somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবেসে ভালবাসি

০৮ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রায়েদের ফোনে ৯ম বারের মত চেষ্টা করে সংযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফোনটা মোটামুটি ছুড়েই ফেললো মিলি। অনেক বদলে গেছে রায়েদ। বিয়ের কেবল ৫ বছরের মাথায় কেউ কি এতটা বদলাতে পারে? ভেবে পায় না মিলি। আগে রায়েদ এমন ছিল না। ৪ বছরের প্রেমে কিংবা বিয়ের পর ও, রায়েদ ন্যাকা ন্যাকা স্বামী না হলেও এতটা কেয়ারলেস ছিল না, অন্তত মিলির প্রতি তো নয় ই। একবার ফোন দেখলেও কলব্যাক করত আর সে কি না এখন নয়বার ফোন বেজে যাওয়ার পর ও ধরছে না! একটু ভয় ই পেয়ে গেলো মিলি। ঠিক আছে তো রায়েদ? এমন সময় সোফার উপরে পড়ে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। ডিসপ্লে তে রায়েদের নাম। তড়িঘড়ি করে ফোন ধরলো মিলি। ওপাশ থেকে রায়েদের অস্বাভাবিক গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো।
- হুম কি হয়েছে?
: এতবার ফোন দিলাম, ধরলে না যে?
- অদ্ভুত তো! অফিসে কি আমায় চাকরি দিয়েছে তোমার ফোন ধরার জন্য নাকি তুমি ভাবো যে তোমার ফোন ধরার জন্য আমি অফিসে কাজ কাম ছাড়া বসে থাকি!
: না তা তো বলছি না।আমি তো জাস্ট...
- শোনো এসব ইউজলেস কথার জন্য আমার কাছে সময় নেই। কেন ফোন করেছ তাড়াতাড়ি বলো।
: বলছিলাম কি, আজ দুপুরে চলো না এক সাথে লাঞ্চ করি কোনো একটা রেস্তোরায়?
- ধ্যাত! কোনো মানে হয় এসবের! আসলে বাসায় বসে বসে আরাম করো তো, চাকরির ঝামেলার কি বুঝবে! রাখো ফোন!
সাথে সাথে ওপাশ থেকে ফোন রেখে দিলো রায়েদ। মিলি বরাবরই নরম মনের মেয়ে। স্বামীর এসব কড়া কড়া কথায় সত্যি দু চোখ ভরে জল এলো তার। এমন কি বেশি ও চেয়ে ফেলেছে নিজের বিবাহবার্ষিকীতে যে এমন কথাও শুনতে হবে! রায়েদেরই তো এসব বেশি প্রিয়। একটু ধাতস্থ হতেই রায়েদের এমন অদ্ভুত ব্যাবহারের কারণ খুজে বের করতে চেষ্টা করলোমিলি। বিভিন্ন ভংগিতে আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখে কোনো খুত পেলো না
। কই, সে তো আগের মতই আছে, আকর্ষণ কমে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যত্নও কম করে না মিলি রায়েদের।। তবে কি....

গত সপ্তাহে ডাক্তারের রিপোর্ট হাতে পেলো মিলি আর রায়েদ। স্পষ্ট ভাবে রিপোর্ট এ যা লেখা তা যেকোনো মেয়েকে অসম্পূর্ণ করতে যথেষ্ট। রিপোর্ট বলে ইনফারটিলিটি আছে মিলির। এ জীবনে সন্তানসুখ পাওয়া হবে না তার। এই নিয়ে শাশুড়ি বেশ কয়েক কথা শোনান যার সারমর্ম এই যে মিলি ই রায়েদের জীবন টা ধ্বংস করছে। তবে কি রায়েদ ও তাই ভাবছে বাবা হতে না পেরে?


