somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আকাশলীনা] ২০ :: ভিন্ন আয়োজনে অন্য সাময়িকী

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আকাশলীনা]
ফাল্গুন ১৪১৮ :: ফেব্রুয়ারি ২০১২ :: বর্ষ ০২ :: সংখ্যা ০৮
-----------------------------------------------------------------------------
: পাঠ-পূর্বক বিজ্ঞপ্তি ::
আকাশলীনা- এটি একটি ছোটপত্রিকা।
তবে, বন্ধুকে কাছে পাওয়া, বন্ধুর সঙ্গে থাকা; গান-সিনেমা-বই; আড্ডা আর গল্পে মজতেই আকাশলীনা-র জন্ম।
বন্ধুর কাছে মনের কথা বলার মূলমন্ত্র নিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও; এখন আমরা, বন্ধুতার আহ্বানে এই আনন্দলোকে আমন্ত্রণ জানাই সকলকে।
প্রতি বাংলা মাসের প্রথম সপ্তাহে মুদ্রণ কাগজে এটি প্রকাশিত হয়। বলা যেতে পারে, সাদাকালোয় প্রকাশিত ৩২ পৃষ্ঠার এটি এক রঙিন স্বপ্নের গল্প!
০২.
এখানে মূল পত্রিকার বর্তমান সংখ্যাটি অনলাইন পাঠকদের জন্য সরবারাহ করা হয়েছে। ভালোলাগা-মন্দলাগা বিষয়ে যে কেউই মন্তব্য করতে পারেন।
পত্রিকাটির মুদ্রিত কপি নিয়মিত পেতে চাইলে; ফোন নম্বরসহ ডাক-ঠিকানা লিখে জানাতে পারেন। নতুন সংখ্যা প্রকাশের পরপরই পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়...
আমাদের সম্পাদনা পরিচিতি এবং সরাসরি যোগাযোগ করার ঠিকানা এই লেখার নিচে উল্লেখ আছে।
ধন্যবাদ। -সম্পাদক। []
-----------------------------------------------------------------------------
মূল পত্রিকা এখান থেকে শুরু-
-----------------------------------------------------------------------------
:: চিঠি@SMS.com ::

সৈয়দ ইবনে রহমত >
তোমার প্রথম আহ্বানকে ঠিক কিভাবে নিয়েছিলাম, তা এখন আর মনে করতে পারছি না। তবে এটা ঠিক, আজ তোমার প্রতি যে মুগ্ধতা- তা সেদিন ছিলো না। এমনকি, জীর্ণ-শীর্ণ সাদা-কালো পোশাকে যখন স্ব-শরীরে এসে হাজির হলে, তখনো আলাদাভাবে দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজনবোধ করিনি। তাই অনাদরেই পড়েছিলো অন্তত দুটো দিন।
তারপর অনেকটা অনিচ্ছাতেই যখন তোমার শাড়ির ভাঁজ খুললাম, তখন একটু পুলকিত না হয়ে পারলাম না। গায়ে চোখ ধাঁধানো রঙিন কোনো আবরণ ছিলো না; ছিলো না মুক্তবাজার অর্থনীতির সূত্র ধরে খদ্দের ধরার বাহারি কোনো অলঙ্কার। তোমার শরীর থেকে উচ্চ মূল্যে কেনা মেকি কোনো সেন্টের ঘ্রাণও পাইনি। তবু একটা আকর্ষণ অনুভব করলাম। বিশেষ করে তোমার বুকে মমতায় আঁকা নিজের নামটিই মুগ্ধতা নিয়ে দেখলাম। কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পারলাম, এখানেই শেষ নয়। তোমার শরীরের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে আরো অনেক মুক্তোর দানা। তোমার শরীরে হৃষ্টতা নেই, একেবারেই অপুষ্টিতে ভোগা শীর্ণ দেহ। কিন্তু এর মধ্যেই তোমার রূপ-রস-যৌবনের যতো উপাদান লুকিয়ে আছে, তা কোনো মতেই অপুষ্টির শিকার নয়; একেবারেই সতেজ প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। যা আমার প্রাণেও দোলা দিয়ে গেছে, মুগ্ধতা তৈরি করেছে। এটাকে কি ভালোবাসা বলা যায়? যদি যায়, তাহলে তা-ই। বেঁচে থাকো, ভালো থাকো আকাশলীনা। []
::
[email protected]
----------------------------------------------------------------------------
:: একুশের গদ্য ::
ভাষার জন্যে ভালোবাসা
আলমগীর কবীর

