বেকারত্ব একটি অভিশাপ।।
.
বিষণ্ণ মনে বাসা থেকে বেড়িয়ে এলো রাজু, বাসায় আব্বু আম্মুর হতাশা মিশ্রিত মুখ দেখতে চায় না সে, কি করে দেখবে? মাস্টার্স পাস করা একজন বেকার ছেলে সে, এক বছর হল মাস্টার্স শেষ করেছে কিন্তু এখনো কোন চাকুরী তার ভাগ্যে জুটেনি, চাকুরীর সন্ধান করেনি এমন নয়, সন্ধান অনুসন্ধান সবই করেছে।
শতশত চাকুরীর ইন্টার্ভিউ দিয়েছে কিন্তু চাকুরী একটাও হয়নি, এখনো তার লকারে শখানেক চাকুরী সংক্রান্ত কাগজপত্র পড়ে আছে।
.
নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার বা গরিব ঘরে এমন রাজুর জন্ম হওয়া দোষের কিছুনা, লেখাপড়া করার তীব্র ইচ্ছা ছিল তার, সংকল্প ছিল লেখাপড়া করে একদিন বড় হবে, বড় চাকুরী করবে, টাই কোট পড়ে অফিসে যাবে, ভাল বেতন পাবে, আম্মু আব্বুর আর কোন দুঃখ থাকবেনা।
কল্পনায় যখনি তার মা বাবার হাসিমাখা মুখ দেখতো এক চিলতে হাসি তারও মুখ ছুঁয়ে যেত।
.
তার মা বাবারও আশা ছেলে বড় একটা চাকুরী পাবে,সংসারের হাল ধরবে, এসব ভাবতেই তার মা বাবার মুখ জুড়ে সারা রাজ্যের হাসি, টাই কোট পরিহিত কোন লোক দেখলে রাজুর মা কল্পনা করতেন রাজুও একদিন এমন টাই কোট পড়বে,খুব ভাল একটা চাকুরী পাবে, সবাই থাকে সম্মান করবে, পাশের বাসার শাহিলের মা এসে বলবে কিগো রাজুর মা তোমার ছেলে ভাল পেয়েছে এবার তুমি সুখী, পাড়াপড়শি সবাই একে একে রাজুর সুনাম করবে, সম্মান করবে।
এসব ভাবতেই মায়ের মন খুশিতে ভরে যায়,
.
রাজু ঘুরছে চাকুরীর সন্ধানে, মাস্টার্স পাস করার পর অফিসে অফিসে চাকুরীর সন্ধানে ছুটাছুটি করাই যেন তার কাজ। দরিদ্রতা ঘোচাতে তার আর কত দেরী আর কত অপেক্ষা? মাসে মাসে কতগুলো ইন্টার্ভিউ দেয়া হচ্ছে, সরকারি বেসরকারি, প্রাইভেট কোম্পানি কিছুই বাদ দেয়নি। সারাদিন অফিসে অফিসে চাকুরী খুঁজাখুঁজি, সন্ধায় টিউশনি আর রাত্রে চাকুরীর ইন্টার্ভিউয়ের প্রিপারেশন।
সব মিলিয়ে একটা অভিশপ্ত জীবন যাপন।
.
বাবার ওষুধ শেষ, ইদানীং বাবার প্রেশার বাড়ছে খুব, অনেকদিন বড় কোন ডাক্তার দেখানো হয়নি বাবাকে, চাকুরীটা হয়ে গেলে ঢাকাতে বড় কোন ডাক্তার দেখাবো বাবাকে, বাবার পেনশনের টাকায় কোনরকম টানাটানিভাবে সংসার চলে, তার উপর রোজ ওষুধপাতি কিনতে হয় বড় কোন ডাক্তার দেখানো ইচ্ছা থাকলেও উপায় হয়না রাজুর, বাবা অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছেন, বেঁচে থাকতে কিছুটা সুখ তো বাবাকে দিতেই হবে।
.
আজ টিউশনির টাকা পাবার আশা ছিল, যদিও মাস শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগেই, কিন্তু টাকাটা আজও হাতে আসেনি, টিউশন টিচার আর ভিক্ষুকের মধ্যে নাকি অনেক মিল? কিন্তু সালা ভিক্ষুক তো ভিক্ষা চাওয়ার পর কিছু একটা পায় কিন্তু টিউশন টিচারের বেলায় সেটা হয়না, ভিক্ষুকরা ভিক্ষা না পেলে অন্য জায়গায় যেতে পারে কিন্তু টিউশন টিচাররা তা পারেনা।
.
হতাস হৃদয় বেড়িয়ে এলো রাস্তায়, হঠাৎ জয়নুলের সাথে দেখা,অনেক বড় চাকুরী করে সে, ভার্সিটিতে এক সাথেই পড়তো, ইদানীং তার নাকি প্রমোশনও হয়েছে, কলেজ থেকেই সে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত, আর আমাদের দেশে রাজনীতিবিদদের সাত খুন মাফ সেটা তো সবার জানাই জয়নুলের বেলায়ও তাই হল। আজকাল চাকুরী পেতে মামা খালুর জোড় থাকতে হয়, আর তার তো নিজের জোড়ই অনেক, রাজনীতিগত জোড়।
.
ছোটবোন ইশার বিয়ের কথাবার্তা চলছে, বাবার ডিপোজিট, পেনশন ও জমানো যা ছিল তা দিয়ে কোনরকম ইশার বিয়ে দিয়ে আপদমুক্ত করতে চান, যে ঘরে রাজুর মত গ্রেজুয়েটেড বেকার ছেলেরা আছে সে ঘরে তার বোনের বিয়ে তো আপদের সমানই, তাই বাবা ছোট বোনের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চান। রাজু এখনো ভরসা করছে কোন চাকুরী হবে, এখনো সময় আছে তার বোনকে ভাল ঘরে বিয়ে দিতে পারবে যদি একটা চাকুরী হয়ে যায়। ব্যাস শুক্রবারের ইন্টার্ভিউ যদি কাজে লেগে যায়।
.
রাজুর জীবনে শুক্রবার সুখবর নিয়ে আসতে পারেনি, ইশার বিয়ে ভেঙে গেছে, যৌথুক হিসেবে বরপক্ষ পরিমাণে অনেক বেশীই দাবী করেছিল।
আজকাল যৌথুক ছাড়া বিয়ে গল্পতেই শুনা যায় বা ফিল্মেই দেখায় বাস্তবে নয়।
রাজু বাড়ি ফিরতে রাত অনেক হয়ে গেছে, বাবা বারান্দায় বসে আছেন, রাজুও বাবার পাশে অন্য একটি চেয়ারে বসলো, তার খুব ক্লান্তি লাগছে।
- রাজুর বাবা রাজুর পিটে হাত রেখে সান্তনার দিয়ে বললেন :- চিন্তা করিস না বাবা, একদিন তুই অনেক বড় হবি অনেক বড়, তোর মনের আশা পূর্ন হবে।
- রাজু বাবাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি ছেড়ে দিল।
সারা রাজ্যের বিষাদ বুক থেকে নামিয়ে রাজু ভাবছে অাদৌ কি তার আশা পূরণ হবে? সেকি সত্যিই এই অভিশপ্ত জীবন হতে মুক্তি পাবে?
.
লিখা: Al-Amin Ahmed
(কাজী নজরুলের ছাত্র)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৯