশিক্ষার এ ‘বেসরকারী’ ভার্সন লাভজনক, অর্থনীতির দৃষ্টিতে অনেকটা রেমিটেন্স বাণিজ্যের মতো, সুতরাং এ পণ্যে আগ্রহীরাও আমদানিকারক-রপ্তানীকারক। তাই গত অর্থবছরে সরকার শিক্ষার্থিদের টিউশন ফি’র উপর ৪.৫% ভ্যাট নির্ধারণ করে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ডই তবে এখন আমদের মতো দেশে তা অমেরুদণ্ডী প্রাণী তৈরিতে কাজে লাগে।
শিক্ষার দর্শন, উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনার অর্থায়ন সবকিছু বিবেচনায় আমাদের শিক্ষা কাঠামো এবং তার সরকারি-বেসরকারি কাঠামোগুলোকে গোড়া থেকে ঢেলে না সাজালে মৃতপ্রায় এ সংস্থাগুলো ভবিষ্যতে সভ্যতাবিরোধী নানান কাণ্ডেরও জন্ম দিতে পারে। আসুন তাই বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর ব্যবসায়ী মনোবৃত্তির শিক্ষা দর্শন বদলানোর আন্দোলনে শরিক হই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×