সেদিনের সেই রক্তমাখা দিনের কথা কি আমরা ভুলে যেতে পারি? এই তো আমাদের ত্যাগের গল্প, এই তো আমাদের ইতিহাস! ভাষাপ্রেমের কাছে থেমে যায় বেয়নেট। এরপর ভাষার দাবিতে রক্ত ছোটে বুকে, লাল রক্ত ছিটিয়ে পড়ে অত্যাচারী শাসকের চোখে-মুখে। সে রক্তে কেবল ছিলো চরম এক প্রতিশোধ, ছিলো ভাষাপ্রেমের আকুলতা। রফিক-শফিক-সালাম-জব্বার-বরকত আরো নাম না জানা ভাষাসৈনিকের বুকের রক্তের বিনিময়ে, আমরা পেলাম আমাদের প্রাণের ভাষা। বাংলা ভাষা। সেসব ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা রইলো। রইলো ভাষার প্রতি ভালোবাসা।
আচ্ছা, আজ আমরা এই ভাষাকে কতোটুকু ভালোবাসি? তা একবার কেউ ভেবে দেখেছি কি? এই ভাষার সাথে জড়িয়ে আছে সংস্কৃতির মেলবন্ধন। আমরা এই ভাষাকে দরদ দিয়ে কতোটুকু উপলব্ধি করতে পারছি? আমি বাংলায় গান গাই, আ-মরি বাংলা ভাষা কিংবা আমি বাংলাকে ভালোবাসি- এই কথাগুলো কি আসলেই আমাদের মনের কথা?
নিজেকে একবার প্রশ্ন করে ভাষার প্রতি নিজের দায়বদ্ধতাকে স্মরণ করে নিলে মন্দ হয় না! কেবল ভাষাকে ভালোবাসলেই চলবে না, সেই ভালোবাসাকে রক্ষা করতে হলে নিজের দায়বদ্ধতাকে মেনে নিতে হবে। ইশ, ভাষার প্রতি ভালোবাসার বিষয়টি যদি পুরোপুরি সত্য হতো! বাংলা ভাষাকে আমরা জড়িয়ে ফেলেছি ইংরেজি ভাষার সাথে। বাংলা ভাষাকে চাপা দিয়ে চর্চা করছি মেগা সিরিয়ালের হিন্দি ভাষা। বাংলাকে আটকে ফেলেছি বিকৃত উচ্চারণের জালে। এসব নানা কারণে ভাষার প্রতি ভালোবাসাকে আমরা পুরোপুরি মনে করতে পারি না।
২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ থেকে আমাদের বাঙালি মানসকে এখনো সরিয়ে আনতে পারিনি। ব্রিটিশের দাসত্ব হয়ে পড়েছে আমাদের মস্তিষ্ক। যার কারণে মস্তিষ্কে কাজ করে হীনমন্যতাবোধ। ইংরেজি না হলে আর চলে না। এখানে ইংরেজিকে অবজ্ঞা করছি না। আমাদের নানামাত্রিক যোগাযোগ করার জন্য অবশ্যই ইংরেজি ভাষার দরকার আছে। তাই বলে আমরা কেনো ভুলে যাই ইংরেজি আর বাংলা ভাষা দুটো আলাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভাষা। বাংলাকে ইংরেজির সাথে মিশিয়ে আধো বাংলা, আধো ইংরেজি না বললেই কি নয়?
স্বাধীনভাবে বলার জন্য বাংলা ভাষা অর্জনের প্রায় ৬০ বছর পার হতে চললেও, আমরা আমাদের এই হীনমন্যতা থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে পারলাম না। আমাদের ব্যর্থতা এই জায়গায় যে, ১৬ কোটি বাঙালির দেশে শুদ্ধভাবে বাংলা জানাকে একটা আলাদা যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। এই বিবেচনা না করে রাষ্ট্র, না করে ব্যক্তি বা সমাজ। আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে বাংলা ভাষাকে উপেক্ষিত করে রেখেছি, বাংলা ভাষাকে উপযোগিতাহীন করে রেখেছি। এটাই কি আমাদের ভাষার প্রতি ভালোবাসা?
জীবনবৃত্তান্ত লেখা, সেটাও ইংরেজিতে। চাকরির আবেদন করা, সেটাও ইংরেজিতে। কোনো আইন পাশ করা, সেখানেও ইংরেজি থাকা বাধ্যতামূলক। আমাদের অফিস-আদালত, টিভি চ্যানেল, রেডিও, এমনকি নাটক সিনেমাতে যে ধরণের বাংলা ব্যবহার করা হচ্ছে, তা একটু নির্মোহভাবে তালাশ করলে হতাশ হতে হবে। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো আমাদের মানসিকতা। দুই লাইন ইংরেজি লিখে আমরা লেখাটি বারবার পড়ি যেনো, কোথাও কোনো ভুল হলো কিনা। অথচ বাংলায় কিছু লিখলে সেটা অনেকেই আর চোখ বুলিয়ে পড়েন না। কারণ, আমরা আত্মবিশ্বাসে ভুগি এই ভেবে, বাংলা নিয়ে অন্তত কোনো ভুল আমাদের থাকার কথা না! কোনো প্রকার সচেতনতা ছাড়াই লিখে ফেলি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। ভাষাকে মার্জিতভাবে উপস্থাপন করার প্রয়াসটা দেখাতে আমাদের সমস্যাটা কোথায়?
আবার এসেছে ফেব্র“য়ারি। উদযাপিত হবে একুশ। আমরা ফ্যাশনে মাতবো, আমরা মাতবো পোশাকে। একুশের চেতনা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে ফ্যাশনের উৎস, টি-শার্ট কিংবা শাড়ির গায়ে দুটো বাংলা অক্ষর। শোক না হয়ে, একুশের এই ফ্যাশন আমাদের কি লজ্জা দেয় না?
এই একুশের দিনেও হয়তো আমরা বাংলায় মাতবো। আবার এক বছরের জন্য ফের ভুলে যাবো বাংলাকে। একটা প্রশ্ন- আমরা যদি বাংলাকে না জাগিয়ে তুলি, বাংলা ভাষাকে বাঁচানোর যদি চেষ্টা না করি, তবে কে বাঁচাবে বাংলাকে? কে জাগাবে বাংলাকে? ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা অটুঁট থাকবে তো? []
::
[email protected]
-----------------------------------------------------------------------------
:: কবিতা ::
একুশ- বাংলার খতিয়ান
হাসনা ইয়াসমিন সুমি

