কবি গুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জীবনে যাযাবর নামের এক লৌকিক আচার্য কবিকে জিঙ্গেস করে ছিলেন,
"সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে" কবিতাটা যদি আপনি এখন লেখতেন তাহলে কি এভাবেই লেখতেন?
কবিগুরু সেদিন বলেছিলেন সার্থক কথাটা কেটে দিতাম। কবিগুরুর আঁশি বছরের অভিজ্ঞতা তাঁহাকে এই কথা বলাতে বাধ্য করেছিলেন।
একটা কথা প্রচলিত আছে "হুজুগে বাঙালী"। আসলে কথাটা কতটুকু সত্যি এটার ব্যখ্যা থেকে দুরে থেকেও একটা কথা সত্যি প্রমানিত হয়, বাঙালী সহজে রক্তচক্ষু প্রদর্শণকারীকে ভুলে যায়, মিত্রকে পর করে তাঁর বুকে আঘাত করতে দ্বিধা করে না।
তাঁরা ঘৃনা করতে ভুলে ১৭৫৭ সালের মীর জাফরের রক্তের পিন্ড গুলোকে।
তাঁরা অস্বীকার করে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের স্মারকলিপি পাঠকারীকে।
তাঁরা ভুলে যায় ২৫ শে ফেব্রুয়ারি , ৫ মে এর মত ঘটনা।
যা কিছুদিন আগেও তাহাদের অন্তরে ব্যথা তৈরি করতো আজ সে তাঁরাই মুখের উপড় বলে দেয়, দোষ না থাকলে কেন এতগুলো মানুষকে অযথা হত্যা করবে?
হয়তো মৃত ব্যক্তিরা ইতিহাস হয়ে বেঁচে গেল কিন্তু আমরা তো এখনো জীবিত আছি। আমাদের কেউ হঠাৎ উধাও হয়ে কয়েকদিন খবরের কাগজে ঘুরাফেরা করে তারপর বার্ষিক লিপিতে যুক্ত হয় স্মরনীকায়। কেউ ময়লার গাড়িতে করে সাড়া জীবনের জন্য যাত্রা করে না ফেরার দেশে, আবার কারো ময়লার বস্তায় সাড়া জীবনের সমাপ্তি ঘটে ।
কারো জীবনের বিলুপ্তি ঘটে পালিত মল্লুক রক্ষীদের বুলেটের নিষ্ঠুর আঘাতে, কারো ভবিষ্যৎ সাড়াজীবন চার দেওয়ালে বন্ধী।
জাতীয়তাবোধ এখন অন্ধকার দেওয়ালের কালো রেখা। মানুষ এখন কারো পরিচয় নয়, বাঙালী বললে তো দন্ডনীয় অপরাধ। পরিচয় এখন বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত। কেউ ধর্মনিরপেক্ষ, কেই ধর্মদ্রোহী, কেউ ধর্মালম্বী, কেউ মধ্যপন্থী।
ধর্মদ্রোহী আর ধর্মনিরপেক্ষ হলে ভাল ভাবে বাঁচার একটা উপায় আছে কিন্তু ধর্মালম্বী আর ডানপন্থীরা নিষিদ্ধ জঙ্গী এদেশে।
আর আমার মত মানুষ এবং বাঙালী যারা, তাঁরা প্রশ্ন খুঁজে আমরা কি দেশের নাগরিক নাকি দাস?
আমাদের জন্ম কি সার্থক?
আজ কবিগুরুর শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে খুব ইচ্ছে করছে " সার্থক কথাটা কেটে দিয়ে লিখে দেই,
"" জনম আমার জন্মেছি এই দেশে""