somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আলমগীর জনি
সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

গল্পঃ বাসর

০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি আর প্রীতু যখন ফাইনালি সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা ডিভোর্সের দিকে যাব এরপর থেকেই আমি আর প্রীতু আলাদা থাকি। আলাদা মানে আমাদের দুই রুমের বাসায় দুইজন পাশাপাশি দুইটা রুমে থাকা। যদিও এর আগে থেকেই আমরা আলাদাই থাকতাম।তবে যখন আমি ফাইনালি বলে দিলাম- ঠিক আছে তুমি ডিভোর্স চাইলে ডিভোর্সই হবে তবু আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ো না।তুমি যা ভাবছো আমি মোটেই এমন কিছু করি নি।

এতদিন প্রীতু আমাকে ইগ্নোর করতো এরপর থেকে কেন জানি প্রীতু অন্যরকম হয়ে গেল। এতদিন সকালে আমি ঘুম থেকে উঠলেও প্রীতু উঠত না। আমি মাঝেমধ্যে চা করে রেখে গেলেও এসে দেখতাম ও সেটা খায় নি। টেবিলের উপর যা যেভাবে রেখে যাই ঠিক সেভাবেই পড়ে থাকে সব।অভিমান আর ভুল-বোঝাবুঝিতে টেবিলের উপর পড়ে থাকে এক কাপ চা। চা ঠান্ডা হয়ে যায় কিন্তু প্রীতুর অবস্থার কোন উন্নতি হয় না । আমার খুব রাগ হত কিন্তু এই রাগটা দেখাতাম না।

অথচ আজকে ঘুম থেকে উঠেই দেখি টেবিলে নাস্তা রাখা। শুধু নাস্তা রাখা থাকলেও আমি অবাক হতাম অথচ প্রীতু নিজেই টেবিলের অন্যপাশে বসে নাস্তা শেষ করল।আমাকে কিছু বলছে না। আমিও কিছু বলছি না। একবার শুধু চোখাচোখি হলো। এরপর মনে হলো দুই জোড়া চোখ বেশ লজ্জা পেয়ে গেছে।

ঠিক একইভাবে দেখলাম রাতের খাবারও রেডি করে নিজেই টেবিলে বসে আছে। রাতে ও খাচ্ছে না। আমি একবার তাকিয়ে দেখলাম। দেখি ও খাবারের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। কিছু বলছে না। কেন জানি খুব মন মরা দেখাচ্ছে। আমি কিছু বলছি না ।বুঝতে পারছি না আসলে কি হচ্ছে। ব্যাপারটা আমি কেন জানি নিতে পারছিলাম না ।

ডিভোর্সের মত একটা কঠিন সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে নিবো সেটা আমি কখনোই ভাবি নি।আমি চেয়েছিলাম আমাদের সংসারটা টিকে থাকুক। কিন্তু ব্যাপারটা খুব জটিল হয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে আমি চাইনি এই ধরণের সম্পর্কটা টেনে নিয়ে যেতে।আমাকে কিছুই না বলতে দিয়ে শুধু একতরফা ভাবে অবন্তীকে নিয়ে আজেবাজে কথা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না।

প্রীতুর ধারণা আমার অফিসের কলিগ অবন্তীর সাথে আমার কোন সম্পর্ক আছে।অবন্তী শুধু আমার কলিগই নয়, আমার ইউনিভার্সিটির বেস্ট ফ্রেন্ডও।অবন্তীকে আমিই রিকমেন্ড করেছিলাম আমার অফিসে। মেয়েটার চাকুরীটা খুব প্রয়োজন ছিল।ওর বাবা খুব অসুস্থ ছিল। সপ্তাহে দুইদিন কিডনী ডায়ালাইসিস করতে হত। দুই বোনের মধ্যে অবন্তীই সবচেয়ে বড়।ছোটবোন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে।এবার ফাইনাল ইয়ারে।মেয়েটা দিন রাত টিউশনি করে চলে। ফ্যামিলিতেও কিছু দেয়।এদিকে পাশ করার পর অবন্তী কোন চাকুরী পাচ্ছিল না।ছোটবোনের কাছ থেকে ধার-দেনা নিয়ে চলছিল। ছোট-ভাইবোনের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার মত লজ্জা পৃথিবীতে আর কিছু নেই।সে সময় মনে হয় ইশ মরে যাওয়া কি সহজ! এদিক দিয়ে অবন্তী ওর বোনের থেকে মারাত্মক মানসিক সাপোর্ট পেয়েছিল। মানসিক সাপোর্ট ব্যাপারটা লাইফ সাপোর্টের মত।

বাবা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় চাকুরীটা ক্রাইং নিড হয়ে যায় ওর জন্য। অবন্তী আমাকে কখনো চাকুরীর কথা বলে নি। আমাকে বলেছিল ও বিসিএস দিবে তাই প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও ও অনেক জায়গায় ইন্টার্ভিউ দিয়েছিল আমি জানি। কিন্তু চাকুরী হয় নি।

