somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ মফঃস্বলীয় রূপকথার পঙ্খীরাজ অথবা শহুরে দানব

০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





রাশাতের বাতের সমস্যাটা খুব বেড়েছে । বুড়ো মানুষের রোগ তাকে কেন ধরল সে বুঝতে পারেনা । কিংবা সে বুঝতে পারে , এমন ভাব করে যে বুঝতে পারে না ।
প্রেসক্রিশনে গোটা গোটা অক্ষরে ওষুধের নাম লেখা হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইনিন। ডাক্তারদের হাতের লেখা এমন গোটা গোটা হতে পারে সে আগে জানত না । সে ভাবে ডাক্তার বোধ হয় অন্যমনস্ক ছিল , তাই হাতের লেখা এমন হয়েছে । অথবা সে অন্য কিছু ভাবে ।
রাস্তার মাঝে কয়লার ঝোলের আবরণে স্যান্ডেলের জিভ ছুঁইয়ে এগিয়ে যায় সে । একটু পর ডানে অথবা বামে মোড় নেয় । একটা কুকুর বা কুকুরমত প্রাণী অথবা কেউ একজন তাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করে বা ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করে । সে হয়ত একটা চায়ের টঙ্গের দিকে এগোয় , অথবা একটা রিকশা ডাকে অথবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবে আজকে কত তারিখ অথবা ভাবে তার মা কেমন আছেন । গণ্ডারের মত দেখতে মাইক্রোবাস শা করে বেড়িয়ে যায় । বাতাসটা তার ভীষণ ভালো লাগে অথবা বমি পায় । নাড়িভুঁড়ি উল্টে সাপের মত কুণ্ডলী পাকিয়ে যায় । তার হয়ত বাসায় যেতে ইচ্ছে করে অথবা করেনা ।
একটু সামনে এগিয়ে সে ডানে অথবা বামে মোড় নেয় ।

আজকাল রাশাত কাঁচা মাংস খায় । একটা প্লেইটে অথবা হাতে করে মুরগির ঠ্যাং চিবোয় । গন্ধটা এখন আর তার খারাপ লাগে না । বাবা অথবা মা বলেছিলেন তার দাতগুলো বাড়তে শুরু করলেই যেন সে কাঁচা মাংস খেতে শুরু করে । প্রথমে সে বুঝতে পারেনি । পরে সে লক্ষ্য করে তার দু পাশের দুটো কর্তন দাত ইঞ্চিখানেক লম্বা হয়েছে । আরেকটু বলিষ্ঠও বোধ হয় হয়েছে । দুটো উলটো পিরামিড অথবা A এর মত মাড়িতে বিঁধে আছে যেন । সেদিন-ই প্রথম সে কাঁচা মাংস খায় । প্রথম কামড়ের পর সে দেখতে পারে আকাশের কয়েকটা তারা লুকিয়ে গেছে । সে জানত এমনটাই হবে । বেশ অনেকটা খাবার শেষ করতে তার ৫ মিনিটের বেশি সময় লাগেনি । চাঁদ অথবা চাঁদের মত দেখতে কিছু একটা তখনও অবশ্য ছিল আকশে , কিন্তু কালো আকাশে তাকে খুব হাস্যকর বা একা লাগছিল ।
বেশ কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে সে রাতে সে তার নিজের রুমে অথবা ছাদেই শুয়ে পড়ে । রাতে তার স্বপ্নদোষ হয় অথবা হয়না অথবা সে কোনো স্বপ্নই দেখে না । কিংবা হয়ত সে কোনো একটা স্বপ্ন দেখে । সে রাতে হয়ত তার খুব আরামের ঘুম হয় অথবা বাতের ব্যাথায় রাতে তার মুখ থেকে গোঙানির আওয়াজ শোনা যায় ।

