somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ মৃত্যু কাম্য নয়---------------------

১৭ ই মে, ২০০৯ দুপুর ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এটি একটি সড়ক দূর্ঘটনার ছবি। ছবিটি যদি খুব ভয়াবহ হয় তবে আমি মুছে দেব।

সেদিন আমি আমার সামনে ঘটে যাওয়া একটি দূর্ঘটনা দেখেছি।বাচ্চাদের স্কুলে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। আমার কলনীর গেট থেকে ৫০ গজ দূরে কলোনীর বাউন্ডারী শুরু মাথায় ঘটেছিল ঘটনাটা।

একটি রিক্সাভ্যানে দুইটি স্কুল ছাত্র, একজন মহিলা ও একজন পুরুষ ছিল যাত্রী। আমি স্কুল ছাত্রদুটির হাসি মুখ দেখছিলাম। ওরা কোন কিছু নিয়ে খুব হাসাহাসি করছিল। আমি মনে মনে ভাবছিলাম ওরা কত নির্মল স্বচ্ছ এখনও। যত দিন যাবে ধীরে ধীরে জীবনের প্রয়োজনে আমাদের মত জটিল হবে। আমরা এখন চাইলেও ওদের মত হাসতে পারব না।

এমন সময় দানবের মত ছুটতে ছুটতে এল একটা ট্যাঙ্কলরী। মুহুর্তে ধাক্কা দিল রিক্সাভ্যানকে। ভ্যানটা ছিটকে চলে গেল রাস্তার পাশে খাঁদে। একটা ছেলে আমার গাড়ির সামনে। অন্যটা ট্যাঙ্কলরীর নিচে।
মহিলার সারা শরীর রক্তাক্ত। পুরুষটি ভ্যানের নীচে খাদে। ভ্যান চালক কোথায় আমি যানি না।

ছাত্রটি ও মহিলাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে এলাম আমার প্রতিষ্ঠানের হাসপাতালে। কিন্তু ট্যাঙ্কলরীর নিচে চাপা পরা ছাত্রটিকে আমি দ্বিতীয়বার ফিরে দেখতে পারিনি। প্রথমেই একবার মাত্র দেখেছি, একটি লাল বস্তার মত। তার হাত পা কিছুই দেখতে পাইনি।

বাসায় এসে ডাক্তারের পরামর্শে পুরপুরি তিনটি দিন স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমিয়েছি। সেদিন ছিল ১৯শে এপ্রিল মারা যায় দুইজন স্কুল ছাত্র।

কাল ২৫শে এপ্রিল আবার ও একটি দূর্ঘটনা ঘটেছে। সেই আমার কলোনীর গেট থেকে মাত্র ১০গজ দূরে। আবার ও সেই ট্যাঙ্কলরী এবং একটি জীবন। এবারের শিকার প্রকৌশলী মাহবুব------- আমার স্বামীর আফিস কলীগ।

এবারের মৃত্যুটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। অফিস গেট থেকে মাত্র দশ ফুট দূরে পাগলের মত ছুটে আসা ট্যাংকলরীর হাত থেকে বাঁচার জন্যই রাস্তার পাশে মটর সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে পরেছিলেন মাহবুব। হাত তুলেছিলেন ট্যাঙ্ক চালককে ধীরে চলার জন্য। কিন্ত চালকের যে খুব তারা। ইরিগেশন মৌসুম। তেল নিয়ে তাড়াতারি যেতে হবে। জীবনের চেয়ে সমইয়ের মূল্য বেশী।

একজন মেধাবী প্রকৌশলী কি নির্মম ভাবে একজন বেপড়োয়া তেললরী চালকের হাতে প্রান দিল। ট্যাংকলরী চালক গ্রেফতার হলো। তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। তিন দিনের মাথায় সেই চালক জামীনে মুক্তি পেল।
আবারও সে লরী চালাতে শুরু করলো। আমরা অবাক হয়ে দেখলাম তার মুক্তির জন্য সর্বচ্চো খরচ হয়েছে পাঁচহাজার টাকা। আমরা কি ওদেরকে আমাদের মেরে ফেলার লাইসেন্স দিয়ে রেখেছি।

আমি মাহবুবকে দেখেছি, তার হাসি দেখেছি, তার বাচনভঙ্গি দেখেছি, তার আনন্দ দেখেছি, তার অসাধারন প্রেমিক মন দেখেছি। যার ছায়ায় তার প্রিয়তমা স্ত্রী থাকতো সদা হাস্যময়।

কাল আমি তার কিমা হয়ে যাওয়া উর্ধাংশ দেখেছি। তার হৃদপিন্ড তার বুকের ভেতর থেকে বের হয়ে পাঁচ ফিট (দূরুত্বের মাপটা পেয়েছি পুলিশের খাতা থেকে) দূরে পরে থাকতে দেখেছি। তার শরীরের বিভিন্ন আংশ বেলচা দিয়ে তুলতে দেখেছি।

তার প্রিয়তমা স্ত্রী রেনুর নির্বাক মুখচ্ছবি, তার চোখের শূন্য দৃষ্টি আমি দেখেছি। রেনুর মুখে আমি আমার এই দেড় বছরের পরিচয়ের সময়ে কখন হাসি ছাড়া কিছু দেখিনি।
মাহবুব যে রেনুর মুখে হাসি ছাড়া অন্য কিছু দেখলে উদ্বিগ্ন হয়ে পরত।

আমি কাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি।
গভীর রাতে আমি ও আমার স্বামী মুকুল বারান্দায় বসে আছি। দুই জনই নিশ্চুপ। সময় চলে যাচ্ছে আপন গতিতে।
নিরবতা ভেঙ্গে আমি মুকুল কে বললাম -------------"তোমরা মাহবুব ভাইয়ের লাশটা বেলচা দিয়ে তুলেছ।"
আমি কোন অভিযোগ করিনি। কিন্তু মুকুল হয়তো আমার প্রশ্নে অভিযোগ খুঁজে পেল। আমার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে বলল ----------"না, না , আমি দেখিনি ওরা কি করেছে।"
আমাকে অপলক তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু ক্ষন চুপ থেকে বলল-------------- " হাত দিয়ে ধরার তো কিছু ছিল না রুনা।"
বলেই সারাদিনের চাপা কষ্টের বাঁধ ভেঙ্গে হু হু করে কেঁদে উঠল। আমি দুই হাত দিয়ে তার মাথাটা বুকে তুলে নিলাম।

স্বাভাবিক মৃত্যু হলে রানু নিশ্চই মাহবুবের লাশটা একবার দেখতে পেত। হাত দিয়ে একটু ছুঁইয়ে দেখতো। সন্তানেরা শেষ দেখাটা দেখতো। কিন্ত এ এমন এক মৃত্যু যা---------------------------- গভীরতম বেদনার চেয়ে বেদনাতর।

রানুকে এখন আমি রোজ একবার করে দেখি। কেমন আছ জিজ্ঞাসা করতে পারি নাই।

আজ রানু কাদঁছে কাল কে কাদঁবে আমি না আপনি??? -----------তার অপেক্ষায় আছি। এর কি কোন শেষ নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১০:১৪
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×