আমার আর প্রীতুর বিয়ে হয় আমার চাকুরী শুরু করার পর । আমার ফুফার দিকের আত্মীয় ও।অন্য অনেক বাবার মত আমার বাবার বুড়ো বয়সে শখ জাগলো পুত্রবধূর মুখ দেখে মরবেন।ব্যাস, ফুফাকে বললে ফুফা প্রীতুর বাবাকে বলে রাজি করিয়ে ফেলেন খুব দ্রুতই।কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ঘরোয়া ভাবে বিয়ে দিয়ে দেন। কি এক অদ্ভুত ব্যাপার। বাবা ঠিকই ছেলের বউ দেখে মারা গেলেন। আমাদের বিয়ের রাতেই।যে সময়টায় আমার বউকে নিয়ে বাসর ঘরে থাকার কথা ছিল সেই সময়টায় আমি বাবার লাশ নিয়ে বসে ছিলাম সারারাত।আর আমার পাশে যে মানুষটা সারারাত পাশে ছিল সে হচ্ছে আমার নববধূ । কি অদ্ভুত সৌভাগ্য আমার।

ডিভোর্সের সিদ্ধান্তের দুইদিন পর আমি বাসা ছেড়ে চলে আসি। প্রীতুর আচরণ আমি নিতে পারছিলাম না।এভাবে প্রতিদিন ওর সামনে ডাইনিং টেবিলে মুখোমুখি হতে ভালো লাগছিল না। বাসা ছেড়ে আমি একটা হোটেলে গিয়ে উঠি।অফিস থেকে দুইদিনের ছুটি নিয়ে চলে গেলাম হোটেলে। অফিসের সাথে কন্টাক্ট থাকায় এই জায়গায় আমি বেশ কয়বারই এসেছি।মাঝেমধ্যে আমি আর প্রীতু এসে এখানে এসে থাকতাম।

হোটেলে গিয়ে আমি আমার ফোন বন্ধ করে দিলাম। আমার সাথে যোগাযোগের কোন কিছু রাখলাম না। আমি চাইছিলাম প্রীতু আমাকে খুঁজে না পাক। আমাকে খুঁজে না পেলে হয়তো আমাদের সম্পর্কটা টিকে যাবে। আমি হারিয়ে যাব তবু প্রীতুকে হারাতে চাইছিলাম না।

আমাকে অবাক করে দিয়ে ঠিক দুইদিন পর প্রীতু আর অবন্তীকে দেখি হোটেলে আমার রুমে এসে হাজির। দরজা নক করলে রুম সার্ভিস ভেবে দরজা খুলে আবার ঘুমিয়ে থাকলাম আমি। প্রীতু আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। প্রীতুর হাতের স্পর্শ পেয়ে আমি বুঝলাম খুব পরিচিত কোন স্পর্শ। আমার ভালো লাগছিল। স্বপ্ন ভেবে আমি চোখ মেলতে চাইছিলাম না। প্রীতুর গলার স্বর শুনে আমি তাকিয়ে দেখলাম আমার পাশ বসে আছে প্রীতু। একটু দূরে দাঁড়িয়ে অবন্তী। প্রীতুকে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। ওর চোখ জোড়া ছলছল করছিল। আমি ছুঁয়ে দিলেই ঝর্ণাধারার মত চোখ জোড়া বর্ষণ ঘটাবে এমন।

প্রীতু অবন্তীকে বের হওয়ার জন্য অনুরোধ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। আমিও কাঁদছি , প্রীতুও কাঁদছে ।কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করছি না। কি অদ্ভুত ,কি অপরুপ সে দৃশ্য।

অনেকক্ষণ পর প্রীতু অবন্তীকে ভেতরে ডেকে এনে সরি বলল। আর আমাকে কিছু বলল না।আমাকে হোটেলে থাকতে বলে প্রীতু অবন্তীকে নিয়ে বের হলো।আমাকে বলল রাতের আগে যাতে বাসায় না ফিরি।

রাত ১০ টায় প্রীতু আমাকে ফোন দিয়ে বাসায় ফিরতে বলল। বাসায় ফেরার পর দেখলাম প্রীতু ওর বিয়ের শাড়ি পরে বসে আছে। ওর খোঁপায় একটা বকুলের মালা। অনেকদিনের শুকিয়ে যাওয়া একটা বকুলের মালা। হঠাত মনে পড়ল আমার এনে দেয়া শেষ বকুলের মালা ছিল এটি। এরপর অনেকদিন আমাদের টানাপোড়ন চলছিল।

আমাদের রুমে ডুকতেই দেখি পুরো রুম কাঁচা ফুল দিয়ে সাজানো। মনে হচ্ছে কারো বাসর সাজানো হয়েছে। প্রীতুকে জিজ্ঞেস করলাম -কি হচ্ছে এসব?

প্রীতু হেসে উত্তর দিলো- আমাদের বাসর হয় নি মনে আছে ? আজ আমাদের বাসর হবে। তুমি নতুন জামাই আর আমি নতুন বউ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ রাত ১১:০৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×