একুশ মোদের রক্তমাখা ঊষার আলো
হৃদয় কুটিরে জেগে ওঠার নির্ভীক আহ্বান
একুশ মোদের একাত্তরের মুক্তির চেতনা
সীমাহীন কষ্টে অর্জিত বিজয়োল্লাসের জয়গান।
একুশ মোদের সচেতন জনতার বজ্রধ্বনি
ফসলভরা সবুজ মাঠে সময়ের অবদান।
একুশ মোদের চিরসবুজ ফাল্গুনের অধিকার
পাখির গানে, নদীর স্রোতে, সুখের কলতান।
একুশ মোদের উদ্দীপ্ত স্বপ্নের মনুষ্যত্ব
দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আগুয়ান
একুশ মোদের ভাষা,
শহিদের রক্তস্রোতে বোনা অহংকার
বিশ্বমানচিত্রে স্বাবলম্বী হবার একাত্ম স্লোগান।
একুশ মোদের গর্বিত মায়ের স্নেহত্যাগী সূর্যসন্তান
তাঁদের চরণে শ্রদ্ধা মোদের, ভালোবাসা অম্লান
একুশ মোদের মাতৃভাষা, বাংলার খতিয়ান
হাসি-কান্নার মিলন উচ্ছ্বাসে, কোটি জাগ্রত প্রাণ। []
-----------------------------------------------------------------------------
:: আলাপচারিতা ::
‘প্রেম পাইনি বলেই কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি’
-আনিসুল হক

আনিসুল হক কবিতা লেখেন, গল্প-উপন্যাস লেখেন, সরস ভাষায় লেখেন গদ্যকার্টুন এবং অরণ্যে রোদন, যা বিপুল পাঠকের প্রিয়। আর লেখেন নাটক। মননশীল প্রবন্ধও লেখেন কখনো কখনো। তাঁর লেখার ভঙ্গিটি সাবলীল, অন্তরঙ্গ এবং ঈর্ষণীয়। বর্তমানে দৈনিক প্রথম আলো-র উপসম্পাদক হিসেবে কর্মরত। কবিতা দিয়েই লেখকজীবন শুরু করেছিলেন। পরে সংবাদপত্রে সামাজিক-রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের বিদ্রুপভাষ্য গদ্যকার্টুন লিখে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এরপর গল্প, উপন্যাস, নাটক ও চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার হিসেবে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিশাল ক্যানভাসে লেখা মা বাংলাদেশের সৃজনশীল প্রকাশনার ইতিহাসে সর্বাধিক মুদ্রিত বই; ৪৪তম মুদ্রণ। শুধু তাই নয়, এ উপন্যাসটি উড়িয়া ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে। অতৃপ্ত ও বহুমুখী ধারার লেখক আনিসুল হক সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন এবং সফলতার চিহ্ন রেখেছেন।
বহুগামী এ লেখকের ব্যক্তিগত বিষয়াদি নিয়ে একান্ত আলাপচারিতায় মগ্ন হয়েছেন তরুণ গল্পকার মাসউদ আহমাদ

: কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখলে, ঘনিষ্ঠতা বা অন্তরঙ্গতা হলে কোনো ভাবনা হয়? প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে?
- ঘনিষ্ঠ হতে ইচ্ছে করে, অন্তরঙ্গ হতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ঘনিষ্ঠতা হয় না তো! কিন্তু খুব ইচ্ছে করে। প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে, প্রেমে ফেলতে ইচ্ছে করে বেশি।

: আপনার লেখার ভক্তদের মধ্যে কেউ প্রেম নিবেদন করে?
- লেখার ভক্ত কিনা জানি না, প্রেম কখনো কখনো নিবেদন করে। খুব বেশি করে নাই। কিন্তু লেখা ভালো লেগেছে, এ রকম কথা অনেকেই বলে।

: আপনার স্ত্রী মেরিনা ইয়াসমিন? তিনি কিসে আছেন?
- মেরিনা অ্যামেরিকান অ্যাম্বেসিতে কাজ করেন, তথ্য বিভাগে।

: আপনারা দুজন প্রায় একসঙ্গে সংবাদপত্রে কাজ করতেন?
- রাইট। আমরা ভোরের কাগজ-এ একসঙ্গে কাজ করতাম।

: একসাথে সংবাদপত্রে কাজ করার সুবাদে মাঝে মাঝে রাতে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিতেন?
- দিতাম।

: তখন আপনি কোথায় থাকতেন বা মেরিনা ইয়াসমিন?
- আমি তো অনেক জায়গায় ছিলাম, ব্যাচেলর হিসেবে। মগবাজারে ছিলাম, এলিফ্যান্ট রোডে থেকেছি। মেরিনার বাসা ছিলো ওয়ারিতে। আমাদের ভোরের কাগজ-এর অফিস ছিলো বাংলামটরে, তারপর শাহবাগে।

: প্রেমটা হয়ে উঠলো কখন?
- ওই সময়টাতেই। আমাদের বিয়েটা হয় ১৯৯৩ সালে। ৯২-তে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হই।

: আপনার আজকের আনিসুল হক হয়ে ওঠার পেছনে মেরিনা ইয়াসমিনের ভূমিকা কেমন?
- মেরিনার কাছে আমার নানাভাবে ঋণ আছে। একটা হচ্ছে ও ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী, ওর কল্যাণে আমি অনেক বইপত্র সহজে লাভ করি। সে সরাসরিও আমাকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়েছে। তারপর সে নিজেও একজন ভালো পাঠিকা। খুব ভালো চলচ্চিত্র দর্শক। এবং ওর যেহেতু পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যগুলো পড়া আছে, শুধু পাশ করার জন্যই পড়া না, ও ভালো পাঠক, ফলে পাঠক হিসেবে তার রুচিটা উঁচু। কাজেই আমি যা-তা একটা লিখলেই সে প্রশংসা করে না। ভালো লিখলেই কেবল করে। ওইটা একটা চিন্তা থাকে যে, মেরিনা পছন্দ যেনো করে- এ রকম লিখতে হবে। এর চেয়ে খারাপ লেখা যাবে না।

