somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন হচ্ছে এটা?

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিষয়টা নিয়ে অনেক অনেক লেখালেখি, অনেক কথা হয়েছে বরং যা হবার তার চেয়ে বেশি হয়েছে, কিন্তু যা লেখা দরকার ছিল, যা বলা দরকার ছিলা তা এখনও লেখা হয়নি বা বলা হয়নি। সেই তাগিদ থেকে কিছুটা লেখার প্রয়াস চালাচ্ছি।
পহেলা বৈশাখ এমন একটা উৎসব যা সম্পূর্ণরূপে ধর্মের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে কিন্তু ধর্ম দ্বারা চরম ভাবে আক্রান্ত হয়ে পালন করা হয়ে থাকে। এটি ধর্ম দ্বারা কতটা আক্রান্ত যারা অন্ত:জালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত বিচরণ করে থাকেন তারা বিষয়টি ভালভাবে অবলোকন করেছেন।
এ দেশে পহেলা বৈশাখ বা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উৎযাপন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানান অঘটন ঘটতে দেখা গেছে। সে হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যা ঘটল তা নতুন নয়। ঘটনা বা অঘটন যাই বলি না কেন সেটা যেমন নতুন নয় তেমনি ভাবে এই ঘটনার যেভাবে প্রতিবাদ করা হল তাও তেমন নতুন নয়। এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী; নারী পুরুষ নির্বিশেষে তাদের শাস্তির জন্য সকলে সমস্বরে প্রতিবাদ করেছে বা তাদের শাস্তি দাবী করেছে। লিটন দাশ বাদে সকলের প্রতিবাদের ভাষা ছিল প্রায় অভিন্ন রকম। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই প্রতিবাদের ভাষা ছিল পেশা ও পোশাকি নির্ভর। এটা হতে পারে এত বড় একটা পাপ কর্ম হয়ে গেলো তা থেকে নির্ভার থাকার তাগিদ থেকে এটা করতে হয়েছে।
এটা যারা ঘটিয়েছে সরাসরি তাদেরকে হয়তোবা দোষ দিয়ে কঠোর শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। তবে শাস্তি ও দোষের এই ধারনা বা চর্চার সাথে আমি কোন ভাবেই সহমত নই। সহমত না হওয়ার কারণ খুব সহজ, কারণ দোষী প্রমাণ করে শাস্তি দিয়ে ঘটনা ঘটার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা সম্ভব নয়। শাস্তির বিধান অপরাধের মাত্রা কমিয়েছে বলে এই রকম প্রমাণ আপনি খুব একটা দেখাতে পারবেন না। যেখানে অপরাধের শাস্তির বিধান থাকে সেখানে অপরাধের প্রমাণ লোপাট করার নানান বিধানও আবিষ্কৃত হয়ে থাকে। তাছাড়া শাস্তির বিধান একধরনের নৈতিক অপরাধ, যেটার মাত্রা যতই কমবে মানুষ তত সভ্য হয়েছে বলে প্রতীয়মান হবে।
কোথাও কোথাও পড়লাম এই ধরনের সমস্যা যাতে আর কোন সন্তান না ঘটায় তার জন্য প্রত্যেক মা বাবাকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এই ধরনের পরামর্শ আমার কাছে খুবই হাস্যকর মনে হয়েছে। এই অপরাধের তাগিদ তাদের মধ্যে যখন সৃষ্টি হয়েছে তখনই কেবল তারা অপরাধটা করেতে পেরেছে। সুতরাং যে অর্থে এখানে অপরাধীদের মা-বাবাকে সচেতন হতে বলা হয়েছে সেই অর্থে মা-বাবা যতই সচেতন হওন না কেন এই অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব নয়। যে দেশে শুধুমাত্র লেখালেখির জন্য মানুষকে হত্যা করা হয় সে দেশে মা-বাবাকে সচেতন হতে বলা মানে মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া।
আমিতো মনে করি যেভাবে এদেশের মানুষেরা জৈবিক চাহিদাকে অবদমিত করে রাখে সেই তুলনায় যৌন সংক্রান্ত অপরাধের মাত্রা অনেক কম হয়ে থাকে। প্রেম জনিত যৌন সম্পর্ককে যেখানে চরম অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে সেই তুলনায় সত্যিকার অর্থেই এদেশে যৌন সম্পর্কিত অপরাধের মাত্রা সন্দেহাতীতভাবে কম হয়ে থাকে। যৌন সম্পর্কিত অপরাধের ধারনা বিষয়ে ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। যে কারণে চরম ক্ষুধার্ত মানুষকে অন্নের ব্যবস্থা না করে খাবার চুরির অপরাধে শাস্তি দেওয়াটা চরম অপরাধ। সে কারণে অবদমিত যৌন চাহিদার কারণে যৌন বিষয়ক অপরাধের কারণে কাউকে শাস্তি দেওয়টা বাঞ্ছনিয় নয়। অবদমিত যৌন চাহিদায় যৌন অপরাধ করতে প্রোরোচিত করে বা বাধ্য করে। শারীরিক সক্ষমতার দিক থেকে এগিয়ে থাকা এবং জৈবিক ক্ষমতার দিক থেকে পিছিয়ে থাকা পুরুষেরা নারীদের উপর পেশি শক্তি আরোপের মাধ্যমে প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌন প্রথা চালুর মাধ্যমে নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করেছে মাত্র।
পুরুষদের এই হীনতা দূরীকরণে মাধ্যমে যখন প্রকৃতি সম্মত যৌন চর্চার প্রচলন হবে তখনই কেবল যৌন সম্পর্কিত অপরাধের মাত্রা কমবে। তাছাড়া মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বতঃস্ফূর্ত বিনোদন পালন উন্মুক্ত না করা হলে এহেন অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটবে সেটাই স্বাভাবিক।
উপরোক্ত অনুচ্ছেদের সাথে নানান অনুভূতির কারণে দ্বিমত করার সুযোগ রয়েছে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটা সংবাদ যেখানে ওয়েব সাইটের উদ্ধৃতি দিয়ে দু’টি পরিসংখ্যান দেখানো হয়েছে। যে পরিসংখ্যান দেখলে হয়তো আমার দেওয়া যুক্তির সাথে আপনার একমত হবার ইচ্ছে করবে যদি না আপনি এই সংবাদটিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত মনে না করেন। যা নিচে দেখানো হলো।



