somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের চেয়ে নীতি বড়...

২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুদায়বিয়া গ্রাম।
মক্কা হতে ৯ মাইল দূরে অবস্থিত সে গ্রাম।
সেখানে বসেছে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। একপক্ষে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)সহ তাঁর বিশিষ্ট সাহাবীরা, আর অপরপক্ষে রয়েছে মক্কার প্রভাবশালী মুশরিক কুরাইশরা।
মুসলমান ও মুশরিকদের মধ্যে সন্ধি স্থাপনের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ বৈঠক। ইতোমধ্যে সন্ধির যাবতীয় শর্ত চূড়ান্ত করা হয়ে গেছে। তবে সন্ধিটি তখনও লেখা হয়নি।
এমন সময় আবু জান্দাল নামক এক মুসলমান এসে হাজির হল বৈঠক। ক্ষত বিক্ষত তার দেহ। সারা গায়ে পাশবিক নির্যাতনের চিহ্ন। হাতে-পায়ে শিকল পরা। লোকটি খুবই কাতর ও শ্রান্ত।
আবু জান্দাল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।
এ জন্য মক্কার মুশরিকরা তাকে প্রচণ্ড মারধর করেছে। তার আত্মীয়-স্বজনরাও ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার জন্য তাকে খুব চাপ দিয়েছে এবং নির্যাতনে তাকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। আবু জান্দাল এ নির্যাতন আর সইতে পারছিলেন না। সে শুনল যে হুদায়বিয়া গ্রামে মহানবী (সা) তাঁর ১৪০০ সাহাবীসহ অবস্থান করছেন। আবু জান্দাল ভাবল কোনক্রমে নবীজির নিকট গিয়ে পৌঁছতে পারলেই তো সে মুক্তি পেয়ে যাবে। তাই আবু জান্দাল হুদায়বিয়া গিয়ে হাজির হল। নবীজির কাছে সে তার উপর নির্যাতন ও অত্যাচারের সব কাহিনী বর্ণনা করল। আবু জান্দালের মর্মান্তিক কাহিনী শুনে সাহাবীদের হৃদয়ে প্রচণ্ড আঘাত লাগল।
আবু জান্দালের পিতা আবু সুহাইল উপস্থিত ছিল সেখানে। সেও ছিল ইসলাম বিরোধী। তাই পুত্রকে এ অবস্থায় দেখে সে যারপর নাই ক্ষুদ্ধ হল।
প্রচণ্ড রাগে সুহাইল পুত্রের গালে বেশ জোরে কয়েকটা চপেটাঘাত বসিয়ে দিল এবং তাকে গালিগালাজ করল। সুহাইল আবু জান্দালকে তার হাতে তুলে দেবার জন্য মহানবীর (সা) নিকট দাবি জানাল। আবু সুহাইলের দাবিতে নবী (সা) পড়লেন সংকটে।
সুহাইল জানাল, হুদায়বিয়ার সন্ধি মতে আবু জান্দালকে আপনারা কোনক্রমেই আটকাতে পারেন না। আবু জান্দালকে অবশ্যই ফেরত
দিতে হবে।
উল্লেখ্য যে, হুদায়বিয়ার সন্ধির একটি শর্ত ছিল মক্কায় কোন লোক মুসলমান হয়ে মুসলমানদের আশ্রয়ে গেলে তাকে মক্কাবাসীর হাতে ফিরিয়ে
দিতে হবে।
তবে সন্ধিটি তখনও লেখা হয়নি। যদিও সন্ধির যাবতীয় শর্তাদি নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। ফলে আবু সুহাইল মওকা পেয়ে গেল।
তাই আবু সুহাইল বলল, চুক্তির শর্ত পাকাপাকি হয়ে গেছে, সুতরাং আবু জান্দালকে আপনারা রাখতে পারেন না কোনভাবেই।
এনিয়ে মহানবী (সা) ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন।
একদিকে সন্ধির শর্ত, অন্যদিকে একজন মুসলমানকে কাফিরদের হাতে নিশ্চিত বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া। সন্ধির শর্তাবলী যেহেতু আগেই ঠিকঠাক হয়ে গেছে, সে মোতাবেক শর্ত পালন করাই এখন বড় কথা। আবু জান্দাল সব কথা শুনছিল। সে বুঝতে পারল যে, মহানবী (সা) তাকে কাফেরদের হাতেই তুলে দেবেন। তাই সে প্রচণ্ডভাবে কান্না শুরু করে দিল।
কাঁদতে কাঁদতে আবু জান্দাল বলল,
আমি মুসলমান হয়ে আপনাদের নিকট আশ্রয় চেয়েছি আর আপনারা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। আমাকে যে কত ভয়ংকর অত্যাচার সহ্য করতে হবে তাতো আপনারা বুঝতে পারেন।
আবু জান্দালের মর্মস্পর্শী কথা সবার মনে দারুণ আঘাত হানল। এতে সাহাবীদের মন বিদ্রোহী হয়ে উঠতে চাইল। তারা চায় আবু জান্দালকে তারা কাফিরদের হাতে তুলে দেবে না। প্রয়োজন হলে লড়বে, তবুও কাফিরদের অন্যায় আচরণ মেনে নেবে না।
কিন্তু রাসূল (সা) মুখের দিকে চেয়ে মুসলমানরা আর কিছুই বলতে পারল না।
অবশেষে আবু জান্দালকে তার পিতা সুহাইলের হাতে তুলে দেয়া হল। আবু জান্দালের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। তার বুক ফেটে যাচ্ছে। তবুও তাকে ফিরে যেতে হচ্ছে।
বিদায়ের এই সময়ে নবী (সা) বললেন, আবু জান্দাল, আল্লাহর নামে ধৈর্য ধর, মহান আল্লাহই তোমার মুক্তির ব্যবস্থা করবেন।
আবু জান্দাল অশ্রু মুছে ফেলল। আল্লাহর উপর ভরসা করে রওনা হলো মক্কার দিকে।
এ সময় মুসলমানদের দু’চোখে অশ্রু নেমে এল। মহানবীর হৃদয়ের গভীরেও ঝরছিল অশ্রু।
শুধুমাত্র সন্ধির শর্ত রক্ষা করতে গিয়ে মহানবী (সা) একজন বিপন্ন মানুষকেও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিলেন। তিনি শর্ত লংঘন করতে পারেন না। জীবনের চেয়েও মূল্যবান এই সন্ধি।
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×