somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বন্ধু শফিক

১৪ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(দুই)

আমার আর শফিকের বিভাজন শুরু হলো ক্লাশ ফাইভে উঠে। ওর বাবা ওকে স্কুল থেকে নিয়ে একটা মাদ্রাসায় ভর্তি করালেন। আর আমি রয়ে গেলাম সরকারি প্রাইমারি ইসকুলে। শফিককে ছাড়া আমার ইসকুলে যেতে ভালো লাগতো না, সময়মতো মাঠে-ঘাটে, বনে-বাধারে আর আগের মতো ছুটতে পারতাম না।

সপ্তায় ছয় দিন মাদ্রাসার বোডিংয়ে থাকতো ও। শুধু শুক্রবার বাড়ি আসতো শফিক। আমি বাড়ির সদর দরজায় বসে অপেক্ষা করতাম ও কখন আসবে। ওকে নিয়ে ওই পাড়ায় যাবো, কতো নতুন নতুন ঘুঘু শালিকের বাসার সন্ধান করে রেখেছি। আমার সাথে পাড়ায় ঘুড়ে বেড়ালে শফিকের পিঠের ছাল তুলে নেবে হুমকি দিয়ে রহম আলী খালু টাউনে চলে যেতেন আর ফিরতেন সন্ধ্যায়। এই ফাঁকে আমরা শুরু করতাম আমাদের অভিযান এপাড়ায় ওপাড়ায়।

এমন করে কয়েক মাস যাবার পর শফিকের ভিতর থেকে আগের সেই দুরন্তপনা কোথায় যেন হারিয়ে গেল। বাড়িতে এলে এখন মন মরা দিয়ে বসে থাকে আর ওর মাকে বলতো -মা, আমি আর মাদ্রাসায় পড়বো না। আমার মাদ্রাসায় পড়তি ইচ্ছে করেনা। তুমি আব্বাকে বইলে আমাকে ইসকুলে নিয়ে আসো।

হঠাৎ একদিন সকালে রিজিয়া খালার কান্নার গলা শুনে ভাবছিলাম খালু আবার গায়ে হাত তুলেছে হয়তো। কিন্তু না কান্নার শব্দটা আস্তে আস্তে আমাদের ঘরের দিকেই আসছে। হ্যা। রিজিয়া খালা। আমার মাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্না বিজরিত গলায় বলছে-
-বুবুগো আমার শফিরে মাদ্রাসায় খুইজে পাচ্ছি নে। কাউক কিছু না বইলে ছোয়ালডা আমার কনে চইলে গেলো। তোমরা আমার শফিরে আইনে দ্যাও.........!

বহু খোঁজা খুজির পর নাটকীয় ভাবে শফিককে ছয় দিন পর পাওয়া গেলো চাঁদপুরের ইষ্টিমার ঘাটে। পন্টুনের উপর।

আমাদের পাড়ার একদম শেষ মাথায় হরিচরন কাকুদের বাড়ি। বহুপুরোনো একখান জমিদারি পাকা ঘর আর বড় শান বাধানো পুকুর ছিলো হরি কাকুদের। পুকুরের পাড়ে মোটা মোটা তেতুল গাছ ছিলো। বাবার কাছে শুনেছি একাত্তরে যুদ্ধের সময় ওনার ভাইবোন সব ভারতে চলে গেছেন আর তারা ফিরে আসেনি। তখন উনি একাই ওবাড়িতে বিনু কাকিকে নিয়ে থাকতো। ওনাদের ১টা নাকি বড় ছেলে ছিলো। সে যুদ্ধে গিয়ে আর ফেরেনি। ওনার শশুড়বাড়ী ছিলো চাঁদপুরে। উনি বিনু কাকীকে নিয়ে ইস্টিমারে চাদপুর থেকে খুলনা ফেরার সময় হঠাৎ দেখে শফিককে পন্টুনের উপর বসে বসে কাঁদছে। বিনু কাকীই দেখে প্রথম চিনেছিলো। তারপর তারাই নিয়ে আসছিলো।

বাড়ি ফেরার পর শফিকে রহম আলী খালু মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যাবার জন্য যে মারটা দিয়েছিলো তার জন্য পুরো এক সপ্তাহ বিছানায় থাকতে হয়েছিলো শফিকের।

নভেম্বর মাসের দিকের ঘটনা একদিন রাতে এশার অযানের সময় শফিক আমাদের বাসায় হাঁপাতে হাঁপাতে আসলো। এসে আমাকে ডাক দিলো। আমি উঠানে নামলাম। আমার কানে কানে বললো...
-দোস্ত মা আমার মামুক দিয়ে আব্বারে সুপারিশ কইরে আমারে মাদ্রাসাততে ছুটায়ে ইসকুলি ভর্তি করতি রাজি হইছে। এইবার আমরা আবার একসাথে হাইস্কুলি যাবো................!

(চলবে..........)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৫১
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×