সংবাদটির লিংক : Click This Link
সন্দেহ নেই মুসলিম দেশগুলোতে যৌন ইচ্ছাকে সবচেয়ে বেশী অবদমন করা হয়ে থাকে। সেই দীর্ঘ অবদমনের ফলেই পর্ণো সাইট পরিদর্শনের এই চিত্র।
বাংলাদেশে বা মুসলিম দেশে বা এই উপমহাদেশে শৈশব থেকে একজন শিশু বিভিন্ন উৎস থেকে যৌনতা বিষয়ে এই শিক্ষা পেয়ে থাকে যে, প্রকৃতি প্রদত্ত এই বৈশিষ্ট্য শুধুমাত্র বিশেষ অনুশাসনের মাধ্যমেই ভোগ করতে হয় এবং তার অন্যথা হলে মহাপাপ হয়। শুধু তাই নয় যৌনতা একটি গোপন বিষয় এবং বিবাহ ছাড়া কখনও ভোগ করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে বিবাহ একটি জটিল বিষয়; বিবাহের সাথে কিছু সুন্দর/অসুন্দর চর্চা বা নীতি বা প্রথা বা শর্ত সহ নানান বিষয় জড়িত রয়েছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই 12/14 বছর থেকে নারী/পুরুষ প্রত্যেক মানুষেরই জীবনে শুরু হয় চরম যৌন ইচ্ছা দমন অভ্যাস। কখনও কখনও কেউ কেউ এই অবদমনের বিস্ফোরণ ঘটায় রাস্তা বা বাসে।
এই বিস্ফোরণকারীকে আমরা নানান ভাবে শাস্তি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। দলে দলে রাস্তায় নামি। কিন্তু আমরা খুব সহজে ভুলে যাই, এমনকি আমরা যারা ওদের বিস্ফোরকদের শাস্তির দাবীতে রাস্তায় নামি বা ছিঃ ছিঃ করি তারা প্রায় প্রত্যেকেই বা অনেকেই যৌবনে এই অবদমিত ইচ্ছাকে নানান পদ্ধতির কোন এক বা একাধিক পদ্ধতিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছি।
সুতরাং এই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য রাস্তায় নামা বা কোন একটি সংগঠনের নামে অনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করা স্ব-বিরোধি ভূমিকার রাখার মাধ্যমে সমস্যা ও প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার নামান্তর বই কিছু নয়।
ধন্যবাদ।


আলমগীর কবির
25 April 2015
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×