somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাহমুদুর রহমানের কারাদণ্ড মানুষের মনে বেদনার সৃষ্টি করেছে

২৩ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনগণের নিরাপত্তার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল বিচারালয়। আর সর্বোচ্চ আদালত কোনো বিষয়ে রায় দিলে তা নিয়ে মনের মধ্যে সংশয় ও নানা প্রশ্ন দেখা দিলেও প্রকাশের সুযোগ
থাকে না। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়ার পর মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে। নাগরিক হিসেবে অনেক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার ইচ্ছা জাগে, কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায় বলে কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছি না।
তবে এতটুকু বলা যায়, মাহমুদুর রহমানের কারাদণ্ড আমাকে বেদনাহত করেছে। এই দণ্ড দেশের সচেতন নাগরিকদের মনেও এক ধরনের বেদনার সৃষ্টি করেছে। একজন সত্, সাহসী ও আপসহীন নাগরিকের এমন অবস্থা ইতিহাস খুব ভালোভাবে গ্রহণ করবে বলে আমি মনে করি না।
সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে কথা না বললেও একজন দুঃসাহসী মাহমুদুর রহমানের দৃঢ়তার প্রশংসা করা নাগরিক হিসেবে অনেকটা আবশ্যক বলে আমার মনে হয়। তার মেধা, মনন আর আত্মবিশ্বাস সত্যিই অনন্য। বীরের মতো বেঁচে থাকার স্পৃহা নিয়েই লড়াই করছেন তিনি। সততা দিয়ে সবকিছু জয় করার অদম্য ইচ্ছা যেন তার প্রতিটি পদক্ষেপে। তার বিচক্ষণতা যে কাউকে মুগ্ধ করে।
যতটুকু জানি, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন তিনি। এরপর বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি, একাধিক সিরামিক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা, বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার মাহমুদুর রহমানের। বহু চ্যালেঞ্জের মাঝেও এসব কার্যক্রমে মেধা ও মননের প্রমাণ রেখেছেন তিনি। তবে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে এসব তেমন প্রচার পায়নি, পাওয়ার কথাও নয়।
তবে এক-এগারো সরকারের বিরুদ্ধে কলমসৈনিকের ভূমিকায় আবির্ভূত হওয়ার পর দেশের মানুষ চিনেছেন মাহমুদুর রহমানকে। শিল্প-বাণিজ্যে নীরবে ভূমিকা রাখার পর সরাসরি জনগণের সামনে নিজেকে তিনি উপস্থাপন করেন পত্রিকায় কলাম লেখার মাধ্যমে। জরুরি সরকারের সেই দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে যখন দেশের বাঘা বাঘা সব নেতা পর্যুদস্ত, তখন গুটিকয়েক মানুষ বাঘের গর্জন শুনিয়েছেন জাতিকে। আর সেই তালিকায় অগ্রভাগে ছিলেন আজকের কারারুদ্ধ আমার দেশ সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান।
তিনি এক-এগারো সরকারের রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে কলম চালিয়ে জনগণের মনে সাহস জুগিয়েছেন। দুটি পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখেছেন। সত্য উচ্চারণে তিনি ছিলেন নির্ভীক। এরপর একসময় তিনি আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। সেখানেও তিনি নির্ভীক, সত্য প্রকাশে আপসহীন। দুর্নীতি যার শরীর ও মন স্পর্শ করতে পারেনি, তিনিই কেবল এমন দুঃসাহসী অভিযানের সূচনা করতে পারেন। এক-এগারো সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আপসহীনতার স্বাক্ষর রাখেন।
ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তার লেখনী যেভাবে জনগণকে সচেতন করেছে, তার দ্বিতীয় উদাহরণ বাংলাদেশে পাওয়া বর্তমানে বিরল। তথ্যভিত্তিক সত্য উপস্থাপনায় তিনি যেন সত্যিই বিরল এক কলামিস্ট। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও এক উপদেষ্টার দুর্নীতির বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে তিনি প্রায় অর্ধশত মামলার আসামি হয়েছেন। একাধিকবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এরপর একটি উদ্দেশ্যমূলক সাজানো মামলায় সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গভীর রাতে পত্রিকা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার ও পরে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন বিশ্ব ইতিহাসে এটিই প্রথম বলে আমার মনে হয়। এটি গণমাধ্যমের জন্য একটি কালো অধ্যায় এবং লজ্জাজনক।
গ্রেফতারের পর একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও রিমান্ডের ঘটনা বাকশাল আর স্বৈরশাসনের ইতিহাসকেও হার মানিয়েছে। আর সবশেষে রিপোর্ট প্রকাশের দায়ে সুপ্রিমকোর্টের রায়ে তিনি ছয় মাসের কারাদণ্ড নিয়ে জেলখানায় রয়েছেন। এমন পরিস্থিতি আমাদের বেদনা দেয়। এসব কালো অধ্যায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে।
মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে সরকারের আচরণসহ সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে জাতির জন্য লজ্জাজনক। এটি একটি নেতিবাচক পথ। আর এ পথ থেকে সরে দাঁড়ানো আবশ্যক। অন্যথায় এসব কালিমা শুধু বর্তমান সরকারকে নয়, পুরো জাতিকে অন্ধকারের দিকে টেনে নিতে পারে। আদালত অবমাননার যে আইন প্রচলিত আছে, তা অনেক পুরনো। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে এরই মধ্যে এই আইন সংস্কার করা হলেও বাংলাদেশে সেই মান্ধাতা আমলের আইনই কার্যকর আছে। আমার মনে হয়, এই আইনে সংস্কার নিয়ে আসা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষিতে মাহমুদুর রহমানকে যতটুকু শাস্তি দেয়া হয়েছে, তা সর্বোচ্চ বলে মনে হয়েছে। আদালতের এই রায় যদি পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ থাকে তাহলে তা করা উচিত বলে আমি মনে করি।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। কিন্তু কতটুকু মত প্রকাশ করা যাবে এবং কতটুকু করা যাবে না, তা আইনের দ্বারা নির্ধারিত নয়। একজন নাগরিক এ অধিকার কতটুকু ভোগ করবেন, তা নির্ধারণ করে দেয়ারও প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।

লেখক : ড. খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান
সাবেক উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×