: বিয়ে করলেন কখন?
- আমরা ১৯৯৩ সালের ১ অক্টোবর বিয়ে করি।

: বিয়ের পর কোথায় উঠলেন?
- মগবাজারে একটা ছোট্ট বাসা ভাড়া নিয়ে উঠেছিলাম।

: আপনি কি লুঙ্গি পরেন?
- আমি লুঙ্গি পরি। এখনো পরি। মেরিনা খুবই অপছন্দ করে।

: বিয়ের আগে মেরিনা শর্ত দিয়েছিলেন- লুঙ্গি পরা যাবে না।
- শর্ত রক্ষা করা যায় না। কারণ লুঙ্গি পরাটা সহজ। প্যান্ট পরতে গেলে তো একটা আড়াল লাগে। তুমি একটা প্যান্ট থেকে আরেকটা প্যান্টে যাবে, এটা আরেকজনের সামনে কঠিন। কিন্তু লুঙ্গিটা তো সহজ। ফলে বাংলা ভাষার অনেক বড় লেখকের মতো আমিও লুঙ্গি পরি।

: আপনার কাছে পরিবার মানে কী?
- পরিবার মানে ফিরে যাওয়া। সমগ্র দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতো যখন সন্ধ্যা নামে, তখন সব পাখি ঘরে ফেরে। এই যে ফেরার টানটা- একটা শান্তির নীড়। আমার তো ছোট পরিবার। মেরিনা, আমি এবং আমাদের মেয়ে পদ্য। বাসায় ফিরে যেতে খুব আনন্দ লাগে। আমি এটাকে খুব মূল্যবান মনে করি।

: বিয়ের আগে বইমেলায় আপনারা হাত ধরে হাঁটতেন, কিন্তু এখন?
-এখন আমরা দুজন একসাথে থাকলে, বাজারে হোক, বইমেলায় হোক, মেরিনা এসে আমার হাতটা ধরে ফেলবে। আমি হয়তো একটু কুণ্ঠা বোধ করি। কিন্তু সে অকুণ্ঠচিত্তে আমার হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়।

: স্ত্রীর চোখে আপনি কেমন?
- ঠিক জানি না। এটা আমার স্ত্রী বলতে পারবে।

: আপনাদের একটি মাত্র সন্তান- পদ্য পারমিতা?
- রাইট।

: সে এখন কোন কাসে পড়ে?
- ২০১২ সাল, সে এখন কাস টেনে পড়ে।

: লেখালেখির প্রতি তার কোনো ঝোঁক আছে বলে মনে হয়?
- সে ঘোষণা করেছে, লেখক হতে চায়। ক্রিয়েটিভ রাইটিং পড়তে চায়। সে লেখে। খুব ভালো লেখে।

: ৫১বর্তী-তে সে অভিনয় করেছে?
- ছোট্ট একটা চরিত্রে। পরীর মেয়ে মেঘবতী হিসেবে।

: আপনার মেয়ের সাথে সম্পর্ক কেমন?
- আমি তো মনে করি, খুবই ভালো।

: সে কি আপনাকে বন্ধুর মতো মনে করে?
- এটা দাবি করা যায় যে, করে। কিন্তু বন্ধু হওয়া খুব কঠিন।

: আপনার ভক্তদের চিঠির উত্তর দেন?
- ইমেইলে দিই। ফেসবুকেও কখনো দিই, কখনো দিই না। অনেকে বলে, “আমি নাটক করতে চাই।” এখন এর জবাব আমি কী দেবো? কিন্তু চিঠি হলে সংগ্রহ করে রাখি যে, এটার সুন্দর করে জবাব দিতে হবে, দুই-তিন দিন পরে দেবো। কিন্তু পরে হারিয়ে যায়। উত্তর দেয়া হয় না।

: আপনি জন্মদিন পালন করেন?
- প্রথমে করতাম না, বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর থেকে শুরু করি। আমি নিজে থেকে করি না। বাসায় কেউ কেউ, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে কেউ কেউ কখনো কখনো কেক-ফুল নিয়ে আসে। ঘটা করে পালন করা হয় না।

: জন্মদিনটা কীভাবে কাটে?
- অফিস থাকলে অফিস করি। অফিসের লোকজন টের পেয়ে গেলে অভিনন্দন জানাতে শুরু করে। খেতে চাইলে তাঁদের খাইয়ে দিই। বাসায় গিয়ে হয়তো দেখতে পাই ভাই-বোনদের মধ্যে কেউ এসেছেন। বন্ধু বা আত্মীয়স্বজন এসেছেন। তাঁরা কেক নিয়ে আসে।

: স্ত্রীর সাথে মান-অভিমান হলে তা ভাঙানোর ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা কার থাকে?
- আমার স্ত্রীর।

: হুমায়ুন আজাদের সঙ্গে দেখা কবিতায় আপনি লিখেছেন- আগামী প্রকাশনী-র সামনে গেলে দ্রুত হাঁটি, সস্ত্রীক সামনে তাঁর পড়ে গেলে পাছে শুনতে হয়, “তোমরা দুজন এখনো একসঙ্গে আছো!”
- ওইটা হচ্ছে কী, আমরা দুজন হাঁটছি বিয়ের পরে, হুমায়ূন আজাদ দেখে বললেন, “এই, তোমরা এখনো একসাথে আছ?” এটা তো এখনকার সমাজে খুবই সত্য যে, দুজন ছেলেমেয়ের জুটি হলে জুটিটা থাকে না। ভেঙে যায়। উনি এটা জিজ্ঞেস করেছিলেন। মেরিনা এটা খুবই অপছন্দ করেছে। কাজেই তাকে দেখলেই পালিয়ে যেতাম, পাছে না আবার জিজ্ঞেস করে বসেন!

