somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আলমগীর জনি
সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

গল্পঃ সুরুপা

০৪ ঠা মে, ২০১৯ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলার সাথে সাথে ইতুর কোমরে দুই হাত দিয়ে চাপ দিলো আরিয়ান। এমন কথা ছিল না। ইতু এখন যে অবস্থায় আছে সেখান থেকে আরিয়ানকে বাঁধা দেয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব না।ইতুর গায়ে তেমন কোন কাপড় নাই ।ট্রান্সপারেন্ট একটা নীল কাপড় আছে শুধু। এটা শাড়িও না আবার অন্য কোন পোশাকও না।তাই কাপড় বলতে হচ্ছে। আরিয়ান আর ইতু এই কাপড় সোনারগাঁও এর একটা তাঁত পল্লী থেকে কিনেছে। এই কাপড় আরিয়ান আর ইতু মিলেই কিনলেও এটা আরিয়ানের পছন্দ।
কাপড়টা দেখে ইতু বলেছিল, এত পাতলা কাপড়! সবই তো দেখা যাবে।
আরিয়ান উত্তর দিলো, দেখা আর না দেখার মাঝখানে যে একটা দেয়াল থাকে এই কাপড় সেই কাজটাই করবে। আর সবচেয়ে বড় কথা আমার আগের পোট্রেটে ঠিক এমনই একটা কাপড় কল্পনা করে এঁকেছিলাম আমি।
ইতু কিছু বলল না।তার এখন আরিয়ানের ক্যানভাস উত্তপ্ত করার নেশা। এই নেশায় অনেক সাহস লাগে। ইতুর সেই সাহস আছে।

আরিয়ান হক।একজন চিত্রশিল্পী। সেমি ন্যুড কিংবা ন্যুড ছবি এঁকে ভালোই নাম কুড়িয়েছেন ।ইতুর সাথে পরিচয় বিদেশে একটা আর্ট এক্সিবিশনে। সেখানে ট্রান্সপারেন্ট নীল কাপড়ে মোড়ানো এক নারীর পোট্রেট দেখে ইতু এক নজরে তাকিয়ে ছিল প্রায় ১ ঘন্টা। একটা মেয়ের দিকে এভাবে মুগ্ধভাবে তাকিয়ে থাকাটা স্বাভাবিক নয়। ইতু লেসবিয়ান নয় যে এভাবে একটা মেয়ে তাকে মুগ্ধ করতে পারে।ইতু শেষদিকে বুঝল আসলে এই ছবিটাই তাকে মুগ্ধ করেছে। ছবির মানুষটা নয়। এই ছবির মধ্যে আছে একই সাথে নারীর স্নিগ্ধ রূপ এবং উত্তপ্ত রূপ। ইতুর দাঁড়িয়ে থাকার প্রথম ৫ মিনিট পর থেকে এই ছবির শিল্পী আরিয়ান ইতুর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। ইতু দেখছে ক্যানভাসের মানুষটাকে আর আরিয়ান দেখছে কিভাবে একজন সুরুপা আরেক সুরুপার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে।
হঠাত ইতু খেয়াল করল তার পাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক তার পাশেই। ইতু কিছু বলতে চাইল তার আগেই আরিয়ান প্রশ্ন করলেন আর তাদের কথাবার্তা চলছিল।

-কি দেখছেন?
-আপনি বাঙালি!
-হুম। আমি বাঙালি এবং বাংলাদেশিও।
-বাহ! ভালোই হলো। বিদেশে এসে এমন জায়গায় কাউকে পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার।কি সুন্দর ছবিটা দেখেছেন?
-ছবিটা সুন্দর নাকি ছবির মানুষটা?
-মানুষ সব সময় সুন্দর। মানুষকে অসুন্দর বলার মত যোগ্যতা মানুষকে দেয়া হয় নি। আমি ছবিটার কথাই বলছি।
-ভালো বললেন তো! আসলেই ছবিটা সুন্দর হয়েছে।
-ছবির নামটাও সুন্দর।সুরুপা।
-হুম। সুরুপা মানে কি জানেন?
-সু মানে তো ভালো। আর রুপা মানে কি ?
-রুপা মানে সম্ভবত সুন্দর। তাহলে কি দাঁড়ায়? ভালো সুন্দর? হা হা হা।
-ও মাই গড! এই ছবির শিল্পী তো আমাদের দেশেরই একজন।
-হ্যাঁ । আরিয়ান হক।
-ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হলে ভালো হত।
-কেন কি করতেন?
-আমার নিজের এমন একটা পোট্রেট করাতাম।
-দেখি আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায় কিনা!
-সত্যি!
-হুম।
-আচ্ছা আপনার সাথেই তো পরিচিত হলাম না।
-আগে আপনার কথা বলুন।
-আমি ইতু। ইতু রহমান। ঢাকায় একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ছি। এখানে বাবা মায়ের সাথে সামার ভ্যাকেশনে বেড়াতে এসেছি। হোটেলের পাশেই এই এক্সিবিশন টা হচ্ছে ।আমার এসব আর্টিস্টিক জিনিসগুলো অসাধারণ লাগে। তাই সন্ধ্যার সময়টায় এখানে আসা।
-ও আচ্ছা। ভালোই লাগল দেশের কাউকে এখানে দেখে।
-আপনার কথা তো বললেন না?
-আমিই আরিয়ান হক।