রাশাত মহাখালী/ফার্মগেইট/সদরঘাট যাওয়ার জন্য বাসে চড়ে ।
মফঃস্বলীয় রূপকথার পঙ্খীরাজ অথবা শহুরে দানবের মত এগিয়ে চলে বাস । দুধের সরের মত অথবা কালির দলার মত মেঘ করেছে আকাশে । বৃষ্টি অথবা রোদের ফোঁটা পড়ছে বাইরে অথবা অক্টোপাসের কালির মত রংধনু রঙ্গিন পেয়ারার মত আকাশ থেকে উলটো হয়ে ঝুলে আছে । মেহগনি অথবা রেইনট্রি অথবা সেগুন গাছের ছায়া অনেকটা বমির মত ছড়িয়ে আছে মাটিতে । এক তলা / দুই তলা বা একশ তলা বহুতল ভবনকে লাগছে একেকটা পনিরের টুকরা । সেই পনিরের টুকরোয় হাঙরের চোখ বা পিং-পং বলের মত লাগছে জানালাগুলোকে । বাস অথবা বাসের মত দেখতে একটা রাক্ষসের পেটে বসে রাশাতের গরম অথবা ঠাণ্ডা লাগে ।
চারদিকে কাঁচা মাংসের গন্ধে রাশাতের নাড়িভুঁড়ি আবার সাপের মতন বা দড়ির মতন কুণ্ডলী পাকায় । তার আর বমি পায় না , তার খিদে পায় ।
রাশাত তার সিটের পাশে একটা ঘটনা লক্ষ্য করল ।
একটা লম্বা অথবা খাটো , ফর্সা বা শ্যামলা বা কালো মতন একটা ছেলে সামনের লোকের পকেটে তার হাতটা সাপ অথবা মাগুর মাছের মত এগিয়ে নিচ্ছে । ২ মিনিট না ২০ সেকেন্ডের অভিযানে সে সফল হল। কালো অথবা অ্যাশ কালারের সুট পড়া , হাতে ব্রিফকেস অথবা চামড়ার ব্যাগ নিয়ে এক মধ্যবয়সী লোক বেশ গাম্ভীর্য অথবা ক্লান্তি চোখে মুখে মুড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন । তিনি অভিযানের কিচ্ছুটি আঁচ করতে পারলেন না । তার স্ত্রী অথবা মেয়ের উপহার দেয়া অথবা নিজের কেনা দামী ঘড়িটা তার হাতে সিগারেটের ডগার মত জ্বলজ্বল করছে । ভদ্রলোক হয়ত কোনো মাল্টিনেশনাল কোম্পানি অথবা সরকারি ব্যাংকের ম্যানেজার অথবা ব্যবসায়ী । তার গাড়ি হয়ত নস্ট হয়েছে অথবা চুরি গেছে অথবা টাকা বাঁচাতে তিনি গাড়ি কেনেননি , তাই তিনি বাসে করে যাচ্ছেন অথবা রেগুলার বাসেই চলাচল করেন ।
রাশাত লক্ষ্য করল ভদ্রলোকের দু তিনটে দাঁত প্রায় ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা হয়ে ঠোঁট বেয়ে নেমে এসেছে । পেপসুডেন্ট অথবা ক্লোজ আপ দিয়ে মাজা দাঁত গুলো দামি শো পিসের মত লাগছে । অন্যদিকে লম্বা বা খাটো ছেলেটার কয়লা দিয়ে মাজা অথবা না মাজা , সাদা বা হালকা হলদেটে দাঁত গুলো কি সুন্দর পিকাসোর ছবির মত অথবা কুচকাওয়াজের দলের মত সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে । রাশাতের লজ্জা লাগে । কিন্তু কাঁচা মাংসের গন্ধে তার আবার খিদে পায় । লম্বা বা খাটো মতন ছেলেটি হয়ত বাসের সবার মত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে না । সে হয়ত আশায় এসেছে , আজকে বা মার জন্য নিজে কাঁচাবাজার করবে অথবা প্রেমিকার জন্য একটা উপহার কিনবে অথবা রাতে নেশা টেশা করবে ।
বাস খুব দেড়ি করে বা খুব তাড়াতাড়ি মহাখালী/ফার্মগেইট/সদরঘাট অথবা অন্য কোনো জায়গায় পৌছায় । যাত্রীরা সবাই গজগজ করতে করতে অথবা হাসি মুখে বাসের কনডাক্টরকে দু টাকা বেশি বা কম দেয় , অথবা যা ভাড়া তাই দেয় ।
বাস থেকে নেমে রাশাতের চোখে পড়ে একটা রেস্টুরেন্ট ।
“এখানে দু ফুট লম্বা দাঁতের খাবার পর্যন্ত পাওয়া যায়”

