(চার)
নতুন একটা ছবি এসেছে সাগরিকা হলে। ছবির নাম "শিমুল-পারুল" মাইকেল গত সপ্তাহে জালালকে নিয়ে দেখে এসেছে। সারাক্ষন গান গায় " ও বউ কথা কও, আমি কবে হইমু বাপ"। তবে দশ মিনিট পর ঢুকেছে তাই আবার দেখতে যাবে। এবার ঠিকই প্রথম থেকে দেখবে।
আমরা বললাম প্রথম থেকে দেখতে চাইলে টিকিট কেটে দেখতে হবে। অতো টাকা তো নাই আমাদের। মাইকেল বললো ঠিক আছে বাকি টাকা আমি যোগাড় করবো।
আমরা ঠিক করলাম শনিবার মর্নিংশো দেখতে যাবো স্কুল পালিয়ে। আর বই রেখে যাবো বাঁশ বাগানের ঝোপের ভিতর পলিথিনের ব্যাগে মুড়িয়ে।
আমরা রওনা হলাম সিনেমা দেখতে শনিবার সকালে। ছবি শুরুর অনেক আগে পোছালাম। মাইকেল আমাদের টিকিট কাউন্টার দেখাচ্ছে। একটা ছোট্ট লোহার গ্রীলের জানলা। নিচে একটা হাত ডোকার মতে ফুটো। ওখান দিয়ে হাত ঢুকিয়ে টাকা দিলে ভিতর দিলে ভিতর থেকে টিকেট মাষ্টার টিকেট দেয়।
আমি আর শফিক অবাক হয়ে দেখছি। হলের বারান্দায় অনেক ছবির পোস্টার লাগানো। কোনটার নিচে আবার লাল কালিতে লেখা "আসিতেছ" আবার একটা কাচের দরজা ওয়ালা বোর্ডের ভিতর মাঝারি সাইজের ছোট ছোট পোস্টার লাগানো। তার নিচে লেখা "চলিতেছে"। আমি আর শফিক এগুলোর আগা মাথা কিছু বুজলাম না।
মাইকেল টিকেট কেটে আনলো। আমরা লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছি। বড়রা কেউ কেউ আমাদের টিটকারি মারছে- "এইটুক বান্দর পোলাপান এই বয়সেই সিনামার দরজা চিনিছিস, তোগের ভবিষ্যত তো অন্ধকার, টাকা পাইছিস কনে? মাইকেলও ছেড়ে কথা বলার ছেলে না। মুখের উপর উত্তর - আমরা সিনেমা দেখি আর যাই করি তোমার বাপের কি?
আমরা হলে ডুকলাম। দুই চারটা বাতি জলছে। ঢুকেই শুনি মাইকের মতো আওয়াজে হিন্দি গান বাজছে। "ক্যায়সে বানি-ক্যায়সে বানি"। কিন্তু কোথাও কোন মাইক তো দেখি না আওয়াজ কোত্থেকে আসে। পরে মাইকেল জানালো ওই যে সামনে সাধা একটা কাপড় দেখছিস ওটার পেছনে মাইক আছে। সাদা কাপড় কেন এরকম টান টান করে লাগিয়ে রাখছে? শফিক আমাকে জিজ্ঞেস করলো। আমিতো জানিনা। মাইকেল জানে। মাইকেল জানালো ওটাই নাকি পর্দা। ওখানে ছবি দেখানো হবে। আমাদের আর তর সইছে না। কখন শুরু হবে ছবি।
হঠাৎ সব বাতি নিভে গেলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশ। আমরা কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। শফিক আমার হাত চেপে ধরলে বললো -"আমার ভয় লাগতিছে" আধা মিনিট পর হঠাৎ জাতীয় পতাকা দেখলাম সেই সাদা পর্দার উপর। সাথে সাথে মাইকেল দাড়িয়ে হাত উচুকরে হাত নাড়তে লাগলো আমরাও ওর দেখা দেখি দাড়ালাম, হাত নাড়লাম।
তারপর কি জেনো এলো আশপাশের বড়রা বলা বলি করলো ১৫রিল, ১৬ রিল। রিলটা আবার কি? আগা মাথা কিছু বুঝলাম না। মাইকেলও না। তার পর ছবি শুরু হলো। আমদের মনের ভিতর ভিষন রকম উত্তেজনা কাজ করছে। মনে মনে অপেক্ষা করছি মাইকেলের গাওয়া ও বউ কথা কও গান কখন আসবে। গানতো হইলো ভাপাপিঠার গান। মাইকেলকে জিগ্যেস করলাম তোর সেই গান কই? ও বললো- আর এট্টু পর।
ছবির বিরতিতে আমরা চিনা বাদাম, কুলফি মালাই সবই খেলাম। মাইকেলকে আবার জিজ্ঞেস করলাম " দোস্ত এতো টাকা কনে পালি? ও জানলো গতকাল ওর বাবার পকেট থেকে ১০ টাকার একটা নোট মেরে দিয়েছে। শফিকের এ কথা শুনে আমরা একজন আরেক জনের দিকে মুখ চাওয়া-চায়ি করলাম।
সিনেমা দেখে গ্রামে ফিরলাম বিকেল চারটায়। সোজা গিয়ে বাশবাগানে। কিন্তু হায় হায় - আমাদের বইয়ের ব্যাগ কই?
(চলবে.........)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:৪৩