করুণা অবমাননাকর, সহযোগিতাই মর্যাদাপূর্ণ। করুণা বৈষম্যকে লালন করে; আর সহযোগিতা সাম্য আনে, সকল শ্রেণি-পেশা-ধর্ম-বর্ণের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে, সম্প্রীতি বাড়ায়। সাম্যের সম্পর্ক-সম্প্রীতিই ঐক্য গড়ে তোলে।
সহযোগিতাই মানুষধর্ম। সহযোগিতার মনোভাবই মানুষের মঙ্গলচিন্তা ও মানবীয় অস্তিত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাবে মানুষের মনোবল বৃদ্ধি পায়। মনের বল বড় বল। মনোবলের জোরেই মানুষ অসাধ্যকে সাধন করে। আত্মস্থ বিদ্যা, আত্মজাগরিত সত্য ও মনুষ্যত্বের শক্তিই মনোবল। এরই অন্যনাম তারুণ্য, পৌরুষ। জাতীয়জীবনে একে জাগানো, জনগণকে স্বাবলম্বনের পথ দেখানো, মর্যাদার সাথে জীবনযাপনে মানবিক চেতনার বিকাশ ঘটানো রাষ্ট্রের বড় দায়িত্ব। পরাবলম্বন তথা হাতপাতা আর মিথ্যা বিনয় তথা চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দিয়ে কোন রাষ্ট্র স্বাবলম্বী ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরি করতে পারে না। কিন্তু মানুষ বড় হয় স্বাবলম্বনে, আত্মশক্তির জাগরণে, অর্জনে ও পরার্থপরতায়; পরাবলম্বনে, করুণায় ও স্বার্থপরতায় মানুষ পদে পদে ছোট হয়।
রাষ্ট্রের কাজ মানুষকে বড় করা, সমুদয় সম্ভাবনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা, সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা, আর জনগণের কাজ সৃজনশীল মানবিক কর্ম দিয়ে জৈব অস্তিত্বের স্থলে মানবীয় অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠা করা। মানবীয় আবেগ ও প্রজ্ঞায় সংহত, আবহমানকালের অভিজ্ঞতায় পরিপুষ্ট, সত্য-সুন্দরের মর্মবিচ্ছুরিত-আলোতেই মানবীয় অস্তিত্ব। এ আলো আত্মজাগরিত, উপলব্ধিজাত। এ আলো একতা আনে, বিভেদ-ভেদাভেদ দূর করে। এ আলোর মন্ত্রণা মানুষকে একা বাঁচতে প্ররোচিত করে না, সবাইকে নিয়ে বাঁচার প্রেরণা জোগায়। এ আলোই সাম্রাজ্যবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কবর খুঁড়েছে—সাতচল্লিশে, একাত্তরে।
করুণা-স্বার্থপরতা অসুস্থ মানসিকতার পরিচায়ক। রাষ্ট্রের বাহ্যিক উন্নতি হলো সুস্থ দেহ, আর আত্মিক উন্নতি হলো সুস্থ মন। কল্যাণরাষ্ট্র বাহ্যিক ও আত্মিক উভয়বিদ উন্নতির জন্য একযোগে করে। কেননা, এর ব্যত্যয় ঘটলেই সমাজে দুঃশীল শ্রেণি-সম্প্রদায় তৈরি হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৬