সিরাজ মিয়ার চিকন চাকন শরীর নিয়েও আরবি ঘোড়ার মত ঊর্ধ্বশ্বাসে রিকশায় প্যাডেল মেরে পিঠে দুই জন যাত্রী নিয়ে ছুটছে অফিস পাড়ার দিকে। যাত্রী দুজনের ওজন আড়াইমন করে পাঁচ মনতো হবেই।
হাইকোর্টের সামনের সিগনালে এসে রিকশা থামাতে হল ট্রাফিকের হাতের ইশারায়। সিরাজ মিয়ার কপাল থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে। গায়ের জামাটা ঘামে ভিজে পিঠের সাথে লেপ্টে গেছে।
প্রতিদিন অফিস শেষ করে আমি ঢাকা জিপিওর মোড়ে এসে দেখি, সিরাজ মিয়া বসে আছে আমার অপেক্ষায়। আমি রিক্সায় উঠি সিরাজ মিয়া প্যাডেল মারতে শুরু করে। যেতে যেতে তার ফেরারী জীবনের গল্প শোনায়।
কয়েকটা সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ধুমধাম করে বড় ঘর দেখে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলো। পাড়ার সকলকে দাওয়াত করে খাইয়ে ছিলো।
এখন সপ্তাহে চারদিন তার ঘরে কিস্তি ওয়ালারা কিস্তি নিতে আসে। কিস্তি না দিতে পারলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল আর অপমান সহ্য করা লাগে।
এমন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে ঢাকা শহরের তপ্ত রাস্তায় শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে প্রতিদিন সাতশো টাকা কামাই করেও ঠিকমতো ভাত-তরকারির জোগাড় করতে পারে না সিরাজ মিয়া।
এরকম টোল খাওয়া, দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া জীবনের কতো কথা আমাকে রোজ সে শোনায় যেতে যেতে পথে পথে..........!
১১, অগ্রহায়ণ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪০