somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এবাদ আলীর স্বপ্ন পুরন হবে কি....?

১৮ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেই আশির দশকের শুরুতে এবাদ আলীকে নারায়ণগঞ্জের এক এতিমখানার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে ভর্তি করে দিয়ে গোলাম রসূল ফিরে গিয়েছিলো সরস্বতীপুর গ্রামে।

গোলাম রসূল সরস্বতীপুরে ধান-চালের এর ব্যবসা করে। পাশের বাড়ির মিরু মিয়া মারা যাবার পর পরিবারটি অর্ধাহারে অনাহারেই থাকে প্রায়ই। ঘর ভর্তি ছেলে মেয়ে। মিরু মিয়ার বউ এবাড়ি ওবাড়ি কাজ করে দুবেলা খাবার যোগায়। তাতে কি আর পেট ভরে?

অভাবের তাড়না থেকে মুক্তি দিতে মিরুর বউকে একদিন গোলাম রসুল ডেকে বললো- এবাদের মা, তোমার এবাদকে ঢাকায় নিয়া একটা এতিমখানা মাদ্রাসায় দিয়ে আসি। ধর্ম কর্ম শিখে একদিন মাওলানা হবে। মওলানা হয়ে মা-বাপের জন্য দোয়াও করবে। তাছাড়া এতোগুলো বাচ্চা-কাচ্চার পেটওতো তুমি ভরাতে পারো না। গোলাম রসুলের কথায় মিরুর বউ সম্মতি দিয়েছিলো। এবাদ আলী মিরু মিয়ার দ্বিতীয় পুত্র ছিল। আর বড় ছেলে আবেদ আলী গোলাম রসুলের সাথে সরস্বতী পুরের হাটের দিন গোলাম রসুলকে ধানের কেনা-বেচায় সাহায্য করে। ধানের বস্তা ধরে, বস্তার মুখ বাঁধে, রশি পাকায়।

মাদ্রাসায় এবাদ আলী আস্তে আস্তে ইবতেদায়ী পাস করেছে। এরই মধ্যে নব্বইয়ের এর গন অভুথ্যানে যখন পুরো দেশ উত্তাল তখন সেই এতিমখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। এতিমখানার কর্তৃপক্ষ ১০-১২ জন ছাত্রকে অন্য এক মাদ্রাসায় হস্তান্তর করে দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
এবাদ আলী কওমি মাদ্রাসার সব ক্লাশ পাশ করেছে, দাওরায় হাদিসও পড়া শেষ। কিন্তু এবাদ আলীর আর কোনদিন সরস্বতীপুরে ফেরা হয়নি।

এখন এবাদ আলী চলিশোর্ধ। তিন জন বিবি নিয়ে তিনটা সোংসার তার। প্রথম বিবি ছিলো বড় হুজুরের ছোট মেয়ে। সেই প্রথম বৌয়ের ঘরেই তিনটা বাচ্চা। বাকি দুটো বিয়ে তিনি দুইজন বিধবাকে করেছে।

বছর দশেক আগে দাসে কান্দিতে এক হিন্দু পরিবারের ভারত চলে যাবার সময় তাদের কাছ থেকে খুবই কম দামে এক বিঘা জলাশয়ের মত যায়গা কিনে রেখছিলো তার জমানো টাকা দিয়ে। কে জানতো সেই এক বিঘা জলাশয়ে লুকিয়ে আছে এবাদ আলীর ভাগ্য। সরকার ঢাকা ওয়াসার পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য নারায়নগঞ্জের দাসের কান্দিতে যে জমি অধিগ্রহণ করেছিল তার জমিটিও ঐ অধিগ্রহণের আওতায় পড়ে যায়। সেখান থেকে মোটা অংকের টাকা পেয়ে যায় এবাদ আলী।

একসময় মাদ্রাসার বড় হুজুরের সাথে জেলায় জেলায় ওয়াজ করতে যেতো এবাদ আলী। সেখান থেকে আস্তে আস্তে রপ্ত করে নিয়েছিলো ওয়াজের সকল কায়দা কানুন। এজন্য তাকে বহু পরিশ্রম করতে হয়েছে জীবনে। তীব্র শীতের রাত, মশার কামড়, ভ্রমনের ক্লান্তি সহ আরো কত কি। তবে বড় হুজুরের ইন্তেকালের পরে তার ভাগ্য আরো প্রসন্ন হয়ে যায়। এতদিন যে সব এলাকায় তারা বাৎসরিক ওয়াজ মাহফেল করতো সেইসব এলাকার ওয়াজ মাহফেলের প্রধান বক্তা এখন এবাদ। প্রথম প্রথম বড় হুজুরের কথা বলেই ওয়াজের মজলিসে আগত মুসল্লীদের চোখ ভিজিয়ে দিতে পারতো দীর্ঘ মোনাজাত দিয়ে। ওয়াজের বয়ান দিয়ে যে যতো বেশি মানুষের চোখ অশ্রুসিক্ত করতে পারে তার ততো ডিমান্ড বেশি এ লাইনে।