বিকেলে রায়েদ এলো অফিস থেকে। মিলি অবাক হয়ে দেখলো রায়েদের দেয়া শাড়িটা পরা সত্বেও রায়েদ এক বারও তাকালো না মিলির দিকে। একবার ও বললো না তোমায় কিন্তু নীলে খুব সুন্দর লাগে মিলি। সে বাড়িতে ঢুকেই স্টাডিরুমে চলে গেল হন্তদন্ত হয়ে। চা বানাতে গেল যথারীতি মিলি স্বামীর জন্য। চা বানিয়ে স্টাডিরুমের সামনে যেতেই মিলি রায়েদের ফোনালাপ শুনতে পেলো।
- হ্যা হ্যা আসাদ সাহেব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার ডিভোর্স নোটিশ চাই। আর এসব সহ্য করা যাচ্ছে না।
এ কি শুনলাম!! নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না মিলি। ডিভোর্স দেবে ওকে? তাও রায়েদ!! আর এক মুহূর্ত সেখানে দাড়াল না ও। এখন সত্যি মাথা ঠান্ডা করে চিন্তা করা দরকার!!! বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার। নিরিবিলি জায়গায় বসে ভাবতে লাগল ও। কত স্মৃতি এই রায়েদের সাথে! এই শহীদ মিনারেই কত ওরা স্বপ্নময় আগামীর কল্পনায় বিভোর হয়েছে, কিংবা হারিয়ে গেছে পরষ্পরের চোখে। মনে পড়ে সেবার যখন মিলির টাইফয়েড হলো, রায়েদ নিজে ৫ রাত নির্ঘুম থেকে স্পঞ্জ করে দিয়েছে ওকে। এত ভালবাসা হঠাত ই.... নিজের সংগে যুদ্ধ করে শেষে সিদ্ধান্ত নিলো মিলি, রায়েদ কে আজো ভালবাসে ও, তাই রায়েদের আশা পূর্ণ করেই রায়েদকে ও আজীবনের মত মুক্ত করে দেবে।



বাড়ি পৌছাতেই চোখে পড়ল দরজার সামনের নেমপ্লেট
" মিলি এন্ড রায়েদ নেওয়াজ " ... নেমপ্লেট যেন ওকেই বিদ্রুপ করছে। দরজা খুলতেই......
ঘর জুড়ে অগনিত মোমবাতি জ্বলছে। মিলির একবার মনে হল যেন অন্য কারোর বাড়ি। কে করলো এতসব? যাক প্রাথমিক উত্তেজনা কাটতেই মোমবাতি দিয়ে তৈরি হার্ট আকৃতির মধ্যে রাখা ব্ল্যাক ফরেস্ট কেকের পাশে একটা চিঠি পেলো মিলি।
" শুভ ৬ষ্ঠ বিবাহবার্ষিকী।
প্রথমত দুপুরে লাঞ্চ প্রত্যাখ্যান করার জন্য সরি।
দ্বিতীয়ত বানিয়ে বানিয়ে ডিভোর্স দেয়ার কথা বলার জন্য সরি।
তারপর আশা করি এতগুলো মোমবাতি একা হাতে জ্বালানোর জন্য আমি একটা থ্যাংকু পাব( তুমি তো জানই আমি আগুন ভয় পাই!!!)
বি.দ্র. আমার যতদিন তুমি আছ ততদিন বাচ্চা লাগবে না। একটা সামলাতেই নাকানি চোবানি খেয়ে যাচ্ছি, আবার আরেকটা!!! "


পড়তে পড়তে কেদেই চলেছে মিলি! সব তাহলে সাজানো!!! এমন সময় দরজায় দাড়িয়ে রায়েদ বললো " কি, কেমন দিলাম বলো!! " স্বামী কে এক নজর দেখেই ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো মিলি, সংগে কান্না তো চলছেই!!! আর রায়েদের অবস্থা! সে তার এই " বড় বাচ্চাটিকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ততক্ষণে!!!





(পুনশ্চ : জীবনটা অনেক ছোট । আসুন না , অপূর্ণতা ভুলে , দু;সহ স্মৃতি মুছে ভালবেসে ভালবাসি ??? )
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×