somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধুর চাপা কষ্ট ।।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শুক্রবার অফিস বন্ধ । সারাদিন বিশ্রাম করার পর সন্ধার জমপেশ আড্ডাটা সেই পুরনো । আড্ডায় এখন দিন দিন লোক বাড়ছে । আগে ৩ জন হলে ও এখন সংখ্যায় আটজন । গাণিতিক হারে লােক বাড়ছে । এই সব লােকগুলোই সেই বাল্যকালের ইশকুল বন্ধু । প্রত্যাকটা বন্ধুই প্রতিষ্ঠিত এবং শিক্ষিত । তবে বেশির ভাগই স্কুল ও কলেজ শিক্ষক। যদিও আমার কাছে একজনকে ও ভালো শিক্ষক মনে হয় না । তাদের আচার আচরন আর মেয়ে সংক্রান্ত উচ্ছাস গল্প উপস্থাপনা আমি বরাবরই বিরক্ত । এরা গার্লস স্কুল ও কলেজের শিক্ষক তাই হয়তো মাথায় মেয়েলি ব্যাপারগুলো গিরপিক খায় । তবে খারাপ স্বভাবের নয় । তাই হয়তো এখনো বন্ধুর সঙ্গ ছাড়িনি । আমি কেমন তা জানি না , তবে খারাপ সঙ্গের সাথে মেলামেশা করা স্বভাব চরিত্র আমার কােন দিনই হয়নি । পশ্রয় ও দেয়নি । যারা এহেন বাজে আচরনে অভ্যাস্ত্য তারা অন্তরকূলে আজীবন ঘ্রিনিত । বন্ধুদের এই অবসর আড্ডাটা ব্যাস্ত বিরতি দিনে চলছে সব বারের মতো । আলোচনা সমালোচনায় মুখরিত সেই অন্ধ পােলের উপর । বৃহৎ পােলে একটু রাত হলে মানুষ ও যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ বললেই চলে । আর সেই সুযোগে আমাদের আড্ডার আসর জমতে থাকে অনেক সময় ধরে। হঠাৎ ব্যাস্ত আড্ডা থেকে আতিক মােবাইল দেখে বিস্মিত কন্ঠে স্তব্ধ করলো সবাই কে । বলতে লাগলো এই দেখ ফেসবুকে রবের কি নিউজ । সবাই তার মােবাইলে কাছে গিয়ে দেখলো ফেসবুকে রব একটা ছবি আপলোড দিয়েছে । সবার দােয়া চেয়েছে সবাই যেনো তার জন্য দােয়া করে । কিন্তুু রবের কি হয়েছে ? তা ছবির সাথে লেখা ছিলো না । রােগা একটা ছবি দিয়েছে । একটা সাদা সেন্ডু গেঞ্জি পড়া । মাথার নিচে একটা বালিশ , উপরে মশারিটা ঝুলানো । রবের পরিচয় রব আমাদের স্কুল বন্ধু । একটানা ১০ বছর এক সাথে পড়াশুনা করেছি । তবে ঠান্ডা স্বভাবের ছেলে আবার খুব মিশুক । তার সাথে যেকোন মানুষের একটা ভাব জমে যায় খুব তাড়াতাড়ি । গানওয়ালা মানুষ , সূরে সূরে কখন যে কার মন জয় করে কেউই বুজতে পারে না । তাই সবাই তাকে ভালোবাসি । ঢাকার একটা ছােট ব্যাংকে সে চাকরি করে । নামটা জানি না । বছরে দুইটা ঈদে তার সাথে আমাদের দেখা হয় । আতিক আর কিছু না ভেবে সাথে সাথে তার নাম্বারে কল দেয় । নাম্বার সংযোগ বিচ্ছন্ন দেখাচ্ছে । এই মুহত্ত্বে কল যাচ্ছে না । তাই তার চাচাতো ভাইয়ের নাম্বারে কল দেওয়া হলো । চাচাতো ভাইয়ের কথা শুনে আতিক কিছুটা বিস্মিত ভাবে চােখ বড় বড় করছে । আতিক বলছে, এতো বড় রােগ কিন্তুু কিছুই জানলাম না আমরা । আতিক মুখ কালো চেহারায় সবাইকে জানালো রবের ক্যান্সার হয়েছে । সবাই সংবাদটা শুনে হতবম্ব , ক্যান্সার । সবার চেহারায় দুখের ছাপ পড়ে গেছে ক্ষণিকের ভিতরে । সংবাদটা শুনে আমার কষ্টটা মনে হয় বেশিই লেগেছে । এই একটা রােগ মানুষের জিবনের প্রতিদিন এক এক করে গনে রাখতে হয় । কবে যে হঠাৎ করে শেষ ডাক চলে আসে কেউ জানে না । অথবা বলে দেওয়া হয় আর মাত্র কয়েকটা দিন আপনার হাতে বাকি আছে । আমার বাবার ও একি সমস্যা হয়েছে । হঠাৎ ডাক্তার রিপোর্ট করলো বাবার ক্যান্সার হয়েছে আর বেশিদিন বাচঁবেন না । তারপর বেশিদিন বাচেঁন ও নাই । হঠাৎ আমাদেরকে একা ফেলে চলে গেছেন যেখান থেকে আর কেউ কখনো ফিরে