(তিন)
'করবী' বত্রিশ তম বিসিএসের ভাইবা পরীক্ষা থেকে বাদ পড়েছে। এবার আবার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। সকাল দুপুর বিকেল সবসময়ই সামনে বই নিয়ে বসে থাকে। তবে মাঝেমধ্যে ময়না ভাই এবাড়ি আসলে জমিয়ে আড্ডা হয়। বিষয় থাকে গত আড্ডা আর এই আড্ডার মাঝের সময় টুকুর ময়না ভাইয়ের বাউন্ডুলেপনার কাহিনী।
আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ড্রইং রুমে গিয়ে বসেছি। এমন সময় করবী এলো। চোখে খয়রি ফ্রেমের চশমা পরা। গায়ের রং শ্যামলা বলা যায়না আবার ফর্সাও বলা যায়না। এই মেয়েকে দেখে মনেই হয় না বিসিএস দিচ্ছে ২য় বারের মতো। কেমন একটা শিশু শিশু ভাব চেহারার মধ্যে লুকিয়ে আছ।
-স্লামালাইকুম ময়না ভাই।
- ওয়ালাইকুম সালাম,
ময়না ভাই আমাকে করবি'র সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, - এইটাই সেই কিশোর ভাই। আমাদের মেসের অস্থায়ী বর্ডার। তোকে বলেছিলাম না একদিন।
- হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে।
তারপর করবী বলা শুরু করলোঃ
- আচ্ছা ময়না ভাই জেলে বসে তুমি কার মোবাইল থেকে আমাকে কল দিছিলা?
আমেনা খালা করবী'র কথা শোনার পর বললোঃ
-তার মানে তুই জানতি যে ময়না জেলে?
- হুমম জানতাম, বাট তোমাকে বলিনি। যদি বলতাম তাহলে রুস্তুম উকিল কে দিয়ে ঐ দিনই ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে, আর এখন আজকের এই আড্ডা আর জমতো না।
- উফফ, তোরা এরকম সিরিয়াস বিষয়টাকেও ঠাট্টা তামাশা হিসেবে দেখিস এটা কিন্তু খুবই ভয়ঙ্কর হতে পারে যেকোন সময়, আমেনা খালা বলল।
- ময়না ভাই তোমার কারাগারের রোজনামচা শুরু করো এবার, ভিশন এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে একদম শুরু থেকে বলবে।
- শোন, মতিঝিল থানার হাজতে দারোগা তোফাজ্জল হোসেন আমাকে পাঁচটা গোল্ড লিফ সিগারেট কিনে দিয়েছিলো।
- বলো কি?
- হ্যাঁ, একবার রিকুয়েস্ট করে বললাম- জামিনের পর একদিন এসে টাকাটা পরিশোধ করে দিবো, আমার বাসা তো মতিঝিল থানার পিছনেই।
- তারপর?
-তারপর তো আসল ঘটনা, হাজতের ভিতরে রাত তিনটার সময় সিগারেট টানতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু দেশলাই কই পাবো? তছাড়া সাথে খুব ভদ্রলোক টাইপ, হুজুর টাইপ লোকজন ছিলো তারা সবাই অধূমপাই, দেশলাই নেই কারো কাছে। ডাকলাম তোফাজ্জল দারোগাকে। সেন্ট্রি বললো-" আজ উনার ডিউটি শেষ সকালে আইবো"
- তারপর?
- তারপর সিগারেট খাবার নেশা আরো বেড়ে গেলো। তুই তো জানিস পুলিশদের নাম বুক পকেটে লেখা থাকে।তাই সেন্ট্রিকে ডাকলাম- বাবুল সাহেব, একটা সিগারেট খাবো, দেশলাই হবে?
বাবুল সাহেব খুব লাজুক প্রকৃতির লোক। একদম অল্প বয়স। গ্রামের বাড়ি চাদপুরের হাইমচর থনায়। বাপ দাদার বাড়ি নদীতে বিলীন হবার পর উনার বাবা নারায়ণগঞ্জ চলে আসছিলো। গতবার এসএসসি পাশের পর কনস্টেবল পদে জয়েন করেছে। দাড়ি গোপ ঠিক মতো এখনো গজায় নি। বাবুল সাহেব নম্র ভাষায় বল্লেন - ভায়া আমি বিরি সিগারেট খাইনা। তাই ওসব আমার কাছে নাই।
করবী ময়না ভাইকে থমিয়ে বললো-
- ময়না ভাই এরকম একটা সাধারন তুচ্ছ ঘটনা তুমি এমন ভাবে বললে আমি ভাবলাম কি না কি। তুমি আলোচনা অন্য খাতে প্রবাহিত করে যাচ্ছ। ধুউর! তার চাইতে তুমি কাশিমপুর কারাগারের এক্সপেরিমেন্ট বলো।
-কাশিমপুর সবচাইতে ভয়াবহ ঝামেলা হলো টয়লেটে।
-মানে কি ?
- আরে শুনেই দেখ, সকালে টয়লেটে গিয়ে টয়লেট সারার পর আবিষ্কার করলাম টয়লেটে বদনা নাই, পানির ট্যাপে মোচড় দিলাম দেখলাম পানিও নাই। মনে মনে ভাবলাম এটাও কি শাস্তির একটা পার্ট? হতেও পারে।
- ওয়াক থু! ময়না থামতো। আমেনা খালা বললো।
- বলো কি, তারপর?
- তারপর কি আর করার পানি খরচ না করে টয়লেটের বাইরে এলাম। দেখি কিছু দূরে একটা বালতি আর পাশে বদনা রাখা ।
- ছিঃ ময়না, আমার বমি আসছে, ওয়াক..! আমেনা খালা উঠে বেসিনের সামনে গিয়ে থু থু ফেললো।
- তারপর কাউকে বুঝতে দিলাম না। বদনায় পানি নিয়ে টয়লেটে ঢুকতে গেলাম কিন্তু দেখি দরজা ভিতর থেকে লক করা। ভিতরে বসে জোরে জোরে কেউ একজন কাশছে আর বলছে "বদনা টা দে তো"।
- তারপর? করবী বললো।
(চলবে...........)
ছবিঃ অন্তর্জাল
১ম পর্ব
২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০২৩ সকাল ৯:৩৯