somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাত্যহীকি-৬

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




(এক)
বাসার ফ্লোর মোছার জন্য ছুটা বুয়া ফরিদা প্রতিদিন সকাল নয়টায় এসে ঘর মুছে দিয়ে যায়। বয়স পয়ত্রিশ ছত্রিশ হবে। ঝুঁকে পড়ে ফ্লোর মোছার সময় ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে ক্লিভেজ দেখা যায়। ছুটির দিন সোফায় বসে পত্রিকা পড়ার সময় আমারো একদিন চোখে পড়েছে। আমি মুখের সামনে পত্রিকা আরো উঁচু করে নিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছি।
গত তিন দিন আগে ফরিদা আমারা বউকে এসে বলেছে;
- আফা, এই বেল্ডিংয়ে আর কাজ করুম না, নিচের বাসার সাহেবে বিরাট লুইচ্চা। আইজকা একদম যাইত্তা ধরছে।
নিচের বাসার ভদ্রলোক রিটায়ার্ড আমলা। ষোলশো বর্গফুটের নিজের ফ্ল্যাটে থাকেন। আমার বউয়ের কাছে ফরিদা বলে গেছে এই নিয়ে তিন দিন তার গায়ে হাত দিয়েছে। আজকে কোন মতে ছুটে আসছে।
আমার বউ বিরাট টেনশনে আছে। ঠান্ডায় তার এ্যাজমা বাড়ে।

(দুই)
ফারুক ভাইয়ের নিউমার্কেটে ক্রোকারিজের দোকান আছে উনার একছেলে এক মেয়ে। পরিবারে সাথে একটা ডিভোর্সী বোনও থাকে। ছেলে মেয়েদের আরবি শিক্ষা দেওয়ার জন্য মসজিদের মোয়াজ্জেন মোবারক আলীকে ঠিক করেছে। প্রতিদিন আসরের পরে সে আরবি পড়ায়।
হঠাৎ ফারুক ভাইয়ের বোন প্রেগন্যান্ট হয়ে যাওয়ায় গত সপ্তায় মোবারক আলী সাথে ঐ বোনটার বিয়ে হয়েছে। ফারুক ভাই অন্য এলাকায় চলে যাবে।
বিকেলে আমি আর ফারুক ভাই বাইক নিয়ে আশেপাশের এলাকায় রাস্তায়। "টু-লেট" লেখা বাসার সামনে বাইক থামিয়ে কখনো দারোয়ানের কাছ থেকে কখনো বাড়িওয়ালার মোবাইল নম্বরে কল করে বাসা ভাড়ার তথ্য নিয়েছি। পছন্দ মতো বাসা পায়নি ফারুক ভাই।

(তিন)
শেলী ভাবী একটা বেসরকারি স্কুলে খন্ডকালীন চাকরি করে। উনার হাজব্যান্ড বিডিআরে চাকরি করতো। দশ বছর আগে সাতক্ষীরার বর্ডারে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। একটা মেয়ে আছে। মেয়েটা এবার ক্লাস নাইনে পড়ে।
স্কুলের হেডমাস্টার প্রথম থেকেই শেলী ভাবীর দিকে কুনজর দিয়ে আসছে।
এবার লাইব্রেরিতে একা পেয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে হঠাৎ দপ্তরের উপস্থিত হওয়ায় বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত গড়িয়েছে। হেডমাস্টারের চাকরি চলে গেছে। শেলী ভাবীও আর ওখানে চাকরি করার পরিবেশ পাচ্ছে না।
সহকর্মী শিক্ষক থেকে ছাত্রছাত্রীরা পর্যন্ত তাকে দেখলেই এই কাহিনী নিয়ে আলোচনা করে, টিটকারিও মারে। শেলী ভাবি আমাকে বলেছে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে তার বাপের বাড়ি চলে যাবে আগামী মাসে।

(চার)
ভূমি অফিসের কেরানী আব্দুল মালেক সাহেব। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার রামমোহোন। থুতনির নিচে এক মুঠো দাড়ি আছে। সারাক্ষণ পান খায়।আমি তাকে কাকু বলে ডাকি।
ঢাকার এই এলাকায় তার একটা দোতলা বাড়ি আছে। পাঁচটা ছেলে উনার। একটাও মেয়ে নাই। একদম ছোট ছোট ছেলেকে হাফেজ বানানোর উদ্দেশ্য কুমিল্লার একটা হেফজখানায় দিয়েছিলো।
গতকাল রাত দশটায় মালেক কাকু চাচিকে নিয়ে কুমিল্লার যাবার জন্য রেডি।
ছেলেটা মাদ্রাসার এক শিক্ষক কতৃক বলাৎকারের শিকার হয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এখনো জ্ঞান ফেরেনি। রক্ত লাগবে দুই ব্যাগ। আমার রক্তের গ্রুপ ছেলের রক্তের গ্রুপের সাথে মিলে গেছে তাই আমাকে রিকোয়েস্ট করেছিলো সাথে যাবার জন্য।
এই কনকনে ঠান্ডার মধ্যে কুমিল্লা থেকে ঘুরে এসে আমার বুকে কফ জমে গেছে এখন খকখক কাশছি। বউ হেব্বি বিরক্ত।

(পাঁচ)
মহুয়া আমার স্কুলের বান্ধবী। একসাথে পড়ালেখা করেছি মাষ্টার্স পর্যন্ত। এখন সে একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করে। ওর স্বামীও একটা বিদেশি এনজিওর বড় কর্মকর্তা। বহু বছরের সংসার হলেও এখনো কোনো সন্তান হয়নি। কার যে সমস্যা সেটা মহুয়াও আমাকে কোনদিন বলেনি।
মহুয়া উত্তরায় থাকে। আমার সাথে সরাসরি দেখা হয় না অনেকদিন। যোগাযোগ কথাবার্তা যা হয় সবই মোবাইলে।
দিন দশেক আগে মহুয়া জরুরী ভাবে দেখা করার জন্য ডেকেছিল পান্থপথের একটা হসপিটালে। মহুয়া ওর শাখার ম্যানেজারের সাথে শারিরীক সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে। খবর পেয়ে ম্যানেজারেে বউ অফিসে এসে লংকা কান্ড করেছে।
মহুয়া ইনডিসিশনে আছে। এ্যাভোর্সন করবে না স্বামীকে ডিভোর্স দেবে? ইস্যুটা ম্যানেজারের। আমি ডিভোর্সের পরামর্শ দিয়েছি।
বাসায় এসে নিজের কাছেই খটকা লাগছে। ভুল না সঠিক পরামর্শ দিলাম।

(ছয়)
ডাক্তার পরেশ বিশ্বাসের সাথে পরিচয় ১৮ বছর আগে। তখন আমি ব্যাকে চাকরি করতাম। পোস্টিং ছিল সাভারে। ডাঃ পরেশ মেডিসিনের ডাক্তার। অত অল্প বয়সে দারুন ডাক্তারি করতো। তার চেম্বারে গিয়ে প্রায়ই আড্ডা দিতাম। আমি জানতাম সে প্রচন্ড রকমের সেক্স মেনিয়াক। আড্ডায় বসলেই টপিকে অবধারিত ভাবে সেক্স নিয়ে আসতো। আমি চাকরি ছাড়ার পর বহু বছর তার সাথে কোন যোগাযোগই ছিল না।
মাস দুয়েক আগে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে সামনে তার সাথে দেখা। আমার এক আত্মীয় ওখানে সাজা খাটছে। তার সাথে দেখা করতে আমি ওখানে গিয়েছিলাম। ডাঃ পরেশকে দেখে প্রথমে আমি চিনতেই পারিনি। অনেক বছর সাজা খেটে ঐ দিন পরেশ বাবু মুক্তি পেয়েছিলো।
একজন নার্সের স্বামী ও সন্তানের পিতৃত্ব দাবি করে নারী ও শিশু আদালতে দায়ের করা মামলায় এতো বছর জেল খাটিয়েছে।
ডাঃ পরেশ আবারো চেম্বার খুলে ডাক্তারী শুরু করেছে। আমাকে আড্ডার জন্য ইনভাইট করেছে আগামী সপ্তাহে।

ঢাকা
১৩ মাঘ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।

ছবিঃ অন্তর্জাল।



সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:২৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×