somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাকি লাখ টাকায় আবার মিলবে আগুনে পোড়া দগ্ধ লাশ, লাশের স্তূপ....

২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি সবেমাত্র এইচ.এস.সি পাশ করলাম, আমাদের পাশের এলাকায় যে মাঠে খেলাধূলা করে বড় হচ্ছিলাম সে মাঠটা বেদখল হলো আমাদের থেকে হুঠ করে একদিন ইট-রড-সিমেন্ট ব্যাগ দিয়ে বোঝাই হয়ে গেলে মাঠের অর্ধেকটাই। পড়ে জানতে পারলাম এখানে গড়া হবে র্গামেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠান। তখন র্গামেন্টস প্রতিষ্ঠানের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না, যদি থাকতো হয়তো বা এতোদিন অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। আমি বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানেই আছি, হয়তো যখন এই প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন হয়েছিল সে সময়ে এ প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতাম আজ হয়তো বড় কোন পদবীতে থাকতাম, চাকুরীর বয়স ১৫ বছরেরও অধিককাল হতো। অবশ্য এখনও ভাল অবস্থানেই আছি, আরো ভালে পজিশনে থাকতাম এই আর কী। প্রতিষ্ঠানের আই.টি ডিপার্টমেন্টে আছি এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানটির মতো সত্যিকার অর্থে প্রকৃত ডিজিটাল পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সম্ভবত দ্বিতীয়টি নেই। নাট্যকার ও সাহিত্যিক দৈনিক কালের কন্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি দেখে অবাক হয়েছেন। এমনকি পোশাক শিল্পের অন্যতম বায়ার এইচ এন্ড এম (H&M) আমাদের প্রতিষ্ঠানের আই,টি ডিপার্টমেন্টের প্রশংসা করেছে। যাক নিজের ঢাকডোল নিজে না পিটাই।

পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজে সুযোগে অসংখ্য অভিজ্ঞতা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে পরিচয় ঘটেছে। আমার জীবনের ডায়েরীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে আছে এ অভিজ্ঞতা। যার কিছু আনন্দদায়ক আবার কিছুটা বেদনায়ও নীলাভ।

আমার অভিজ্ঞতার নানাবিধ ঘটনার থেকে একটা ঘটনা দৃশ্যপট আমাকে এখনও মাঝে মাঝে আমার অনুভূতিতে সাড়া ফেলে। আমি দুপুরে লাঞ্চ শেষে বাড়িতে অফিসে যাচ্ছি, আমাদের ডিপার্টমেন্ট তখন প্রথম ফ্লোরে মানে দ্বিতীয় তলায় ছিল। সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় যাবো এমন সময়ে খেয়াল করলাম সিঁড়িতে বসে একজন মেয়ে খাবার খাচ্ছে। আসলে দুপুরে সাধারনত যা খাওয়া হয় মেয়ে তা না খেয়ে খাচ্ছে টং দোকানের সিংগাড়া টাইপের মতোই দেখতে মিষ্টি জাতীয় একটা খাবার। সেটা আসলে খাবারের উপযোগী ছিল কী না সেটাই বড় প্রশ্ন নয়, পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ পোশাক শ্রমিক এগুলোই খায়, ভালো মানের খাবার কিংবা ফ্রেস খাবার ওরা মাসে কয়দিনই বা খায়। ফ্লোরের ধূলাবালিতে বসেই ওরা যেটা খায় আমি সে জাতীয় খাবার কখনোই খাইনি। মহান আল্লাহ পাকের রহমত হয়তো বইছে আমার উপর। কিন্তু ঐ মেয়ের মুখের খাবার দেখে সত্যিই সেদিন হৃদয়ের গহীনে কান্নার সূর শুনতে পেয়েছিলাম, কিন্তু সেই কান্নায় কিছুই যায় আসে না, ওর মুখে তুলে তো দিতে পারবে না আমি যেটা খাই, হয়তো একদিন-দুইদিন কিংবা তিনদিন দিবো কিন্তু চারদিনের দিন কিংবা কয়জন শ্রমিকের মুখের দিতে পারবো আমার মনের মতো খাবার। এটা আমার চরম অসহায়ত্ব।

