somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"টুনু দাদার দোকানে আমার লাল পরী উড়ে"

২৫ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সর্বনাশা পদ্মা নদীই সফর মিয়ার শেষ সম্বল পৈতৃক ভিটাটিও কেড়ে নেয়। উপায় না পেয়ে,গফুর
চাচার পুরনো বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বাড়িটা মেরামত করে ছোট্ট একটা কুঁটির গড়ে তুলে সে। স্ত্রী রাহেলা আর পাঁচ বছরের মেয়ে অন্তুকে নিয়ে সংসার চালাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছিল সফর মিয়া। তার উপর রাহেলা চার মাসের অন্তস্বতা। চারদিকে অভাব তার উপর নতুন মেহমানের আগমন সফর মিয়ার চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম।

অনেক ভেবে, জীবিকার তাগিদে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালো সফর মিয়া। ঢাকায় নাকি টাকা উড়ে। এখানে এসে সফর মিয়া টাকা উড়ার কোন নাম গন্ধ পায় না। বরং ,সাথে করে যে টাকা নিয়ে এসেছিল, সেই টাকার থলের ওজন দিন দিন কমতে লাগলো। কাজের আশায় প্রতিদিন সকালে বের হতো,আর রাতে ম্যাসে ফিরতো।

এমনি করে দিনকাল চলতে থাকে। পরিবারের জন্য এখনো কোন টাকা পাঠাতে পারে নি সফর মিয়া। চিন্তায় কপালে ভাজ পড়ে সফর মিয়ার। লজ্জায় রাহেলার খোঁজ নিতে পারছে না। আবার, বাড়ির কথা মনে পড়লে হুহু করে কেঁদে উঠে মন। স্ত্রী , সন্তান কি খাচ্ছে নাকি খাচ্ছে না, কিছুই জানতে পারছে না।

অভাবের বাজারে শেষমেস বাদাম ফেরী করতে বাধ্য হয়। সারাদিন বাদাম বিক্রি করে , যা লাভ হয় তার অর্ধেকটা নিজেরই থাকা খাওয়ার পিছনে খরচ হয়ে যায়। মাস শেষে যে টাকা বাড়ীতে পাঠায় , তাতে কোন রকম মাস পার করে রাহেলা।

সেদিন গফুর চাচার নাম্বারে ফোন করে রাহেলার সাথে কথা বলে। রাহেলার শরীর বেশি ভাল না। আর মেয়েটা মিষ্টি করে বায়না ধরে বলে,"বাজান, ঈদে আমার জন্য দামি দেইখা লাল ফ্রক কিন্না আনবা কিন্তু। যদি না আন তোমার লগে কথা নাই।"

সামনে ঈদ ,মেয়ের এমন অসাধ্য বায়না পূরণ করবে কিভাবে?? যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। সেদিকে এমন বায়না তো আকাশ-পাতাল কল্পনা।

দেখতে দেখতে রোযা প্রায় ১০টা শেষ। রোযার মাসে বাদাম বিক্রিতে সুবিধে হচ্ছে না।তাই দিনের বেলা ভাড়ার ভ্যান গাড়িতে করে কাচাঁ তরকারি বিক্রি করে, কিছু অর্থ উপার্জন করে।

সেদিন,তরকারি বিক্রি করতে সায়দাবাদের দিকে যায় সফর। ম্যাসের টুনু দাদার দোকানে ঝুলানো লাল ফ্রকটা দেখে খুব নজর কাড়লো তার। সামনে গিয়ে দাম জিজ্ঞেস করতেই মাথায় হাত সফর মিয়ার। সামান্য এই ফ্রকটার দাম ২০০০/- টাকা। ড্রেসটা ধরছিল আর কল্পনায় বারবার মেয়ের মুখ খানা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। মেয়েটা ফ্রকটা পড়লে লাল পরীর মত লাগবে একদম। টুনু দাদার ডাকে কল্পনার জগত থেকে ফিরে আসে সফর।

সেদিনই,টুনু দাদার পকেটে সেদিন ১০০ টাকা গুজে দিয়ে বললাম,জামাডা পছন্দ হইছে টুনু দাদা। টাকাডা জমা রাখিও আমানত স্বরূপ। তিনি আবার শর্ত দিছেন,২৫ রোযার আগে টাহা পরিশোধ করতে হইবো।তিনি সেদিন বাড়ি চলে যাবেন।

আজ রোযা ২৪টা হলো। কোনোভাবেই টাকার অংক মেলাতে পারছে না সফর মিয়া। কপালে ভাজ তুলে সন্ধ্যায় ম্যাসে বসে বারবার টাকা গুনছিল। সবমিলিয়ে মাএ ১২০০/- টাকা হইছে। আরো ৭০০টাকার টান।

একদিনে এত টাকা কোথা থেকে যোগাড় করবে সে। ভাবতে ভাবতে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল , সে তার নিজের শরীরের রক্ত বিক্রি করবে। যেই কথা সেই কাজ। আজ ২৫ রোযা,টাকা জমা দেয়ার শেষ তারিখ। সকালে ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে পাশের ক্লিনিকে গেল রক্ত দিতে।

কর্তৃপক্ষ সফর মিয়া রোগা আর দূর্বল হওয়ার কারনে রক্ত নিতে অমত জানায়। হতাশ হয়ে সফর মিয়া কাঁদতে শুরু করে। অনেক অনুরোধ করার পর একব্যাগ রক্ত নিতেই রাজি হয়। বিনিময়ে তারা সফর মিয়াকে ৮০০ টাকা দেয়।

সফর মিয়া টাকাটা হাতে নিয়ে যেন স্বর্গ হাতে পেল। দেরি না করে টাকাটা নিয়ে সোজা টুনু দাদার দোকানে যায়। যে করেই হোক, মেয়ের মুখে সে হাসি ফোটাবেই।

মেয়ের জন্য টুনু দাদার দোকান থেকে লাল জামা কেনা হয়েছে। শরীরটা প্রচন্ড দূর্বল। সেই দূর্বলতা নিয়ে সফর মিয়া বাসের ছাদে চড়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিল।মেয়ের মুখের হাসির সামনে এই দূর্বলতা তো কিছুই নয়। বাসে বসেই, আবার কল্পনা করতে লাগলো লাল ফ্রক পরা পরীটার কথা।

বিঃদ্রঃ সন্তানের এক ফালি হাসির জন্য বাবা-মায়ের জীবনের পরবাও করে না। তবুও,কিছু সন্তান সে ত্যাগ ভুলে যায় অবলীলায়। ঈদ বয়ে আনুক প্রতিটি মানুষের মনে সফর মিয়ার মত খুশি আর আনন্দ।

লিখা: প্রান্তিক চৌধুরী
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×