somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের প্রতি মাহমুদুর রহমানের ভালোবাসা অপরিসীম

১৬ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাহমুদুর রহমান একজন সত্, সাহসী, নির্ভীক এবং সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। তিনি সত্যকে তুলে ধরার জন্য কোনো সময়ে পিছপা হননি। আমরা জানি, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা একটি অন্যটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এজন্য প্রয়োজন সত্, সাহসী ও স্বাধীন সাংবাদিকতা। দেশপ্রেমিক মাহমুদুর রহমান সে কাজই করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এ আপসহীন মানুষটির প্রতি যে নির্যাতন ও অবিচার করা হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রবিরোধী এবং আইনের শাসন পরিপন্থী।
ওয়ান-ইলেভেনের সময় কয়েকজন সাহসী মানুষ সেই অগণতান্ত্রিক সরকারের নানা অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন, কথা বলেছেন বিভিন্ন সভা-সেমিনার কিংবা টকশোতে। দেশকে বিরাজনীতিকরণের বিরুদ্ধে যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে আতাউস সামাদ, ফরহাদ মজহার, আসাফউদেদৗলা, মাহমুদুর রহমান ও নুরুল কবির অন্যতম। ভাবতে অবাক লাগে, আজ সেই মাহমুদুর রহমানের ওপরই চরম নির্যাতন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার।
আমার জীবনে অনেক মানুষের সঙ্গে মেশার ও জানার সুযোগ হয়েছে। দেশ ও জাতির সঙ্কট মুহূর্তে তাদের ভূমিকাও দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। কিন্তু মাহমুদুর রহমান ব্যতিক্রম। তার মতো নির্ভীক ও সাহসী কলমসৈনিক আমি আর দেখিনি। দেশের প্রতি তার প্রত্যয়, ভালোবাসা ও দায়িত্বশীল আচরণ অপরিসীম গুরুত্বের দাবিদার। এ ধরনের দেশপ্রেমিক মানুষের প্রতি অবিচার ও অন্যায় আচরণ গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকের প্রতি হস্তক্ষেপ বন্ধ না হলে সরকারের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে, কমে যাবে জনসমর্থন।
একথা সত্য, একটা দেশে কতটা গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে তা বোঝার অন্যতম মাপকাঠি হলো সেই দেশের গণমাধ্যম স্বাধীন কতটুকু তা জানা। বলা যায়, ওয়ান-ইলেভেনের সময় যেমন মানুষের কোনো বাকস্বাধীনতা ছিল না, এখনও সে অবস্থা বিরাজমান। সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বললেই তার ওপর নির্যাতন নেমে আসছে। এ ধরনের ঘটনা কোনো সভ্য, স্বাধীন দেশে কল্পনাও করা যায় না। বর্তমানে আমাদের দেশে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে বলে আমার মনে হয় না।
সংবাদপত্র নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই নাগরিক অধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনকারী সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় অস্বস্তিবোধ করে, স্বাধীন সংবাদপত্র দলনে উদ্যত হয়। এজন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করাকে মূলত নাগরিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ বলা যায়। আমরা দেশের মিডিয়ার ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের ভুক্তভোগী। যারা এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন তারা আসলে নাগরিক অধিকার সমুন্নত রাখার লড়াই চালাচ্ছেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সবক’টি গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধানে নাগরিক অধিকারগুলো লিপিবদ্ধ আছে। সংবিধান মানলে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা যাবে না। আর সংবিধান না মানা দণ্ডনীয় অপরাধ। সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তিও এ ধরনের অপরাধ করে রেহাই পাবেন না।
সরকারি হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে দৈনিক আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান ও যমুনা টিভি। গত ১ জুন সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সরকার আমার দেশ বন্ধ করে দেয় এবং ফ্যাসিবাদী কায়দায় আমার দেশ অফিসে ঢুকে সাংবাদিক-কর্মচারীদের মারধর করে পত্রিকার সম্পাদক মাহমুুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। একটি পত্রিকার সম্পাদককে পত্রিকা অফিস থেকে এভাবে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার মনে হয় না। আর তার ওপর যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা তো কখনোই সমর্থন পেতে পারে না।
আদালতের রায়ে দু’মাস পর আমার দেশ প্রকাশিত হলেও মাহমুদুর রহমানকে আজও জেল থেকে ছাড়া হয়নি। তার কী অপরাধ? তার অপরাধ—তিনি সংবাদপত্রে লেখালেখি করেন। তিনি কেন রিমান্ড, মানবাধিকার, দুর্নীতি-অনিয়ম, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থগুলো নিযে লেখেন, সেটাই তার অপরাধ। আমরা জানি, দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি কারাগারে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। তাকে বর্বর কায়দায় গ্রেফতারের পর ১২ দিন রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। রিমান্ডের পৈশাচিক কাহিনীর কিছুটা তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে বর্ণনা করেছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪৭টি মামলা দেয়া হয়েছে। এভাবে একটার পর একটা মামলা দায়ের করা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আর এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই যে করা হচ্ছে তা একজন সাধারণ মানুষেরও বোঝার বাকি থাকে না।
সরকারের এমন ফ্যাসিবাদী মনোভাবের তীব্র নিন্দা জানাই। সঙ্গে সঙ্গে মাহমুদুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

লেখক : ড. আ.ফ.ম. ইউসুফ হায়দার
সাবেক প্রো-ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×