ইতু নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না সেদিন। কিন্ত এক্সবিশনের ব্যানারে দেখল আসলে ইনিই আরিয়ান হক। এরপর অনেকক্ষণ তাদের কথা চলছিল ।ইতু বলল, ঢাকায় ফিরলে তাদের দেখা হবে।এরপর ঢাকায় এসে তারা কয়েকবারই দেখা করেছে।ইতু ঘুরে ফিরে তার এমন একটা পোট্রেট চাই এটা বলল। আরিয়ান তাকে কিছু শর্ত দিল। এরমধ্যে একটা হচ্ছে ইতুকে সব কিছু রেখে শুধু ঐ নীল কাপড়টাই গায়ে জড়াতে হবে। ইতু সব শর্তে রাজি। তবে বারবার সাবধান করে দিয়েছে এটা শুধু ছবি আঁকা পর্যন্তই থাকবে। এরচেয়ে বেশি কিছু ইতু চায় না। আরিয়ান মুচকি হাসি দিয়ে বলল , আচ্ছা ঠিক আছে।

কিন্তু পোট্রেট আঁকা শেষে আরিয়ান ইতুর অনেক কাছে আসতে চাইল। ইতুর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছিল। ইতু না করছে বারবার। আরিয়ান বাঁধা মানছে না।
ইতু হঠাত রেগে বলল, আরিয়ান, এটা কিন্তু কথা ছিল না।
আরিয়ান বলল,ঠিক আছে আমি সরে যাচ্ছি।
ইতু পাশের রুমে চলে গেল। আরিয়ান তার ক্যানভাসের সামনে হতাশ হয়ে বসে আছে। এর আগে কতজনের ন্যুড ছবিও এঁকেছে সে।কিন্তু কোনদিন সে কাউকে ছুঁয়েও দেখে নি। কিন্তু ইতু অন্য সবার চেয়ে একদম আলাদা।ওর মধ্যে একটা শৈল্পিক ব্যাপার আছে। আরিয়ান চোখ বন্ধ করে বসে আছে। হঠাত অনুভব করল কেউ একজন তার শার্টের বোতাম খুলছে। আরিয়ান চোখ বন্ধ করেই বলল, কি করছ ইতু?
ইতু বলল,তুমি যা চাইছিলে।
আরিয়ান বলল, আমি এভাবে চাইনি।
ইতু বলল, কিভাবে?

আরিয়ান উঠে তার বেডরুমে চলে গেল।সেখান থেকে ওয়্যারড্রব থেকে একটা ব্যাগ বের করল। সেই ব্যাগ থেকে ইতুর গায়ে জড়ানো নীল ট্রান্সপারেন্ট কাপড়ের মত একটা কাপড় বের করল।তারপর ইতুকে বলল, এটা পরিয়ে দাও।
ইতু বলল, হুবহু আরেকটা কাপড় ?
আরিয়ান বলল, হ্যাঁ। আমি এর কয়দিন পর আবার সেখানে গিয়েছি।আরেকটা কাপড় কিনেছি। তবে শুধু কেনার জন্যই কিনেছি। আমার এতটুকুতে ইচ্ছা ছিল না কিংবা সবার সব ইচ্ছা থাকতে নাই। তবে লোভ সামলাতে পারছিলাম না। আমি শুধু তোমাকে চমকে দিতে চাইছিলাম।ইতু তুমি নিজ হাতে এই কাপড়টা আমাকে পরিয়ে দাও।ইতু আরিয়ানের সব পোশাক খুলে দিয়ে এই কাপড়ে তাকে জড়িয়ে দিলো।

-ইতু।
-হুম।
-আমাকে খুব বিশ্রী লাগছে তাই না?
-না মানে।
-সত্যটা বলো। তুমি আমাকে যেমন একজন কমপ্লিট মানুষ ভেবেছিলে আমি কি তাই? অবশ্যই না।

ইতু আমতা আমতা করছিল। আরিয়ান বলল, ইতু,তুমি তো বলছিলে মানুষ মাত্রই সুন্দর। আমি সুন্দর এটা বলতে এত ইতস্তত করছো কেন? একটা অঙ্গ না থাকলেই একজন মানুষ অসুন্দর?
ইতু জবাব দিচ্ছিল না।সে আসলে এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না। আরিয়ান বার বার প্রশ্ন করছিল। ইতু কিছু বলছে না। কিন্তু ইতুর বলা উচিত আসলেই সব মানুষই সুন্দর অথবা ইতুকে মানুষ হওয়ার জন্য আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৯ রাত ১০:০৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×