: আপনি অনেকগুলো প্রেমের উপন্যাস লিখেছেন। আপনার প্রেমের অভিজ্ঞতা কী রকম? প্রথম প্রেমপত্র কবে লিখেছিলেন বা পেয়েছিলেন?
- আমার প্রেমের অভিজ্ঞতা খুব হতাশাব্যঞ্জক। আমি জীবনের ২৮টি বছর প্রেমহীন জীবন যাপন করেছি। ২৮তম বছরে এসে যাকে এখন বিয়ে করেছি, তার দেখা পাই। তাঁকে বলি যে, “তোমারও বয়স হয়েছে, আমারও বয়স হয়েছে। এখন তো আর প্রেম করবার সময় নাই। তো বিয়েই করবো।” এভাবেই তাকে বলেছি।

: মেরিনা ইয়াসমিন?
- হ্যাঁ, মেরিনা ইয়াসমিন। তারপর কিছুদিন তার সঙ্গে ঘোরাফেরা করে তাকে বিয়ে করে ফেলি। এর বাইরে কবি হিসেবে আমি প্রেমিকও বটে। ছোটবেলা থেকেই সুন্দর মেয়ে দেখলে কখনো কখনো কাবু হয়ে যেতাম। তাদেরকে নিয়ে অনেক কবিতা লিখেছি। খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে-র কবিতায়, নারীদের কাছে পৌঁছাতে না পারার আকুলতাগুলি ঠাঁই পেয়েছে। তখন যাদেরকে নিয়ে কবিতাগুলি লিখতাম, এখন তাদের কারো কারো সঙ্গে দেখা হয় কথা হয়। কখনো কখনো বলি যে, তুমি বা আপনি কি জানেন যে, “আপনাকে নিয়ে কবিতা লিখেছি।” তারা খুব খুশি হন। ওই বয়সে, যখন আমার আঠারো বা ষোলো বছর বয়স ছিলো; তখন যদি আমি তাদেরকে এভাবে বলতে পারতাম, তাহলে ভালো হতো। আবার ভালো হলেও হয়তো একটা ক্ষতি হতো, পরবর্তীতে কবিতাগুলো আর লেখার দরকার পড়তো না। প্রেম পাইনি বলেই কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি।

: মেরিনা ইয়াসমিনের আগে বা পরে আপনি কারো প্রেমে পড়েছেন?
- অনেকবার।

: নারীর সৌন্দর্য সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত উপলব্ধির কথা বলুন।
- ইদানীং একটু বয়সের লক্ষণ, এখন খুব বেশি মুগ্ধ হই না। আবার উল্টোটাও সত্য। তরুণ বয়সে যখন আঠারো কিংবা বাইশ ছিলাম, তখন নারীর সৌন্দর্য সম্পর্কে খুবই খুঁতখুঁতে ছিলাম। এখন সব মেয়েকেই সুন্দর মনে হয়। আবার এখন কোনো একটা মেয়েকে দেখে পাগল হয়ে যাই না। তার সৌন্দর্যের ত্র“টিগুলো খুব চোখে পড়ে।

: পরকীয়া প্রেম সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
- প্রেম জিনিসটা খুবই মৌলিক জিনিস, এটা শাশ্বত। নারী ও পুরুষের মধ্যে এই যে দুর্নিবার টান, তারা বিবাহিত কি অবিবাহিত- সেটার ওপরে সব সময় নির্ভর করে না। আমাদের গল্প বা সিনেমায় আমরা গল্পগুলি দুজন অবিবাহিত ছেলেমেয়ের প্রেম দেখিয়ে তাদের বিয়ে দিয়ে শেষ করি, কিন্তু এরপরও জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে।

: নিজের চেহারা-সৌন্দর্য নিয়ে আপনার উপলব্ধি কী?
- আমি আত্মপ্রেমিক টাইপ মানুষ। আয়না দেখি। কখনো কখনো খুব মুগ্ধ হই। আবার এই সত্য উপলব্ধিও আমার মাঝে দেখা দেয় যে, এই কুৎসিত লোকের সাথে লোকে কথা বলে কী করে!

: কখনো কি মনে হয়- প্রফেশন, লেখালেখি বা ব্যক্তিগত কাজের ভীড়ে স্ত্রী-সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন?
- না। কারণ আমি বাসায় বসে লিখি। বাইরে যাই না। সারাণ আমার স্ত্রী এবং সন্তানের সাথে থাকি।

: প্রচণ্ড ব্যস্ততার মাঝেও দীর্ঘ সময় দিয়েছেন, সে জন্য অজস্র ধন্যবাদ জানাই। আপনার মঙ্গল প্রত্যাশা করি। ভালো থাকুন।
- তুমিও অনেক সময় দিয়েছো, কিছু কথা তো বলা গেলো হয়তো। কিছু কথা বলা হলো না হয়তো। আমি একটা কথা বলতে চাই, আমাকে যেনো কেউ অহঙ্কারী না ভাবেন। আমার সাহিত্য নিয়ে আমি যে খুব আত্মবিশ্বাসী, তা নই। পাঠককে আমার প্রতি একটা বিষয়ে সহানুভূতিশীল হতে বলবো যে, আমি যা করেছি ভালোবাসা থেকে করেছি। আন্তরিকতা থেকে করেছি। শেষ পর্যন্ত কে মূলধারার, কে জনপ্রিয়, কে ব্যবসায়িক কাগজের লেখক- এগুলো থাকে না। থাকে, যদি কেউ কোনো একটি ভালো লেখা লিখে থাকে। কাজটাই থেকে যায়। জীবনানন্দের কবিতা কোথায় ছাপা হয়েছিলো কোথায় হয়নি, তা আর কেউ মনে রাখবে না। মনে রাখবে তার কাজটুকু। ধন্যবাদ। []
::
[email protected]
-----------------------------------------------------------------------------
:: কবিতা ::
হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন
আকতারুজ্জামান