আসে না । এই ব্যাথিত কষ্ট লালন করতে কত কষ্ট হয়েছে তার অনুতাপ যে পেয়েছে সেই জানে। যাই হউক রব এখন নিজ বাড়িতে আছে । তাকে সবাই দেখতে যাবো বলেই উঠে পড়লাম । ৫ জনের ৪ টা বাইক নিয়ে সোজা তার বাড়ির পথে । একটু সময় হলে ও তার বাড়িতে আমরা সবাই উপস্থিত হলাম । বাড়ির সামনা থেকে রব বলে ডাকতে লাগলাম । ঘর থেকে সবার আগে রবই বাহির হলো । আমাদের হতাশার ডাক শুনে বাসার সবাই বাহির হয়ে আসে । রব আমাদের দেখে কিছুটা অবাক হলে ও নিশ্চয় বুজতে পেরেছে তার অসুস্থের খবর শুনেই আমরা এসেছি । কিন্তুু রব কে দেখে বুজার কােন উপায় নেই সে কত বড় একটা রােগ বহন করে আছে । আমাদের দেখে প্রাণ খােলা হাসি হেসে আমিন্ত্রিত অতিথীর মতো ঘরে নিলো । তোরা আসবি এমনটা ভাবিনি । বন্ধ সালেহ সাথে সাথে বলে উঠলো বন্ধু অসুস্থ থাকবে আর আমরা দেখতে আসবো না। আমি বললাম কেমন আছিস এখন । তাের সমস্যাটা কি একটু বলতো ? আরে তেমন কিছু না । এই আছি ভালো । তােরা বস আমি আসছি । সবাই বললাম আরে তুকে কােথাও যেতে হবে না । তুই বস আমাদের সামনে । তার মাকে একটু আওয়াজ করে বললো মা আমার বন্ধদের নাস্তা দিও। আপ্যায়ন পরে হবে । তুর মাথার চুলতো দেখছি কিছুই নেই । হুমম, থাকবে কি করে । কেমু থেরাপি দিয়েছি । ক্যান্সার রােগী । ম্যালিগন্যান্ট টিউমার । গত ৩ মাসে চেন্নায় চিকিৎসা করেছি । কিন্তুু কােন লাভ হয় নি । এখন ঢাকা থেকে কেমু থেরাপি দিয়ে এসেছি । নিজের মতো করে সব বলে দিচ্ছে মনে হচ্ছে আমরা এ সব শুনতেই এসেছি । আর রােগ যেহেতু হয়েছে তার লােকানোর কি প্রয়োজন । তা যা বলার বলেই দিয়েছে । তবে কথা বলার সুস্থ্য মানুষিকতা দেখে বুজার কোন উপায় নেই বন্ধু ক্যান্সার রােগী । কখনো কখনো মানুষ অতি শােকে পাথর হয়ে যায় । হয়তো সেই রকম কিছু । আমার শরীরের অবস্থা দিন দিন খারাপের পথে ভালো থাকলে ও ভালো থাকতে পারছি না । মনে হয় আর বেশি দিন বাচঁবো না । ডাক্তার ও কিছু বলে না । আমার জন্য তাে আমার নিজের কােন ভয় নেই । মায়া ও নেই । কিন্তু মা আমার একা হয়ে যাবে । আমি ছাড়া যে আমার মায়ের আর কেউ নেই । এমন বলতে বলতে শিশুদের মতো চিৎকার করে কাধঁতে লাগলো , আজস্র পানি জড়ছে চােখের দুই কােনে । চােখ গুলো লাল হয়ে গেলো । আমি মারা গেলে আমার মাকে তোরা একটু দেখিস । এ একটা মিনতি তােদের কাছে আমার । তার কাদঁতে থাকা দেখে সান্তনা দিতে গিয়েও ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না । কি বলে সান্তনা দিবো ? আতিক ঘা ঘেষে জড়িয়ে বললো আরে পাগল, রােগ বালাই আল্লাহ প্রদত্ব , আল্লাহ মানুষকে রোগ দেন আবার ভালো করেন । তুই ও ভালো হয়ে যাবি । খালাম্মা আসলেন (রবের মা ) এমন পাগলামি করলে সুস্থ মানুষ ও অসুস্থ হয়ে যায় । বাবারা তােমরা একটু বুজিয়ে যাও ওকে , আমি আর পারছি না । রবের মন খারাপের ব্যাপারটা কবে ভালো হবে সেই খবর আমাদের জানা নেই । তারপরেও নিজেদের মতো করে বন্ধুর মন কে খুশি রাখার চেষ্টা করেছি । বিদায় নিয়ে বন্ধুর ঘর ছাড়লাম । এ যেনো শেষ বিদায় না হয় বন্ধুর সাথে । আল্লাহ কাজে প্রার্থনা করি বন্ধু যেনো সুস্থ্য হয় । ফিরে আসে আমাদের সেই আড্ডায় । গান ওয়ালার সুরেলা সুরে আবার গাইবে সেই গান :

বন্ধু তোরা কই আয় ফিরে আয়
ফিরে চল আবার আড্ডায় ।।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৮
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×