- দেখুন ভায়েরা আামার গত বচ্ছর আমার বেহেস্তবাসী ওস্তাদ হুজুর কেবলা আপনাদের মাঝে এসে দ্বিনের দাওয়াত দিয়ে গেছে অথচ তিনি আজ কবরে শুয়ে। তিনি নিশ্চয়ই কবর থেকে জান্নাতের সুবাস পাইতেছে। সুতরাং টাকা পয়শা বাড়ি গাড়ি দিয়ে কি হবে? মরলে সাড়ে তিন হাত যায়গা ছাড়া । প্রথম দিকে এসব বলেই ওয়াজের বয়ান শুরু করতো এবাদ আলী। হাজেরানে মজলিসের দিল নরম হলেই এন্তোজামিয়া কমিটির জন্য চাঁদা উত্তোলনের বয়ান শুরু করে।

বর্তমানে তার চাইতে কেউ বেশি চাঁদা তুলতে পারেনা। কিশোরগঞ্জের গত মাহাফেলে দশ লাখ টাকা তুলে এ লাইনে নতুন রেকর্ড গড়েছে এবাদ আলী। তার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়েছে দেশের আনাচে কানাচে। সোস্যাল মিডিয়ায়ও ভাইরাল। দুর পাল্লার বাসে উঠলে এখন তার ওয়াজ বাজিয়ে ড্রাইভার গাড়ি চালায়। বছরে সারাদেশে এক দেড়শো মাহাফিলে সে প্রধান বক্তা।

বড় হুজুরের ছোট মেয়েকে বিয়ে করার কারণে বড় হুজুরের নাম ডাক অটোমেটিক এসে পড়েছে তার নামের সাথে। বিপুল পয়সার মালিক হয়েছে সে বহু আগে। এখন তার নেশা দেশ জুড়ে মাদ্রাসা বানানো। বর্তমানে সে ছয়টা মাদ্রাসার মালিক। এর মধ্যে দুটো মহিলা মাদ্রাসাও আছে। ছোট দুই বিবি দুই মহিলা মাদ্রাসার দায়িত্বে। বিপুল পরিমাণ দান খয়রাত, কুরবানীর পশুর চামড়া কালেকশন হয় মাদ্রাসা গুলোর নামে। একেক বছর একেক স্ত্রীকে সাথে নিয়ে হজ্জ-ওমরাহ করতে মক্কায় যান। এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সখ্যতাও চোখে পড়ার মতো। অন্য এলাকার কেউ এসে এখন আর কোরবানির চামড়া নিয়ে যেতে পারেনা। পাড়ার মাস্তানরাই প্রটেকশন দেয়।

এবাদ আলীর শুক্রবারের শিডিউল বিরাট দামি। শুক্রবার তিনি বিভিন্ন নির্মাণাধীন মসজিদে জুমার খুতবা দিতে যায়। খুতবার বয়ানে দু-চার লাইন কোরআন হাদিস শুনিয়ে শুরু মসজিদ নির্মানের চাঁদা তোলার বয়ান। মুসল্লিদের ইমোশনাল করে চাঁদা তুলতে তিনি এখন সিদ্ধহস্ত। এখন আর তিনি নির্দিষ্ট টাকায় খতিব হিসাবে হিসেবে কোথাও যায় না। সময় বদলে গেছে। আদায়কৃত টাকার ফোরটি পার্সেন্ট তাকে দিতে হবে। তাতে মসজিদ কমিটিরও লাভ তারও লাভ।

ইদানিং এবাদ আলী স্বপ্ন দেখেন আরো বড়ো কিছুর। এখন তিনি এমপি হওয়ার শখ পুষেছেন মনের ভিতরে। একটা ধর্মভিত্তিক দল থেকে মনোনায়ন পাওয়ার সবকিছু ঠিক করেও ফেলেছেন। সরকারি দলের মিত্র দল হিসেবে গাঁটছড়া বেঁধেছে দলটি বহু আগে। কোনরকম আসন ভাগাভাগি হলে ধর্মভিত্তিক এই দলটি ইবাদ আলীর এই আসনটি এবার পেয়ে যাবে। সব সব অংক ঠিক থাকলে এমপি হওয়া ঠ্যাকায় কে?

কিন্তু বাদ সাধলো হঠাৎ একটি ঘটনায়। উনার এক মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র ঐ মাদ্রাসার এক শিক্ষক কতৃক বলাৎকারের শিকার হয়েছে সম্প্রতি। বাচ্চা ছাত্রটি পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে- প্রতি রাতে ওই হুজুর তার রুমে নিয়ে তাকে বলাৎকার করে। দেশজুড়ে ঘটনাটি হইচই ফেলে দিয়েছে। বিষয়টি সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। এখন ইবাদ আলীর বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। মাদ্রাসার মালিক হিসাবে তিনি দায় এড়াতে পারেন না। তাই মাদ্রাসায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে এলাকাবাসী। এই মামলা চাপা দিতে ২০ লাখ টাকা খরচও হয়েছে এবাদ আলীর।


ঢাকা,
০৩ ভাদ্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।

ছবিঃ অন্তর্জাল।


বিঃদ্রঃ এই গল্পের সকল চরিত্র, স্থান, কাল পাত্র সম্পুর্ন কাল্পনিক,জীবিত বা মৃত কারো সাথে হুবহু বা আংশিক মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১০:৫৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×