থাকুক না- মূর্খের যতো মূর্খতা
জ্ঞানীর যতো শুদ্ধতা
রূপসীর যতো মুগ্ধতা;
তার চেয়ে তুমি তুলনাহীন
তুমিই যতো ধ্যান-ধারণা-আশা
তোমার জন্যই অনন্ত ভালোবাসা!
অবশ্যই- হিমালয় থেকে নয়
ওই আকাশের নীল থেকেও নয়
পৃথিবীর শেষপ্রান্ত ছুঁয়ে এনে দেবো,
মন ভরে গ্রহণ কোরো তুমি
দুহাত ভরেও কিছু নিও-
নিশ্চিন্তে, নির্বিগ্নে, নিঃসংকোচে
আমার এই ভালোবাসা। []
::
সীতাকুণ্ডু, চট্টগ্রাম
[email protected]
-----------------------------------------------------------------------------
:: গল্প ::
বর্ষার মৌনতা
একুয়া রেজিয়া

“শ্রাবণ মেঘের দেয়া বৃষ্টি যেখানে পড়ে, ভেজা সেই মাঠে গান গাওয়া; টুকরো সুখের দেয়া একটু আদর ছুঁয়ে, অভিমান জলে ভেসে যাওয়া- বলতে না পারা কথা, বলে গেলো সেই সুর, ভাসলো আকাশ, অজানায় বহুদূর…”
আপন মনে গেয়ে চলছেন শ্রীকান্ত। গানের কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছে ঠিক যেনো বৃষ্টির আগ মুহূর্তের জন্যই গানটি বাঁধা হয়েছিলো। আজ এই ভর দুপুরবেলায়ও অন্ধকার হয়ে এসেছে চারদিক। প্রচণ্ড ঝড়ের আগের অদ্ভুত এক অন্ধকার। এই অন্ধকার ভীষণ টানে মীরাকে। ও দাঁড়িয়ে আছে এক চিলতে বারান্দায়। খুব মন দিয়ে গেথে নিচ্ছে প্রকৃতিটাকে। পথের ওপাশের সবুজ বাড়িটাকে কেমন যেনো ফ্যাকাসে নীল লাগছে দেখতে। আকাশের বিষণ্নতাকে নিজের মাঝে ধারণ করে তিরতির করে কাঁপছে ছোট্ট লেকের স্বচ্ছ পানিটুকু। সমস্ত প্রকৃতি আয়োজন করে প্রস্তুতি নিচ্ছে এলোমেলো হওয়ার, লণ্ডভণ্ড হওয়ার কিংবা নতুন করে মুগ্ধ হওয়ার। আকাশ-মেঘ-বৃষ্টি এমন আকুল করে টানে কেনো ওকে, জানে না মীরা। সে শুধু জানে এই ঝড়ো অন্ধকার কিংবা প্রচণ্ড বৃষ্টি ঘরে থাকতে দেয় না ওকে। বর্ষার এক গভীর রাতে অনেক বৃষ্টি ঝরিয়ে তার জন্ম বলেই কি সে এমন!
আগামী কাল অনেক খটমটে একটা পরীক্ষা আছে; অথচ এখন একদম পড়তে ইচ্ছে করছে না। আকাশের ঝড়ো ভাব দেখে কেনো জানি খুব বলতে ইচ্ছে করছে- তুমি এসেছো বড় এলোমেলো সময়ে।
মা এখনো টের পায়নি, পড়ার টেবিল থেকে উঠে এসেছে ও। টের পেলেই… প্রচণ্ড শব্দ হলো কোথাও। চমকে যায় মীরা। আর নিশ্চুপ হয়ে গেলো শ্রীকান্ত। ভয় পেলো নাকি সে? ক্ষণিকের জন্যে চমকে যেয়ে নিমিষেই আপনমনে হেসে উঠে আবার। ইলেক্ট্রিসিটি ফেইলিওর।
পাক খেয়ে খেয়ে উঠে আসছে ঠাণ্ডা বাতাস। মেঘগুলো মহা ব্যস্ত ভঙ্গিতে কোথাও উড়ে যাচ্ছে। যেনো ফিরতি ট্রেন না ধরতে পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। মীরার খুব ইচ্ছে করছে মেঘ হয়ে যেতে। মেঘ হয়ে ওদের সাথে ব্যস্ত হয়ে, ঠাণ্ডা বাতাসের মাঝে উয়ে যেতে। ও মেঘ, নেবে আমাকে তোমাদের সাথী করে- ফিসফিস করে ঝড়ো বাতাসের কানে বার্তা পাঠিয়ে দেয় মীরা। বারান্দার গ্রিল দিয়ে বাতাসে হাত মেলে দেয় ও; আর সাথে সাথেই মনে পড়ে যায় অদিতের কথা!
এক বৃষ্টিভরা দিনে কলেজ শেষ করে ফেরার পথে ইচ্ছেমতো ভিজেছিলো ওরা। সোনালু ফুলের ডালি গুঁজে দিয়েছিলো ওর হাতে অদিত। বৃষ্টিতে ফুলের রঙও যেনো চকমক করছিলো। রাস্তা পার হয়ে, রেল লাইনের পিছু নিতে নিতে কাকভেজা হয়ে চলে গিয়েছিলো বহুদূর। কাদায় ভরা পথ বা রেল লাইনের স্লিপারে পা পিছলে যায়ার ভয় হলে, হাতটা আর একটু শক্ত করে আঁকড়ে ধরা কিংবা অকারণেই হেসে ফেলা দুজনের…
কি স্বপ্নময় আর উদ্দাম দিন ছিলো সে সময়, বছর কয়েক আগেও। নিজেকে ভীষণ পরিপূর্ণ মানুষ মনে হতো ওর। দিনগুলো হু হু করে কেটে যেতো। আহ! মানুষ কতো দ্রুতই না বদলে যায়।
মাঝে মাঝে বাস্তবতা মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়। কতোদিন অদিতের সাথে দেখা নেই। বর্ষা আসে বর্ষা যায়… শেষ পর্যন্ত আসলে সব ভালোবাসার গল্পই ফুরিয়ে যায়, সংলাপগুলো শুধু থেকে যায়। আর কিছুই ভাবতে চায় না মীরা। থাক না যে যার মতো করে! খুব বেশি কিছু কি আসে-যায়? ঝরা বকুলের মতো না হয় পড়েই থাকুক কিছু স্মৃতি।
“এক জীবনের কতোটা আর নষ্ট হবে? একটা মানুষ কতোটাই বা কষ্ট দিবে?” …বিড়বিড় করলো মীরা। কার যেনো কবিতা, মনে পড়ছে না এখন। থাক! সবসময় সবকিছু মনে পড়ার দরকারও নেই। মীরা এখন থেকে ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাওয়া দুর্বার মেঘ হবে, প্রবল বৃষ্টি হবে, প্রচণ্ড ঝর হবে… পাশের ঘর থেকে মায়ের চিৎকারে ভাবনার ঘোর কাটে ওর। ‘কিরে? কখন থেকে তোর ফোনটা বেজে যাচ্ছে, ধরছিস না কেনো?’
মায়ের এ কথায় বারান্দা থেকে ঘরে এসে মীরা মুঠোফোনটা হাতে নেয়। অচেনা নম্বর। বার কয়েক হ্যালো বলার
পরেও ওপাশ থেকে কোনো শব্দ নেই। রেখে দিতে যাবে, হঠাৎ একটা মুহূর্তের জন্যে থমকে গেলো ও; মনে হয়েছে একটা হার্টবিট মিস হয়ে গেছে বুঝি! ওপাশে সেই অনেক দিনের চেনা ভরাট কণ্ঠ। কতোদিন কতো যুগ পর শুনলো এই স্বর- ‘মীরা, তোর প্রিয় বৃষ্টি হচ্ছে। সেই কলেজ জীবনের মতো, ভিজবি আমার সাথে?’
মৃদু মৃদু জলে মীরার চোখের কোণ ভিজে উঠছে। একটা জমাটবাঁধা কষ্ট ব্যথা থেকে উঠে আসছে। মুঠোফোনটা খুব শক্ত করে কানের সাথে চেপে ধরে থাকলো ও। বাইরে তখন শীতল বাতাসের সঙ্গে সোঁদা মাটির গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে… []
::
ঢাকা
-----------------------------------------------------------------------------
:: আপন অনুভূতি ::
অচেনা সেজে তার চলে যাওয়া
ঈপ্সিতা চৌধুরী

