দ্বৈত সত্ত্বায় একজন
রোমান্টিক হিরো, জনপ্রিয়, জননন্দিত কিংবা ব্যস্ততম যাই বলা হোক না কেন সে উপমার সাথে পর্দার নায়ক হিসেবে অনেক বেশি মানানসই ফেরদৌস। যাত্রা শুরুর পর থেকে আজও তিনি প্রায় সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন দুই বাংলায়। মূলত অমর নায়ক সালমান শাহ্ উত্তরসূরী হিসেবে বুকের ভেতর আগুন ছবিতে স্থলাভিষিক্ত একটি চরিত্রের মধ্যদিয়ে চলচ্চিত্রে ফেরদৌসের পদচারণা।
অতঃপর বাসু চাটার্জী পরিচালিত হঠাৎ বৃষ্টি ছবিতে তার অভিনয় দুই বাংলার দর্শকদের মুগ্ধ করে। যার ফলে তিনি অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আর তখন থেকেই দর্শকের রুচির সাথে সঙ্গতি রেখে আজও ফেরদৌস চলচ্চিত্রে কাজ করে যাচ্ছেন প্রত্যাশার প্রাপ্তি ঘটাতে।
যদিওবা অনেক ভাল চরিত্রে তার উপস্থিতি ঘটেছে কিন্তু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আর জুটেনি তার ভাগ্যে।
তবুও ফেরদৌস বিশ্বাস করেন যথা সময়ে তার কাজের সম্মান তিনি ঠিকই পাবেন। বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যুগের পর যুগ রাজত্ব করে চলেছেন তিন খান। আর আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের ভাবনা এখন ফেরদৌস, রিয়াজ আর শাকিব খানকে ঘিরেই। বিগত ৬/৭ বছর চলচ্চিত্রের পরিবেশ অস্থিরতায় পরিপূর্ণ থাকলেও সেই পূর্ণতায় এখন এসেছে শূন্যতা।
পূর্ণতা এখন সুস্থ চলচ্চিত্রকে ঘিরে। আর এই পূর্ণতার যোগান দিচ্ছেন ফেরদৌস, রিয়াজ আর শাকিব খান। এই তিনজনকে নিয়েই প্রযোজক-পরিচালক ছক এঁকে মেপে মেপে নির্মাণ করছেন সময়োপযোগী সেইসব চলচ্চিত্র যা দেখতে আবারো হল বিমুখ দর্শক হলমুখী হচ্ছেন। কিন্তু তারপরও চলচ্চিত্রাঙ্গন জুড়ে একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় যে, ঢাকাই চলচ্চিত্রে চলছে এখন নায়ক সংকট।
এ কথার তীব্র প্রতিবাদ করে ফেরদৌস বলেন, আমি এ বিষয়টির সাথে একমত নই। কেননা আমি মনে করি প্রতিভাবান নায়ক পর্যাপ্ত। কিন্তু সৃষ্টিশীল নির্মাতার এখন খুব অভাব। একজন নায়ক একটি, দুটি, কিংবা তিনটি ছবিতে তার যথাযথ অভিনয়ের প্রতি ভাললাগা তৈরি করে হলে নিয়ে যেতে পারেন।
কিন্তু ছবিতে যদি উপভোগ করার মতো কিছু না থাকে কিংবা এর নির্মাণশৈলী যদি ভাল না হয় তবে দর্শক সে ছবি দেখতে হলমুখী হন না। একজন দক্ষ গুণী নির্মাতাই পারেন ছবিটিকে যথাযথভাবে নির্মাণ করে দর্শকের কাছে উপভোগ্য করে তুলতে। চলচ্চিত্রের শুরুতে ফেরদৌসকে নিয়ে যে আলোচনার ঝড় উঠেছিল মাঝে তা একেবারেই হারিয়ে যায়।
আর এর কারণ ফেরদৌসের না বুঝে ছবিতে কাজ করা। এ প্রসঙ্গে ফেরদৌস বলেন, সত্যিকার অর্থেই মাঝে আমার কিছু ভুল ছিল। চ্যানেলের ছবি, সাহিত্যনির্ভর ছবিতে কাজ করেছি। আর বাজেট অল্প হওয়াতে সেসব ছবির নির্মাতারা মনোযোগ দিয়ে ছবি নির্মাণ করেননি। শুধুমাত্র স্যাটেলাইট চ্যানেলেই প্রচারিত হয়েছে সেসব ছবি। যেমন- রাক্ষুসী, কাল সকালে ।