আমার স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন আমাদের বাসায় বড় আপা আসবে বিধায় দুলাভাইয়ের জন্য রান্না করা হয়েছিল রোস্ট, খাসির গোশত ভুনা, কলিজা ভুনা, পোলাও, দধি আরো কত কী। দুপুরের ভুড়িভোজ হয়েছিল জোশ, বলা বাহুল্য আমি একটু ভোজনবিলাসী। আমার খাবারের সাথে ঐ মেয়ের খাবারের তুলনাটা মাথায় আসাতেই মনটা মলিন হয়ে গিয়েছিল। একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আমাদের দুজনের রিজিকের হেরফের অনেক। হয়তো পড়াশুনা করায় আমি ভালো মাইনে পাই আর ঐ মেয়েটা হয়তো সামান্য বেতনে চালায় তার পুরো মাস, কোন মতে খেয়ে-পড়ে! সেদিন কেন জানি নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছিল। লজ্জায় মেয়েটার নামটাও জানা হয়নি। আসলে অপরাধ বোধটা জাগার মূল কারণ হলো, ওরা সুইং মেশিন চালায় বলেই তো পোশাক তৈরি হয়। র্গামেন্টসের প্রাণ ও মূল চালিকাশক্তি তো ওরাই। অথচ আমরা ওদের ক্লান্ত দেহের গামের গন্ধটুকুও সহ্য করতে পারি না, পারি কী?

আরেকটা ঘটনা, এটা গ্রীষ্মকালে প্রায়ই হয়। কোন না কোন ফ্লোরে মেয়ে কিংবা মহিলা শ্রমিক অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। বিশাল ফ্লোরে হাজার খানের পোশাক শ্রমিক একত্রে কাজ করে যদিও আমাদের প্রতিষ্ঠানের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনের জন্য পযার্প্ত ব্যবস্থা রয়েছে, তা সত্বেও কিছু কিছু মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এদের সবারই কংকালসার দেহ, রক্তশূণ্যতার অভাব চরমে, চরম অপুষ্টির শিকার। এ ভাঙ্গাচেরা দেহখানা নিয়েই চলে ওদের কর্মজীবন। সারাদিন প্ররিশ্রম করে সন্ধ্যায় গিয়ে শুরু হয় ভাত আর আলুর ভর্তা রান্নার আয়োজন। সন্তানের মুখে ভাত তুলে দিতে পেরেই যেন ওরা মহাখুশি।

কয়েকদিন আগে সাভারের নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনে পুড়ে ছাই গেলো অসংখ্য পোশাক শ্রমিক। যে শ্রমিক পোশাক শিল্পের প্রাণ, তাদের জীবনের কোন নিরাপত্তাই নাই, যেন নেই স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার। যাদের শ্রমের বিনিময়ে ইটের পর ইট দিয়ে মজবুত ভীত হয় প্রতিষ্ঠানের, মালিক রাস্তায় হাকায় বাহারী গাড়ি আর নিমার্ণ করে বর্নীল প্রসাদ্। আর শ্রমিক শ্রমের বিনিময়ে পায় না দুবেলা ভালো মানের খাবার, পায়না বেচেঁ থাকার অধিকার।

আরেকটা ভয়াবহ ঘটনা, তখন আমি সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলাম। জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের সময়ের রিপোর্টার ছিলাম। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল সান নিটিং এ ভয়াবহ আগুনের ঘটনা আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষ করেছিলাম। আমার মনে আছে, মোবাইলের ঘটনার সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ঘটনাস্থলে গিয়ে এতটাই অসহায় ছিলাম যে আমার পক্ষে কিছুই করার ছিল না। শুধুমাত্র রাস্তায় নিরাপদ দূরত্বে দাড়িঁয়ে বাচাঁও-বাচাঁও চিৎকার শুনেছিলাম, যারা জানালার ধারে ছিল তাদের স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম, কিন্তু লোহার গ্রীল ভেঙ্গে তাদের বাহিরে বের হবার কোন সম্ভনাই দেথলাম্ না। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা কোন ভাবেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলো না। সব পুড়েঁ ছাই। অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছিল সেটাই ছিল পোশাক শিল্পের আগুনের হতাহতের বড় ঘটনা কিন্তু সাভারের নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এ ভয়াবহতাকেও হার মানিয়েছে।

প্রশ্ন একটাই, পোশাক শ্রমিকরা কেন বার বার পুড়েঁ কয়লা হয়? এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কে? নাকি লাখ টাকায় আবার মিলবে আগুনে পোড়া দগ্ধ লাশ, লাশের স্তূপ।








০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×