আমি আমার সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে তাকে ওই আকাশের মতো বানাতে চেয়েছিলাম। যার কাছে এই পৃথিবী ঋণী। যে আকাশে থাকবে সূর্য-চাঁদ; হাজার হাজার নক্ষত্র আর নীল মেঘ… যা পৃথিবীর সমস্ত মানুষের তৃষ্ণা মেটাবে। মরুভূমির দগ্ধ আত্মাকে শীতল করে দেবে; অগ্নিগিরির অগ্নুৎপাত বন্ধ করে দেবে। ভেবেছিলাম ওই আকাশের মতো বড় আর উদার হবে সে, ওই শুভ্র মেঘের মতো হবে তার মন; ওই নীল আকাশের মতো হবে তার ভালোবাসা। যার স্রোতে আমি ভেসে বেড়াবো। কিন্তু সে আমার আকাশ হলো না। ইচ্ছেগুলো ছিলো স্বপ্নের মতো। আর সেই স্বপ্নগুলো ছিলো স্বপ্নের কোনো এক মানুষকে নিয়ে। মানুষটা চলে গেছে সেই কবে, তার স্বপ্নেরই হাত ধরে! আমার ছোট ছোট স্বপ্নগুলো ছিলো তার কাছে মরুভূমির বুকে একবিন্দু জলের মতোই নগণ্য!
ভালোবাসার যে আশ্চর্য প্রতারণায় আমার বর্তমান অন্ধকার জীবন, সেই গল্প না হয় নাই-বা বললাম। কিন্তু এই অন্ধকার জীবনে আমি আজও কিভাবে সেই স্বপ্নের ভালোবাসার পৃথিবীতে বিচরণ করি, তার কিছুটা ব্যাখ্যা অন্তত দেয়া যায়…
আমার ভালোবাসার স্বপ্নগুলো কিন্তু সেই দূর আকাশের সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর যেতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট সীমানায় বাঁধা পেয়ে তা প্রতিনিয়ত আছড়ে পড়তে থাকে কাছাকাছি কোথাও! কারণ, আজকের এই প্রান্তে এসে, সে মানুষটা হয়তো তার অতি আবেগের সব ভালোবাসা আর স্বপ্নের কথা ভুলে গেছে। তবে আমি ভুলিনি। আমার ভালোবাসার স্বপ্নগুলো ভেঙে যায় কান্নায়। ভাঙতে ভাঙতে হয়তো কিছু স্বপ্ন থেকে যায়। যার উৎস শুধুই ভালোবাসা। তাই তো আজও আমি বিচরণ করি আমার ভালোবাসার রাজ্যে। এখন ওর স্বপ্নগুলোও শুধুই আমার; কারণ, আমার ভালোবাসার সে স্বপ্নগুলো এখন তার কাছে বড় বেশি নিষ্প্রয়োজন।
শুধু ভালোবাসার স্বপ্নগুলোকে ধারণ করে বেঁচে থাকা কি খুব কষ্টকর? হয়তো। হয়তো নয়। ভালোবাসার সেই প্রিয়মুখটি তার রঙ-বেরঙের নানা রূপ দেখিয়ে পালিয়ে গেছে এক অচেনা জগতে। যেখানে আমার স্থান নেই।
প্রথম প্রথম তার কথা খুব মনে পড়তো। এখন আর মনে পড়ে না। শুধু স্বপ্নগুলো ঘুরপাক খায়। সত্যকে জানতে পারিনি; তবে মিথ্যেকে চিনতে শিখেছি। আর এভাবেই সেই ভালোবাসার প্রিয়মুখটি একদিন দূরের কেউতে পরিণত হয়ছে।
আসলে ও ছিলো একটা অর্কিড- দূর থেকে যা দেখে খুব সুন্দর মনে হয়, কিন্তু কাছে গিয়ে স্পর্শ করলে বোঝা যায়, এরা কতোটা বিষাক্ত। কিভাবে এদের বিষ শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে যায়। কষ্টের নীল রঙে কিভাবে তা স্পষ্ট হয়ে দেখা যায়।
মানুষটা এমনভাবে জীবনে একটা ক্ষত সৃষ্টি করে দিয়ে গেছে যে, সেই ক্ষত শুকিয়ে গেলেও তার দাগ রয়ে গেছে। যা আজও অতীত স্মরণ করিয়ে দেয়। অথচ সে চলে গেছে তখন, জীবনে যখন তার প্রয়োজনটা খুব বেশি ছিলো। সময়ের প্রয়োজনেই সে এসেছিলো, আর সময়ের প্রয়োজনেই সে চলে গেছে। একবারের জন্যও পিছু ফিরে দেখেনি, তার এই বেখেয়ালী সিদ্ধান্তু কিভাবে সবকিছু তছনছ করে দিতে পারে!
জানি- সে দিনটি, সে সময়গুলো, সবই হারিয়ে গেছে কালো এক অন্ধকারে। কোনো এক অচেনা ঝড়ে। কিংবা ঢেউ তোলা এক সাগরের বুকের মাঝে। জানতে পারিনি, কখন হারিয়েছি সেই স্বপ্নে সাজানো দিনগুলোকে।
স্বপ্নের মানুষটিকে তবুও কেনো জানি মনে হয়। কর্মব্যস্ততার এই যুগে হয়তো আমাদের কখনো দেখা হবে আবার। কোনো এক অচেনা শহরে, কিংবা কোনো এক ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে; জনবহুল কোনো ট্রেনে বা বাসে; নয়তো কোনো শপিং মলে বা কোনো রেল স্টেশনে। হয়তো কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়াবো আমরা। আর নয়তো একে-অপরকে না চেনার ভান করে চলে যাবো যে যার পথে, আবারো অচেনা সেজে… []
::
দিনাজপুর
[email protected]
-----------------------------------------------------------------------------
:: কবিতা ::
জাহীদ ইকবাল
বোতাম খুলে