টিভি চ্যানেলে রিলিজ দেবার কারণে সেসব ছবি প্রতিযোগিতায় যেতে পারেনি, সেসব ছবি নিয়ে আলোচনাও তেমন হয়নি। সে কারণে আমাকে নিয়েও আলোচনাটা বরাবর পেছনেই পড়ে রয়। ফেরদৌস তার এ ভুল পথে এগিয়ে চলার দিকটি পরিবর্তন করে এখন হলকেন্দ্রিক ছবির প্রতি অধিক মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। ঠিক তেমনি একটি ছবি আজাদী হাসানাত ফিরোজ পরিচালিত ঘরের লক্ষ্মী । এই ছবিটি ফেরদৌসের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে বলে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
প্রায় একযুগ পর এই সময়ে এসে ফেরদৌস তার চলার পথ সম্পর্কে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে উপলব্ধি করছি হাতে গোনা কয়েকটি ছবি ছাড়া আমাকে মনে রাখার মতো ছবিতে কিংবা চরিত্রে কেউ তেমন একটা কাজ করাননি। আমার বিশ্বাস, আমি যে এতোদিনে অনেক ভাল কিছু শিখেছি, জেনেছি তা প্রমাণ করতে পারবো যদি কেউ চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমাকে দিয়ে ছবি নির্মাণ করেন।
অবশ্য ইতোমধ্যে ফেরদৌস সে ধরনের চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করেছেন বেশ কটি ছবিতে। যেমন- ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ড পরিচালিত গঙ্গা যাত্রা, নার্গিস আক্তারের অবুঝ বউ, আবদুল্লাহ্ আল মামুনের দুই বেয়াইয়ের কীর্তি, আলী আজাদের ময়নামতির সংসার, মুশফিকুর রহমান গুলজারের কুসুম কুসুম প্রেম, আবু সাইয়ীদের রূপান্তর, হুমায়ূন আহমেদের আমার আছে জল ।
ফেরদৌস মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন এই ছবিগুলো মুক্তি পেলে দর্শক তাদের প্রত্যাশিত ফেরদৌসকে ফিরে পাবেন। চ্যানেলের ছবির প্রতি আগ্রহ একেবারেই কমে গেছে ফেরদৌসের। তবে চ্যানেল যদি বিগ বাজেটে গুণী নির্মাতাকে দিয়ে ছবি নির্মাণ করেন এবং সেই ছবি হলে প্রদর্শনের লক্ষে নির্মাণ করেন তবেই তিনি সে ছবিতে অভিনয় করবেন।
ফেরদৌস বলেন, ছোট পর্দায় অনেক নির্মাতা ভাল কাজ করছেন যেমন- অমিতাভ রেজা, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তাদের মতো গুণী নির্মাতাদের উচিত চলচ্চিত্র নির্মাণে তাদের মেধাকে কাজে লাগানো। তাতে দেশীয় চলচ্চিত্র অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে। খায়রুন সুন্দরী ছবিতে ফেরদৌস অনেকটা নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে করতে তিনি ক্লান্ত তাই একটু ভিন্ন চরিত্রের প্রয়োজনে নেগেটিভ চরিত্রেও কাজ করতে আগ্রহী। টালিগঞ্জ ও ঢালিউডের ছবির তুলনামূলক পার্থক্যে ফেরদৌস বলেন, টালিগঞ্জের ছবি এখন অনেক সমৃদ্ধ। আর আমরা এখনো অনেক পেছনেই পড়ে আছি যা সত্যিই হতাশাজনক। যোগ্য লোকের হস্তক্ষেপটা এদেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নের জন্য জরুরি।
সেই সাথে আধুনিক মননসম্পন্ন প্রযোজকের পাশাপাশি সব ভালোর সমন্বয়টা থাকা দরকার তবেই এদেশে সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব। ইতোমধ্যে ফেরদৌস নাট্য প্রযোজক হিসেবে নাম লিখিয়েছেন, চলচ্চিত্র প্রযোজনা করারও ইচ্ছে আছে। পাশাপাশি মনে সুপ্ত বাসনা আছে তার চলচ্চিত্র পরিচালনার। আর যতোদিন বেঁচে থাকেন ততোদিনই নিজেকে নায়কের আসনেই দেখতে চান ঠিক নক্ষত্রের মতো।
তুলআনাঃ
আলোচিত ব্লগ
জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?
অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।

১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।