বিগত কয়েক দশকের রাজনীতিতে নেতা নির্বাচনের কনসেপ্ট জনগণের মাথা মগজে ধীরে ধীরে যে রূপে, যে আকারে পাকাপোক্ত হয়ে গেছে তা আসলেই মনে উদ্বেগ সৃষ্টি করার মত। আগে জনগনই নেতা তৈরি করত জনগণের ভিতর থেকে। যার মধ্যে সাহসীকতা, দূরদর্শিতা প্রভাবিত করার মত জীবনাদর্শ, মোহনীয় ব্যক্তিত্ব, সততা-ন্যায়পরায়নতা, পরপকারী, সাংগঠনিক জ্ঞান, সহযোগিতামূলক মনণশীলতা, ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা ইত্যাদি গুণাবলী থাকতো তাকেই জনগণ নেতা হিসেবে মনোনীত করত। তারপরই তাকে জনপ্রতিনিধি হিসাবে আনুষ্ঠানিক নির্বাচন করে পার্লামেন্টে তাদের পক্ষে কথা বলার জন্য নির্বাচিত করতো।
কিন্তু বিগত দশক গুলোতে যে বিষয়টি আমরা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হবার মতো হয়ে গেছি তা হল নেতৃত্বের ন্যূনতম কোন গুণাবলী থাকুক আর না থাকুক কোন একজনকে কোন একটা পক্ষ বা প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
এখন X,Y,Z তিনজনকে A, B,C দল থেকে আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং জনগণকে বাধ্য হয়েই তাদেরকে ভোট দিতে হচ্ছে। যাদের রাজনৈতিক জ্ঞান নেতৃত্বের গুণাবলী কিছুই নাই। আর প্রায় ক্ষেত্রেই এরা কারা? এরা হলো আংগুল ফুলো কলা গাছ হয়ে যাওয়া ধান্ধাবাজ, সিন্ডিকেট করে পয়শা কামানো কালোবাজারি, অবসরে যাওয়া ঘুষখোর আমলা। রাজনৈতিক দলগুলোর গড়ে তোলা মনোনয়ন বানিজ্য নামের যে সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে প্রসার লাভ করেছে তার সরাসরি ফায়দা এরাই লুটছে।
এসব পদ-পদবী কিনে নেয়া লোকজন নেতা বনে গিয়ে দেশের প্রতি, রাজনীতির প্রতি জনমনে প্রচন্ড ঘৃনা এবং ক্ষোভ সৃষ্টি করছে। যা অদুর ভবিষ্যতের জন্য ভীতিকর!
সাধারণ মানুষ এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে না পেরে তার রাগটা ঝাড়তে না পেরে যাকে তাকে দিয়ে হলেও এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে চায় বলে মনে হচ্ছে। যার চূড়ান্ত উদাহরণ সাম্প্রতিক সময়ের ঢাকা-১৭ উপনির্বাচন।
যে সব আবশ্যক গুণাবলীর সমন্বয়ে সাধারণ মানুষ কাউকে নেতা হিসেবে তৈরি করত সেসব গুণাবলী সম্পন্ন মানুষেরা আজ বিলুপ্ত প্রায়। তাদের হয়তো খুঁজলে অবশ্যই পাওয়া যাবে।
এমনই একটা সিস্টেমের ফাঁদে এখন সাধারন মানুষ আটকে আছে যে মরন ফাদ থেকে সহজে মুক্তি মেলা প্রায় অসম্ভব। কারন গনতন্ত্রের বাই প্রোডাক্ট পুঁজিবাদের করাল গ্রাসে সম্মোহনী নেতৃত্ব তৈরি হবার প্রতিষ্ঠানগুলো বিলীন হয়ে গেছে, আদর্শ চর্চার উন্মুক্ত ক্ষেত্রগুলো ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে।
বিদ্যমান বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পালা করে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে নেওয়ার অলিখিত চুক্তি গেছে বহু আগে।
ছবিঃ অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১১:২১