অমৃত জলের বোতাম খুলে
বোয়াল মাছের মতোন সে এখনো মাঝরাতে
নাভির নীচে ঘাই মারে; জল ভাঙে
নোনা জল ঘোলা জল
আমি চুপচাপ শুয়ে থাকি সেই জলের ভেতরে
জল বাড়ে; জল কথা কয়
জল হাঁটে; নোনা জল ঘোলা জল… []

সন্তাপ

বহুকাল ধরে ফোঁটা ফোঁটা অভিমান
কেজি কেজি দুঃখ জমা করেছি কালের ঠিলায়
বলগা নেশায় চুর; তুমি এসে চুমুকে দেবে টালমাটাল
আমি বিষঘুমে তোমার ভেতরে ঘুমিয়ে পড়বো রাত্রিদুপুর
সেদিন বুঝবে, বুঝবে মাতাল সাঁই
অভিমানের সন্তাপ এতোকাল কতোটা খনন করেছে হৃদয় আমার []
-----------------------------------------------------------------------------
আকাশলীনা]
ফাল্গুন ১৪১৮ :: ফেব্রুয়ারি ২০১২ :: বর্ষ ০২ :: সংখ্যা ০৮

সম্পাদক :: নোমান ভূঁইয়া
[email protected]
সহকারী সম্পাদক : আলমগীর কবীর
[email protected]

প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ও পষ্ঠাসজ্জা :: রঙছুট
শব্দ বিন্যাস ও সমন্বয় :: সৈয়দা সুধন্যা
সার্বিক ব্যবস্থাপক :: সাইফুল আমিন
যোগাযোগ ::
+88 018 18731377
[email protected]
http://www.facebook.com/akashlina.mag
=============================================দ্রষ্টব্য : মূল কাগজে প্রকাশিত সকল লেখা এই ব্লগে প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে, আমরা দুঃখিত।
প্রকাশিথ সকল লেখা পড়তে এই ঠিকানায় যান- http://www.akashlina10.wordpress.com
-সম্পাদক।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×