প্রত্যেকটা বর্ণ কালো অথবা নীল কালিতে লেখা । হঠাত করেই তার খিদে চলে যায় । সে ভাবে পড়ে খাওয়া যাবে , এখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাক ।

“রোগ?”
“ভালবাসা নেই । ”
“কবে থেকে এই সমস্যা?”
“যেদিন প্রথম আমার দাঁত জীবন পায় । ”
“হুম , বুঝতে পারছি ।”
“চিকিৎসা? ওষুধ? প্রতিকার?”
“তোমার সবগুলো দাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। ”


প্রকৃতি যেন জ্বরে কাহিল হয়ে পড়েছে । হরিণীর চামড়ার মত আলোয় ডুবে যাচ্ছে রাস্তাঘাট ।
রাশাত বেগুনি অথবা মেজেন্ডা রঙের একটা বাড়িতে কবুতরের খোপ অথবা ফুলের টবে ভালবাসা খোঁজে । সে হয়ত একটা মোটাসোটা ইঁদুর দেখে অথবা কিচ্ছু দেখে না । সে ভাবে তার দাঁতই হয়ত তার ভালবাসার বস্তু । এই পুঁজিবাদের পেটে বসে প্রেম আর দ্রোহের কবিতা হালকা জোকসের মত লাগে মানুষের অথবা নোংরা গালির মত লাগে । লোকজন দাঁত পোলিশ করে , দাঁতে চুমু খায় , দাঁতে সার দেয় , আর বিজ্ঞাপনের আলোয় চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে অথবা চোখে হাত দিয়ে বসে থাকে । এক ছেলে তার সখের গিটার দাঁত দিয়ে ভেঙ্গে গুঁড়ো করে , এক নেতা কি এমন জাদুবলে বনে যায় বিষাক্ত ফলোয়ার , অসংখ্য প্রেমিক দাঁত দিয়ে ফালা ফালা করে প্রেমিকার চোখের বিস্ময় আর কাঁচা মাংস ।
রাশাত তার দাঁত উপড়ে ফেলতে চায় । কিন্তু সে তা পারে না । সে ভাবে যে সে এই দাঁতের বলেই টিকে আছে । অন্যদিকে তার বাতের ব্যাথা বেড়ে যায় । তার মুখ থেকে গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসে । সে হয়ত ভাবে এখন কয়টা বাজে অথবা তার বয়স কত বছর ।
কোনো একদিন রবীন্দ্রসঙ্গীতের মত বাতাসের মাঝে শত শত রমণী যখন চুল শুকোয় আর অভিশাপ দেয় , ঠিক তখনই ভালবাসার দেবী অথবা পুরোনো ক্লাসমেইট রাশাতকে একটা লাল গোলাপ দেয় । কালো অথবা হলুদ নয় । রাশাত লাল গোলাপ চিনতে পারেনা । কারণ , হয়ত সে তীব্রভাবে তার দাঁতের প্রেমে পড়েছে অথবা দীর্ঘদিন বাতের ওষুধ সেবনে তার চোখের রঙিন পিগমেন্ট নষ্ট হয়ে গেছে তাই সে লাল রঙ চিনতে পারেনি ।
অথবা এমন কিছুই নয় , সে হয়ত লাল গোলাপ চিনতে পেরেছে কিন্তু এটা দিয়ে কি করবে তা রাশাত বুঝতে পারেনি ।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৪৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×